পণ্যের বরাদ্দের চেয়ে ভোক্তা বেশি

টিসিবি / পণ্য কিনতে না পেরে প্রতিদিন খালি হাতে ফিরছে অনেক মানুষ

সামি উদ্দিন সাকিন :

ট্রেডিং করপোরেশন অব বাংলাদেশের (টিসিবি) পণ্যের বরাদ্দের চেয়ে ভোক্তা বেশি হওয়ায় বিভিন্ন স্থানে বিশৃঙ্খলা বাড়ছে। ঘটছে মারামারির ঘটনাও। কোথাও না কোথাও প্রতিদিনই বিশৃঙ্খলা ও হট্টগোলের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ট্রাকপ্রতি বরাদ্দ কমিয়েছে টিসিবি। ফলে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে না পেরে প্রতিদিন অনেক মানুষ খালি হাতে ফিরছে। বর্তমানে ঢাকায় ৫০টি স্থানে ট্রাকে করে ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হচ্ছে। আর চট্টগ্রামে ২০টি স্থানে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হয়। দেখা যাচ্ছে টিসিবি পণ্য নিয়ে নির্ধারিত স্থানে ট্রাক আসার আগেই বিপুলসংখ্যক মানুষ লাইন ধরে থাকে। সবাই ভর্তুকি মূল্যে টিসিবির পণ্য কিনতে এসেছেন। কিন্তু প্রতি ট্রাকে মাত্র ২০০ জনের পণ্য থাকে। ফলে লাইনে দাঁড়ানো বিক্ষুব্ধ মানুষ নিজেদের মধ্যে ধাক্কাধাক্কির পাশাপাশি টিসিবি পণ্যবাহী ট্রাকের লোকজনের প্রতি আক্রমণাত্মক হয়ে উঠে, এমনকি মারধরের ঘটনাও ঘটছে। পরিস্থিতি সামাল দিতে টিসিবির পক্ষ থেকে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর সহায়তা চাওয়া হয়েছে।

টিসিবি ও ডিলারদের সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়। সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, চার দিনে টিসিবির পণ্য বিক্রির ট্রাক ঘিরে অন্তত ৮টির বেশি হট্টগোল ও বিশৃঙ্খলার ঘটনা ঘটেছে। রাজধানীর মিরপুর ৬, কালশী, যাত্রাবাড়ী ও রামপুরায় ট্রাকের কর্মীরা মারধরের শিকার হয়েছে। তার মধ্যে এক ট্রাকচালককে মেরে রক্তাক্ত করার ঘটনাও ঘটেছে। মূলত প্রতিটি ট্রাকে বরাদ্দ করা পণ্যের চেয়ে ক্রেতার সংখ্যা অনেক বেশি হওয়ায় এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হচ্ছে। সূত্র জানায়, একজন ভোক্তা টিসিবির ট্রাক থেকে সর্বোচ্চ দুই লিটার তেল (সয়াবিন বা কুঁড়ার তেল), দুই কেজি মসুর ডাল, এক কেজি চিনি, দুই কেজি ছোলা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর কিনতে পারে। প্রতি লিটার ভোজ্যতেল ১০০ টাকা, প্রতি কেজি মসুর ডাল ৬০ টাকা, চিনি ৭০ টাকা, ছোলা ৬০ টাকা ও ৫০০ গ্রাম খেজুর ৭৮ টাকায় বিক্রি করা হয়। এসব পণ্য ক্রেতারা বিদ্যমান বাজারমূল্যের চেয়ে প্রায় ৪০০ টাকায় টিসিবি ট্রাক থেকে কিনতে পারেন।

ফলে টিসিবির ট্রাক থেকে পণ্য কিনতে প্রতিদিনই লাইন দীর্ঘ থেকে দীর্ঘতর হচ্ছে। নিম্ন ও সীমিত আয়ের মানুষেরা টিসিবির ট্রাকের খোঁজে প্রতিদিন ভোর থেকে বিভিন্ন স্থানে জড়ো হন। আবার অনেকে ভাগ হয়ে ট্রাক খোঁজেন। কেউ ট্রাকের দেখা পেলে অন্যদের ফোন করে জানায়। পণ্যবাহী টিসিবির ট্রাক আসার আগপর্যন্ত ভোক্তারা মোটামুটি সুশৃঙ্খলভাবেই লাইনে দাঁড়িয়ে থাকে। কিন্তু ট্রাক এলেই বিশৃঙ্খলা ও ধাক্কাধাক্কি শুরু হয়। তাতে গত কয়েক দিনে কয়েকটি স্থানে বেশ কয়েকজন ক্রেতা আহত হয়েছে। সূত্র আরো জানায়, সম্প্রতি সারা দেশে টিসিবির এক কোটি পরিবার কার্ডের মধ্যে বাতিল করা হয়েছে ৪৩ লাখ কার্ড। এর পরিবর্তে সংস্থাটি ধাপে ধাপে স্মার্ট পরিবার কার্ড বিতরণ করছে। পরিবার কার্ডের সংখ্যা কমানোয় ট্রাকে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়ানোর কথা ভাবছে করছে টিসিবি। সংস্থাটি বর্তমানে ঢাকা শহরের ৫০টি ও চট্টগ্রামের ২০টি স্থানে পণ্য বিক্রি করছে।

এখন আটটি বিভাগীয় শহর ও কয়েকটি জনবহুল জেলা সদরে এই কার্যক্রম বিস্তৃত করার পরিকল্পনা করা হচ্ছে। সরকারের অনুমোদন পেলেই ওই কার্যক্রম শুরু হতে পারে। তবে পণ্য বিক্রির আওতা বাড়ালেও টিসিবি ট্রাকপ্রতি পণ্যের বরাদ্দ কমিয়েছে। এতোদিন টিসিবির একটি ট্রাকে ২৫০ জনের পণ্য বিক্রি করা হতো। এখন প্রতিটি ট্রাকে ২০০ জনের জন্য পণ্য বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। আগে ঢাকায় ৫০ ট্রাক থেকে সাড়ে ১২ হাজার মানুষ পণ্য কিনতে পারতেন। এখন তা কমে ১০ হাজারে নেমেছে। অর্থাৎ টিসিবি শুধু ঢাকাতেই আড়াই হাজার মানুষের বরাদ্দ কমিয়েছে।

একইভাবে চট্টগ্রামেও বরাদ্দ এক হাজার মানুষের কমেছে। এ প্রসঙ্গে টিসিবির এক কর্মকর্তা জানান, দেশের আরো কয়েকটি বিভাগীয় শহরে টিসিবির কার্যক্রম বাড়ানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। যে কারণে ট্রাকপ্রতি বরাদ্দ কিছুটা কমানো হয়েছে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