✾ কী আছে বলার…
কথার আগের কথা, বর্তমান কথা আর উত্তর-আধুনিকতা। মাঝে আমাদের আধুনিক কথা। খুব সহজ নয় এই কথকতা।
ঘেঁটে যা দেখি, অনেক কিছু বোঝা বাকি। গরম ভাতের জন্য মানুষ এখনো ভুত ধরতে বেরোয় — এক এক ভূতের দাম বেড়ে একশত টাকা হয়েছে যে (স্বনির্বাচিত একশো গল্প; “গরম ভাত অথবা নিছক ভূতের গল্প”; সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়; গ্রন্থতীর্থ; পৃঃ ১৩-৩১)। এই ভূত এখনো তাড়ানো যায়নি।
কতো তত্ত্ব, কতো বাদ; মুশকিল এর কোনটাই বাদ দেওয়ার মতো নয় !! সব পাঠেই কিছু না কিছু আহরণ থাকে। দেখেছি, এতো সব “বাদ” প্রাণীদের “প্রাণবন্ত” করে তুলতে খুব কাজে আসেনি। যেমন “শিল্পের জন্য শিল্প”ও সফল হয়নি। উচ্চমার্গের এই “নান্দনিকতা” পাঠকের সহজগম্য হয় নি।
পাঠের অভ্যেস থেকে জেনেছিলাম “অজ্ঞানতাই শক্তি”। না জানলে দুঃখ কম, জানলে সুখ। যত জানা, তত যন্ত্রনাও। সুখ দুঃখও নির্ণীত হয়নি। কেউ কারো যুক্তি, অযুক্তি, প্রযুক্তি সন্ধানে আগ্রহী নয়। তাই হয়তো সক্রেটিস আগে নিজেকে জানতে বলেছিলেন। কি চাই, মানুষের এখনো জানা হয়নি।
মিশেল ফুকো বর্ণিত “সৃজনশীল” পাগলের উদাহরণ হিসেবে “লালন”-কে উল্লেখ করেছেন একজন। এই পাগল “সৃষ্টিশীল” মানব। এঁরা প্রতিভার উন্নত উদাহরণ। যেমন মোৎসার্ট, রবীন্দ্রনাথ, আইনস্টাইন ও ভ্যান গগ্।
পাঠে আলোচনা, যুক্তি-তর্ক-গল্প, ভূত-ভবিষ্যৎ, জ্ঞান-বিজ্ঞান, বিশ্বাস-অবিশ্বাস, এ’রকম অনেক আনন্দচর্চার সন্ধান মেলে। নিজ ব্যাখ্যারও কিছু সুযোগ আসে। তবে “সাত ঘাটের জল এক ঘাটে” (প্রবচন) করা যায় না। তাই সবার কথা বলতে হয় এক পরিসরে। দুরূহ কর্ম বটে।
এই জানতে জানতে শেষ পর্যায়ে এসে “উত্তর-আধুনিকতা”। অনন্য নয় এই অভিজ্ঞতা। “রোদ উঠলেই সোনা” হওয়ার কথা ছিল। হয়নি। অরক্ষিত রয়ে গেছে অনেক কিছুই, যেমন “আকাশ, ভোরের বাতাস, রক্তমাখা ধুলা।” (রোদ উঠলেই সোনা; নির্মলেন্দু গুণ)।
✾ গুণীজনে করি নতি…
অমর সাহিত্যিক হিসেবে জীবনানন্দ বেছেছিলেন তিনজনকেঃ সেক্সপীয়ার, রবীন্দ্রনাথ ও দান্তে। (কি হিসেবে শ্বাশ্বত; জীবনানন্দ দাশ; সমগ্র প্রবন্ধ; সঃ ভূমেন্দ্র গুহ; প্রতিক্ষন, প্রথম প্রকাশ ২০০৯, পুনর্মুদ্রণ ২০১৮; পৃঃ ৫৪-৬২)। লিখেছেন, কোন কিছুই শ্বাশ্বত নয়, সবই সময়ের প্রতিবিম্ব। তাই মহাভারতও শ্বাশ্বত নয়।
বোদলেয়ার, নিৎসে, রোনাল্ড বার্থেস ও বিনির্মান তত্ত্বের জন্মদাতা জাক্ দারিদা জড়িয়ে আছেন উত্তর-আধুনিকতার সঙ্গে। বার্থেস নাকি বলেছিলেন, “রচয়িতার মৃত্যু থেকেই একজন পাঠকের জন্ম” হয়। আমি সেই পাঠক বটে, কিন্তু রচয়িতার মৃত্যুকামী নই। কবি অমর থাকেন তাঁর সৃষ্টির মাধ্যমে।
উত্তর-আধুনিকতা সহজবোধ্য নয়; শুধু বিদেশজাত বলেই নয়, শিক্ষা, দীক্ষা বা বীক্ষায় বাঙালী খুব কুলীন হয়ে উঠতে পারেনি এখনো। “শির”ও আমাদের ততোটা “চির-উন্নত” হয়নি।
মহাবিশ্বে মহাকাশে মহাকাল-মাঝে
আমি মানব একাকী ভ্রমি বিস্ময়ে, ভ্রমি বিস্ময়ে॥
(পূজা ৩৩৭; রবীন্দ্রনাথ; টেগোরওয়েব.ইন)
মহারথীদের এও মত, সাহিত্য দেশজ হওয়া ভালো (বঙ্কিমচন্দ্র, রবীন্দ্রনাথ, জীবনানন্দ, রামেন্দ্রসুন্দর ও কাজী নজরুল)।
প্রবন্ধ সাহিত্যের অন্যতম আদি পুরুষ প্রমথ চৌধুরী লিখেছিলেনঃ
“নবযুগের ধর্ম হচ্ছে, মানুষের সঙ্গে মানুষের মিলন করা, সমগ্র সমাজকে ভ্রাতৃত্ববন্ধনে আবদ্ধ করা, কাউকেও ছাড়া নয়, কাউকেও ছাড়তে দেওয়া নয়” (বঙ্গ সাহিত্যের নবযুগ; প্রবন্ধসংগ্রহ; প্রমথ চৌধুরী; বিশ্বভারতী; ১৯৬১; পৃঃ ৩৪)।
স্থান-কাল-পাত্রের সীমা অতিক্রমণ কল্পনায় সম্ভব হোলেও, বাস্তব বেড়াজালে বাঁধা। রুশোর তিনশত বছর আগের কথাঃ “Man is born free but everywhere is in chains.” (The relevance of Jean-Jacques Rousseau 300 years after his birth; 28 June, 2012; unhcr.org)
“কবিতা”র সংজ্ঞা নির্ণয় করতে যেয়ে রবীন্দ্রনাথও নিরস্ত হয়েছিলেন সেই ১৮৮০ সালে। তাও লিখেছিলেনঃ
“আমি বলি যে, যে ভাববিশেষ ভাষায় প্রকাশ হয় নাই তাহা কবিতা নহে ও যে ব্যক্তি ভাববিশেষ ভাষায় প্রকাশ করে না সেও কবি নহে।”
(নীরব কবি ও অশিক্ষিত কবি; রবীন্দ্রনাথ; টেগোরওয়েব.ইন) ।
আরিস্টটলও সংজ্ঞা নির্দেশ করেননি। প্ল্যাটো কবিতাকে স্বীকৃতি দেননি। তাঁর দৃষ্টিতে কবিতা আবেগ নির্ভর, এহেতু তা যুক্তিনির্ভর দর্শনের বিরোধীপক্ষ। শেলি এই বিভাজনকে গুরুত্ব না দিয়ে বলেছিলেন, প্ল্যাটোও আসলে একজন ছদ্মবেশী কবি।
না পড়লে মনের কথা নিজের মতো করে লেখা যায় না। এক লেখকের কথা বলিঃ স্যামুয়েল হান্টিংটন; লিখেছিলেন “The Clash of Civilizations” (পেঙ্গুইন, ১৯৯৬), সোভিয়েত পতনের কিছু পরে। বুশ সিনিয়ারের মুখে তখন “নিউ ওয়ার্ল্ড অর্ডার”-এর বচন।
আর একজনঃ ফ্রান্সিস ফুকিয়ামা; বুশ প্রশাসনের এক কর্মকর্তা। লিখেছিলেন পনেরো পাতার একটি “বিস্ময়কর রচনা” The End of History? । (The National Interest; Summer 1989)
দু’জনই বিশ্বে সাড়া ফেলেছিলেন। সোভিয়েত পতনের পর বিশ্বে কি ঘটতে চলেছে, ভেবে পাচ্ছেন না কেউ। কেউ এঁদের বিশ্বাস করতে চাননি।
যদি সত্যিই ইতিহাসের এখানেই সমাপ্তি ঘটে, ফুকিয়ামার লেখার উদ্ধৃতি দিয়ে হান্টিংটন লিখেছিলেনঃ “The future will be devoted not to great exhilarating struggles over ideas but rather to resolving mundane economic and technical problems. And, he (Fukuyama) concluded rather sadly, it will all be rather boring.” (হান্টিংটন, পৃঃ ৩১)
