মাহবুবুর রহমান ডিপটি, স্টাফ রিপোর্টার
জমে উঠেছে টাঙ্গাইল জেলা বাস -মিনিবাস মালিক সমিতির কার্যকরী পরিষদের (২০২৫-২৭) ত্রি-বার্ষিক নির্বাচন।
আগামী ২৫ জানুয়ারি শনিবার ঐতিহ্যবাহী টাঙ্গাইল জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে।
নির্বাচনটি নির্দলীয় হলেও মূলত দুটি প্যানেলে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হচ্ছে। দুটি প্যানেলে ৪৫টি পদের বিপরীতে ৮৯ জন প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। নির্বাচনে মোট ভোটার ৮২৪ জন। এই নির্বাচনে দুটি প্যানেল হচ্ছে টুটুল-নিলুফা-ঝলক পরিষদ এবং অপর প্যানেল হচ্ছে ইকবাল-শফিক-বাবু পরিষদ। এই নির্বাচনে সভাপতি ১ জন, কার্যকরী সভাপতি ১জন, সহ-সভাপতি ৫ জন, সাধারণ সম্পাদক ১ জন, সম্পাদক (বাস) ১ জন, সম্পাদক (মিনিবাস) ১জন, যুগ্ম-সম্পাদক ৩ জন, সহ-সম্পাদক ৪ জন, সাংগঠনিক ৪ জন, কোষাধ্যক্ষ ১ জন, সহকারী কোষাধ্যক্ষ ১ জন, ক্রীড়া সম্পাদক ১ জন, সাংস্কৃতিক সম্পাদক ১ জন, দপ্তর সম্পাদক ২ জন ও কার্যকরী সদস্য ১৮ জনসহ দুটি প্যানেলে ৪৫ টি পদের বিপরীতে ৮৯ জন পার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।
ভোটাররা জানান, নির্বাচন কে কেন্দ্র করে মালিক সমিতিতে এখন উৎসব মুখর পরিবেশ বিরাজ করছে। তারা ভোট দিতে অধীর আগ্রহে অপেক্ষা করছে। প্রার্থীরা ভোটারদের দ্বারে দ্বারে যাচ্ছে। নানা প্রতিশ্রুতি দিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন।
সাধারণ ভোটারদের সাথে কথা বলে আরো জানা যায়, প্রায় দীর্ঘ সময় নির্বাচন না হওয়ার কারণে তারা ভোট দিতে পারিনি। তাদের পছন্দের প্রার্থীকে ভোট দেওয়ার জন্য তারা অধীর অপেক্ষায় আছে। সাধারণ মালিকদের স্বার্থ রক্ষায় আগামীতে যারা কাজ করবে। সে রকম যোগ্য ব্যক্তিকে ভোট দিবে বলে জানান সাধারণ ভোটাররা।
টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতি সম্পাদক (বাস) ব্যালট নং ১৫ পদপ্রার্থী রাশেদুর রহমান তাবিব জানান, দীর্ঘদিন যাবত আমরা একটি সুষ্ঠু ও
নিরপেক্ষ নির্বাচনের জন্য আন্দোলন করে যাচ্ছি। বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গণঅভ্যুত্থানের পর নির্বাচনের সুষ্ঠ পরিবেশ সৃষ্টি হয়েছে। আমরা আশা করেছি আগামী ২৫ জানুয়ারি একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। ভোটারা তাদের পছন্দের ব্যক্তিকে ভোট দিয়ে নির্বাচন করতে পারবেন।
তিনি আরো জানান, আপনারা অবগত আছেন, আমাদের প্রতিপক্ষ প্যানেল ( ইকবাল- শফিক) পরিষদ নির্বাচন বন্ধ করার জন্য হাইকোর্টে একটি রিট করেছিল। গত ২০ জানুয়ারি হাইকোর্ট এই রিট খারিজ করে দিয়েছেন। আল্লাহর রহমতে এখন আমাদের নির্বাচন করতে আর কোন বাধা নেই । আমি নির্বাচিত হলে মালিকদের ব্যবসা, স্বার্থসংরক্ষণ ও সম্মান এই তিনটি বিষয়ে অগ্রাধিকার ভিত্তিতে কাজ করবো।
ইকবাল- শফিক-বাবু পরিষদের সহ-সভাপতি ব্যালট নং ৭ পদপ্রার্থী সৈয়দ জাদিদুল হক জানান, টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনিবাস মালিক সমিতির সর্বশেষ ২০১০ সালে নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। এ জন্য এ বারের নির্বাচনটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। সাধারণ ভোটাররা ভোটকেন্দ্রে গিয়ে স্বতঃস্ফূর্তভাবে ভোট দিতে পারলে আমারা পূর্ণ প্যানেলে বিজয়ী হবো।
