গাজা পরিকল্পনার অধীনে ফিলিস্তিনিদের প্রত্যাবর্তনের কোনো অধিকার নেই: ট্রাম্প

গাজার ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে

ফিলিস্তিনিদের গাজায় ফিরে যাওয়ার অধিকার থাকবে না এবং ‘আমি হব এটির মালিক’। প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প শনিবার এই মন্তব্য করেছেন। প্রেসিডেন্ট ফক্স নিউজের ব্রেট বেয়ারের সঙ্গে একটি সাক্ষাৎকারের সময় এই মন্তব্য করেছিলেন, যা গত শনিবার রেকর্ড করা হয়েছিল। তবে সর্বশেষ অংশটি গতকাল সোমবার প্রকাশিত হয়েছে।

ট্রাম্পের মন্তব্য এমন এক সময়ে এসেছে যখন ইসরায়েল এবং হামাস একটি দুর্বল যুদ্ধবিরতি ও জিম্মি চুক্তি চালিয়ে যাচ্ছে। হামাস ইসরায়েলি কারাগারে ফিলিস্তিনি বন্দিদের বিনিময়ে তাদের বন্দি কিছু ইসরায়েলি জিম্মিকে মুক্তি দিয়েছে।

এ ঘোষণার পর হামাসের বিরুদ্ধে চুক্তি লঙ্ঘনের পাল্টা অভিযোগ এনেছে ইসরায়েল। গাজায় যেকোনো পরিস্থিতির জন্য সামরিক বাহিনীকে প্রস্তুত থাকতে বলেছে দেশটি।
ট্রাম্প সাক্ষাৎকারে বেয়ারকে বলেন, ‘আমরা ১.৯ মিলিয়ন মানুষের জন্য সুন্দর সম্প্রদায় গড়ে তুলব। যা একটি নিরাপদ সম্প্রদায়, এটি পাঁচটি, ছয়টি হতে পারে বা দুটিও হতে পারে।

গাজার বেশিরভাগ জনসংখ্যা একাধিকবার বাস্তুচ্যুত হয়েছে। গাজার ৭০ শতাংশ ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়েছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। স্বাস্থ্যসেবা, পানি, স্যানিটেশন, স্বাস্থ্যবিধি ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে, খাদ্য, জ্বালানি, ওষুধ এবং আশ্রয়ের ঘাটতি রয়েছে।

ট্রাম্পের ভাষ্যমতে, গাজা উপত্যকার ২০ লাখের বেশি ফিলিস্তিনির জন্য তিনি উন্নত ও নিরাপদ এলাকা গড়ে তুলবেন। গাজা থেকে কিছুটা দূর আবাসন তৈরি করা হবে এবং এটি হবে নিরাপদ ও আধুনিক।

অপরদিকে গাজা উপত্যকা নিয়ে ট্রাম্প বলেন, ‘ভবিষ্যতের জন্য গাজা উপত্যকাকে একটি রিয়েল এস্টেট প্রকল্প (আবসন খাত) হিসেবে দেখুন। সমুদ্রের পাশে এটি হবে অনন্য এক সুন্দর এলাকা। ছুটি কাটাতে এটি একটি সুন্দর জায়গা হবে এবং আবাসনখাত নির্মাণে বেশি অর্থও খরচ হবে না। আমি এটির মালিক হব।’
ব্রেট বেয়ার ট্রাম্পকে জিজ্ঞাসা করেছিলেন, ‘ফিলিস্তিনিদের কি ফিরে আসার অধিকার থাকবে?’

ট্রাম্প বলেন, ‘না, তারা তা করবে না, কারণ তাদের আরো ভাল আবাসন থাকবে, আরো ভাল। আমি তাদের জন্য একটি স্থায়ী জায়গা তৈরির কথা বলছি।’

ট্রাম্প তার দাবির পুনরাবৃত্তি করে বলেছেন, জর্দান ও মিসর ফিলিস্তিনিদের পুনর্বাসন এবং আবাসনের জন্য অর্থ ব্যয় করতে পারে।’ যদিও উভয় দেশই এখনও পর্যন্ত এই ধারণাটি প্রত্যাখ্যান করেছে। গাজায় বসবাসকারী প্রায় ২১ লাখ ফিলিস্তিনিদের কোথায় বাসস্থান দেওয়া হবে তাও স্পষ্ট নয়।

গত রবিবার ট্রাম্প বলেছেন, ‘আমি গাজা কিনতে এবং এর মালিকানা পেতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।’ তবে তিনি কার কাছ থেকে এই অঞ্চল কিনবেন এবং কীভাবে আমেরিকা এটির মালিক হবে তা নিয়ে স্পষ্ট কিছু বলেননি।

ট্রাম্প সর্বশেষ বলেছেন, তিনি ব্যক্তিগতভাবে গাজার যেকোনো জমি বা রিয়েল এস্টেট উন্নয়নের মালিক হবেন। যদিও ট্রাম্প বারবার বলেছেন, ফিলিস্তিনিদের অন্যত্র বসবাস করা উচিত। ফিলিস্তিনিদের ফিরে যাওয়ার অধিকার নেই, এই মন্তব্যটি ট্রাম্পের সবচেয়ে সুদূরপ্রসারী বক্তব্য এবং এটি দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের একটি পরোক্ষ প্রত্যাখ্যান।

এমন মন্তব্য ফিলিস্তিনি সম্প্রদায়ের মধ্যে ক্ষোভের জন্ম দিতে পারে। অনেকেই আশা করেছেন, এই ভূমি একটি স্বাধীন ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রে পরিণত হবে এবং অতীতে ট্রাম্প দ্বি-রাষ্ট্রীয় সমাধানের প্রতি সমর্থন প্রকাশ করেছিলেন। ইসরায়েল ট্রাম্পের এ প্রস্তাবকে স্বাগত জানিয়েছে। অন্যদিকে হামাস কর্তৃক বন্দি জিম্মিদের কিছু পরিবার আশঙ্কা প্রকাশ করেছে, ট্রাম্পের মন্তব্যের কারণে বাকি জিম্মিদের মুক্তি দিতে বাধা সৃষ্টি করতে পারে।

গত সপ্তাহে ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী যুক্তরাষ্ট্রে নেতানিয়াহুর সফরের সময় ট্রাম্প গাজার ফিলিস্তিনিদের সম্পর্কে বলেছিলেন, গাজাবাসীদের ‘স্থায়ীভাবে’ একটি ‘সুন্দর এলাকা’ এবং ‘সুন্দর বাড়িতে’ পুনর্বাসিত করা উচিত। তিনি আরো বলেন, ‘ফিরে যেতে পারব না। যদি আপনি ফিরে যান, তাহলে এটি একশ বছর ধরে যেমন ছিল তেমনই শেষ হবে।’

ট্রাম্প বলেন, ‘মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র গাজা উপত্যকা দখল করবে এবং আমরা এখানে কাজ করব। আমরা এটির মালিক হব এবং সাইটে থাকা সকল বিপজ্জনক অবিস্ফোরিত বোমা ও অন্যান্য অস্ত্র ধ্বংস করব। এ ছাড়া অঞ্চলটি সমতল করব এবং ধ্বংসপ্রাপ্ত ভবনগুলো পরিষ্কার করব। এমন একটি অর্থনৈতিক উন্নয়ন হবে, যা এলাকার মানুষের জন্য কর্মসংস্থান এবং আবাসন সরবরাহ করবে। একটি বাস্তব কাজ করুন। ভিন্ন কিছু করুন।’

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