ফুকিয়ামা পড়াশোনাও করেছিলেন প্যারিসে বার্থেস ও দারিদার সঙ্গে। ওঁদের আলোচনা শুনে লিখেছিলেনঃ “I was turned off by their nihilistic idea of what literature was all about … It had nothing to do with the world. I developed such an aversion to that whole over-intellectual approach that I turned to nuclear weapons instead.” (What Is Fukuyama Saying?; James Atlas; nytimes.com; 22 October, 1989) । মানতেই হবে এমন বলি না।
✾ তিন অধ্যায়…
জীবন কাহিনীর তিন পর্বঃ প্রাগৈতিহাসিক, ঐতিহাসিক ও বর্তমান। প্রথম পর্বের ইতিহাস নেই, তবে মানি বৈকি—
“মানুষের জন্মের সঙ্গে সঙ্গেই ছন্দ-চেতনার জন্ম হয়েছিল, তার পরে কবিতা এল…।” (জীবনানন্দ দাশ; সমগ্র প্রবন্ধ; পৃঃ ৬৪-৬৫)।
তখন লিপি ছিল না। কবিদের কল্পনায় তা ধরা দেয় না। বিজ্ঞান চেষ্টা করছে, জানাও যাচ্ছে কিছু কিছু। সে নিয়ে কবিতা চর্চা হতেই পারে। হোচ্ছেও। এর ইঙ্গিত রেখেছিলেন জীবনানন্দ তাঁর “সমগ্র প্রবন্ধ” গ্রন্থে।
লিপির আগের ইতিহাস শ্রুতি, কাব্য ভঙ্গিমায়। লিপিতে লিখিত পুরাকালের সব রচনাই পদ্য। গীতিকবিতা।
বাংলায় প্রথম পদ্য “চর্যাপদ”। “চর্যাপদের ভাব ও ভাষা দুইই বাঙালীর“। মূল পুঁথি চৌদ্দ শতকের; আনুমানিক হাজার শতকে বাংলা ভাষার জন্ম। বাংলার আদি সমাজ “আত্মনির্ভর কৃষিপ্রধান পল্লীসমাজ”। (বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা; প্রথম খন্ড; গোপাল হালদার; পৃঃ ১৭, ১০; মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৭৪)
তার আগে ও পরের কয়েক হাজার বছর বেদ, উপনিষদ, মহাভারত, রামায়ন, তন্ত্র, মন্ত্র, উপাসনা ও সনাতন দর্শনের যুগ, আর বিভিন্ন নামা রচনা, যেমন বাবর, বাদশাহ, আকবর, হুমায়ূন ইত্যাদি এবং কবি ফেরদৌসীর সুবিখ্যাত “শাহ্-নামা”। বৈদিক যুগে নাকি “বঙ্গ জাতিকে” অসম্মান জড়িয়ে বলা হোত “বয়াংসি” (পক্ষিজাতীয়) (ঐ; পৃঃ ৫) । ছিলেন জালাল উদ্দিন মুহাম্মদ রুমি, ওমর খৈয়াম, শেখ সাদি প্রমুখ।
জেনেছি “প্রাকৃতপৈঙ্গল” সংকলনের কথা, অপভ্রংশ কিন্তু বাঙলা, আনুমানিক চতুর্দশ শতকের রচনা; বাঙলা সাহিত্যের এক আদি নিদর্শন। সেই বাংলার স্বল্প উল্লেখঃ
ওগগ্রা ভত্তা, রম্ভঅ পত্তা।
গাইক ঘিত্তা, দুগ্ধ সংযুক্তা।
মৌইলি মচ্ছা, নালিতে গচ্ছা।
দিজ্জই কান্তা, খায় পুণ্যবন্তা।।
(ওগরানো ভাত কলাপাতায় ঢালা, গাওয়া ঘি, সুস্বাদু দুধ, মৌরলা মাছ, নালতে শাক রন্ধন করলেন কান্তা, পুন্যবান আহার করছেন; বাংলাসাহিত্যেরইতিহাস.কম; ২৪ ডিসেম্বর, ২০২১)
চর্যাপদীরা সনাতন ধর্মের ষড়-দর্শন (ব্রহ্ম, ঈশ্বর, অর্হৎ, বৌদ্ধ, লোকায়ত ও সাংখ্য) মানতেন না। জাতিভেদও মানতেন না। সে সময় ব্যক্তিস্বাতন্ত্র্যেরও আবির্ভাব ঘটেনি, যা এলো উনিশ শতকে। তাই তাঁরা পদ্যে লিখতেনঃ
“জলে প্রতিবিম্বিত চাঁদের মত সে পরতত্ত্ব সত্যও নয়, মিথ্যাও নয়”
(লূইপাদ; ঐ; পৃঃ ২৩)।
“তীরগতিতে ধাবমান হরিণের খুর দেখা যায় না।” (ঐ; পৃঃ ২৬)।
মঙ্গলকাব্যের কথা ও কাহিনীই হল … “বাঙালীর নিজস্ব বাংলা বিষয়”। (ঐ; পৃঃ ২৮-২৯)। আর ছিল বচন (খনা, প্রবাদ-প্রবচন)। “ময়মনসিংহ গীতিকা”র (দশটি পালার সমাহার) কালও নির্ধারন করা যায়নি।
শ্রীচৈতন্য যুগের (১৫০০-১৭০০) বাংলার একটু আস্বাদ নিইঃ
আপনি আচারি ধর্ম সবারে শিখায়।
আপনি না কৈলে ধর্ম শিখান না যায়।।
(শ্রীচৈতন্য; ঐ; পৃঃ ৮২)
পাল্টে গেছে এই শব্দও; কিন্তু মানুষ এখনো বদলায়নি। জীবনানন্দ দাশও আক্ষেপ করেছেন চার হাজার বছরেও মানুষের মন এতোটুকু বদলালো না।
সপ্তদশ শতকে আরাকান ছিল বাঙলা সাহিত্যের নবতর উন্মেষ ভূমি; দৌলত কাজি (“লোর-চন্দ্রানী”, যেটিকে বাঙলা সাহিত্যের প্রথম “ধর্ম-সংস্কারমুক্ত মানবীয় প্রণয়-কাব্য” বিবেচনা করা হয়/গোপাল হালদার) ও আলাওলের যুগ। তারও আগে ছিলেন সগীর শাহ (তেরো-চতুর্দশ শতক/”ইউসুফ-জোলেখা”); ডঃ এনামুল হকের বিচারে সগীরও ছিলেন আরাকান বা চট্টগ্রামের কবি।
নর সে পরম পদ নর সে ঈশ্বর।
নর বিনে ভেদ নাহি ঠাকুর কিঙ্কর।।
তারাগন শোভা দিল গগন মণ্ডল।
নর-জ্যোতি দিয়া কৈল পৃথিবী উজ্জ্বল।
(লোর-চন্দ্রানী ও সতী ময়না; দৌলত কাজি;
প্রথম খন্ড; সঃ দেবনাথ বন্দ্যোপাধ্যায়;
সাহিত্য সংসদ; তৃতীয় মুদ্রণ, ২০০৩; পৃঃ ১০)
আব্দুল হাকিম সপ্তদশ শতাব্দীতে লিখেছিলেন “বঙ্গবাণী” যা আজো প্রাসঙ্গিকঃ
যে সবে বঙ্গেত জন্মি হিংসে বঙ্গবাণী।
সে সব কাহার জন্ম নির্ণয় ন জানি।
(আলকামা.ওআরজি/ক্লাসিকপোয়েমস)
পাশ্চাত্ত্য জাতিদের আগমন ও বিস্তারের সঙ্গে বাংলায় আধুনিক যুগের আরম্ভ অষ্টাদশ শতকে। (বাঙলা সাহিত্যের রূপরেখা; দ্বিতীয় খন্ড; গোপাল হালদার; পৃঃ ৬৬; মুক্তধারা, ঢাকা, ১৯৭৪)
এই সময় নিধুবাবু (রামনিধি গুপ্ত) লিখেছিলেনঃ
নানান দেশে নানান ভাষা।
বিনে স্বদেশী ভাষা পুড়ে কি আশা।।
(ঐ; পৃঃ ২৩০)
উনিশ শতকে রঙ্গলাল বন্দ্যোপাধ্যায় লিখেছিলেনঃ
স্বাধীনতা-হীনতায় কে বাচিতে চায় হে,
কে বাঁচিতে চায়?
দাসত্ব-শৃঙ্খল বল কে পরিবে পায় হে,
কে পরিবে পায়।
(কবিকল্পলতা.ইন)
আর বিংশ শতাব্দীর গোড়ায় অতুলপ্রসাদ গেয়েছিলেনঃ
মোদের গরব, মোদের আশা,
আ-মরি বাংলা ভাষা!
তোমার কোলে,
তোমার বোলে,
কতই শান্তি ভালোবাসা!
