স্টাফ রিপোর্টার: সম্প্রতি অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস বিদেশি একটি গণমাধ্যমে সাক্ষাৎকার দিয়েছেন ‘নতুন সংবিধানে নিয়মিত সরকারের মেয়াদ হয়তো চার বছর হচ্ছে’ – এমন মন্তব্য করার পর নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে সরকারের মেয়াদের বিষয়টি।
১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সঙ্গে যুদ্ধে মহান বিজয়ের মাধ্যমে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের জন্ম জন্য হয়। স্বাধীনতার পর থেকে এই ৫৩ বছর সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর হয়ে আসছে। চার বছর করার আলোচনাও কখনও শোনা যায়নি। তবে প্রধান উপদেষ্টার মন্তব্যের পর নতুন করে আলোচনায় উঠে এসেছে সরকারের মেয়াদ প্রসঙ্গটি।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূসের এ মন্তব্যের পর বিষয়টি নিয়ে প্রায় সর্বমহলে ধোঁয়াশা সৃষ্টি হয়েছে। বিভিন্ন রাজনৈতিক দল ও বিশেষজ্ঞরা এর প্রয়োজনীয়তা ও সম্ভাবনা নিয়ে নিজেদের মতামত জানিয়েছেন।
প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক ইউনূসের ভাষ্যমতে, “নতুন সংবিধানে সরকারের মেয়াদ চার বছর হতে পারে, কারণ জনগণ দ্রুত অগ্রসর হতে চায়।” তবে তিনি স্পষ্ট করে বলেননি যে, এটি অন্তর্বর্তী সরকারের ক্ষেত্রে হবে, নাকি ভবিষ্যতে নিয়মিত সরকারের জন্য এই সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। তার মন্তব্যের পর তার প্রেস উইং এই ব্যাখ্যা দিয়ে জানিয়েছে, ইউনূস অন্তর্বর্তী সরকারের মেয়াদ নিয়ে কিছু বলেননি; বরং তিনি সাধারণ সংসদীয় মেয়াদকে চার বছর করতে পারে এমন মন্তব্য করেছেন।
তবে বাংলাদেশে সরকার ও সংসদের মেয়াদ নিয়ে এই ধরনের আলোচনা নতুন নয়। সংবিধান অনুযায়ী বর্তমান সরকারের মেয়াদ পাঁচ বছর, যা পরিবর্তন করতে হলে সাংবিধানিক সংশোধন প্রয়োজন হবে। যদিও বিএনপি এবং জামায়াতসহ প্রধান রাজনৈতিক দলগুলো আনুষ্ঠানিকভাবে এ বিষয়ে কিছু বলেনি। তবে তাদের শীর্ষ নেতারা সংবাদমাধ্যমে সরকারের মেয়াদ কমানোর বিরুদ্ধে প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক শেখ হাফিজুর রহমান কার্জন গণমাধ্যমে বলেন, সরকার বা সংসদের মেয়াদ কমানোর আলোচনা অনেকটা অপ্রয়োজনীয় বিষয়। এটি যদি প্রয়োজনও হয়, তবে শুধুমাত্র নির্বাচিত সংসদই এটি করতে পারে।
বেসরকারি সংস্থা সুজনের সম্পাদক ড. বদিউল আলম মজুমদার মনে করেন, বাংলাদেশের রাজনৈতিক সংস্কৃতিতে সরকারের মেয়াদ নির্ধারণের বিষয়ে এতদিন খুব একটা আলোচনা হয়নি। তিনি বলেন, গণতান্ত্রিক সংস্কৃতির মধ্যে সরকারের মেয়াদ কোনও বড় বিষয় নয়, যদি শাসক ভালো না হয়, তাহলে মেয়াদ কত তা গুরুত্বপূর্ণ নয়।
এদিকে সংবিধান সংশোধন নিয়ে কাজ করা একটি কমিশন ইতোমধ্যে এই বিষয়ে আলোচনা শুরু করেছে। তবে, এটির চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত এখনও আসেনি। ২০০৭ সালে কানাডায় পার্লামেন্টের মেয়াদ পাঁচ বছর থেকে কমিয়ে চার বছর করা হয় এবং ইউরোপের অনেক দেশে প্রধানমন্ত্রীর মেয়াদ চার বছর হয়ে থাকে।
বাংলাদেশের রাজনৈতিক ইতিহাসে সরকার বা সংসদের মেয়াদ নিয়ে কোনো বিশেষ প্রস্তাবনা আগে শোনা যায়নি। এমনকি ১৯৯০ সালে “তিন জোটের রূপরেখায়” বা ২০০৪ সালে বিভিন্ন রাজনৈতিক আলোচনা এবং ২০০৮, ২০১৭ সালের নির্বাচনী পরিকল্পনায়ও এই বিষয়টি অন্তর্ভুক্ত ছিল না। সূত্র: বিবিসি বাংলা
বর্তমানে চার বছরের মেয়াদ নিয়ে আলোচনা মূলত প্রধান উপদেষ্টা ইউনূসের মন্তব্যের পরই বিষয়টি চিহ্নিত হয়েছে। তবে এটি কেবল একটি ব্যক্তিগত মতামত হতে পারে। বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে এর প্রয়োজনীয়তা এবং বাস্তবতা নিয়ে এখনো স্পষ্ট মতামত তৈরি হয়নি। এখন সকলের নজর থাকবে সংবিধান সংশোধনের প্রক্রিয়া এবং সংশ্লিষ্ট কমিশনের সুপারিশের দিকে। যা ভবিষ্যতে দেশের রাজনৈতিক কাঠামোতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে।