স্টাফ রিপোর্টার: নোয়াখালী-৪ (সদর-সুবর্ণচর) আসনের সাবেক সংসদ সদস্য মোহাম্মদ একরামুল করিম চৌধুরীর সম্পদের পরিমাণ নিয়ে সম্প্রতি নানা আলোচনা শুরু হয়েছে। তিনি ১৭ বছর ধরে নোয়াখালী জেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন এবং চারবারের সংসদ সদস্য হিসেবে দীর্ঘদিন এলাকার রাজনীতিতে প্রভাবশালী ভূমিকা পালন করেছেন। যদিও তিনি কাগজে-কলমে ৩২ কোটি টাকার সম্পদের কথা উল্লেখ করেছেন, বাস্তবে তাঁর সম্পদের পরিমাণ শতকোটির বেশি বলে অভিযোগ উঠেছে।
২০০৮ সালে ক্ষমতাসীন হওয়ার পর থেকে তাঁর পরিবারের সদস্যদেরও ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত করতে শুরু করেন একরামুল। তাঁর স্ত্রী কামরুন নাহার শিউলি কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান ছিলেন, ছেলে আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী সুবর্ণচর উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান হন, ভাগনে জহিরুল হক রায়হান ছিলেন পৌর মেয়র এবং তাঁর ভাই হাজি মোহাম্মদ ইলিয়াস কবিরহাট উপজেলার চেয়ারম্যান। নোয়াখালীর রাজনীতিতে তাঁর পরিবারের এই আধিপত্যের কারণে দলের অন্য নেতারা অনেকটাই কোণঠাসা হয়ে পড়েছিলেন।
একরামুল করিমের সম্পদের ব্যাপক বৃদ্ধির বিষয়টি আলোচনার কেন্দ্রে উঠে আসে। ২০০৮ সালে তাঁর স্থাবর-অস্থাবর সম্পদ ছিল ১১ কোটি ৩৫ লাখ টাকা, যা ২০১৪ সালে বেড়ে হয় ১৯ কোটি ৪০ লাখ টাকা। ২০১৮ সালে তা আরও বেড়ে দাঁড়ায় ৩৪ কোটি ৬২ লাখ টাকায়, এবং সর্বশেষ ২০২৩ সালে তিনি ৩২ কোটি ৫৯ লাখ টাকার সম্পদ ঘোষণা করেন। তবে স্থানীয়দের দাবি, একরামুল করিমের প্রকৃত সম্পদের পরিমাণ শতকোটিরও বেশি।
তাঁর বিভিন্ন স্থানে সম্পদ রয়েছে, যেমন—চট্টগ্রামের লালখানবাজারে সাড়ে ৪ কাঠা জমি, যেটির মূল্য প্রায় ১৫ কোটি টাকা, এবং কবিরহাটে তাঁর নিজস্ব বাড়িটি পাঁচ একর জায়গাজুড়ে অবস্থিত, যার মধ্যে রয়েছে হেলিপ্যাড ও সুইমিংপুলসহ অন্যান্য সুবিধা। এছাড়া, তাঁর প্রতিষ্ঠিত বিভিন্ন স্কুল, বাজার ও স্থাপনার নাম তাঁর পরিবারের সদস্যদের নামে রেখেছেন, যা ক্ষমতার সময়কালে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছে।
অবৈধ উপায়ে সম্পদ অর্জনের অভিযোগ নিয়ে একরামুল করিম চৌধুরী বলেন, তিনি পারিবারিকভাবে ব্যবসায়ী এবং সঠিক পদ্ধতিতে সম্পদ বৃদ্ধি করেছেন। চাঁদাবাজি ও টেন্ডারবাজির অভিযোগও তিনি অস্বীকার করেন, উল্লেখ করেন যে ই-টেন্ডারের মাধ্যমে সবকিছু এখন স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় পরিচালিত হয়।
যদিও ক্ষমতার পরিবর্তনের পর একরামুল করিম আত্মগোপনে আছেন, তাঁর বিপুল সম্পদের বিষয়টি নিয়ে আলোচনা চলমান।