স্টাফ রিপোর্টার- আওয়ামী লীগ নেতা গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে ধর্ষণের অভিযোগে মামলা করেছেন এক কিশোরী (১৭)।ধর্ষণের ঘটনায় ৩ মাসের অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়েছে বলে মামলায় উল্লেখ করেছেন ভুক্তভোগি ওই কিশোরী। বুধবার রাতে ওই কিশোরী নিজে বাদী হয়ে টাঙ্গাইল সদর থানায় মামলাটি দায়ের করেন। গোলাম কিবরিয়া বড় মনি টাঙ্গাইল শহর আওয়ামী লীগের সহসভাপতি ও জেলা বাস-মিনিবাস মালিক সমিতির মহাসচিবের দায়িত্ব পালন করছেন। মামলায় গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাবকেও আসামি করা হয়েছে।
মামলার এজাহারে ওই কিশোরী উল্লেখ করেছেন, গোলাম কিবরিয়া তার আত্মীয় ও পূর্বপরিচিত। হোয়াটসঅ্যাপে তাদের দুজনের যোগাযোগ ছিল। সম্প্রতি পৈতৃক সম্পত্তি নিয়ে ভাইয়ের সঙ্গে ওই কিশোরীর বিরোধ সৃষ্টি হয়। এই বিরোধের বিষয়টি গোলাম কিবরিয়াকে জানানোর পর তিনি সমস্যা সমাধান করে দেওয়ার আশ্বাস দেন। গত বছরের ১৭ ডিসেম্বর গোলাম কিবরিয়া শহরের আদালত পাড়ায় নিজের বাড়ির পাশের একটি ভবনে ওই কিশোরীকে ডেকে নেন। সেখানে তার মুঠোফোন ছিনিয়ে নিয়ে গোলাম কিবরিয়া তাকে একটি কক্ষে আটকে রাখেন। পরে তাকে ধর্ষণ করে তার আপত্তিকর ছবি তুলে রাখা হয়।
বিষয়টি কাউকে না বলার জন্য গোলাম কিবরিয়া তাকে ভয়ভীতি দেখান। এরপরও আপত্তিকর ওই ছবি ছড়িয়ে দেওয়ার হুমকি দেখিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয় বলে ওই কিশোরী মামলায় অভিযোগ করেছেন। একপর্যায়ে ওই কিশোরী অন্তঃসত্ত্বা হয়ে পড়ে। বিষয়টি গোলাম কিবরিয়া জানার পর গর্ভের সন্তান নষ্ট করার জন্য চাপ দিতে থাকেন। তবে ওই কিশোরী রাজি না হওয়ায় গত ২৯ মার্চ রাত ৮টার দিকে গোলাম কিবরিয়া ওই কিশোরী তুলে নিয়ে আদালত পাড়ার একটি বাড়িতে যান। সেখানে একটি কক্ষে ওই কিশোরীকে তালাবদ্ধ করে রেখে গোলাম কিবরিয়া আবার ধর্ষণ করেন। এ ঘটনার পর গোলাম কিবরিয়ার স্ত্রী নিগার আফতাব ওই কিশোরীকে মারধর করেন। পরে দিবাগত রাত ৩টার ওই কিশোরীকে বাড়িতে রেখে আসা হয়। শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ থাকার জন্য মামলা করতে বিলম্ব হয়েছে বলে ওই কিশোরী এজাহারে উল্লেখ করেছেন।
তবে ধর্ষণের অভিযোগ অস্বীকার করে গোলাম কিবরিয়া বলেন, রাজনৈতিকভাবে তাকে হেয় করার জন্য ষড়যন্ত্রমূলকভাবে এই মামলা করা হয়েছে। এটি একটি ষড়যন্ত্র। টাঙ্গাইল-২ (গোপালপুর-ভূঞাপুর) আসনের একজন সংসদ সদস্য প্রার্থী আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়ন পাওয়ার জন্য এ ষড়যন্ত্র চালাচ্ছেন। সত্যতা পুলিশ তদন্ত আর মেডিকেল রিপোর্টে প্রকাশ পাবে বলে দাবি করেছেন তিনি।
এ বিষয়ে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. খন্দকার সাদিকুর রহমান জানান, প্রাথমিকভাবে কিশোরীর শরীরে ধর্ষণে কোন আলামত পাওয়া যায়নি। তবে সোয়াপ টেস্ট পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। এই ঘটনায় তিন সদস্য বিশিষ্ট মেডিকেল টিম গঠন করা হয়েছে। তবে মেয়েটি অন্ত:সত্ত্বা বলে প্রাথমিক নিশ্চিত হওয়া গেছে বলে জানান তিনি।
টাঙ্গাইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মোহাম্মদ আবু ছালাম মিয়া মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। তিনি বলেন, গোলাম কিবরিয়া বড় মনির বিরুদ্ধে থানায় একটি ধর্ষণ মামলা করেছে এক কিশোরী। মামলাটি রেকর্ড হয়েছে। তদন্ত করা হচ্ছে। তদন্তপূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এ ছাড়া ওই কিশোরীর শারীরিক পরীক্ষার জন্য বৃহস্পতিবার সকালে টাঙ্গাইল জেনারেল হাসপাতালে পাঠানো হয়। মেডিকেল পরীক্ষা শেষে জবানবন্দির জন্য কোর্টে পাঠানো হয়েছে।