ফেনীর ছাগলনাইয়া সীমান্তে ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর (বিএসএফ) হাতে আটক ২৩ বাংলাদেশির সহসা মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বিএসএফের পক্ষ থেকে আটক ব্যক্তিদের ত্রিপুরার মনু থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে। ফলে আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের দেশে ফেরত আসতে হবে।
এদিকে, আটকের চার দিন পেরিয়ে গেলেও ২৩ বাংলাদেশিকে নিয়ে তাদের পরিবারের সদস্যরা চরম উদ্বেগ-উৎকণ্ঠার মধ্যে রয়েছেন।
গত সোমবার (৫ ফেব্রুয়ারি) রাত সাড়ে ১১টার দিকে ছাগলনাইয়া উপজেলার সীমান্তবর্তী পূর্ব ছাগলনাইয়া গ্রামের ৯৯ সীমান্ত পিলার এলাকা থেকে ২৩ বাংলাদেশিকে ধরে নিয়ে যায় ভারতীয় সীমান্তরক্ষী বাহিনীর একটি দল।
প্রথমে বিষয়টি আড়ালে রাখার চেষ্টা করলেও গত মঙ্গলবার (৬ ফেব্রুয়ারি) সন্ধ্যার দিকে বিএসএফের হাতে বাংলাদেশের ২৩ দিনমজুর আটকের বিষয়টি জানাজানি হয়।
প্রাথমিকভাবে বিএসএফের হাতে আটক বাংলাদেশিদের সহসা মুক্তির বিষয়ে স্বজনরা আশাবাদী ছিলেন। তবে চার দিনের মাথায় মুক্তি নিয়ে অনিশ্চয়তায় পরিবারগুলোতে শুরু হয়েছে আহাজারি।
বিএসএফের হাতে আটক ব্যক্তিরা হলেন- সাইমুম হোসেন, রাইসুল ইসলাম, সামিন, হারুন, লিটন, মাঈন উদ্দিন, মহসিন, কাজী রিপন, তাজুল ইসলাম সাকিল, হানিফ, আবুল হাসান, ইমরান, রুবেল, জাফর ইমাম মজুমদার, ওবায়দুল হক, জামাল উদ্দিন, আরিফ হোসেন, করিম, খোরশেদ, আজাদ হোসেন, মাহিম, হারুন ও ইমাম হোসেন।
তাদের বেশির ভাগই ছাগলনাইয়া উপজেলার পৌরসভা পূর্ব ছাগলনাইয়া, মটুয়া, রাধানগর ইউনিয়নের বাসিন্দা। আটক ব্যক্তিদের স্বজনদের কাছ থেকে বিজিবি জাতীয় পরিচয়পত্রের কপি সংগ্রহ করে তথ্য যাছাই-বাছাই করছে। বিএসএফের পক্ষ থেকেও আটকদের তালিকা দেওয়া হয়েছে।
এ ঘটনার পর ভারত থেকে অবৈধপথে চিনি, শাড়ি-কাপড়, মাদকসহ বিভিন্ন পণ্য অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের বিষয়টি ব্যাপকভাবে আলোচিত হচ্ছে।
সীমান্তের ছাগলনাইয়া উপজেলাধীন রাধানগর, মহামায়া, শুভপুর ইউনিয়ন এবং পৌর এলাকার সীমান্তবর্তী এলাকার কয়েকটি স্থান দিয়ে প্রতি রাতে অবাধে ভারতীয় অবৈধ মালামাল বাংলাদেশে ঢুকছে বলে স্থানীয়দের অভিযোগ।
গ্রামবাসীরা জানান, এসব চোরাচালানের সঙ্গে জড়িতদের অধিকাংশই জনপ্রতিনিধি ও রাজনৈতিক দলের প্রভাবশালী সদস্য হওয়ায় স্থানীয়রা ভয়ে কিছু বলেন না।
পৌর শহরের জমদ্দার বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ী জানান, রাত ১টার পর শত শত বস্তা ভারতীয় চিনি ট্রাকে করে দেশের বিভিন্ন স্থানে পাঠানো হয়।
সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে দেশের অভ্যন্তরে নিরাপদ স্থানে এক বস্তা চিনি বহন করে নিয়ে আসলে এসব শ্রমিক দুই থেকে তিনশ টাকা পারিশ্রমিক পান। তবে, চোরাচালান সিন্ডিকেটের মূলহোতারা বরাবরই প্রশাসনের ধরাছোঁয়ার বাইরে থেকে যায় বলে অভিযোগ রয়েছে।
বৃহস্পতিবার (৯ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে ২৩ বাংলাদেশির সর্বশেষ অবস্থা জানতে চাইলে বিজিবি-৪-এর ফেনী জয়লস্কর সদরদপ্তরের কমান্ডিং অফিসার লে. কর্নেল শেখ মো. বদরুদোজ্জা জানান, দু’দেশের মধ্যে বৈঠকে বিএসএফ জানিয়েছে আটক ব্যক্তিরা চোরাচালানের সঙ্গে জড়িত থাকায় তাদের ত্রিপুরার মনু থানা পুলিশের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে।এখন তাদের আইনি প্রক্রিয়ার মাধ্যমেই দেশে ফেরত আসতে হবে।
বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নজরে দেওয়া হয়েছে বলেও জানান বিজিবির এই কর্মকর্তা।