Search
Close this search box.

চড়-থাপ্পড় দেওয়া ইউএনও মনোয়ারের পুরোনো অভ্যাস

স্টাফ রিপোর্টার- বাগেরহাটের ফকিরহাট উপজেলা পরিষদের সাবেক ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানকে থাপ্পড় দেওয়ার ঘটনাটি জনসম্মুখে আসার পর থেকে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. মনোয়ার হোসেনের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ উঠে আসছে। মুখ খুলতে শুরু করেছেন লাঞ্ছিত হওয়া ব্যক্তিরা।

পাশাপাশি নিয়ম বহির্ভূতভাবে গাছ বিক্রি এবং বিনা পয়সায় বাড়ির বাজার নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে তার বিরুদ্ধে।

ফকিরহাট বাজার বণিক সমিতির সভাপতি সিরাজুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, ইউএনও বাড়ির বাজারের লিস্ট দেন হোয়াটসঅ্যাপে। সেই অনুযায়ী বাজার করে তার বাসায় পাঠানো হয়। এ জন্য তিনি কোনো টাকা দেন না।

ফকিরহাট বিশ্বরোড মোড় এলাকায় থাকা ওয়েলকাম পরিবহনের কাউন্টার ব্যবসায়ী জুয়েল রানা গণমাধ্যমকে  বলেন, কয়েকদিন আগে বিকেল ৬টার দিকে আমাদের পরিবহনের একটি বাস খুলনা থেকে ঢাকা যাচ্ছিল। ওই বাসে আমাদের এখান থেকে ৫ যাত্রীর টিকিট কাটা ছিল। এ কারণে আমাদের কাউন্টারের সামনে রাস্তার পাশে গাড়িটি সাইড করে থামায়। এই সময়ে ইউএনও এসে জানতে চান কাউন্টার কার? তখন আমি বলি স্যার আমার কাউন্টার, এটা বলার সঙ্গে সঙ্গে তিনি আমাকে দুটি চড় মারেন। পরে হাত ধরে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়।

একই স্থানে থাকা ইমাদ পরিবহনের মনিরুল ইসলাম মনি গণমাধ্যমকে বলেন, কাউন্টারের সামনে সুন্দরবন পরিবহনের গাড়ি দাঁড়ানোর অপরাধে চালক ও হেলপারকে গালিগালাজ করেছেন ইউএনও। কাউন্টারে ঢুকে টিকিট ও ল্যাপটপ নিয়ে যান। পরে এসব আনতে গেলে এক লাখ টাকা দাবি করেন। এ অবস্থায় রাজনৈতিক হস্তক্ষেপের মাধ্যমে ল্যাপটপ ও টিকিট ফেরত আনি।

একই এলাকার আজিজুল নামের এক কাউন্টার সহকারি গণমাধ্যমকে বলেন, মাস দুয়েক আগে কাউন্টারের সামনে ইমাদ গাড়ি দাঁড়ানোর অপরাধে ইউএনও স্যার আমাকে থাপ্পড় দিয়ে তার  গাড়িতে উঠিয়ে নানা রকম  ভয় ভীতি দেখিয়ে অনেক দূর নিয়ে ফাঁকা জায়গায় ছেড়ে দেন।

আজিজুল বলেন, শুধু আমাকে না বিশ্বরোড এলাকার অন্তত ৮জন কাউন্টার ব্যবসায়ীকে বিভিন্ন সময় লাঞ্ছিত করেছেন ইউএনও স্যার।

উপজেলার নওয়াপাড়া মোড় এলাকার ব্যবসায়ী সাখাওয়াত হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, গত ২ জানুয়ারি বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কে রাখা তার কিছু ইট ভ্যানে করে বাড়ির মধ্যে নিচ্ছিলেন কেয়ারটেকার খায়রুল ইসলাম (৫০)। এর মধ্যেই ইউএনও ওই পথ দিয়ে যাওয়ার সময় সড়কে ইট রাখার কারণ জানতে চান। ভুল স্বীকার করলেও ইউএনও কেয়ারটেকারকে চড়-থাপ্পড় দেন।

