খুলনা প্রতিনিধি: অর্ন্তবর্তী সরকারকে উদ্দেশ্য করে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বার চন্দ্র রায় বলেছেন, আমরা নির্বাচন চাই, নির্বাচনের সময় নির্ধারণ করে জানিয়ে দেন। আমাদেরকে বিরোধীদল ভাববেন না। আমাদেরকে রাস্তায় নামাবেন না। মঙ্গলবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে খুলনা নগরীর শিববাড়ি মোড়ে বিএনপির বিভাগীয় সমাবেশে তিনি এ কথা বলেন। আন্তর্জাতিক গণতন্ত্র দিবস উপলক্ষে এই সমাবেশের আয়োজন করা হয়।
বিএনপি ও তারেক রহমান সম্পর্কে দায়িত্বজ্ঞানহীন কথা না বলার হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করে তিনি বলেন, আমাদেরকে বিরোধী দলে ঠেলে দেবেন না। উস্কানিমূলক মন্তব্য করলে দলের নেতাকর্মীরা চুপ করে বসে থাকবে না। সারাদেশে বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে শেখ হাসিনা সরকারের রাজনৈতিক মামলা প্রত্যাহার না করার কঠোর সমালোচনা করে গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আপনাদের নামের মামলাগুলো তো প্রত্যাহার করে নিলেন, বিএনপি নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধের মামলাগুলো কেন এতোদিনে প্রত্যাহার করে নিলেন না?
সমাবেশে গয়েশ্বর চন্দ্র আরও বলেন, গত ১৬ বছরে স্বৈরাচারী শেখ হাসিনার পতন আন্দোলনে কি আমরা রক্ত দেইনি? আমাদের হাজার হাজার নেতাকর্মী খুন হয়েছে, গুম হয়েছে। বৈষম্যহীন সংস্কারের নামে নতুন করে বৈষ্যমের সৃষ্টি করবেন না। তিনি বলেন, একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজনের জন্য যতটুকু সময় প্রয়োজন এবং সেজন্য যেসব সংস্কার পদক্ষেপ নিতে হবে, সে পর্যন্ত অন্তর্বর্তী সরকারকে বিএনপি সমর্থন দেবে।
তিনি আরও বলেন, ফ্যাসিস্ট হাসিনার পতনের জন্য বিএনপির নেতাকর্মীরা ১৬ বছর ধরে আন্দোলন করেছে। তাকে ১৬ দিনের হিসেবে বিচার করলে চলবে না। সরকারের পতন হয়েছে কিন্তু এখনও গণতন্ত্র ফেরত পাইনি। ভোট কেন্দ্রে গিয়ে নিজের ভোট নিজের হাতে না দেয়া পর্যন্ত আমরা ঘরে ফিরে যাবো না। এতোদিন শেখ হাসিনার ফ্যাসিস্ট দোসরদের বিরুদ্ধে প্রকাশ্য ষড়যন্ত্র প্রতিহত করেছি। এখন অদৃশ্য ষড়যন্ত্রকারীদের মোকাবিলা করতে বিএনপি নেতাকর্মী ও সমর্থকরা প্রস্তুত।
সমাবেশে বিএনপির বিভাগীয় ভারপ্রাপ্ত সাংগঠনিক সম্পাদক অনিন্দ্য ইসলাম অমিত অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টার দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেন, জনপ্রশাসন উপদেষ্টা আলী ইমাম মজুমদার সূক্ষভাবে আওয়ামী লীগের দোসরদের দিয়ে প্রশাসন সাজাচ্ছেন। এর ফল ভালো হবে না। শেখ হাসিনার স্বৈরচারী দোসরদের জেলা প্রশাসক হিসেবে নিয়োগ দিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনের ফলকে ধুলিস্যাৎ করে নতুন করে বৈষম্য সৃষ্টি করে গণহত্যাকারীদের ফিরে আসার পথ সুগম করছেন।
সমাবেশে বিএনপির ছাত্র বিষয়ক সম্পাদক রকিবুল ইসলাম বকুল বলেন, ফ্যাসিস্ট সরকারের গেল ১৬ বছরে খুলনার খালিশপুরে বন্ধ সকল পাটকল চালুর উদ্যোগ নিতে হবে। আওয়ামী স্বৈরাচার ও তাদের দোসরদের গ্রেপ্তারপূর্বক দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে বিএনপির তথ্য বিষয়ক সম্পাদক আজিজুল বারী হেলাল বলেন, সংগ্রাম কিন্তু শেষ হয়নি, সকল ষড়যন্ত্রের বিষ দাঁত উপড়ে ফেলতে হবে। ড. ইউনূসের নেতৃত্বাধীন সরকারকে সমর্থন করি, এই সরকারের ব্যর্থতা মানে বাংলাদেশের ব্যর্থতা। এই সরকারকে দ্রুত নির্বাচনের মাধ্যমে জনগণের সরকার গঠনের দিকে পদক্ষেপ নেয়ার আহবান জানান তিনি।
সমাবেশ শেষে শিববাড়ি মোড় থেকে র্যালি বের হয়। র্যালিটি লোয়ার যশোর রোড হয়ে পাওয়ার হাউজ মোড়, ফেরিঘাট মোড়, ডাকবাংলো মোড়, পিকচার প্যালেস মোড় হয়ে খুলনা সার্কিট হাউজ ময়দান, খুলনা জিলা স্কুলের সামনে ঘুরে কে ডি ঘোষ রোডের দলীয় কার্যালয়ের সামনে গিয়ে শেষ হয়। সমাবেশে খুলনা বিভাগের ১০ জেলার নেতাকর্মীরা অংশ নেন।