(কবিতা.ওয়ার্ডপ্রেস.কম)
ভারতে ঔপনিবেশিক শাসনের পতন এবং বাংলাদেশের ভাষা ও স্বাধীনতা আন্দোলনেও এসবের ভূমিকা খুব কম ছিল না।
উনিশ শতকে “পদ্য” পথ পরিবর্তন করে হয়ে উঠতে লাগল ‘কবিতা’।
✾ কবিতার পথে…
রবীন্দ্র পরবর্তী আধুনিক যুগে জীবনানন্দ “দু’চারটে”র বেশি সফল কবিতার সন্ধান পাননি (জীবনানন্দ দাশ প্রবন্ধ সমগ্র; পৃঃ ৩২) । তবে “কল্লোল” গোষ্ঠীর অবদান ও প্রভাবকে তিনি অস্বীকার করেননি।
গদ্যছন্দে লিখিত আমার প্রিয় একটি আধুনিক কবিতার কয়েক পঙক্তি উল্লেখ করি; এ “কল্লোল যুগ” (১৯২৩-১৯২৯) পরবর্তীঃ
“বাসনগুলো একসময় জলতরঙ্গের মতো বেজে উঠবে। তার ঢেউ দেয়াল ছাপিয়ে পৃথিবীকে ঘিরে ফেলবে। তখন হয়ত এই ঘরের চিহ্ন পাওয়া যাবে না। তবু আশ্চর্যকে জেনো। জেনো এইখানেই আমার হাহাকারের বুকে গাঢ় গুঞ্জন ছিলো।”
(অমরতার কথা; অরুণ মিত্র; মিলনসাগর.কম)
এই জলতরঙ্গ, ঢেউ, দেয়াল, পৃথিবী, ঘর আর আশ্চর্য হাহাকারের গাঢ় গুঞ্জনই আধুনিক কবিতার বিশিষ্ট পরিচয়, আমার ধারণা। সৌন্দর্য তার অলঙ্কার; এই সৌন্দর্য দৃষ্টিগ্রাহ্য প্রকৃতি, যা আমাদের জীবন দর্শনের প্রান্তর নির্মান করে।
বাকি ইতিহাস বর্তমান, কাল বিহীন। অতীত বর্তমান হয় না, বর্তমান মুহূর্তে অতীত হয়। কবিতা অতীত কিংবা ভবিষ্যৎ হয় না।
ভবিষ্যতের ইতিহাস নেই, সবটাই কল্পনা, কিছুটা বিজ্ঞান অনুসারে, কিছুটা বিশ্বাসের আবর্তে। অতীত, ভবিষ্যত দুইই অদৃশ্য, তবু কবিতায় উভয়েই দৃশ্যমান, চিত্রকল্প রূপে। এই চিত্রকল্প সবকালেই বর্তমান বা আধুনিক।
আধুনিক বাংলা কাব্যে “সুবলয়িত” কয়েকটি ধারার প্রতিনিধি হিসেবে জীবনানন্দ বেছে নিয়েছিলেন অমিয় চক্রবর্তী, বুদ্ধদেব বসু, সুধীন্দ্রনাথ দত্ত, প্রেমেন্দ্র মিত্র, কাজী নজরুলকে (উত্তররৈবিক বাংলা কাব্য; জীবনানন্দ দাশ প্রবন্ধ সমগ্র; পৃঃ ৪২) । এঁদের সঙ্গে বিষ্ণু দে যোগ করেছিলেন অবনীন্দ্রনাথ, সত্যেন্দ্রনাথ ও প্রমথ চৌধুরীকে (একালের কবিতা; সঃ বিষ্ণু দে; সম্বোধি; ১৯৬৩)।
অমিয় চক্রবর্তীর একটি কবিতার কয়েকটি প্রিয় পঙক্তি জানাইঃ
তোমারও নেই ঘর
আছে ঘরের দিকে যাওয়া।……
কোথায় চলেছ পৃথিবী
আমারও নেই ঘর
আছে ঘরের দিকে যাওয়া।।
(কোথায় চলেছ পৃথিবী; অমিয় চক্রবর্তীর শ্রেষ্ঠ কবিতা;
ভারবি, ১৩৬২/১৯৫৫; পৃঃ ২৭-২৮)
এসব প্রেক্ষিতে, “উত্তর-আধুনিক” নতুন “বন্ধনী” হতে পারে, ভাবে, রসে, ব্যাঞ্জনায় এ আধুনিক বৈ ভিন্ন কিছু হওয়ার কথা নয়।
উত্তর-আধুনিকতা নিয়ে আল মাহমুদ প্রশ্ন তুলেছিলেনঃ
“উত্তরাধুনিক বিষয়ে আমি কিছু জানি না। যারা আধুনিক বা উত্তরাধুনিক বলে লাফালাফি করে তাদের কাছে আমার প্রশ্ন, আগে বলুন — আধুনিকতার বয়স কত? … মানুষ কবিতা কোথায় নিয়ে যাচ্ছে !”
(আল মাহমুদের অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার; তবুও প্রয়াস; ডিসেম্বর ২০২১)
শামসুর রাহমানের এই কবিতাকে (রচনাকাল ১৯৯৬) বলা হচ্ছে “একটি উত্তর-আধুনিক কবিতা” —
কবিতা লিখতে না-পারার দীর্ঘ খরা দেখে দেখে
চোখ পুড়ে যায়,
চোখ ফেটে রক্ত ঝরে। হে মধুর, কখনো কখনো
তোমার নিবাসে গিয়ে দ্বিপ্রহরে অথবা সন্ধ্যায়
বলি, মনোকষ্টে আছি, যেহেতু কবিতা
পালিয়ে বেড়ায় ঘন বনে।
(মানব হৃদয়ে নৈবদ্য সাজাই; শামসুর রাহমান;
ইবাংলালাইব্রেরি.কম)
এই শামসুর রাহমানের “দ্রোহ”-কে ব্যঙ্গ করে এক (বোধকরি তিনিও উত্তর-আধুনিক) কবি লিখেছেনঃ
“শিউলি ফোটা সকাল নেবো।/ঘাতক তুমি বাধ সেধো না, এবার আমি/গোলাপ নেবো (ফিরিয়ে নাও ঘাতক কাটা)।” এই ভাষায় ঘাতকের সাথে কথা বললে ঘাতক শুনবে?
(দুটি কবিতার বই ও বড়ো কবিদের মান নিয়ে দুয়েকটি মন্তব্য;
কাজী জহিরুল ইসলাম; POEM VEIN; ১৮ মার্চ, ২০২২)
বিতর্কে না জড়িয়ে বরং “হাংরি জেনারেশন”-এর (১৯৬১-৬৫) এক কবির কবিতা পড়িঃ
পৃথিবীর প্রাচীন পিঠের ওপর আমি এক নবাগত আগন্তুক
এখন কবির হাতের শিরা কেটে যখন রক্ত নিচ্ছেন চিকিৎসক
তখন আমার মনে পড়ছে আমি নিজের রক্ত বেচে মদ
গিলে লিখতে চেয়েছিলুম কবিতা
আমি কি উচ্ছন্নে গেছি? –
(অনাবশ্যক কবিতা; ফালগুনী রায়; পোয়েট্রিস্টেট.কম)
হয়তো ঠিক, “হাংরি জেনারেশন”-এর স্রষ্টা মলয় রায়চৌধুরী লিখেছিলেনঃ
তবে ইংল্যান্ড ফ্রান্স আমেরিকায় ভাবুক বা সাহিত্যিকের বক্তব্য
আমি এড়িয়ে যাই
কেননা পশ্চিমবাংলার পোস্টমডার্ন অবস্থায় এগুলো খাপ খায় না
এটা ঠিক যে ওদের পোস্টমডার্নিজম অতি প্রযুক্তিবাদের ফল
আমাদের পোস্টমডার্নিজম আধুনিকতার পচনের ফসল
(বঙ্গীয় বাস্তবতায় উত্তর-আধুনিকতা; শান্তনু কায়সার;
সমকাল; ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬)
কি ছিলো এই “হাংরি জেনারেশন”-এর ইস্তেহারে?