এদিকে পাগলা শ্যামনগর এলাকা থেকে ৫-৬টি শতবর্ষী মেগনি ও মেহগনি গাছ এবং উপজেলা পল্লী উন্নয়ন অফিসের সামনে কয়েক লাখ টাকার গাছ নিয়মবহির্ভূতভাবে কেটে নেওয়ার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফকিরহাট উপজেলা কেন্দ্রীয় সমবায় সমিতির চেয়ারম্যান শাহজামান চৌধুরী গণমাধ্যমকে বলেন, হঠাৎ করে কিছু শ্রমিক এসে আমাদের অফিসের সামনে থেকে গাছ কেটে নিয়ে যায়। জিজ্ঞাস করলে বলে ইউএনও কাটতে বলেছেন। কিন্তু এ বিষয়ে আমাদেরকে কোনকিছু অবহিত করা হয়নি। যেহেতু উপজেলার শীর্ষ কর্মকর্তা এজন্য আমরা কিছু বলিনি।

পাগলা শ্যামনগর এলাকার মহিদুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, এক দেড় মাস আগে এখান থেকে গাছ কাটতেছে। সরকারি রাস্তার গাছ কাটার সময়, আমারও দুটি গাছ কেটে নিয়ে গেছে। আমাদের কী বলার আছে, ইউএনও যদি নেয় এই বলে দীর্ঘ নিশ্বাস ছাড়েন ষাটোর্ধ এই বৃদ্ধ।

ফকিরহাটের কাটাখালী মোড় এলাকার ভাই ভাই প্লাস্টিক কারখানার স্বত্বাধিকারী বদিউজ্জামান বিশ্বাস গণমাধ্যমকে বলেন, কারখানার সামনে বাগেরহাট-মাওয়া মহাসড়কের পাশে মালামাল রাখার অপরাধে ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করেন ইউএনও। পরে প্রায় এক মাস পর ইউএনও আবার আসেন এবং আমাকে জোর করে গাড়িতে উঠিয়ে তার অফিসে নিয়ে যান এবং কারখানা না চালানোর জন্য মুচলেকা দিতে বলেন। দুই দিন পরে ইউএনওর বাসায় গিয়ে ২০ হাজার টাকা দিয়ে আসি। এরপর আর হয়রানির শিকার হতে হয়নি বলে দাবি করেন তিনি।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে অভিযুক্ত ইউএনও মো. মনোয়ার হোসেন গণমাধ্যমকে বলেন, এসব অভিযোগ ভিত্তিহীন। উপজেলা প্রশাসন থেকে বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে আইন অমান্য অথবা অনিয়মের কারণে বিভিন্ন জনকে আইন অনুযায়ী অর্থদণ্ড করা হয়। এসব কারণে কিছু লোক প্রশাসনের প্রতি ক্ষিপ্ত হয়ে নানা অভিযোগ তুলছেন বলে দাবি করেন তিনি।

উল্লেখ্য, গত বুধবার (১ মার্চ) বেলা ১১টার দিকে খুলনা-মাওয়া মহাসড়কের কাঠালতলা এলাকায় ইউএনওর গাড়ির সঙ্গে সাবেক উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান শেখ মিজানুর রহমানের মোটরসাইকেলের সামান্য ধাক্কা লাগে। এ ঘটনায় সাবেক এই জনপ্রতিনিধিকে প্রকাশ্যে থাপ্পড় মারেন ইউএনও। এছাড়া তাকে গালিগালাজ করে গাড়ির পেছনে উঠিয়ে বেশ কিছুক্ষণ বিভিন্ন এলাকায় ঘুরিয়ে ছেড়ে দেন। পরে বিষয়টি জানাজানি হলে উপজেলাবাসীর মধ্যে তীব্র ক্ষোভ দেখা দেয়। তারা ওই ইউএনওর বিচার দাবি করেন।

বিভিন্ন ভুক্তভোগীর বক্তব্যে উঠে আসে ইউএনওর নানা অনিয়ম ও স্বেচ্ছাচারিতার কাহিনী। এ অবস্থায় শুক্রবার (৩ মার্চ) বাগেরহাটের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিষ্ট্রেট ওই ইউএনওর বিরুদ্ধে তদন্ত করেছেন। দুই একদিনের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন পাওয়া যাবে। এর আগে গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার সহকারি কমিশনার (ভূমি) থাকা অবস্থায় ক্ষমতার অপব্যবহার ও অসাদাচরণের অভিযোগ উঠেছিল এই সরকারি কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