বাস থেকে ফেলে অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগ, মহাসড়ক অবরোধ

গাজীপুরের শ্রীপুরে বাস থেকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে এক অটোরিকশা চালককে হত্যার অভিযোগ উঠেছে। এ ঘটনায় ক্ষুব্ধ হয়ে নিহতের স্বজন ও সহকর্মীরা মহাসড়ক অবরোধ করে বিক্ষোভ করেছেন।

বিক্ষোভ ও যানজট

মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকাল ৮টা থেকে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের গড়গড়িয়া মাস্টারবাড়ি এলাকায় বিক্ষোভ শুরু হয়। নিহতের স্বজন ও স্থানীয় অটোরিকশা চালকরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান। এ সময় তারা মহাসড়ক অবরোধ করলে যানবাহন চলাচল পুরোপুরি বন্ধ হয়ে যায়।

সাড়ে তিন ঘণ্টা ধরে চলা এই অবরোধের ফলে মহাসড়কের দুই পাশে প্রায় ১০ কিলোমিটারজুড়ে দীর্ঘ যানজট সৃষ্টি হয়। এতে যাত্রীরা চরম দুর্ভোগে পড়েন।

হত্যার অভিযোগ

নিহত অটোরিকশা চালক রিটন মিয়া (৩৫) গাজীপুর সদরের শিরির চালা গ্রামের দুলাল মিয়ার ছেলে। নিহতের পরিবারের দাবি, ভাড়া নিয়ে কথাকাটাকাটির জেরে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসের হেলপার তাকে ধাক্কা দিয়ে ফেলে দেয়। এতে তিনি ঘটনাস্থলেই প্রাণ হারান।

ঘটনার পেছনের কারণ

জানা গেছে, সোমবার (৩ মার্চ) রাতে তাকওয়া পরিবহনের একটি বাসের হেলপারের সঙ্গে রিটন মিয়ার বাকবিতণ্ডা হয়। বিষয়টি নিয়ে উত্তপ্ত পরিস্থিতি তৈরি হলে হেলপার হঠাৎ রিটনকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে ফেলে দেয়। গুরুতর আহত অবস্থায় রিটন মিয়া ঘটনাস্থলেই মারা যান।

এ ঘটনার খবর ছড়িয়ে পড়লে, রাত থেকেই স্থানীয় অটোরিকশা চালক ও এলাকাবাসীর মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছিল। পরদিন সকালে ক্ষোভে ফেটে পড়ে তারা মহাসড়কে নেমে আসে এবং অবরোধ শুরু করে।

বিক্ষোভকারীদের দাবি

বিক্ষোভকারীরা বলেন, “এভাবে একটি নিরীহ মানুষকে হত্যা করা যাবে না। আমরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার ও বিচার চাই।”

তারা আরও বলেন, “সাধারণ যাত্রী ও চালকদের সঙ্গে বাস হেলপারদের এমন আচরণ নতুন কিছু নয়। এ ধরনের ঘটনার সুষ্ঠু তদন্ত ও অপরাধীদের কঠোর শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে।”

পুলিশের অবস্থান

বিক্ষোভ চলাকালে মাওনা হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আইয়ুব আলী বলেন, “অবরোধকারীদের শান্ত করতে এবং পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনার চেষ্টা চলছে।”

পুলিশ ঘটনাস্থলে উপস্থিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করার চেষ্টা করে। তবে, নিহতের স্বজন ও স্থানীয় চালকরা দোষীদের দ্রুত গ্রেপ্তার না করা পর্যন্ত বিক্ষোভ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন।

স্থানীয়দের প্রতিক্রিয়া

এই হত্যাকাণ্ড ও মহাসড়ক অবরোধ নিয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা ক্ষোভ প্রকাশ করেন। তাদের মতে, “এই রকম ঘটনা আগেও ঘটেছে, কিন্তু অপরাধীরা শাস্তি পায় না। তাই এ ধরনের সহিংসতা বন্ধ হচ্ছে না।”

একজন স্থানীয় দোকানদার বলেন, “প্রতিদিন এই মহাসড়কে সহিংসতা ও দুর্ঘটনা ঘটছে। সাধারণ মানুষ নিরাপদে চলাচল করতে পারছে না। প্রশাসনকে আরও কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে।”

যাত্রীদের দুর্ভোগ

অবরোধের ফলে মহাসড়কে আটকে পড়া যাত্রীদের চরম ভোগান্তির শিকার হতে হয়। অনেকে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজটে আটকে থাকেন।

একজন যাত্রী বলেন, “আমার জরুরি কাজে ঢাকায় যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু সকাল থেকে রাস্তায় বসে আছি। কবে এই সমস্যার সমাধান হবে?”

এদিকে, মহাসড়ক অবরোধের কারণে স্কুল-কলেজগামী শিক্ষার্থী ও অফিসগামী কর্মজীবীরা মারাত্মক সমস্যায় পড়েন।

পরবর্তী ব্যবস্থা

পুলিশ ও স্থানীয় প্রশাসন বিক্ষোভকারীদের সঙ্গে আলোচনার চেষ্টা চালাচ্ছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী আশ্বস্ত করেছে যে, অভিযুক্ত বাস হেলপার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে তদন্ত করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে, নিহতের পরিবার ও সহকর্মীরা দ্রুত বিচার এবং দোষীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবিতে অনড় রয়েছেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