স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীর উত্তরা এলাকায় ডাচ্-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের সোয়া ১১ কোটি টাকা ছিনতাইয়ের ঘটনায় মাস্টারমাইন্ড সোহেল সহ তিনজনকে গ্রেফতার করেছে ডিএমপির গোয়েন্দা বিভাগ। এসময় তাদের কাছ থেকে আরও ৫৮ লাখ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়েছে।
মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ এই তথ্য জানান।
তিনি জানান রাজধানীর বনানীর করাইল বস্তি ও নেত্রকোনা জেলার দূর্গাপুর থানা এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
গ্রেফতারকৃতরা হলো- মোঃ হৃদয় (২১), মোঃ মিলন মিয়া (২৯) ও আকাশ। গ্রেফতারের সময় তাদের হেফাজত থেকে ৫৮ লক্ষ ৭ হাজার টাকা উদ্ধার করা হয়। ডাকাতির ঘটনায় এ পর্যন্ত সর্বমোট ৭ কোটি ০১ লক্ষ ৫৬ হাজার টাকা উদ্ধার এবং ১১ জন গ্রেফতার হলো।
গত ৯ মার্চ তুরাগ থানাধীন দিয়াবাড়ী এলাকা থেকে ডাচ্-বাংলা ব্যাংকের এটিএম বুথে টাকা পৌঁছে দেওয়ার সময় মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর একটি গাড়ী ডাকাতির কবলে পড়ে। এই ঘটনায় ডিএমপির গোয়েন্দা মিরপুর বিভাগ ইতিপূর্বে প্রায় ২ কোটি ৫৪ লক্ষ টাকা উদ্ধার এবং এর সাথে জড়িত ৮ জনকে গ্রেফতার করে।
গোয়েন্দা প্রধান জানান, গ্রেফতারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদে জানিয়েছে, এই ঘটনার বাস্তবায়নে বিভিন্ন স্তরে বিভিন্ন গ্রুপ ভিন্ন ভিন্ন দায়িত্বে নিয়োজিত ছিল। কেউ ছিল পরিকল্পনাকারী, কেউ মোবাইল ও সিম সংগ্রহকারী, কেউ শুধুমাত্র ঘটনার সময় ভাড়াটে হিসেবে কাজ করে। ঘটনায় মূল পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নকারী হিসেবে কাজ করে ৪/৫ জন। এদের মধ্যে আকাশ ও সোহেল রানা নামে ২ জন ডাকাতির মূল ছক সাজায়।
গ্রেফতারকৃত সোহেল রানা ইতিপূর্বে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর ড্রাইভার ছিল। ড্রাইভার থাকার কারণে সে মানিপ্ল্যান্ট লিংক লিমিটেড এর খুটিনাটি বিষয়াদি সম্পর্কে অবগত ছিল। কোন প্রকার বাধাহীন ভাবেই তারা মাইক্রোবাসটির নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয়। ডাকাতির মূল হোতা আকাশ টাকা লুটের পর মাইক্রোবাসে উঠতে না পারলেও সেখান থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়। আকাশ তার পূর্ব পরিচিত ইমন মিলনের কাছে টাকা ডাকাতির বিষয়টি শেয়ার করে এবং তাকে এই কাজে যুক্ত হওয়ার প্রস্তাব দেয়। তাকে তারা জনবল সংগ্রহের দায়িত্ব দেয়। ইমন মিলন তার পূর্ব পরিচিত সানোয়ার হোসেনকে বিষয়টি সম্পর্কে অবগত করে এবং জনবল যোগান, সিম সংগ্রহ ও মোবাইল ফোন ক্রয়ের দায়িত্ব দেয়। সানোয়ার ৮টি নতুন সিম এবং মোবাইল সেট যোগাড় করে এবং তার নিজ জেলা সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনা থেকে মোট ৯ জন সদস্য সংগ্রহ করে পরবর্তীতে তারা প্রত্যেকেই ঘটনার ২ দিন আগে ঢাকায় একত্রিত হয়। পরিকল্পনাকারীরা তাদেরকে ঢাকায় এনে নতুন কাপড় ও জুতা কিনে দেয়।
তিনি আরও জানান, আকাশ এবং সোহেল রানা, ইমন মিলন এবং সানোয়ারের কাছে ডাচ্ বাংলা ব্যাংকের টাকা লুটের বিষয়টি গোপন রাখে। তারা তাদেরকে জানায় যে, তারা কিছু অবৈধ হুন্ডির টাকা লুট করবে এবং সেখানে প্রশাসনের লোক থাকবে। পরবর্তীতে ঘটনার দিন সবাই কুর্মিটোলায় একত্রিত হয়ে মাইক্রোবাসে উঠার পর বুঝতে পারে বড় কিছু ঘটতে যাচ্ছে। ডাকাতির পর মূল হোতা আকাশ মাইক্রোবাসে উঠতে না পারায় তারা আতঙ্কিত হয়ে পড়ে। তারা ধারনা করে যে, আকাশ তাদের হাতে ধরা পড়ে গেছে। ধরা পড়ার ভয়ে তারা তাদের কাছে থাকা অপারেশনাল মোবাইল ফোনগুলো ৩০০ ফিটে ফেলে দেয়। তাই তারা ট্র্যাঙ্ক ভেঙ্গে টাকা লুট করতে তাড়াহুড়ো করে। পরবর্তীতে তারা ৩০০ ফিটের একটি নির্জন জায়গায় গিয়ে ব্যাগ এবং বস্তায় করে যার যার মত টাকা নিয়ে পালিয়ে যায়।
ডিবি প্রধান বলেন, ডাকাতির পর তারা টাকা ভাগ-বাটোয়ারা করে যার যার মত বিভিন্ন এলাকায় পালিয়ে যায় এবং বেশ কিছু টাকা বিভিন্ন খাতে খরচ করে। যার ফলে ঘটনায় জড়িতদের সনাক্ত, গ্রেফতার ও লুন্ঠিত টাকা উদ্ধার করতে কিছুটা সময় লাগে। লুন্ঠনকৃত টাকার একটি বড় অংশ ডাকাতির ঘটনার মূলহোতা আকাশ ও সোহেল রানা নিয়ে পালিয়ে যায়। তাদেরকেও গ্রেফতারের চেষ্টা অব্যাহত রয়েছে।