Search
Close this search box.

ববির প্রশ্নপত্রে শেখ হাসিনার বিতর্কিত উক্তির উদাহরণ

বরিশাল প্রতিনিধি: দেশত্যাগ করা সদ্য সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একটি বিতর্কিত উক্তির উদাহরণ টেনে পরীক্ষায় প্রশ্নপত্র করেছে বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (ববি) এক শিক্ষক। সরকারি চাকরিপ্রার্থীদের নিয়ে শেখ হাসিনার উক্তিটি ছিলো- ‌‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী না? যত রাজাকারের বাচ্চা, নাতি পুতিরা মেধাবী?’। বাংলা বিভাগের ভাষাবিজ্ঞান কোর্সের মিডটার্ম পরীক্ষার প্রশ্নপত্রে এই উক্তি উদাহরণ টেনে প্রশ্নটি করা হয়।

বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচিত হচ্ছে। এমন সাহসী সৃজনশীল পদক্ষেপ নিয়ে প্রশংসা করছেন অনেকে। গত ২৮ আগস্ট করা প্রশ্নপত্রে বলা হয়, স্বরতরঙ্গ (ইনটোনেশন) বলতে কী বুঝ? ‘মুক্তিযোদ্ধার সন্তান নাতি-পুতিরা কেউ মেধাবী না? যত রাজাকারের বাচ্চা, নাতি-পুতিরা মেধাবী?’ উক্ত বাক্যটির বাক্যিক ব্যবহারের ক্ষেত্রে স্বরতরঙ্গের সাধারণ, উচু ও নিচু তিন অবস্থান বর্ণনা করে বুঝিয়ে দাও।

প্রশ্নপত্রটি এক শিক্ষার্থী ফেসবুকে পোস্ট করলে প্রশ্নপত্রটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে সারাদেশে ছড়িয়ে পরে। তবে বিষয়টি সকল আলোচনা ও ইতিবাচক মন্তব্য করে বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশ্নপত্র এমন সৃজনশীলই হওয়া উচিত। তবে এনিয়ে এক শিক্ষার্থী জানান, এসব প্রশ্ন করার স্বাধীনতা ৫ আগস্টের আগে পেলে বেশি ভালো হত। আগে দেখতাম প্রায় সবাই একটি পক্ষের গুণগান গাইতো। তবে ৫ আগস্টের পরে বলার ও লেখার স্বাধীনতা বৃদ্ধি পেয়েছে। এটা কৌশল না হয়ে সত্যিকারের উপলব্ধি হোক সকল শিক্ষকদের মধ্যে।

বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আলী আকবার বলেন, Intonation বা স্বরাঘাত হলো কথা বলার মোক্ষম অস্ত্র। যদি স্বরাঘাতের তারতম্য ঘটে তাহলে কথার ভাবের পরিবর্তন হয়ে যায়। অর্থের ভাবগত পরিবর্তন ঘটে। “আহ্” গভীরভাবে বললে যে মিনিং হয়। “আহ” হালকাভাবে বললে অন্য ভাব বা অর্থ দাড়ায়। অর্থাৎ স্বরের ওঠা নামা একটা গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ভাব প্রকাশের জন্য সুতরাং উদ্দীপকটির কথার জন্যই আজকের দেশের এই দশা। তাই উদ্দীপকের যথার্থতা প্রাসঙ্গিক। যাদের স্বরাঘাত সম্পর্কে জানা নেই, তাদের এই বিষয়টি নিয়ে সমালোচনা করা ঠিক হবে না।

ফেসবুকে প্রশ্নটি শেয়ার করে মোহাম্মদ ইমাম লিখেছেন, ‘এই প্রশ্নে মুক্তিযোদ্ধার নাতি-পুতি যারা এক্সাম দিয়েছে তাদের অবস্থাটা একবার চিন্তা করেন।’ রেশমা ইসলাম আরশি ফেসবুকে লিখেছে, ‘ভালো প্রশ্ন ২০২৪ সালে এসে এমন বাস্তবধর্মী উদাহরণেই প্রশ্ন হওয়া উচিত।’

বাংলা বিভাগের তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী ইউসুফ আলম বলেন, বাক্যটি স্বরতরঙ্গ বিষয়ের বাস্তবিক একটা উদাহরণ। এমন বাস্তব উদাহরণের সাহায্যে স্বরতরঙ্গের বিষয়টি নিয়ে আমরা শিক্ষার্থীরা নতুন করে ভাবতে পারছি। বিশ্ববিদ্যালয়তো নতুন নতুন জ্ঞান, আহরণ, সৃজন, বিতরণের স্থান। গতানুগতিক ধারার বাইরে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে এমন নতুন বিষয় নিয়ে আলোচনা হবে যাতে শিক্ষার্থীদের চিন্তার জগৎ বৃদ্ধি পায়।

কোর্সটির শিক্ষক বাংলা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক সঞ্জয় কুমার সরকার বলেন, ‘স্বরতরঙ্গে সাধারণত বাক্যে কোনো শব্দের ওপরে জোর প্রয়োগ করতে এমন শব্দের ব্যবহার করা হয়ে থাকে। যেমন, এখানে রাজাকার শব্দটির ওপরে জোর প্রয়োগ করা হয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা প্রচলিত ধারার বাইরে গিয়ে বাস্তবিক উদাহরণে বিষয়টি নিয়ে চিন্তা করবে, বাস্তব যে কোনো বিষয়কে স্বরতরঙ্গের মাধ্যমে ব্যাখ্যা করতে পারবে। সেই জায়গা থেকেই প্রশ্নে উক্তিটির উল্লেখ করা হয়েছে।’

উল্লেখ্য, ২০২৪ সালের ১৪ জুলাইয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এই উক্তিটি করলে সেটা নিয়ে বিতর্কের জন্ম দেয়।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