রাজধানীর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়েতে র্যাব পরিচয়ে ডাকাতির ঘটনায় সাত ডাকাতকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। ঢাকা মহানগরীসহ পটুয়াখালীর কুয়াকাটা এলাকা থেকে তাদের গ্রেপ্তার করা হয়।
তাদের কাছ থেকে ডাকাতির ঘটনায় ব্যবহৃত প্রাইভেট কার, র্যাবের জ্যাকেট, হ্যান্ডকাপ, খেলনা পিস্তল, ওয়ারলেস সেট, মোবাইল ফোন ও ডাকাতির দুই ভরি ছয় আনা স্বর্ণালংকারসহ লুন্ঠিত নগদ ২৩ লাখ ৮৫ হাজার টাকা জব্দ করা হয়েছে।
গ্রেপ্তার ৭ জন হলেন- মো. সবুজ মিয়া ওরফে শ্যামল (৩৯), মো. সাহারুল ইসলাম ওরফে সাগর (২৩), আবু ইউসুফ (৪১), দিদার ওরফে দিদার মুন্সী (৩৫), মো. ফেরদৌস ওয়াহীদ (৩৫), মো. আলামিন দুয়ারী ওরফে দিপু (৪২) ও মো. দাউদ হোসেন মোল্যা (৩৯)।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার রিফাত রহমান শামীমের সার্বিক তত্ত্বাবধায়নে এবং অতিরিক্ত উপপুলিশ কমিশনার এসএম রেজাউল হকের নেতৃত্বে ডিবির ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিমের সদস্যরা তাদের গ্রেপ্তার করে।
ডাকাতির ওই ঘটনায় খিলক্ষেত থানায় দায়ের করা মামলায় বাদি সোহেল আহম্মেদ সুলতান (২৭) জানান, তিনি আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংকে চাকরি করেন। গত ১০ অক্টোবর ব্যাংকটির উত্তরা মডেল টাউন ব্রাঞ্চের অ্যাকাউন্টের দুইটি চেক দিয়ে কোম্পানির অ্যাকাউন্টস অফিসার অনিমেশ চন্দ্র সাহাকে উত্তরা মডেল টাউন ব্রাঞ্চে পাঠানো হয়। সে দিন দুপুর ৩টা ২৫ মিনিটে তিনি এবং ব্যাংকের কমার্শিয়াল জিএম শাহজাহান মিয়া আল-আরাফা ইসলামি ব্যাংক, উত্তরা মডেল টাউন ব্রাঞ্চের অ্যাকাউন্ট থেকে একটি চেকের মাধ্যমে ৮৩ লাখ ৫০ হাজার উত্তোলন করেন। ওই টাকা হতে কোম্পানির ব্যবসায়িক পার্টনার জাফর ইকবালের পক্ষ থেকে মো. রাজনকে ৩৫ লাখ ৫০ হাজার টাকা বুঝিয়ে দিয়ে বাকি ৪৮ লাখ টাকা কোম্পানির প্রাইভেট কারে নিয়ে ব্যাংক হতে রওনা করেন। কাওলা হতে এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল দিয়ে প্রাইভেট কারটি খিলক্ষেত থানাধীন প্রাইম ডেন্টাল কলেজ বরাবর এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের ওপর বেলা ৪টার দিকে পৌঁছালে পেছন থেকে মেরুন কালারের একটি প্রাইভেট কার এসে কোম্পানির গাড়িটিকে ওভারটেক করে সামনে দাঁড়িয়ে গতিরোধ করে। গাড়িটি হতে কালো রঙের র্যাবের জ্যাকেট পরিহিত অজ্ঞাত পরিচয়ের ৫-৬ জন ডাকাত র্যাব পরিচয় দিয়ে কোম্পানির লোকদের অবৈধ অস্ত্র আছে বলে অনিমেশ চন্দ্র সাহা ও শাহজাহান মিয়াকে হাতকাড়া লাগায় এবং চোখ বেধে ভয়ভীতি দেখাতে থাকে। তাদের সঙ্গে থাকা টাকা, কোম্পানির একটি ব্লাঙ্ক চেক ও তাদের ব্যবহৃত ৩টি মোবাইল ফোন ছিনিয়ে নেয় ডাকাতরা।
এ ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নির্দেশে মামলার তদন্ত কাজে সম্পৃক্ত হয় গোয়েন্দা গুলশান বিভাগের ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। ঘটনাস্থল পরিদর্শন, মামলার বাদির বক্তব্য, সিসি টিভির ভিডিও ফুটেজ পর্যালোচনা ও তথ্যপ্রযুক্তির সহায়তায় র্যাব পরিচয়ে অপহরণ ও ডাকাত দলটিকে শনাক্ত করতে সক্ষম হয় ক্যান্টনমেন্ট জোনাল টিম। পরে ২১ ও ২২ অক্টোবর ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে পটুয়াখালীর কুয়াকাটাসহ ঢাকা মহানরীর খিলক্ষেত ও ভাটারা থানাধীন বিভিন্ন এলাকা থেকে মামলার ঘটনায় জড়িত ডাকাত দলের সাতজন সদস্যকে গ্রেপ্তার করা হয়।
পুলিশ জানায়, আসামিরা পরস্পর যোগসাজশে ছদ্মবেশে দীর্ঘ দিন ধরে অপহরণ, ছিনতাই ও ডাকাতির কাজ করে আসছে। তারা দুইটি ভাগে বিভক্ত হয়ে একটি দল বিভিন্ন ব্যাংকে অবস্থন করে এবং অন্য দল রাস্তায় অবস্থান করতে থাকে। ব্যাংকে অবস্থানকারী দলটি টাকা উত্তোলনকারী ব্যক্তিদের টার্গেট করে, আর রাস্তায় অবস্থাকারী দলটিকে টাকা উত্তোলনকারীর তথ্য দেয়। তখন রাস্তায় অবস্থানকারী দলটি টাকা উত্তোলকারীকে লক্ষ্য করে পিছু নেয় এবং পথিমধ্যে সুবিধাজনক স্থানে পৌঁছামাত্র ভিকটিমের গাড়ি গতিরোধ করে ভিকটিমকে তাদের প্রাইভেটকারে উঠিয়ে নেয়। পরে ভিকটিমের কাছ থেকে সর্বস্ব লুটে নিয়ে নির্জন স্থানে ফেলে যায়।