কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার আওতায় আনা হচ্ছে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক

নিরাপত্তা নিশ্চিতে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ককে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা বা আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) প্রযুক্তির আওতায় আনা হচ্ছে। ওই লক্ষ্যে ২৫০ কিলোমিটার বিস্তৃত মহাসড়কের উভয় পাশে ১ হাজার ৪২৭টি সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা স্থাপন করা হচ্ছে। ওসব ক্যামেরায় ফুটেজ সংরক্ষণ থাকবে এক মাস পর্যন্ত। এ উদ্যোগের ফলে যানবাহনের গতিবিধি পর্যবেক্ষণের পাশাপাশি নির্দিষ্ট গতিসীমা ক্রস করলেই অটো মামলা হয়ে যাবে। তাছাড়া মহাসড়কে দুর্ঘটনা কমাতে, শৃঙ্খলা ফেরাতে এবং থ্রি-হুইলার যানবাহন বন্ধে কার্যকর ভূমিকা রাখবে এই প্রযুক্তি। বৃহত্তর একটি ডাটা সেন্টার, পাঁচটি কন্ট্রোল রুম ও ১৬টি চেকপোস্টের মাধ্যমে হাইওয়ে পুলিশের তত্ত্বাবধানে তা নিয়ন্ত্রিত হবে। হাইওয়ে পুলিশ সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, অটোমেটিক নম্বর প্লেট শনাক্তকরণ, যানবাহনের গতিপথ নির্ধারণ, হাইস্পিড ডিটেকশন ও ট্রাফিক আইন লঙ্ঘনকারী যান এআই প্রযুক্তিতে দ্রুত শনাক্ত করা যাবে। শক্তিশালী ক্যামেরায় থাকবে অন্ধকার ও কুয়াশাচ্ছন্ন আবহাওয়ায়ও রাস্তায় চলাচলরত যানবাহনের নম্বর প্লেটের স্পষ্ট ছবি ধারণ ও সংরক্ষণ করার ব্যবস্থা। আর মহাসড়কে যানজটসহ কোথাও কোনো ঝামেলা বা অপরাধের কারণে লোকসমাগম বেশি হলে আগাম সংকেত চলে যাবে মনিটরিং সেলে।
সূত্র জানায়, মহাসড়কে সেন্সরযুক্ত ক্যামেরা বসানোর পর কোনো যানবাহন আইন অমান্য করার পর পুলিশ না ধরলেও সমস্যা নেই। কারণ মামলার তথ্য যানবাহনের মালিকের ঠিকানা ও মোবাইল ফোনে চলে যাবে। ফলে মহাসড়কে কোনো যানবাহন অপরাধ করে পার পাবে না। এভাবেই নিয়ন্ত্রণ করা হয় উন্নত বিভিন্ন দেশে যানবাহনের অপরাধ। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে সার্বক্ষণিক নজরদারি বাড়াতে ঢাকা, গাজীপুর, কুমিল্লা, দাউদকান্দি ও চট্টগ্রামে জোন করা হয়েছে। ইতিমধ্যে শেষ পর্যায়ে রয়েছে ২৫০ কিলোমিটারজুড়ে সিসি ক্যামেরা বসানোর কাজ। ১ হাজার ৪২৭টি সিসি ক্যামেরার মধ্যে ১ হাজার ২০০-এর অধিক ক্যামেরা বসানো হয়েছে। বাকিগুলো চলতি বছরের জুনের মধ্যে বসানো শেষ হবে। তার মধ্যে ১৬টি লং ভিশন ক্যামেরা, ৪৭১টি ৪এমপি পিটিজেড ডোম ক্যামেরা, ৯২৪টি বুলেট ক্যামেরা ও ১৬টি চেক পয়েন্ট ক্যামেরা থাকবে। বিদ্যুৎ চলে গেলে ব্যাকআপ পাওয়ার সিস্টেমসহ ৪৯০টি স্থানে ভিডিও সাইটপোল থাকবে। নারায়ণগঞ্জের মেঘনা ঘাটে অবস্থিত ৫.৩০ টেটাবাইট সম্পন্ন একটি সেন্ট্রাল কমান্ড কন্ট্রোল সেন্টার, পাঁচটি মনিটরিং সেন্টার, ৫ পেটাবাইটের ডেটা সেন্টার, ডেটা সেন্টারের মডিউলার সিস্টেম, নেটওয়ার্ক সিস্টেম, ভিডিও ম্যানেজমেন্ট সিস্টেম, ভিপিও অ্যানালাইসিস সিস্টেম ও অটোমেটিক নম্বর প্লেট রিকগনিশন সিস্টেম রয়েছে।
সূত্র আরো জানায়, যে কোনো যানবাহন এআই প্রযুক্তি ব্যবহার করে সার্চ করে বের করা যাবে। এই প্রযুক্তিতে নম্বর প্লেট, গাড়ির রং বা গাড়ির যেকোনো চিহ্ন দিয়েও যানবাহন শনাক্ত করা যাবে। অবৈধ পার্কিং, এলোমেলো লেন পরিবর্তন, তিনজন আরোহন বা হেলমেটবিহীন মোটরসাইকেলও শনাক্ত এবং তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেয়া যাবে। আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) ব্যবহার করে ইতোমধ্যে ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত ১১টি, হত্যাকান্ডে দুটি, চুরিতে সাতটি, দস্যুতায় দুটি, ছিনতাইয়ে তিনটি গাড়ি এবং সড়ক দুর্ঘটনায় জড়িত ১৮টি গাড়ি শনাক্ত করা হয়েছে।
এ বিষয়ে হাইওয়ে পুলিশ প্রধান অতিরিক্ত আইজিপি মো. দেলোয়ার হোসেন মিঞা জানান, বিটিসিএলের অপটিক্যাল ফাইবারে সংযুক্ত এআই প্রযুক্তির ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক ২৪ ঘণ্টা হাইওয়ে পুলিশের নজরদারিতে থাকবে এবং যানবাহনের অপরাধ নিয়ন্ত্রণ করা যাবে। চলতি বছরের জুনের মধ্যে এডিপির অর্থায়নে নির্মিত এই প্রজেক্টের কাজ সম্পূর্ণ শেষ হবে। আর বিআরটিএর সংযোগ পেলেই চালু হবে ডিজিটাল অটোফাইন সিস্টেম।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