আন্তর্জাতিক ডেস্ক: মার্কিন নাগরিকদের জন্য বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে জারিকৃত সতর্কতা শিথিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। গত জুলাই থেকে আগস্ট মাসে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ভ্রমণের ক্ষেত্রে নিজেদের নাগরিকদের নিরাপত্তায় সর্বোচ্চ (লেভেল ফোর) সতর্কতা জারি করেছিল দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। কিন্তু অন্তর্বর্তী সরকারের দায়িত্ব গ্রহণের পর ধীরে ধীরে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে আসায় এবার এ সতর্কতা শিথিল করে লেভেল থ্রিতে (তৃতীয় ধাপ) নামিয়ে আনা হয়েছে।
বৃহস্পতিবার (১২ সেপ্টেম্বর) মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের ওয়েবসাইটে এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দেওয়া হয়। গত জুলাইয়ের ভ্রমণ সতর্কতার আপডেট প্রকাশ করা হয়েছে এতে।
এতে দেখা যাচ্ছে, বাংলাদেশ ভ্রমণে এর আগে লেভেল ফোরের (চতুর্থ ধাপ) সতর্কতা কমিয়ে লেভেল থ্রিতে (তৃতীয় ধাপ) নামিয়ে আনা হয়েছে। ফলে এখন মার্কিন নাগরিকরা চাইলে কিছু পরামর্শ মেনে বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে পারবেন। এক্ষেত্রে মার্কিন নাগরিকদের সব ধরনের জমায়েত বিশেষ করে রাজনৈতিক জমায়েতগুলো এড়িয়ে চলতে বলা হয়েছে।
এছাড়া এখনও পার্বত্য চট্টগ্রাম ভ্রমণের ক্ষেত্রে বিশেষ সতর্ক থাকতে বলা হয়েছে মার্কিন নাগরিকদের। এক্ষেত্রে সতর্কতার লেভেল চারেই আছে।
এ বিষয়ে নির্দেশনায় বলা হয়েছে, সাম্প্রদায়িক সহিংসতা, অপরাধ, সন্ত্রাস, অপহরণ এবং অন্যান্য নিরাপত্তা ঝুঁকির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের খাগড়াছড়ি, রাঙ্গামাটি এবং বান্দরবান পার্বত্য অঞ্চলের জেলাগুলোতে ভ্রমণ না করতে বলা হয়েছে।
এতে বলা হয়েছে, অস্থিরতা, অপরাধ এবং সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের কারণে বাংলাদেশে ভ্রমণের বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করুন। কিছু এলাকায় ঝুঁকি বেড়েছে। বিক্ষোভ এবং রাজনৈতিক সমাবেশ এড়িয়ে চলুন; শান্তিপূর্ণ বিক্ষোভ সহিংসতায় রূপ নিতে পারে। ব্রেকিং ইভেন্টগুলোর জন্য স্থানীয় মিডিয়ায় নজর রাখুন।
নির্দেশনায় আরও বলা হয়, কোনো ডাকাতির প্রচেষ্টাকে শারীরিকভাবে প্রতিহত করবেন না। একটি নিরাপদ এলাকায় যান এবং স্থানীয় কর্তৃপক্ষের কাছে অপরাধমূলক ঘটনা রিপোর্ট করুন। কনস্যুলার পরিষেবাগুলোর আপডেটসহ সতর্কবার্তা পেতে স্মার্ট ট্র্যাভেলার এনরোলমেন্ট প্রোগ্রামে নথিভুক্ত করুন।
সেইসঙ্গে ফেসবুক ও এক্সে স্টেট ডিপার্টমেন্টকে অনুসরণ করতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ভ্রমণেচ্ছু মার্কিন নাগরিকদের। পাশাপাশি বলা হয়েছে, বাংলাদেশের জন্য কান্ট্রি সিকিউরিটি রিপোর্ট পর্যালোচনা করুন। জরুরি পরিস্থিতির জন্য পরিকল্পনা প্রস্তুত রাখুন। অনুগ্রহ করে ট্রাভেলার্স চেকলিস্ট পর্যালোচনা করুন।
মূলত, কোটা সংস্কার থেকে শুরু করে সরকার পতনের দাবিতে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের লাগাতার বিক্ষোভ চলাকালে সৃষ্ট গোলযোগপূর্ণ পরিস্থিতি বিবেচনায় গত ৫ আগস্ট বাংলাদেশ ভ্রমণে নিজেদের নাগরিকদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। সেখানে বলা হয়েছিল, বেসামরিক অস্থিরতা, অপরাধ ও সন্ত্রাসবাদের ঝুঁকির কারণে মার্কিন নাগরিকদের বাংলাদেশ ভ্রমণ করতে নিষেধ করা হলো।
৫ আগস্ট এ নিষেধাজ্ঞা জারি হলেও বিষয়টি প্রকাশ পায় গত ৪ সেপ্টেম্বর, যখন সামাজিক মাধ্যম এক্সে দেওয়া এক পোস্টে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে বাংলাদেশ এখনো ঝুঁকিপূর্ণ এবং তা এখনও লাল তালিকায় রয়েছে।
বাংলাদেশসহ ২১টি দেশকে লাল তালিকাভুক্ত করে চতুর্থ ধাপের ভ্রমণ সতর্কতা জারি করার কথা জানানো হয় ওই পোস্টে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের সর্বোচ্চ পর্যায়ের ভ্রমণ সতর্কতা। মার্কিন নাগরিকদের পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত এসব দেশ ভ্রমণ না করতে পরামর্শ দেওয়া হয় এক্স পোস্টটিতে।
নাগরিকদের ভ্রমণের ক্ষেত্রে মার্কিন লাল তালিকাভুক্ত অন্য দেশগুলো হলো আফগানিস্তান, বেলারুশ, বুরনিকা ফাসো, মিয়ানমার, সেন্ট্রাল আফ্রিকান রিপাবলিক, হাইতি, ইরান, ইরাক, লেবানন, লিবিয়া, মালি, উত্তর কোরিয়া, রাশিয়া, সোমালিয়া, দক্ষিণ সুদান, সুদান, সিরিয়া, ইউক্রেন, ভেনেজুয়েলা এবং ইয়েমেন।