“ফর্মের খাঁচায় বিশ্বপ্রকৃতির ফাঁদ পেতে রাখাকে আর কবিতা বলা হয় না। …ইচ্ছে করে, সচেতনতায়, সম্পূর্ণরূপে আরণ্যকতার বর্বরতার মধ্যে মুক্ত কাব্যিক প্রজ্ঞার নিষ্ঠুরতার দাবির কাছে আত্মসমর্পণই কবিতা। … অর্থব্যঞ্জনাঘন হোক অথবা ধ্বনি পারম্পর্যে শ্রুতিমধুর, বিক্ষুব্ধ প্রবল চঞ্চল অন্তরাত্মার ও বহিরাত্মার ক্ষুধা নিবৃত্তির শক্তি না থাকলে, কবিতা সতীর মতো চরিত্রহীনা, প্রিয়তমার মতো যোনিহীনা, ঈশ্বরীর মতো অনুন্মেষিণী হয়ে যেতে পারে।”
(মলয় রায়চৌধুরী, তাঁর সাহিত্য, হাংরি আন্দোলন ও বন্ধুরা (১৯৯৯) “সাক্ষাৎকার” গ্রন্হের ভূমিকা; অজিত রায়; গুরুচন্ডালী.কম; ১ জানুয়ারি, ২০১৯)
বিনয় মজুমদারের এই ‘আধুনিক’ (নাকি উত্তর-আধুনিক?) কবিতা সময়ের দর্পনে কম গুরুত্বপূর্ণ ছিলো নাঃ
কাগজকলম নিয়ে চুপচাপ ব’সে থাকা প্রয়োজন আজ;
প্রতিটি ব্যর্থতা, ক্লান্তি কী অস্পষ্ট আত্মচিন্তা সঙ্গে নিয়ে আসে।
সতত বিশ্বাস হয়, প্রায় সব আয়োজনই হয়ে গেছে, তবু
কেবল নির্ভুলভাবে সম্পর্কস্থাপন করা যায় না এখনো।
সকল ফুলের কাছে এতো মোহময় মনে যাবার পরেও
মানুষেরা কিন্তু মাংসরন্ধনকালীন ঘ্রাণ সবচেয়ে বেশি ভালোবাসে।
(কাগজ কলম নিয়ে; বিনয় মজুমদার; মিলনসাগর.কম)
✾ কালি, কলম, মন…
কবিতা এই তিনের মূল্যবান সৃজন। কবি তার অধিকারী, পাঠক তাঁর অনুসারী। বঙ্কিমচন্দ্র নব্য কবিদের জন্য দশটি উপদেশ রেখেছিলেন, যার মধ্যে সর্বাধিক গুরুত্বপূর্ণটি ছিল “সরল এবং প্রচলিত” বাংলা ভাষার ব্যবহার (বাঙ্গালার নব্য লেখকদিগের প্রতি নিবেদন; বঙ্কিমচন্দ্র চট্টোপাধ্যায়; ১৮৮৫)। দেড়শত বছরেরও আগের প্রস্তাব, এখনো প্রাসঙ্গিক।
তখনও রবীন্দ্রনাথ কাব্যের আকাশে সম্পুর্ণ পরিস্ফুটিত হননি। যখন হলেন, কবিতা আধুনিক এবং উত্তর-আধুনিক দুটোই হোল। কাব্যে বহুবিধ নতুন শব্দের প্রথম প্রয়োগকারী তিনিই; কালের গর্ভে এসবের অনেক হারিয়ে গিয়ে এলো কবিতার গদ্যরূপ।
গদ্য পদ্যে কী এমন বিচ্ছেদ ভাবনায় রবীন্দ্রনাথ বলেছিলেনঃ “পদ্য অন্তঃপুর, গদ্য বহির্ভবন।” (গদ্য ও পদ্য; টেগোরওয়েব.ইন)। এই অন্তঃপুর ‘মন’। তা বহুবিভক্ত ও বিচিত্রমুখী।
বিষ্ণু দে তাঁর “একালের কবিতা”র মুখবন্ধে লিখেছিলেনঃ
“নামকরন একালের কবিতা মাত্রই রইল। কারণ আধুনিক শব্দটা খুব নিশ্চিত নয়” (পৃঃ পাঁচ)।
এই সংকলনে স্থান পাওয়া বিশিষ্ঠদের মধ্যে ছিলেন বাংলাদেশের জসীমউদ্দিন (রাখালী) ও শামসুর রাহমানও (পিতা)।
“একালের কবিতা” রবীন্দ্রনাথ দিয়ে শুরু, আর কাজী নজরুল, বুদ্ধদেব বসু হয়ে বিষ্ণু দে-তে শেষ। আধুনিকতার ক্ষতি হয়নি বিশেষ।
আমাদের ঘরে ঘরে আমরাও নানান মানুষ
গেয়ে চলি চুপি-চুপি আমাদের পালা
কিংবা গাই না আর মাথা নাড়ি পোড়া মাথা গরমে নরমে
থেকে থেকে হয়তো বা আমাদের কেউ কেউ মরীয়া হাঁপায়
জীবনে মৃত্যুতে কিংবা মৃত্যুতে জীবনে ভগ্ন ব্যর্থ অসহায়
কী যে ভাবে কর্মহীন অর্থহীন অচেনা স্বদেশ
কোথায় যে যাবে ভাবে কোন দেশ শীতল বর্ষায়
(জল দাও; বিষ্ণু দে; একালের কবিতা; পৃঃ ২৮০)
✾ বর্ণে গন্ধে ছন্দে…
কাজী নজরুল লিখেছিলেন, ছোটো গল্পে তাঁর প্রথম প্রকাশ; তারপর তা ছড়া, কবিতা হয়ে গানে সম্পূর্ণতা পেয়েছিল। মাঝে ছোঁয়া দিয়েছিল উপন্যাস, নাটক এবং গদ্যও (আমার সুন্দর; প্রবন্ধ; পৃঃ ৩৭)।
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলছেন, “কবিতায় মিল থাক আর না-ই থাক, ছন্দ সর্বদা চাই। আগেও চাই, পরেও চাই।” এ নাহলে কবিতা হবে না। “মজা এই যে, ছন্দ না-থাকাটাও একরকমের ছন্দ। … কবিতায় না হোক, অন্য সব ব্যাপারে।” (শিল্পকলায়, চলায়, বলায় সবকিছুতেই ছন্দ; কবিতার ক্লাস)।
জীবনের প্রতি পদে ছন্দ, এ প্রকৃতিসৃষ্ট। পাখির কলতান, ভ্রমরের গুঞ্জন, সমুদ্রের গর্জন, পর্বতের নৈশব্দ, অরণ্যের গহীনতা, আলো-ছায়া, নদীর কুলকুল ধ্বনি, মানুষের জীবভাব, ময়ূরের পেখম নাচ, “পায়ের আওয়াজ পাওয়া যায়”, “এবং ইন্দ্রজিৎ” ও “শুভ্রা সুন্দর কল্যাণী আনন্দ” সবকিছুই ছন্দে বাঁধা।
মনের চলাচল, জীবনের দোলাচল, ভাবের উদয়-অস্ত, কথোপকথন, লতা-পাতা-মাটির সুঘ্রাণ, শরীরের ঘাম, রক্ত ও ফুলের আঘ্রাণ, এসবই সমাজ এবং প্রকৃতিগত। এর বিপরীত কিছু কবিতা হবে না।
-তুমি অন্ধকারকে সর্বস্ব, সব অগ্নিস্ফুলিঙ্গ খুলে দিত পার কত সহজে।
আর শুভঙ্কর মেঘের মত একটু ঝুঁকলেই
কি হচ্ছে কি?
শুভঙ্কর তার খিদে-তেষ্টার ডালপালা নাড়লেই
কি হচ্ছে কি ?
শুভঙ্কর রোদে–পোড়া হরিণের জিভ নাড়লেই
কি হচ্ছে কি?
পরের জন্মে দশদিগন্তের অন্ধকার হব আমি।
(কথোপকথন–২১; পূর্ণেন্দু পত্রী; কবিতাককটেল.কম)
কবিতা স্থানিক (দেশ, প্রকৃতি, সংস্কার) ও সময়ের (প্রবহমান কাল) অনুগত। এর চিত্রকল্প এসবকে ঘিরেই। সমকালীনতা ও ইতিহাস এর অনুসঙ্গী। উপমাও তার সমসাময়িকতার প্রতীক। এসবকিছুর কাছেই কবি ঋণী।
“ঋণ বিস্মরণের মানুষ কবি নন।” (জীবনানন্দ দাশ; পৃঃ ৩৪)
আল মাহমুদ বলছেনঃ “কবিতায় কী থাকবে আর কী থাকবে না সেটা নির্ভর করে সময়ের উপর।” (অপ্রকাশিত সাক্ষাৎকার)।
সুভাষ মুখোপাধ্যায় লিখেছিলেন যেঃ
সময় এক নয় —
এর ওর তার।
তোমার সময় দিয়ে তাই
বৃথা চেষ্ঠা আমাকে মাপবার।
(কাল মধুমাস; সুভাষ মুখোপাধ্যায়ের কবিতা,
বিশ্ববাণী; ১৯৫৭; পৃঃ ২৪৪)
এ নাহলে কবিতা আধুনিক নয়, উত্তর-আধুনিকও নয়।
✾ কেন কবি, কেন কবিতা?
