স্টাফ রিপোর্টার: বর্তমান ডিজিটাল যুগে হ্যাকিং, পরিচয় চুরি ও সাইবার প্রতারণার মতো ক্রমবর্ধমান হুমকি থেকে সুরক্ষায় সাইবার নিরাপত্তা আইন অপরিহার্য বিষয়। এটি আর্থিক ও জ্বালানি খাতসহ গুরুত্বপূর্ণ সেক্টরগুলোর সুরক্ষা নিশ্চিত, নিরাপদ ডিজিটাল লেনদেনের সুযোগ বৃদ্ধি এবং অনলাইন সেবার প্রতি জনগণের আস্থা সুদৃঢ় করে। তবে প্রচলিত সাইবার নিরাপত্তা আইনে কিছু বিতর্কিত বিষয় রয়েছে। ফলে বাংলাদেশ সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩-এ জরুরি সংশোধন করতে হবে।
মঙ্গলবার (০৮ অক্টোবর) রাজধানীর ব্র্যাক সেন্টার ইনে অনুষ্ঠিত এক গোলটেবিল আলোচনায় সাইবার বিশেষজ্ঞরা এসব কথা বলেন।
টেলিকম অ্যান্ড টেকনোলজি রিপোর্টার্স নেটওয়ার্ক বাংলাদেশ (টিআরএনবি) ও আনোয়ার টেকনোলজিসের যৌথ উদ্যোগে ‘সাইবার নিরাপত্তা আইন : নিরাপত্তা ও মতপ্রকাশের স্বাধীনতার ভারসাম্য’ শীর্ষক এ অনুষ্ঠানে সম্মানিত অতিথি ছিলেন তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী এবং বিটিআরসি চেয়ারম্যান মেজর জেনারেল (অব.) এমদাদ উল বারী।
সভায় সভাপতিত্ব করেন টিআরএনবি সভাপতি সমীর কুমার দে। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন- টিআরএনবির সাবেক সভাপতি ও ভিউজ বাংলাদেশের সম্পাদক রাশেদ মেহেদী। স্বাগত বক্তব্য দেন টিআরএনবি সাধারণ সম্পাদক মাসুদুজ্জামান রবিন। এছাড়া আলোচনায় অংশ নেন হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের অ্যালামনাই নাবিল বি আরিফ, বিডি ফাইন্যান্সের ব্যবস্থাপনা পরিচালক কায়সার হামিদ, রবির কোম্পানি সচিব ব্যারিস্টার সাহেদ আলম, এমটব মহাসচিব মোহাম্মদ জুলফিকার, বেসিস সাবেক সভাপতি সৈয়দ আলমাস কবির, তথ্যপ্রযুক্তিবিদ সুমন আহেমদ সাবির, আনোয়ার গ্রুপ অব ইন্ডাস্ট্রিজের প্রযুক্তি বিভাগ আনোয়ার টেকনোলজিসের সহ-প্রতিষ্ঠাতা ওয়ায়েজ আর হোসেনসহ আরও অনেকে।
এ সময় সাইবার সুরক্ষা আইন হালনাগাদ করা হচ্ছে জানিয়ে তথ্যপ্রযুক্তি সচিব শীষ হায়দার চৌধুরী বলেন, ৩৬ জুলাইয়ের বিপ্লবের মাধ্যমে আমরা বাক-স্বাধীনতা ফিরে পেয়েছি। একে অর্থবহ করতে আমাদের সবাইকে দায়িত্বশীল হতে হবে। আমার দপ্তর থেকে মাত্র তিন-চার ব্যক্তি দিয়ে জাতীয় সাইবার নিরাপত্তা কর্তৃপক্ষ (এনসিএসএ) চলছে। অথচ একে আরও শক্তিশালী করা দরকার। একইসঙ্গে নাগরিকদের নিয়ে বেশি বেশি নাগরিক সংলাপ করতে চাই। সব পক্ষের মত নিয়েই এই আইন সংশোধন করা হবে।
বিটিআরসি চেয়ারম্যান এমদাদ উল বারী বলেন, ডেটা সুরক্ষা ও তথ্য শেয়ারিংয়ের ক্ষেত্রে ভারসাম্য রক্ষা সহজ নয়। এর মধ্যে রয়েছে ব্যক্তি-প্রতিষ্ঠান ভেদের দ্বন্দ্ব। এর মধ্যে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ বাক-স্বাধীনতায় ভারসাম্য রক্ষা। সংস্কৃতি, জাতীয়তার সীমার মধ্যে যদি আমরা দূরত্ব কমাতে পারি তাহলে সমাধান সহজ হবে। কোন প্রযুক্তি আমরা কীভাবে ব্যবহার করব সে জন্য আগাম চিন্তা করে আগামীতে কোন মূল্যবোধ নিয়ে চলব, কতটুকু যন্ত্রের ওপর নির্ভর করব- তা নির্ধারণ করতে পারব।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইনটিতে কিছু বিতর্কিত বিষয় থাকলেও এটি দেশের ডিজিটাল অবকাঠামো রক্ষা, অনলাইন লেনদেনের নিরাপত্তা এবং সাইবার অপরাধ মোকাবিলায় অপরিহার্য। সেজন্য জাতীয় নিরাপত্তা এবং নাগরিক অধিকার সুরক্ষার মধ্যে ভারসাম্য প্রতিষ্ঠার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দেন তারা।