স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীতে অভিযান চালিয়ে বিপুল পরিমান বাংলাদেশী জাল টাকা, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও বিদেশি জাল মূদ্রা ও তৈরির সরঞ্জামসহ জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ,গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম।
শনিবার সকালে মিন্টো রোডের ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) হারুন অর রশীদ।
তিনি জানান, রাজধানী ঢাকার দারুসসালাম থানা এলাকা থেকে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (গোয়েন্দা) তেজগাঁও বিভাগের সংঘবদ্ধ অপরাধ, গাড়ি চুরি প্রতিরোধ ও উদ্ধার টিম একটি বিশেষ অভিযান পরিচালনা করে বাংলাদেশি জাল টাকা, রেভিনিউ স্ট্যাপ ও বিদেশি জাল মুদ্রা ও এসব তৈরির সরঞ্জামসহ জালিয়াতি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করে।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- উজ্জল দাস ওরফে সোবহান শিকদার (৩৪), আব্দুর রশিদ (৫৫), মোঃ মমিনুল ইসলাম (৪৬) ও শাহ মোঃ তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল (৪০)। এসময় তাদের কাছ থেকে সাতাশ লক্ষ টাকা মূল্যমানের বাংলাদেশি জাল নোট, এক কোটি বিশ লক্ষ মূল্যমানের জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প, বাংলাদেশী ২০০ টাকার নোট সদৃশ জাল টাকা বানানোর ২টি তামার প্লেট, ১৩ টি জাল টাকা তৈরির স্ক্রিন ফ্রেম, বিভিন্ন সাইজের জাল টাকা তৈরির সিকিউরিটি সুতা, ২ টি জাল রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির পজেটিভ (ফর্মা), ৯ টি ফয়েল পেপার, ২ টি জাল টাকা কাটার কাজে ব্যবহৃত গ্লাস, ১০ টি ট্রেচিং পেপার, ২৫ টি রঙের কৌটা, ১ টি হটগান, ১ টি লেমিনেটিং মেশিন, ১ টি এইচপি ল্যাপটপ ১ টি এপসন প্রিন্টার, ২ টি ডাইস, ১০ টি স্ক্রিন তৈরির কাপড়, ১০০০ পাতা সিকিউরিটি সুতাযুক্ত সাদা কাগজ, ১,২১০ পাতা সাদা কাগজসহ জাল টাকা, রেভিনিউ স্ট্যাপ ও বিদেশী জাল মুদ্রা তৈরির বিভিন্ন উপকরণ উদ্ধার করা হয়েছে।
অতিরিক্ত কমিশনার আরও জানান গত শুক্রবার ঢাকা মহানগর এলাকায় বিশেষ অভিযান পরিচালনাকালে গোপন খবরের ভিত্তিতে দারুসসালাম থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে জাল টাকা, ভারতীয় রুপি, আমেরিকান ডলার ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকারক জালিয়াত চক্রের মূল হোতা উজ্জল দাস ওরফে সোবহান শিকদার (৩৪) কে গ্রেফতার করা হয়।
পরবর্তীতে তাকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে পাওয়া তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে রাতেই ঢাকা মহানগরের দারুসসালাম থানা এলাকার একটি বহুতল ভবনের ৫ম তলার ফ্ল্যাট বাসায় অভিযান চালিয়ে বিভিন্ন দেশের জাল নোট, রুপি, ডলার ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুতকালে সর্বমোট প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের জাল টাকা, রুপি, ডলার, রেভিনিউ স্ট্যাম্প ও সরঞ্জাম-উপকরণসহ আব্দুর রশিদ (৫৫), মোঃ মমিনুল ইসলাম (৪৬), শাহ মোঃ তুহিন আহমেদ ওরফে জামাল (৪০) কে গ্রেফতার করে।
হারুন অর রশীদ বলেন, গ্রেফতারকৃতরা বিগত কয়েক বছর যাবৎ বিভিন্ন দেশের নোট ও রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরির জন্য ঢাকার মতিঝিল এলাকা থেকে প্রয়োজনীয় কাগজ, নয়াবাজার ও মিডফোর্ট থেকে রঙ, ফয়েল ও পজেটিভ সংগ্রহ করত।
ডিবি প্রধান বলেন, উদ্বেগের বিষয় হচ্ছে, বর্তমান বিশ্ববাজারে ডলার সংকট হওয়ায় আসামীরা ভারতীয় জাল রুপি ও আমেরিকান জাল ডলার বিদেশে ও পাচার করছে বলে প্রাথমিকভাবে জানা যায়। তাছাড়া কম মূল্যমানের নোট যেমন-১০০ ও ২০০ টাকার নোটও জাল হচ্ছে, যা প্রায় খালি চোখে ধরা অসম্ভব। এতে বাজারে জাল টাকা সয়লাব হওয়ার সমূহ সম্ভাবনা রয়েছে, যা দেশীয় অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকিস্বরূপ। তারা ২০০ টাকা সদৃশ পিতল অথবা তামার তৈরি প্লেট দিয়ে প্রস্তুতকৃত জাল টাকাগুলো হুবহু আসল টাকার মতোই নিখুঁত। দীর্ঘ প্রায় ৮ থেকে ৯ বছর যাবত সংঘবদ্ধভাবে ঢাকা শহরের বিভিন্ন এলাকায় স্বল্প মেয়াদে বাসা ভাড়া নিয়ে সহযোগীদের সহযোগিতায় সিন্ডিকেট তৈরি করে নিজেরা বাংলাদেশি বিভিন্ন মূল্যমানের জাল নোট, ভারতীয় রুপি, আমেরিকান ডলারসহ রেভিনিউ স্ট্যাম্প প্রস্তুত করতঃ দেশের বিভিন এলাকায় পাইকারী ও খুচরা বিক্রি করে আসছিল।
তিনি উল্লেখ করে বলেন, যে পরিমাণ জাল টাকা তৈরীর কাগজ ও অন্যান্য উপকরণ পাওয়া গেছে তা দিয়ে আগামী ঈদুল ফিতর এর আগে প্রায় ২০০ কোটি টাকা মূল্যমানের দেশী ও বিদেশী জাল মূদ্রা এবং রেভিনিউ স্ট্যাম্প তৈরি করে বাজারজাত করা সম্ভব ছিল। গ্রেফতারকৃতদের বিরুদ্ধে রাজধানীর দারুসসালাম থানায় ১ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে।