কবি যে মনের মানুষ; ধরে রাখা সম্ভব নয় বলে সে মনের কথাগুলোকে শব্দে বাঁধতে চায়; “স্বপ্ন ছড়াতে চায়, হৃদয় ভরাতে চায়”। প্রাচীন রূপে কবিতা “স্বপন-বিহারী”, আর আধুনিক রূপে “মাটির দুলাল”। (বর্তমান বিশ্ব-সাহিত্য; প্রবন্ধ; কাজী নজরুল ইসলাম; পৃঃ ২২)
কবিতা মনের দ্যোতক ! মনের চরিত্র বিদ্যুৎসম, এই আছি এই নেই। সে “বন্ধনহীন গ্রন্থি”; সে বিশ্বচারী। তার ক্ষন পল স্বরূপ, মুহুর্তে মেলাতে চায়। হারাতে দেওয়া যাবে না বলে তাকে বন্দী করতে হয় অক্ষরে অক্ষরে মহাকালের জন্য। সৃজনের আনন্দ অপরিসীম। কবিতাকেও থাকতে হবে, সভ্যতার মহানির্মানের প্রয়োজনে।
তাই কবি ও কবিতার যুগলবন্দী আবশ্যিক ভাবে নির্ভর করে “সত্য” ও “সুন্দর”-এর উপর। সত্য ও সুন্দর উভয়েই আপেক্ষিক। কবিতার সার্বিক প্রস্ফুটন “অনুভুতি” নির্ভর; “চৈতন্য”-এর ভূমিকা এক্ষেত্রে প্রগাড়। তাই রামেন্দ্রসুন্দর ত্রিবেদীর মীমাংসা সুত্রঃ “যেখানে অনুভুতি নিত্য পরিবর্ত্তনশীল, সেইখানেই চৈতন্য স্ফূর্তিমান্” (জিজ্ঞাসা; পৃঃ ২৯)।
এই সত্যমন্ত্র কী? কাজী নজরুল জানিয়েছিলেনঃ
সত্যতে নাই ধানাইপানাই
সত্য যাহা সহজ তাই,
সত্য যাহা সহজ তাই;
আপনি তাতে বিশ্বাস আসে,
আপনি তাতে শক্তি পায়
সত্যের জোর-জুলুম নাই।
(সত্য-মন্ত্র; কাজী নজরুল ইসলাম; বাংলা-কবিতা.কম)
“পরিবর্তন” অবশ্যম্ভাবী। এ জগতের দুই নিত্যের এক; অপরটি “মৃত্যু”। বিশ্বাসীরা “নিয়তি”কেও নিত্য মানেন। সবাই জানেন, তবু মারিও পুযো জানিয়েছিলেনঃ “মানুষের একটিই নিয়তিঃ মৃত্যু”।
সবাই নন, কেউ কেউ কবি হন। “কেননা তাদের হৃদয়ে কল্পনার এবং কল্পনার ভিতরে চিন্তা ও অভিজ্ঞতার স্বতন্ত্র সারবত্তা রয়েছে” (জীবনানন্দ দাশ; পৃঃ ১৩)। কিন্তু, “এই সম্যক কল্পনা-আভা কোথা থেকে আসে?” আধ্যাত্বিক শোনালেও জীবনানন্দের এই প্রশ্নের সারবত্তা অস্বীকার করা যাবে না।
✾ এবং উত্তর-আধুনিকতা…
কেউ কেউ বলছেন এই সন্ধানের শুরু ১৯৭১-এর পর থেকেই। ঠিক নয়। এই দশকে আমরা চোখ রেখেছিলাম স্বাধীনতার অতীত এবং স্বাধীনতা-উত্তর পর্বের দিকে। অধিকাংশ কবিতার চিত্রকল্প তখন জাতীয়তাবাদের বিপরীত যাত্রার প্রতিবাদ আর স্বাধীনতার বর্তমান হতশ্রী উত্তরণ।
শ্রদ্ধেয় গল্পকার প্রয়াত হাসান আজিজুল হকের মতঃ “উত্তর আধুনিক নামক বিভাজনটাকে মেনে নিতে আপত্তি থাকার কথা নয়। কিন্তু আপত্তিটা করতে হচ্ছে। … প্লেটো অমুক সালে জন্মগ্রহন করেছিলেন বলেই তিনি প্রাচীনকালের মধ্যে পড়ে যাচ্ছেন, এই ধারনাটা ভুল। …
“আধুনিকতাকে … চিহ্নিত করা হয়েছে কিছু লক্ষণ দিয়ে, কিছু অর্জন দিয়ে। যেমন ইহজাগতিকতা, যেমন ধর্মনিরপেক্ষতা, যেমন বিজ্ঞানমনস্কতা, যেমন যুক্তিবাদিতা। … আধুনিকতাকে অস্বীকার করতে গেলে এসব অর্জনকেও অস্বীকার করতে হয়।”
(সময় ও উত্তরাধুনিকতা; হাসান আজিজুল হক; গল্পপাঠ; ৫ মার্চ, ২০১৪)
আহমদ রফিক বলেছেন ঠিকঃ “আধুনিকতার ক্ষেত্রে পরম বা চরম বলতে কিছু নেই।” (কবিতার বিষয় ও প্রকরণ-বৈচিত্র্য; কালিওকলম.কম; ৫ জুন, ২০১৭)।
উত্তরাধুনিকতার চর্চাকারীদের একজন লিখেছেনঃ
“উত্তরাধুনিক সমাজবাস্তবতা হলো হাইপার রিয়েলিটি, ভার্চুয়াল রিয়েলিটি ও ম্যাজিক রিয়েলিটি। আধুনিকোত্তর সমাজে বহুমাত্রিক মানুষেরা নির্মাণ ও বিনির্মাণের যুদ্ধে সক্রিয়। অহিংস ও রক্তপাতহীন এ যুদ্ধে সবাই সবার টার্গেট। এ যুদ্ধে একবাচনে যিনি নির্মাতা অন্য বাচনে তিনিই বিনির্মাতা।…. আজ উত্তরাধুনিক মানুষ ডিজিটাল বিপ্লব, জৈব-প্রযুক্তির বিপ্লব এবং চেতনার বহুমাত্রিক বিপ্লব সম্পন্ন করেছে।”
(উত্তরাধুনিকতার পূর্বাভাস; উত্তরাধুনিকতা; সঃ রতনতনু ঘোষ; ২০১৫)।
তা সাহিত্যে “ম্যাজিক রিয়ালিজম” তো বঙ্গজ নয়; এর উৎপত্তিস্থান ল্যাতিন আমেরিকা, মারকেজ, মার্তি ও দারিয়েজের হাত ধরে।
বুদ্ধদেব বসুর “আধুনিকতা”র সমালোচনা করে ঋষি বসু লিখেছিলেনঃ
“… নিজের এবং নিজেদের কাব্যাদর্শনকে আধুনিক হিসেবে চিহ্নিত করে অন্য কাব্যবৃত্তকে প্রশ্ন করার বিষয়টি তিনিই আরম্ভ করেন।” … এ “অতি নির্ণয়ের নামান্তর”।
(আধুনিক বাঙলা কবিতাঃ সময়ের অভিজ্ঞান/২০১৪; প্রবেশক, পৃঃ ১৪)
উল্লেখ করেছেন অরুণ কুমার সরকার-এর এই বিখ্যাত কবিতাঃ
“কিন্তু ‘আনন্দ কোথায়’, বুদ্ধদেব বসু বললেন
‘য়ুরোপের আজকের কবিতায়, উপন্যাসে’?
রবীন্দ্রনাথকে দ্যাখো, কী উজ্জ্বল প্রশান্ত বিশ্বাসে
জীবন শাশ্বত জেনে কবিতাকে ভালোবেসেছেন।…
(রবীন্দ্রনাথ, অরুণ কুমার সরকার; ঐ, পৃঃ ১৭)
উত্তর-আধুনিকতা কি বুদ্ধদেব বসু সম্পর্কে এই মূল্যায়নেরই প্রতিফলন?
উত্তর-আধুনিকদের মতে “টেক্সট” গুরুত্বপুর্ণ; একটি পাঠ যতবার পাঠক পড়বেন ততবার তার “টেক্সট” পাল্টাবে। “যুগোত্তীর্ণ” বলেও কিছু থাকবে না। হাসান আজিজুল হক বলছেনঃ “সেই হিসেবে তত্ত্বটি যে সৃজনশীল লেখকের জন্য ক্ষতিকর সেই ব্যাপারে কোন সন্দেহ নেই।” আরো বলেছেন, “আমাদের মতো তৃতীয় বিশ্বের দেশের জন্য এই তত্ত্ব বিপজ্জনক।” (সময় ও উত্তরাধুনিকতা)।
ঋষি বসু লিখেছিলেনঃ “একটি টেক্সটকে দুজন আলোচকের হাতে পৃথকভাবে ছেড়ে দিলে এমন কিছু স্তর আলোচনায় উঠে আসে, যা অনেকাংশেই অভূতপূর্ব।” (আধুনিক বাঙলা কবিতাঃ সময়ের অভিজ্ঞান; পৃঃ ২২) । হওয়ারই কথা, জ্ঞান, বীক্ষন, বোধ মানুষ মাত্রেই ভিন্ন।
কি তফাৎ দুই আধুনিকতায়? যশোধরা রায়চৌধুরী লিখেছিলেনঃ
“আমূল তফাতটি হল, আধুনিক থেকে উত্তরাধুনিকে উত্তরণ। থিওরির স্তরে এই মতগুলি বার বার এসেছে বিদেশি টার্মিনোলজির হাত ধরে। … নব্বইয়ের কবিরা এক লাফে প্রোমোশন পেয়ে গেছেন আধুনিক থেকে উত্তরাধুনিকে।” (যশোধরা রায়চৌধুরীর পাতা; ভাষাশরীরের মধ্যে সমকালঃ নব্বই দুহাজার; ডিসেম্বর ২০১৬; wordpress.com)
সমীর রায়চৌধুরীর (“হাংরি জেনারেশন”) লেখা থেকে “পোস্টমডার্ন কবিতা” চেনার কয়েকটি উপায় যশোধরা আবিষ্কারের চেষ্ঠা করেছেনঃ
১। কবিতায় ভাষার গুরুত্ব থাকবে; ২। ‘আমি’ অনুপস্থিত থাকবে। ৩। বিষয়কেন্দ্রিক হবে না; কীটপতঙ্গ, গুল্মলতা, পশুপাখি, ফ্রিজ, টেবিল, অ্যাসট্রে, সবকিছু নিয়েই লেখা হতে পারে। আর, ৪। হবে “ওপেন এন্ডেড”।