টাঙ্গাইল জেলা বাস মিনি বাস মালিক সমিতি সভাপতি প্রার্থী ব্যালট নং ১ খন্দকার আতিকুজ্জামান টুটুল জানান, বিগত সতেরো বছর যাবত টাঙ্গাইল বাস কোস মালিক সমিতিতে নিয়মতান্ত্রিক ভাবে কোন নির্বাচন হয়নি। হয়েছে অর্থের বিনিময়ে পদ পদবী বিক্রি। এটাকে নির্বাচন বলা যাবে না। এ সময় কালে বাস মালিকরা ছিল খুবই অসহায়। যথাযথ সম্মানটুকু তারা পায়নি। তাদের ব্যবহার করে কতিপয় কিছু পদধারী লোক কোটি কোটি টাকার মালিক হয়েছেন । টাঙ্গাইলের বাস টার্মিনাল টি জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। এদিকে তাদের কোন নজর ছিল না।
দেশের প্রেক্ষাপট পরিবর্তন হওয়ার পর সমিতির মালিকদের যথাযথ সম্মান এবং বিভিন্ন অনিয়ম অবসান ঘটানোর লক্ষ্যে সব মালিকরা আমরা নির্বাচন মুখী হয়েছি। ২০ জানুয়ারি পর্যন্ত টাঙ্গাইল বাস মিনি বাস মালিক সমিতি নির্বাচন নিয়ে অনিশ্চয়তা ছিল। আল্লাহর বিশেষ রহমতে সেটা কেটে গেছে।
তিনি আরো জানান, বিগত সময়ে এই মালিক সমিতিতে আমি কার্যকরী সদস্য, সাংগঠনিক সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি পদে নির্বাচনের মাধ্যমে বিজয়ী হয়েছি। ইনশাআল্লাহ এবারও
আমি জয়ের ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী।
অপর প্যানেলের সভাপতি প্রার্থী ব্যালট নং ২ খন্দকার ইকবাল হোসেন জানান, আমি দীর্ঘ ৪০ বছর যাবত পরিবহন ব্যবসার সাথে জড়িত।
ইতিপূর্বে আমি এই সংগঠনের কার্যকরী সদস্য, সহ-সম্পাদক,যুগ্ম সম্পাদক, সাধারণ সম্পাদক এবং সভাপতি পদে নির্বাচিত হয়েছি। সমিতির উন্নয়ন ও মালিকদের কল্যাণে কাজ করে যাচ্ছি। আশা করি এবারও আমি বিপুল ভোটে বিজয়ী হবো।
এই নির্বাচনে প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টাঙ্গাইল জজকোর্টের পিপি এডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিপন, সহকারী হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন টাঙ্গাইল প্রেসক্লাবের সভাপতি এডভোকেট জাফর আহমেদ, সাবেক সভাপতি এডভোকেট আতাউর রহমান আজাদ ও বাবু শ্যামলহোড়।
টাঙ্গাইল জজকোর্টের পিপি এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার এডভোকেট শফিকুল ইসলাম রিপন জানান, ইতোমধ্যে নির্বাচন উপলক্ষে ১০ জানুয়ারি মনোনয়ন পত্র জমা, ১১-১২ জানুয়ারি যাচাই-বাছাই এবং ১৪ জানুয়ারি চূড়ান্ত ভোটার তালিকা প্রকাশ করা হয়। এ নির্বাচনের মোট ভোটার রয়েছে ৮২৪ জন। সমিতির নিজস্ব কার্যালয়ে আগামী ২৫ জানুয়ারি সকাল ৯ টা থেকে বিকেল ৪ টা পর্যন্ত ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে। একটি সুষ্ঠ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি।
উল্লেখ্য, এই নির্বাচনে ইতিপূর্বে টুটুল-নিলুফা-ঝলক পরিষদের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে নিলুফা ইয়াসমিন খান ও কার্যকরী সভাপতি মোঃ তারেকুল ইসলাম খান ঝলক বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া ১ জন কার্যকরী সদস্য নির্বাচন থেকে তার মনোনয়ন পত্র প্রত্যাহার করে নিয়েছেন।