স্টাফ রিপোর্টার \ নাটোরের হরিশপুরে রান্না করার সময় তরকারিতে তেল বেশি দেওয়ায় কুপিয়ে স্ত্রীর দুই হাতের সাত আঙুল কেটে ফেলার ঘটনায় স্বামী আব্দুল হাই (৪৫) ও তার সহযোগী মো. রাব্বি মিয়াকে (২০) গ্রেফতার করেছে র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব)।
ভোরে অভিযান চালিয়ে নাটোরের হালসা ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকা তাদের গ্রেফতার করে র্যাব-৫।
গ্রেফতারকৃত আব্দুল হাই নাটোরের বড় হরিশপুর এলাকার মৃত ফজলু মিয়ার ছেলে ও মো. রাব্বি মিয়া একই এলাকার আব্দুল খালেকের ছেলে।
জানা যায়, গত রোববার নাটোরের হরিশপুর ইউনিয়নের চেয়ারম্যানপাড়া গ্রামে রান্না করার সময় তরকারিতে তেল বেশি দেওয়ার মতো তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে কুপিয়ে স্ত্রী মুক্তি বেগমের (৩০) দুই হাতের সাতটি আঙুল কেটে দেন স্বামী আব্দুল হাই। পরে আহত মুক্তি বেগমকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর ভাই বাদী হয়ে নাটোর সদর থানায় একটি মামলা করেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে অভিযান চালিয়ে আসামিদের গ্রেফতার করে র্যাব-৫।
গ্রেফতারের পর র্যাব-৫ সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, গোয়েন্দা তথ্যের ভিত্তিতে ভোরে র্যাবের একটি দল নাটোরের হালসা ইউনিয়নের সুলতানপুর এলাকায় অভিযান চালিয়ে প্রধান আসামি আব্দুল হাই ও তার মামাতো ভাই মো. রাব্বি মিয়াকে গ্রেফতার করেছে।
সূত্র জানায়, নাটোরের বড় হরিশপুর এলাকার মৃত ফজলুর রহমানের ছেলে আব্দুল হাই আগের তিনটি বিয়ের কথা গোপন রেখে সদর উপজেলার আটঘরিয়া গ্রামের মৃত জয়নাল আবেদিনের মেয়ে মুক্তিকে বিয়ে করেন। ১৩ বছরের সংসারে তাদের দুই সন্তান রয়েছে। বিয়ের পর থেকে তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে আব্দুল হাই স্ত্রী মুক্তি বেগমের ওপর নির্যাতন চালিয়ে আসছিলেন। তারপরও সন্তানদের মুখের দিকে তাকিয়ে তিনি তা সহ্য করে আসছিলেন।
রোববার দুপুরে তরকারি রান্না করার সময় তেল বেশি দেওয়ায় আব্দুল হাই ক্ষিপ্ত হয়ে ধারালো দা দিয়ে স্ত্রীকে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে দুই হাতের সাত আঙুল কেটে দেন। মুখসহ শরীরের বিভিন্ন স্থানে কুপিয়ে রক্তাক্ত জখম করেন। স্বজনরা তাকে উদ্ধার করে নাটোর আধুনিক সদর হাসপাতালে নিয়ে যায়। সেখানে অবস্থার অবনতি হলে তাকে উন্নত চিকিৎসার জন্য রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়
রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের জরুরি বিভাগের চিকিৎসক ডা. রেজা উন নবী বলেন, তার হাতের আঙুলের অবস্থা খুবই খারাপ। সাতটি আঙুল কর্তনের পাশাপাশি একটি হাত ভেঙেও গেছে।
ভুক্তভোগী মুক্তি বেগম বলেন, ওইদিন দুপুরে তরকারিতে বেশি তেল দিয়েছি বলে মারধর করা শুরু করে। একপর্যায়ে হাসুয়া দিয়ে আমার গলাকাটার চেষ্টা করলে আমি হাত দিয়ে বাঁধা দিই। তারপরও এলোপাতাড়ি কোপাতে থাকে। আমার মুখে হাসুয়া দিয়ে আঘাত করে। আমি দৌড়ে না পালালে আমাকে মেরেই ফেলতো। আমি এই পাষণ্ডের বিচার চাই।
এলাকাবাসী জানায়, আব্দুল হাই এর আগে আরও তিনটি বিয়ে করেন। সেসব স্ত্রীরা অত্যাচার নির্যাতন সইতে না পেরে তাকে ছেড়ে চলে যান। বর্তমান স্ত্রীও বাবার বাড়ি চলে গিয়েছিলেন। ঈদের আগে আব্দুল হাইয়ের অনুরোধে স্থানীয় কিছু গণ্যমান্য ব্যক্তি তাকে স্বামীর বাসায় ফিরিয়ে আনেন।
সংবাদ সম্মেলনে আরও জানানো হয়, গ্রেফতারকৃত আসামিরা মুক্তি বেগমকে প্রতিনিয়ত শারীরিক ও মানসিক নির্যাতনসহ ওইদিন ধারালো দা দিয়ে এলোপাতাড়ি কুপিয়ে জখমের কথা প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে স্বীকার করেছেন। তাদের নাটোর সদর থানায় হস্তান্তরের প্রক্রিয়া চলছে।