অনেক প্রেক্ষিতের মধ্যে যশোধরা উল্লেখিত একটি প্রেক্ষিতের কথা বলিঃ
“বাংলা কবিতা দুটো স্পষ্ট কিন্তু সমান্তরাল ভাগে বিভক্ত হয়ে গেছে যেন।… প্রথম ভাগ…“উন্নয়নে”র পক্ষে; … যাদের লেখায় শপিংমল কাফে কফি ডে-সর্বস্বতা। আরবান, রক গায়ক, রাগি ও তেতো তারা।… অন্যটা সে মুখের আলো না পড়া অংশ, যেখানে লেগে আছে বর্জন আর ব্যথা আর উপেক্ষা।… (যশোধরা রায়চৌধুরীর পাতা)।
প্রথম ভাগে তাঁর আবিষ্কার এইসব “স্মার্ট ঝাঁচকচকে” চিত্রকল্পঃ
“যতবার মিসড কল দিই, উচ্চারণ করো প্রণয়” (বিশ্বজিৎ মন্ডল), “সময়ের বিভিন্ন স্টিকারে/আমার লিঙ্গচিহ্ন রেখে রেখে গেছি” (অনিমিখ পাত্র)।
দ্বিতীয় ভাগের কবিরা কিন্তু “এইসব নতুন মেধা বর্জন করেই” লিখছেনঃ
“রাত্রির তরল অন্ধকারে উথালে পাথালে ভেসে বেড়াচ্ছে
পুলিশি ছোবল, আমরা নিয়ত ওষুধপত্র খাই
ভাইরাস লকাপে
আমরা অবগত পৃথিবী, পৃথিবী অবগত আমরা
আমরা অর্ধপেট বিলাসী, করা লাঙলের কর্ষণে মুদ্রিত হয়
আমাদের ইস্তাহার…”
(জঙ্গল মহল; অভিমন্যু মাহাত; যশোধরা রায়চৌধুরীর পাতা)
✾ পরম্পরার নাম আধুনিকতা…
কাল বহমান; তাই আমরা বলি “আবহমানকাল”। জীবন সংক্রান্ত সবকিছুই পরম্পরাযুক্ত। আমরা ক্রমে ক্রমে আধুনিক হই; আধুনিকতাও সময়ানুগ।
পুরাকালের তীর-ধনুক এখন গুলি-বন্দুক আর “রকেট লঞ্চার”, হাতের তরোয়াল এখন “একে-৪৭”; আগে ছিল এক কোপে কাত, এখন “৪৭” এক মিনিটে ৬০০ জনকে কাত করতে পারে ! আমেরিকানরা এর নাম দিয়েছে “bad guy”, রাশিয়ান আবিষ্কার তাই। এর চিত্রকল্প কি হোতে পারে? এই অস্ত্র “Dirty Harry” নামক মানুষ নয়।
“শব্দভেদী বাণ” রামায়ণ যুগের, একালে তা “ব্যালিস্টিক মিসাইল”। “পুষ্পক রথ”-এর স্থান নিয়েছে বিমান, উভয় বেড়ানো এবং যুদ্ধের নিমিত্ত। এমন যুদ্ধ বিমানও (stealth bomber) রয়েছে যা প্রযুক্তিকে ফাঁকি দিতে পারে। “বাণ কাটা বাণ” এখন “মিসাইল ডিফেন্স সিস্টেম” নামে পরিচিত। সবই প্রযুক্তির অবদান।
মহাভারত ও রামায়ণে বর্নিত সব অস্ত্রই কল্পনার সৃজন। এখন সেইসব “গোলা”র পরিবর্ত ভয়ঙ্কর সব “বোমা”। “ওস্তাদের মার শেষ রাতে” হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে — দুই আনবিক বোমায় (নামগুলোও ছিল বেশ প্রতীকী — Fat Man ও Little Boy) মৃত্যু দু’লক্ষের উপর। হিরোশিমা ও নাগাসাকি তাই বৃহত্তর ধ্বংসের রূপক।
“মানব বোমা” গত শতাব্দীর আবিষ্কার। আঞ্চলিক এবং সাম্প্রদায়িক আগ্রাসন অনেক কাল ধরেই আন্তর্জাতিক। সন্ত্রাসও তাই। এসবের আধুনিক চিত্রকল্প “লাশ”।
“জিহাদ” এবং “ক্রুসেড”ও খুব প্রাচীন নয়। এখন “জিহাদ” বৃহত্তর অর্থেও ব্যবহৃত হয়ঃ “অহিংস” ও “ধর্মনিরপেক্ষ”। “নারীমুক্তি আন্দোলন”ও একপ্রকারের “জিহাদ”। ভালোবাসাকেও “লাভ জিহাদ” বলছেন কেউ কেউ !
✾ বদলবাড়ির চিত্রকল্প…
বদলে গেছে আকাশ কল্পনাও। আলোর গতি অর্জন হয়নি, বিজ্ঞান বলছে তা সম্ভব হবে না। কিন্তু মহাকাশ ভ্রমণ এখন সৌরজগৎ ছাড়িয়েছে।
চাঁদে বসবাস হয়তো খুব দেরী নেই; শুনেছি জায়গাও বিক্রি হচ্ছে ওখানকার। ফেরা হবে না জেনেও অনেকেই মঙ্গল ভ্রমণের জন্য টিকিট কেটেছেন। আবিষ্কার হয়েছে পৃথিবীর মতো “বাসযোগ্য এক্সোপ্ল্যানেট”। “উষ্ণায়ন”-এর কারণে পৃথিবী ধসে পড়লে মানুষ ঐসব অঞ্চলে বসতি গড়তেও পারে।
জেনেছি ব্রম্মান্ডে আমাদের মতো সূর্য রয়েছে অন্তত দু’শো কোটি। জন্মাচ্ছে নতুন নতুন; নিখোঁজও হয়ে যাচ্ছে কোন কোনটা। অনেক কিছু গিলে নিচ্ছে “কৃষ্ণগহ্বর”; আমাদের আকাশগঙ্গাতেও (গ্যালাক্সি) রয়েছে এ’রকম গহ্বর।
“ফ্লায়িং সসার” এখনও রহস্যাবৃত; মাঝে মাঝে গ্রহাণুরা (এস্টেরইডস) চমকে দিয়ে যাচ্ছে পৃথিবীকে। শুনছি, জাল তৈরি হচ্ছে এইসব “দুষ্টু” গ্রহাণুদের যাতে মহাকাশ থেকে ধরে বেঁধে আনা যায়। অস্ত্র তৈরী হচ্ছে চোখে পড়ামাত্র এদের নির্মূল করার জন্য। নইলে এদের আঘাতে পৃথিবীর ধ্বংস অনিবার্য।
প্রাণ আছে অন্যত্র? বিজ্ঞান বলছে থাকা সম্ভব। বেতার তরঙ্গে নাকি মাঝে মাঝে সাড়া আসে। বিশ্বাস মানতে নারাজ।
অনেকের ধারণা “অনাহুত প্রাণী” (এলিয়েন) মিশে আছে আমাদের মধ্যে। কারো কারো ধারণা, মানুষ এসেছে অন্য গ্রহ থেকে। এই তত্ত্বের প্রচারক এরিক দানিকেন। ডারউইনের বিবর্তনবাদ আঘাত করেছে বিশ্বাসে।
মানবচরিত্র নিরূপনে “ডিএনএ” (জিন) এখন বহুল কথিত, আর ভাইরাসের “আরএনএ”। ভাইরাস জীবন্ত প্রাণ নয়। রয়েছে “প্যারাসাইট”, যারা জীবন্ত প্রানীর ঘাড়ে চেপে বাঁচে। সমাজেও এদের উপস্থিতি কম নয়।
কলম চরিত্র বদল করে হয়েছে “কীবোর্ড”, লাল নীল কালি ঢুকেছে “প্রিন্টার”-এ। চীন সদ্য মানুষরূপী মহিলা “রোবট” ছেড়েছে বাজারে। এই নারী “কৃত্রিম বুদ্ধিদীপ্ত” । তা “নর” না হয়ে “নারী” হলেন কেন? তাও হবে হয়তো শিগগিরই। “অবসেশন”, “আকর্ষন”?
মাহফুজ পারভেজ লিখেছেন ভালোঃ
‘অবসেশন’ ও ‘আকর্ষণ’-এর মনস্তাত্বিক ব্যাখ্যা না জেনেও
আকর্ষণ-বিকর্ষণ-অবসেশন ছুঁয়ে ছুঁয়ে
মানুষ মানুষেরই কাছে আসে
আবার মানুষের চেয়ে বহুদুর চলে যায়…
(আকর্ষণ-বিকর্ষণ-অবসেশন; বার্তা২৪; ৯ জানুয়ারী, ২০২৩)
বাহ্যিক সৌন্দর্যে এই “নারী” বিশ্বসুন্দরীদেরও হার মানাবেন। সুবিধে, এই ললনা নাকি “জুতো সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ” সবই করতে পারেন। মানুষের সব দাবী মেটাতে তিনি সক্ষম, তাঁর নিজের কোন দাবী নেই, প্রতিবাদ নেই, তিনি আদেশ বাহক। চুড়ান্ত “যৌন” আবেদনময়ী হলেও তাঁকে এই চাহিদা মেটাবার কোন অধিকার দেওয়া হয়নি। প্রযুক্তি আগামীতে হয়তো তাও যোগান দিতে পারে।
কতকিছু বদলে গেল, আরো বদলাবে যদ্দিন মানুষ থাকবে। বদলাবে কবিতা ও তার শরীর ও বুনোন। চিত্রকল্প দুলবে বিশ্বাস এবং বিজ্ঞানের মধ্যিখানের মনোজগতে।
মানুষ চিরকালের “তল্পীবাহক”। তবে আনন্দ সংবাদ, তার মনটাকে এখনো কেউ ছিনতাই করতে পারেনি।
উত্তর-আধুনিকতাও এই পরম্পরা বিযুক্ত হতে পারে না। আগে প্রবীণদের কারো কারো কথা বলি যাঁরা বাংলাদেশের কবিতায় আধুনিকতার স্বাদ দিয়েছিলেন।
✾ কি ভাবছে বাংলাদেশ?
