স্টাফ রিপোর্টার- নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া এলাকার চিহ্নিত শীর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি বজলুর রহমান ওরফে বজলুকে (৫২) কে গ্রেফতাররের পর এলাকায় দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করেছে এলাকাবাসী । এসময় তাকে গ্রেফতারের খুশিতে এলাকায় মিষ্টি বিতরন করা হয়।
এলাকাবাসীরা জানিয়েছেন, জনগন অন্যায়কারী জুলুমবাজ “ডন বজলু ও বজলুর পরিবারের লোকদের হাত থেকে মুক্তি পাওয়াব কারনে দোয়া ও মিলাদ মাহফিলের আয়োজন করে। এসময় বজলুর শাস্তি দাবী করে দোয়া কামনা করা হয়। তারা মাদক সম্রাট বজলুর হাত থেকে রক্ষা চায়।
গত শুক্রবার চনপাড়া থেকে বিপুল পরিমান মাদক, অস্ত্র, গুলি, জাল রুপি, জাল টাকা সহ বজলু মেম্বারকে গ্রেফতার করে র্যাব-১। প্রভাবশালী বেশধারী এই বজলু চনপাড়া এলাকায় হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লী পরিচালনা করে আসছিল।
র্যাব সূত্রে জানা যায়, গোপন সংবাদের ভিত্তিতে র্যাব-১ এর আভিযানিক দল শুক্রবার বিকেলে চেনপাড়া এলাকায় অভিযান চালায়। অভিযানে শীর্ষ সন্ত্রাসী ও চনপাড়া বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসার মূলহোতা বজলুর রহমানকে গ্রেফতার করা হয়।
এসময় তার কাছ থেকে একটি বিদেশি পিস্তল, একটি ম্যাগাজিন, ৫ রাউন্ড গুলি, ২২০ গ্রাম হেরোইন, একটি মোবাইলফোন, ভারতীয় ২৫ হাজার জাল রুপি, বাংলাদেশি ৭৫ হাজার জাল টাকা এবং মাদক বিক্রির নগদ ২১ হাজার ৫০০ টাকা উদ্ধার করা হয়।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক স্থানীয়রা জানিয়েছেন, গ্রেফতারকৃত বজলুর রহমান ওরফে বজলু একজন চিহ্নিত অস্ত্রধারী, দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী ও মাদক কারবারি। তিনি নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ থানার চনপাড়া বস্তি এলাকার মাদক ব্যবসার অন্যতম মূলহোতা ও নিয়ন্ত্রক। বজলু দীর্ঘদিন ধরে মাদক কারবারের সঙ্গে জড়িত।
জানা গেছে, নারায়ণগঞ্জসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় তার বেশ কয়েকজন সহযোগী কাজ করে। বজলুর রহমানের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসী কার্যকলাপসহ বিভিন্ন অপরাধে এখন পর্যন্ত ২৩টি মামলার রেকর্ড পাওয়া গেছে। তিনি চনপাড়া বস্তি এলাকাসহ আশপাশের এলাকার মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসিকভিত্তিতে টাকা তুলত।
চনপাড়া পুনর্বাসন কেন্দ্রটি প্রকৃতপক্ষে চনপাড়া বস্তি নামে অধিক পরিচিত, যেখানে লক্ষাধিক মানুষের বসবাস। অপেক্ষাকৃত নিম্ন আয়ের মানুষ এই বস্তিতে বসবাস করেন, যাদের অধিকাংশই দিনমজুর। বিশাল ও অত্যন্ত ঘিঞ্জি এবং ঘনবসতিপূর্ণ এই চনপাড়া বস্তিটি ৯টি এলাকায় বিভক্ত। এই এলাকার শীর্ষ ৫-৬টি মাদক কারবারির প্রধান সমন্বয়ক ও গডফাদার ছিলেন বজলু। বস্তি এলাকার মাদকের প্রায় ২০০টি স্পট থেকে কয়েকটি সিন্ডিকেটের মাধ্যমে বজলু এই ব্যবসা পরিচালনা করে আসছিল।
বজলুর রহমান ওরফে বজলু কায়েতপাড়া ইউনিয়নের ৯নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য (প্যানেল চেয়ারম্যান-১)। তিনি স্থানীয় উঠতি বয়সের ছেলেদের কাছে বজলু ভাই নামে পরিচিত। বিভিন্ন সোর্স তার ছত্রছায়ায় এলাকার ছেলেদের টাকা দিয়ে নানা ধরনের অপকর্ম যেমন- হত্যা, মাদক বেচাকেনা, চাঁদাবাজি, ভয়ভীতি, কিশোর গ্যাং, ধর্ষণ, যৌন হয়রানি এবং যৌনপল্লি পরিচালনা করেন। কেউ চাঁদা না দিলে তার কপালে নেমে আসতো নির্যাতনের ভয়াবহতা। এসব আধিপত্য বিস্তার নিয়ে গত এক-দেড় বছরে নিহত হয়েছেন ছয়জন।
গত ২৭ সেপ্টেম্বর অপরাধী গ্রেফতারে র্যাব চনপাড়া এলাকায় অভিযান চালালে বজলুর রহমানের নির্দেশে অপরাধীরা র্যাবের ওপর হামলা চালায়। এ সময় তারা আসামি ছিনিয়ে নেওয়ারও চেষ্টা চালায়।
