স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা কবলিত মানুষের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে (টিএসসি) বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ‘গণত্রাণ’ কর্মসূচির মাধ্যমে পাঁচ কোটি ২৩ লাখ ৩ হাজার ৬০৩ টাকা ৬৮ পয়সা সংগ্রহ করা হয়েছে। পাশাপাশি বন্যাদুর্গত এলাকায় ৫০ ট্রাক ত্রাণসামগ্রীসহ নগদ অর্থ পৌঁছানো হয়েছে। অন্যদিকে গত চারদিনে বিভিন্ন খাতে ব্যয় হয়েছে ৩০ লাখ ১২ হাজার ৯৭০ টাকা।
রোববার (২৫ আগস্ট) সন্ধ্যা সাড়ে ৭টার দিকে এক প্রেস ব্রিফিং-এ ছাত্রদের পক্ষ থেকে এসব তথ্য জানানো হয়। প্রেস ব্রিফিংয়ে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক লুৎফর রহমান, মিডিয়া ও কমিউনিকেশন উইং-এর প্রধান রেজওয়ান আহম্মেদ রিফাত এবং টিএসসি বুথের প্রধান সমন্বয়ক অদিতি। তারা জানান, রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত অনলাইন-অফলাইন মিলিয়ে এই টাকা সংগ্রহ করা হয়েছে।
এর মধ্যে টিএসসিতে নগদ ৪ কোটি ৩৯ লাখ ১ হাজার ৬৯০ টাকা, মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৬২ লাখ ৯৪ হাজার ১২০ টাকা, ব্যাংকিং মাধ্যমে ২১ লাখ ৭ হাজার ৭৯৩ টাকা ৬৮ পয়সা সংগ্রহ করা হয়।
এসব অর্থ ত্রাণ সামগ্রী, জরুরি ঔষধ ও ত্রাণ রাখার ব্যাগ এবং স্বেচ্ছাসেবকদের খাবার ক্রয় করতে ব্যায় করা হয়েছে। ত্রাণ সামগ্রীর মধ্যে খেজুর বাবদ ১৫ লাখ ৭৮ হাজার ৯০০ টাকা, মুড়ি বাবদ চার লাখ ৩০০ টাকা, বিস্কুট বাবদ দুই লাখ এক হাজার ৫০ টাকা, গুড় বাবদ দুই লাখ ৫২ হাজার ৮৪০ টাকা, ভলান্টিয়ারদের রাতে ও দুপুরের খাবার বাবদ ৩৯ হাজার টাকা, গাড়ির সঙ্গে স্বেচ্ছাসেবকের আট হাজার টাকা, পলিথিন বাবদ এক লাখ দুই হাজার ৫০০ টাকা, বস্তা এক লাখ ৭৯ হাজার টাকা, চিনি আড়াই লাখ টাকা, রিকশা ও ভ্যান ভাড়া ৬৫০টাকা এবং দড়ি, কলম ও কার্টার বাবদ ৭৩০ টাকা ব্যয় হয়েছে।
ত্রাণ কার্যক্রম তুলে ধরে সমন্বয়ক লুৎফুর রহমান বলেন, গণত্রাণ কর্মসূচিতে পাওয়া অর্থ-সামগ্রী বিভিন্ন জেলায় সশরীরে এবং প্রশাসনের সাহায্যে বিতরণ করছে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন। রোববার বিকেল ৫টা পর্যন্ত মোট ৫০ ট্রাক ভর্তি ৫০ হাজারের অধিক ত্রাণ সামগ্রী বিভিন্ন এলাকায় পাঠানো হয়। প্রতি ট্রাকে ৮০০-১০০০টি রিলিফ প্যাকেজ (এক পরিবার) এবং ২০-৩০ কেস পানি দিয়ে পরিপূর্ণ করা হয়। প্রতিটি প্যাকেজ একটি পরিবারের জন্য প্রয়োজনীয় শুকনো খাদ্য এবং প্রয়োজনীয় ওষুধ দেয় হয়েছে।
এ ছাড়া বিমান বাহিনীর তত্ত্বাবধায়নে তিন হাজার প্যাকেজ ত্রাণ হেলিকপ্টারযোগে বন্যাকবলিত দুর্গম অঞ্চলগুলোতে বণ্টন করা হয়েছে। পাশাপাশি তিন লাখ ৯৬ হাজার ৫০০ টাকা নগদ সহায়তা দেয়া হয়েছে।
সমন্বয়ক রেজওয়ান রিফাত বলেন, আমরা গত কয়েকদিন ধরে গণত্রাণ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছি। অনেকে একই ত্রাণ দেয়ায় প্যাকেজ তৈরিতে বিভিন্ন জিনিসের ঘাটতি দেখা যায়। ফলে সংগৃহীত টাকা থেকে সেগুলো কিনতে হয়েছে। এ ছাড়া অসংখ্য স্বেচ্ছাসেবকদের দুপুর ও রাতের খাবারের পেছনেও আমাদের খরচ হয়েছে। প্রতি ট্রাকে প্রথম দিকে ১০ জন করে স্বেচ্ছাসেবক পাঠানো হয়েছিলো। পরে সেটা কমিয়ে ৫ জন এবং বর্তমানে ৩ জন করে পাঠানো হচ্ছে।
এদিকে রোববার সরজমিনে দেখা যায়, গণত্রাণ কর্মসূচির চতুর্থ দিন সকাল থেকেই টিএসসি ও জিমনেসিয়াম এলাকায় ত্রাণ দিতে মানুষের ঢল নামে। রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে মানুষ ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে ব্যক্তিগত গাড়ি, ট্রাক, সিএনজি, ভ্যান ও রিক্সায় বন্যার্তদের জন্য খাবার, জামা-কাপড়, ঔষধ ও প্রয়োজনীয় সামগ্রী নিয়ে আসেন। বিকেলই বিপুল পরিমাণ ত্রাণ সংগ্রহ করতে হিমশিম খেতে দেখা যায় স্বেচ্ছাসেবকদের।
এর আগে টিএসসি ও ডাকসু ক্যাফেটেরিয়া ত্রাণে পূর্ণ হয়ে যাওয়ায় ত্রান সংগ্রহ চলে বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্ট্রাল মাঠ সংলগ্ন জিমনেশিয়ামে। ত্রাণ সামগ্রী মাঠের গ্যালারিতেও স্তুপ করে রাখা হয়। তবে বিকেল পার হতেই সেখানেও জায়গা সংকট দেখা যায়। সোমবার সেখানে আরো ত্রাণ রাখা হবে কি-না সেটা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।