“জাতিসত্তার” কবি মুহম্মদ নূরুল হুদা বলছেনঃ “আধুনিকতা এবং উত্তরাধুনিকতাকে অতিক্রম করে আমরা যেখানে পৌঁছেছি তার নাম মৌলাধুনিকতা (মেটামডার্নিজম)।” তাঁর প্রথম কাব্যগ্রন্থ “শোণিতে সমুদ্রপাত” (১৯৭২) নামকরণ নিয়ে বলেছেনঃ “এটি একটি হাইপারবোলিক চিত্রকল্প। বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে বাঙালিজাতি আত্মবলিদানের মাধ্যমে যে সীমাহীন শোণিত-সাগরের সৃষ্টি করেছে, এটি তারই দ্যোতক।”
(কবি মুহম্মদ নূরুল হুদার সাক্ষাৎকারঃ “বাঙালি মূলত ইতিবাচক এবং সংগ্রামী জাতি”; বাংলাবিডিনিউজ.কম; ৪ মার্চ, ২০১৫)
কবি অসীম সাহা বলছেনঃ “আমরা আজ যে-কবিতা রচনা করছি, … কেউ কেউ অবশ্য এই কবিতাকে চিহ্নিত করতে চাইছেন উত্তরাধুনিক কবিতা হিসেবে……। আধুনিকতার বিদ্রোহের মধ্যেও যেমন একটি সুনির্দিষ্ট শৃঙ্খলা লক্ষ করা যায়, উত্তরাধুনিকতা সেখানে বিশৃঙ্খলাকেই প্রাধান্য দেয়। … ব্যক্তির চেয়ে সমষ্টিই তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ।” …
সমষ্টির গুরুত্বে আমি অবশ্য কোন বিরোধ দেখি না।
বলছেন, “বাংলাদেশের ‘স্যাড জেনারেশন’ (রফিক আজাদ প্রমুখ) … যে-বিষয়গুলোর প্রতি গুরুত্বারোপ করেছে… এবং যারা এই ধরনের বক্তব্যের উদগাতা, তাদের অনেকেই নিজেদের অনেক কবিতায় সেই বিষয়গুলোকে সাফল্যের সঙ্গে উপস্থাপন করে প্রমাণ করছেন, তারা স্রোহী আধুনিকতার যথার্থ প্রতিনিধি।”
(বিশুদ্ধ ও অশুদ্ধ কবিতার দ্বৈরথ; অসীম সাহা; কাব্যশীলন.কম; ১৩ মার্চ, ২০২১)
কি লিখেছিলেন রফিক আজাদ?
রাষ্ট্র, রাষ্ট্রনীতি, নেতা, নানাবিধ আইন-কানুন
নিয়ন্ত্রিত করে যাচ্ছে যথারীতি প্রকাশ্য জীবন
ভিতর-মহল জেঁকে বসে আছে লাল বর্ণমালা।
(সীমাবদ্ধ জলে, সীমিত সবুজে; সিভয়েস২৪.কম; ২১ অক্টোবর ২০১৮)
মজিদ মাহমুদ লিখেছেনঃ “যিসাস মুজিব (১৯৮৪) নূরুল হুদার সামগ্রিক বিশ্বাসের কবিতা; … এই পোস্টমডার্নিজম, বিশ্বব্যাপী যে ধারণাটি, কোথাও সাহিত্যের ক্ষেত্রে আন্দোলনের রূপ নিচ্ছে। …
কিন্তু বাংলাদেশের যাঁরা এই কর্মটি একটি অবস্থানে নিয়ে যেতে আগ্রহী তাঁরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐতিহ্য-পুরাণকে কাজে লাগাতে চাচ্ছেন। কিন্তু পোস্টমডার্নিজম ধারণা আদৌ তেমন নয়, শেকড়ের দিকে প্রত্যাবর্তন, কিন্তু সেই শেকড় কতদূর পর্যন্ত বিস্তৃত? যদি তা ধর্মীয় সভ্যতা ছেড়ে আরো বহুদূরে এগুতে চায় আমরা কি তা রোধ করতে পারব?” (পরিবর্তন; বাঙ্গিনিউজ.কম)
গেল বছরে অনুষ্ঠিত এক আলোচনা সভায় কবি মাহবুব হাসান বলেছেনঃ
“উত্তর আধুনিক চিন্তাবৃত্ত তাই লোকসংস্কৃতির নতুন ব্যবহার, নতুন বিন্যাস করতে চান কবিরা আধুনিক কৃৎকৌশলের মাধ্যমে।”
আরো বলেছেনঃ
“নাস্তিক্যবাদ যদি মানুষের অনাবশ্যক সত্ত্বার অস্বীকৃতি হয় তাহলে তার কোনো অর্থই থাকে না, কারণ নাস্তিক্যবাদ হচ্ছে ঈশ্বরকে অস্বীকার এবং ঈশ্বর মানুষের শুদ্ধসত্ত্বার প্রতিনিধি – যে সত্ত্বা থেকে পুঁজিবাদ তাঁকে বঞ্চিত রেখেছে। সম্ভবত এ কথা আমরা অস্বীকার করতে পারি না।” (সময়নিউজটিভি; ৫ সেপ্টেম্বর, ২০২২)
মাহবুবের “ঈশ্বর” ভাবনার এই লক্ষণ আগে চোখে পড়েনি। এ হয়তো তাঁর পরবর্তী অভিজ্ঞতাজাত। কবিতা চর্চার শুরুর দিকে লিখতেনঃ
আমার শৈশব আর কৈশোর ছিল সেই বালকের
যে বালক গঙ্গা ফড়িংকে এ্যারোপ্লেন এ্যারোপ্লেন বলে পাড়া মাত করত,
সাঁই সাঁই পিছু ধাওয়া করত সারা সন্ধ্যাবেলা
(শৈশব-কৈশোরের গল্প; আমার প্রথমকালের কবিতা; নয়াদিগন্ত; ১২ আগস্ট, ২০২২)
কিছুদিন আগে আল মাহমুদকে নিবেদন করে লিখেছেন কবিতাঃ
তোমার জন্য একটা সুখবর আছে আল মাহমুদ
তোমার কবিতা আজ উত্তরাধুনিকদের প্রধান খাবার!
(তর্ক থেকে তর্কাতীতের দিকে আল মাহমুদ;
মাহবুব হাসান; তর্কবাংলা; ১ নভেম্বর, ২০২২)
মাহবুবের সমসাময়িক কবি আবিদ আজাদ সম্পর্কে কুদরত-ই-হুদা ঠিকই লিখেছেন, আবিদের মূল পরিচয় “নৈঃশব্দ্য আর বিষাদের বিচিত্র উদঘাটন আর উপভোগ” (আবিদ আজাদ বাংলাদেশের কবিতার ব্র্যান্ড এম্বাসেডর; বাংলা ট্রিবিউন; ২২ মার্চ, ২০২২)। আমিও আবিদকে এক দশকের ঘনিষ্ঠতায় তাই জেনেছি।
মাহবুব লিখেছেনঃ “চিত্রকল্পময়তাই আবিদের প্রধান প্রবণতা।” (ধবল দুঃখের মতো আবিদ আজাদ!; মাহবুব হাসান; তর্কবাংলা; ১ মে, ২০২১)। তবে স্পষ্ট করেননি এসব “উত্তর-আধুনিক” গোত্রভুক্ত কিনা।
সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী কবি রেজাউদ্দিন স্টালিনকে বর্ননা করেছেন “সর্বজনীন কবি” হিসেবে। (বাংলাট্রিবিউন.কম; ২২ নভেম্বর, ২০২০)
স্টালিনের লেখা একটি কবিতা উল্লেখ করিঃ
তার শখ ছিলো একদিন কোথাও আগুন লাগলে
সে বাঁশি বাজাবে
কারণ নিরোর কাহিনীটা সে জানতো, শুনেছিলো মাতামহীর কাছে
আগুন লাগলে কেউ বাঁশি বাজায়, মানুষ এমন মর্মান্তিক…
কিন্তু বাঁশিটা কোথায়
হঠাৎ সে বাঁশিটার খোঁজে আগুনে ঝাঁপ দিলো
এই লোকটাই সারা পৃথিবীতে আগুনে ঝাঁপ দিচ্ছে
রোমে, গেটিসবর্গে, ট্রয়ে, জুরিখে, এথেন্সে
হেবরনে, ঢাকায়।
(নিরো; রেজাউদ্দিন স্টালিনের পাঁচটি কবিতা; এনটিভিবিডি.কম; ৩ মার্চ, ২০১৫)
“নিরো”-র অনুপ্রেরণা বোধকরি মুহম্মদ নূরুল হুদার এই কবিতাঃ
একদা পুড়েছি আমি। আমিই কি পুড়েছি একাকী?
সেদিন তো পুড়েছিল রোম
তারো আগে ট্রয় — ………
এবারো কি অগ্নিকান্ড হবে?
রশ্মিময় বিস্ফোরণে পুড়বে কি
ঢাকা ও শিকাগো?
