স্টাফ রিপোর্টার: জুলাই-আগস্টে ছাত্র জনতার বিপ্লবের পর ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ভারতে পালিয়ে যান সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। তারপর থেকে নেতাকর্মীরাও রয়েছেন পলাতক। প্রকাশ্য উপস্থিতি নেই নেতাকর্মীদের। তবে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে হুটহাট দলের পেজ থেকে দেয়া হচ্ছে নানা রকম বার্তা।
বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) আবারও এক দীর্ঘ বার্তা দেয়া হয়েছে আওয়ামী লীগের অফিশিয়াল পেজ থেকে। অফিশিয়াল এই পেজে হুঁশিয়ারি দিয়ে বলা হয়, কেউ যদি মনে করেন অত্যাচার, নির্যাতন করে আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করে দিবেন তাহলে তারা বোকার স্বর্গে বাস করেন। এছাড়া সেখানে দলের নেতাকর্মীদের ওপর অত্যাচার নির্যাতন করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করা হয়েছে।
আওয়ামী লীগ বিবৃতিতে জানায়, আওয়ামী লীগের শিকড় অনেক গভীরে, এই দেশের জন্মের সাথে আওয়ামী লীগের সম্পর্ক। দেশের ঐতিহ্যবাহী দল আওয়ামী লীগ এর স্বমহিমায় ফিরে আসবে, দেশের অসমাপ্ত উন্নয়নের কাজ এগিয়ে নিয়ে যাবে। বাংলাদেশকে বিশ্বের বুকে একটি উন্নত জাতি হিসাবে প্রতিষ্ঠিত করবে।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, জানি আপনারা ভালো নেই। দেশের সার্বিক অবস্থা চারদিকে সবার মাঝে এক সংকটময় অরাজক পরিস্থিতি তৈরি করেছে। বাংলাদেশ আওয়ামী লীগ এবং দলের সভানেত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনা যে কোনো পরিস্থিতিতে আপনাদের পাশে আছেন এবং থাকবে ইনশাল্লাহ। আপনারা সবাই মহান সৃষ্টিকর্তার কাছে দেশ ও দেশের জনগনের জন্য দোয়া করবেন।
বিবৃতিতে বলা হয়, আপনারা সবই জানেন, সবই দেখেছেন। এখন হয়তো সবকিছু অনুধাবন করতে পারছেন, কী পরিস্থিতিতে দেশরত্ন শেখ হাসিনা দেশ ছেড়েছিলেন। ষড়যন্ত্রকারীরা আরও লাশ চেয়েছিলে। তিনি চাননি আর কোনো বাবা-মায়ের বুক খালি হোক। তাই সময়ের প্রয়োজনে এই সাময়িক পদক্ষেপ নিয়েছেন। আপনারা দেখেছেন, মহামান্য আদালতের রায় শিক্ষার্থীদের সব দাবির পক্ষেই গিয়েছে। দেশরত্ন শেখ হাসিনা ও আমাদের সরকার তাদের সকল দাবি মেনে নিয়ে তদন্ত সাপেক্ষে সুষ্ঠু বিচারের নিশ্চয়তা দিয়েছিল। নিহত সকল পরিবারের পাশে দাঁড়িয়েছিল, আহতদের বিনা খরচে চিকিৎসার ব্যবস্থা করেছিল। তারপরও কেন এই অরাজকতা, এতো হত্যা, এতো ধ্বংসযজ্ঞ করা হলো? কারণ, এর পিছনে ছিল ক্ষমতা দখলের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক এক ষড়যন্ত্র। আপনারা দেখেছেন ১৬ জুলাই থেকেই ছাত্রদের আন্দোলনকে হাইজ্যাক করে কীভাবে দেশের রাজনৈতিক অপশক্তি ও বিদেশি এজেন্টরা কিভাবে হত্যা ও অগ্নিসংযোগ শুরু করে। এমনকি ছাত্রদের উপর ৭.৬২ রাইফেল ব্যবহার করে গুলি চালিয়ে পরিস্থিতিকে অগ্নিগর্ভ করে তোলা হয়। কীভাবে ঢাকা শহরে অবস্থিত রাষ্ট্রীয় স্থাপনাগুলো ধ্বংস করা হয়েছে। কীভাবে মসজিদ, মন্দির, গির্জা, বৌদ্ধ মঠে হামলা ও ভাঙচুর চালানো হয়েছে। কত নিষ্ঠুরভাবে পুলিশ ও সাংবাদিক হত্যা এবং মসজিদের ইমাম, মুয়াজ্জিন, শিক্ষক, সাংস্কৃতিক কর্মীদের লাঞ্ছিত করা হয়েছে। পাঁচই আগস্ট কীভাবে বাঙালি জাতির মহান স্বাধীনতা ও মুক্তিযুদ্ধের সুতিকাগার, জাতির পিতার স্মৃতি বিজড়িত বঙ্গবন্ধু স্মৃতি জাদুঘর ধ্বংস করা হয়েছে।
বিবৃতিতে অভিযোগ করে বলা হয়, বিশ্ব ঐতিহ্যের অন্যতম নিদর্শন জাতীয় সংসদ ভবন ভাঙচুর ও লুটপাট করা হয়েছে এছাড়া প্রধান বিচারপতির বাসভবন, নির্বাচন কমিশনসহ রাষ্ট্রের বিভিন্ন গুরত্বপূর্ণ ব্যাক্তিবর্গের সরকারি, বেসরকারি অফিস আদালত বাসভবন পোড়ানো ও লুটপাট করা হয়েছে।
বলা হচ্ছে, আপনারাই ভেবে দেখুন, এইসব সহিংসতা ও ধ্বংসযজ্ঞের সাথে কোটা আন্দোলনের কী সম্পর্ক ছিল যে পুলিশ বাহিনী পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা রাখে, পরিকল্পিতভাবে কীভাবে তাদেরকে নির্বিচারে হত্যা করা হয়েছে এবং ৪৫০টি থানা ও অস্ত্রাগার লুট করা হয়েছে। নিষ্ঠুরভাবে একজন অন্তঃসত্ত্বা মহিলা পুলিশ অফিসারকে পুড়িয়ে মারা হয়েছে। কতজন পুলিশকে হত্যা করা হয়েছে এই সংখ্যাও জাতির সামনে এখনও সরকার প্রকাশ করছে না। এরসবই ছিল ক্ষমতাদখলের একটি ষড়যন্ত্র। তখন সরকার আরও কঠোর হলে হয়তো আরও লাশ পড়তো, আরও অনেক বাবা-মায়ের বুক খালি হতো। তাই মানুষের জানমাল রক্ষায় দেশরত্ন শেখ হাসিনা এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন।
বিবৃতিতে আওয়ামী লীগ অভিযোগ এনেছে পাঁচই আগস্টের পর দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের উপর নির্যাতন করা হচ্ছে। এ বিবৃতিতে সকল ‘হত্যাকাণ্ড, লুটতরাজ, ভাংচুর, আগুন সন্ত্রাস, নির্যাতন, চাঁদাবাজির সুষ্ঠু তদন্ত দাবি করা হয়েছে।