(অগ্নিময়ী হে মৃন্ময়ী; সমকালীন টেরোড্যাকটিল, ঢাকা,
২১ ফেব্রুয়ারী, ১৯৭৪; পৃঃ ১; সঃ অমিত কুমার ভট্টাচার্য)
নজরুল বিরোধিতার কারণে বুদ্ধদেব বসু ও জীবনানন্দ দাশকে কটাক্ষ করেও আনিসুল হক লিখেছেন সঠিকঃ
“সেক্যুলারিজম পশ্চিম থেকে আসা, তা কলোনিয়াল, সুতরাং প্রশ্নসাপেক্ষ — এ কথা বলার সময় আমরা যেন ভুলে না যাই, আমাদের আছেন চণ্ডীদাস, ‘সবার উপরে মানুষ সত্য, তাহার উপরে নাই’, আছেন লালন, ‘সব লোকে কয় লালন কী জাত সংসারে’, এবং আছেন নজরুল, ‘গাহি সাম্যের গান- মানুষের চেয়ে বড় কিছু নাই, নহে কিছু মহীয়ান।” (আধুনিকতা উত্তর-আধুনিকতা ও কাজী নজরুল ইসলাম; ফেসবুক পোস্ট; ২৫ মে, ২০২০; দৈনিক ভোরের কাগজ, ২৩ আগস্ট ১৯৯৬)
এক কবি আবু সাঈদ ওবায়দুল্লাহর দাবীঃ “আল মাহমুদ ও আব্দুল মান্নান সৈয়দের হাত ধরে ইসলামি আদর্শে মুসলমানি ঐতিহ্যের কবিতার পুনর্জীবিত হইছিল তা আবারও বর্তমান সময়ের কবিদের কবিতায় জীবন ফিরা পাইছে বইলা মনে হয়।” (ছাড়পত্র.কম; ২৭ মে, ২০২২)।
এই ওবায়দুল্লাহ সম্পর্কে আমার বিশেষ কিছু জানা নেই। আমি জানি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর কবিতাঃ “জিহ্বায় উচ্চারিত প্রতিটি সত্য শব্দ কবিতা/ কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা (আমি কিংবদন্তির কথা বলছি)।“
আবদুল মান্নান সৈয়দ কিন্তু জীবনানন্দকে “শুদ্ধতম কবি” আখ্যা দিয়ে লিখেছিলেনঃ “উজ্জ্বল এক দীর্ঘশ্বাস। এক নস্টালজিয়া, “রুপসী বাঙলা”, প্রাক্তন ধূসরতাকে যেন রুপসী করে তুলল…বাংলার সব লোকজ কল্প-কাহিনী ভিড় ক’রে এলো… (শুদ্ধতম কবি; আবদুল মান্নান সৈয়দ; প্রথম খন্ড; পৃঃ একুশ)।
দিলীপ কুমার বসু ২০১৪ সালে ঢাকায় এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেনঃ “উত্তর আধুনিকতা নিয়ে কিছু কনফিউশন আছে।… আসলে বিষয়টা অমিতাভ গুপ্তর। অর্থাৎ কনসেপ্টটা অমিতাভ গুপ্তের চিন্তা।” (উত্তর আধুনিকতা সমগ্রকে ধরতে চায়; দিলীপ কুমার বসু; তর্কবার্তা; এপ্রিল ১, ২০২২)।
গবেষক সুমিত রায় যুক্তির দৃষ্টিভঙ্গি ব্যাখ্যা করতে যেয়ে লিখেছেনঃ
“উত্তরাধুনিকতাবাদ অনুসারে … যৌক্তিকতা হচ্ছে একটি মিথের স্বরূপ।… একক যুক্তি বা কার্যকারণ বাস্তবতার সত্যকে বিভ্রান্ত করে তুলতে পারে। … এক্ষেত্রে বিশ্বাস আর আধ্যাত্মিক পর্যায়ে আত্ম-উন্নয়ন যোগ করতে পারলে উপকার পাওয়া যেতে পারে।” (আধুনিকতাবাদ, উত্তরাধুনিকতাবাদ ও উত্তরাধুনিকতার ক্রিটিকাল প্রতিক্রিয়া; সুমিত রায়; বিবর্তনপথ.কম; ১০ ডিসেম্বর, ২০২০)
অভিজ্ঞতা থেকে জেনেছি, আধ্যাত্মবোধ ও বিশ্বাস এক বস্তু নয়।
শান্তনু কায়সার বলছেনঃ “উত্তর-আধুনিকতা সময়কে সীমিত অথবা গণ্ডীবদ্ধ করে না। বরং তা তার নতুন মাত্রাকে আবিষ্কার করে।” লোকমানসের পরিচয় দিতে উদ্ধৃত করেছেন জসীমউদ্দিনকেঃ“নানান বরণ গাভীরে তার একই বরণ দুধ/জগত ভরমিয়া দেখলাম একই মায়ের পুত” (সমকাল; ১৫ জানুয়ারি, ২০১৬)। “তার” নয়, হবে “ভাই” (নক্সী-কাঁথার মাঠ/নয়; বঙ্গদর্শন.কম)।
বঙ্গ রাখাল-এর কবিতায় উত্তর আধুনিকতার “স্পষ্ট” ঝোঁক খুঁজে পেয়েছেন আবু রাইহান —
যৈবতী কন্যা ইশকুলে গেছে-
মাটির পাত্রে জমা করে রাতের আঁধার!
মাস্টারমশাই মেয়েটির গতরীয় বিরানপথ ধরে হাঁটে!-
সরষে মরিচের পেটে আজ নীলবৃক্ষের বিপন্ন চিরকুট…
(যৈবতী কন্যা ইশকুলে; বঙ্গ রাখাল;
ভোরেরকাগজ.কম; ১১ জুন, ২০২০)
মাহমুদ কামালের এই কবিতাটাও উল্লেখ করা যায়ঃ
যেখানেই থেমে ছিল কমা
সেখান থেকেই শুরু করা ভালো
(পরের বাক্য; মাহমুদ কামাল;
সাহিত্যক্যাফে.কম; ২৪ মার্চ, ২০২১)
পাশাপাশি পলিয়ার ওয়াহিদ, ছন্দের মধ্যে ঘোরাঃ
একজোড়া সাদা জুতো
সারারাত দৌড়ালো
এক পিস সাদা শার্ট
শরীরটা পোড়ালো
(অক্ষমতা–এক; পলিয়ার ওয়াহিদ;
সাহিত্যক্যাফে; ১৭ সেপ্টেম্বর, ২০২০)
মনে পড়ছে শামসুর রাহমানের “আসাদের সার্ট”-এর কথা, “পোড়া” নয় “রক্তাক্ত” যা স্ফুলিঙ্গ হয়ে জ্বলে উঠেছিল ১৯৬৯-এর গণআন্দোলনের সময়।
ওবায়েদ আকাশের এই রচনা পড়ে বেশ আধুনিক আনন্দ পেয়েছিঃ
“আমরা এই বহুপতির সংবর্ধনায় আর ভুঁইফোঁড় কিংবা গাঁজাখুরি মার্কা কোনো শব্দ অন্তত একবারও ব্যবহার করবো না। কেননা জীবন কিংবা ভাষার বিবিধ ব্যবহারে আজ, এই সব গাঁজাখুরি শব্দের সম্বন্ধ ভেঙে আমরা বহুদূর এগিয়ে এসেছি। যা দিনকাল, আমরা একটি বরেণ্য বিদ্যালয়ের দিকে ঢুঁসে দেবো আমাদের ধ্বনিযন্ত্রের তির্যক শব্দরশ্মি।” (গেটলকঃ একটি সংবর্ধনা স্মারক; ওবায়েদ আকাশ সাক্ষাৎকার; শুদ্ধস্বর; ১ আগস্ট, ২০২১)
আবিদ আনোয়ার লিখেছিলেনঃ “সুধীন্দ্রনাথ দত্ত একটিও গদ্যকবিতা লিখেন নি এবং ছন্দকেই কাব্যকৃতির একমাত্র মানদন্ড” বলে রায় দিয়েছিলেন। (ছন্দের সহজপাঠ; আবিদ আনোয়ার; আড্ডাপত্র.কম; ৪ অক্টোবর, ২০২০)। তিরিশের “পঞ্চকবি”র অন্যতম সুধীন্দ্রনাথের এই বিচার উত্তর-আধুনিকরা বর্জনই করেছেন বলা যায়।
আমার অনুধাবন থেকে বলিঃ অবশেষে, কোথায় এলেম কবিতা ভালোবেসে? আধুনিক শোনাচ্ছে না হয়তো এই বচন।
✾ নির্ণয় ন জানি…
নীরেন্দ্রনাথ চক্রবর্তী বলেছেনঃ “কাকে কবিতা বলে, এই প্রারম্ভিক প্রশ্নেরই কোনও সর্বজনগ্রাহ্য মীমাংসা আর খুঁজে পাওয়া যায় না” (কবিতা কী ও কেন; বেঙ্গলিইবুক.কম; পৃঃ ৪)। “কবিতা হচ্ছে শব্দ, এবং শব্দই হচ্ছে কবিতা” (ঐ; পৃঃ ৮)।
জীবনানন্দ বলেছিলেনঃ “… যে-ক’রেই হোক, আলাওল থেকে আজ পর্যন্ত বাংলা দেশের কবিতা প্রথমেই প’ড়ে নেওয়া উচিত — এ দেশের সমালোচকের।” (সমগ্র প্রবন্ধ; পৃঃ ৭১)। সব পড়া এক জন্মে সম্ভব হয়নি।
প্রচেত গুপ্ত ঢাকার “যুগান্তর”-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বলেছিলেনঃ “বাংলা সাহিত্য বাঙালির, আন্তর্জাতিকতার দোহাই দিয়ে ইংরেজি বই, সিনেমা, ওয়েব সিরিজের অনুকরণ নয়। সময় বদলেছে, আমিও সাহিত্যকে বদলাব — এই ভাবনায় জোর করে চলতে গেলে বিপদ।” (যুগান্তর; ১৩ ডিসেম্বর, ২০১৯)।
✾ অথ উত্তর-আধুনিক কথা…
অনেককিছুই রয়ে গেল অনিশ্চিত, অনেককিছুই অনির্ণিত। বিজ্ঞান বলছে সব আপেক্ষিক। ধৰ্মমত পিছন ফেরা, মর্মমত জীবন সেরা। উত্তর-আধুনিক না আধুনিক? একটা হলেই হবে, কি আর এমন ক্ষতি।
নিশ্চিত জানি, কবিতা হারাবে না তার ভাবুক মতি।