Search
Close this search box.

ডিএনসিসিতে সড়ক নিরাপত্তা বিষয়ক কর্মশালা অনুষ্ঠিত

স্টাফ রিপোর্টার- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সম্মেলন কক্ষে সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ এবং ভাইটাল স্ট্র্যাটেজিস এর সহায়তায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন এবং জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট যৌথভাবে দিনব্যাপী একটি কর্মশালার আয়োজন করে।

কর্মশালার বিষয় ছিল- ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের প্রধান স্টেকহোল্ডারদের সাথে সড়ক নিরাপত্তার জন্য আচরণগত ঝুঁকি-ফ্যাক্টরগুলির উপর রাস্তার ধারের পর্যবেক্ষণের ফলাফলগুলি ভাগ করা । কর্মশালায় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল সংশ্লিষ্ট নীতিনির্ধারকদের কাছে তুলে ধরা হয়।

উল্লেখ্য, টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন নিশ্চিত করতে এবং সড়ক দুর্ঘটনাকে (রোড ক্রাশ) সহনীয় মাত্রায় রাখতে ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সহ পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ ও শহরে কাজ করে যাচ্ছে। ব্লুমবার্গ ফিলানথ্রপিস ইনিশিয়েটিভ ফর গ্লোবাল রোড সেইফটি ২০২০-২০২৫ (বিআইজিআরএস) এর অংশ হিসেবে জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট তাদের স্থানীয় অংশীদার (সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ) এর সাথে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে সড়ক নিরাপত্তার অবস্থা পর্যবেক্ষণ ও মূল্যায়নের জন্য পর্যায়ক্রমে রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি পরিচালনা করছে। ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন তাদের অধীনে অবস্থিত এলাকাগুলোতে বিআইজিআরএস প্রকল্প পরিচালনার জন্য আনুষ্ঠানিক চুক্তি স্বাক্ষর করে যার অংশ হিসেবে আগস্ট ২০২১ সাল হতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনে ইতোমধ্যে ৩ পর্বের তথ্য সংগ্রহ সম্পন্ন হয়েছে।

ডিএনসিসির এক্সিকিউটিভ ইঞ্জিনিয়ার তাবাসসুম আব্দুল্লাহর সঞ্চালনায় কর্মশালায় প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ডিএনসিসির প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মোঃ সেলিম রেজা।

উক্ত কর্মশালায় ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনসহ বিভিন্ন সরকারি সংস্থার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ এবং বাংলাদেশের বিআইজিআরএস অংশীদার সংস্থার প্রতিনিধিরা (যেমন- জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট, ভাইটাল স্যার্র্টেজিস, জি এইচ এ আই, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা এবং ডব্লিউ আর আই), একাডেমিক প্রতিষ্ঠান এবং সুশীল সমাজের বিভিন্ন সংস্থাসমূহ উন্মুক্তভাবে অংশগ্রহণ করে।

জন্স হপকিন্স ইন্টারন্যাশনাল ইনজুরি রিসার্চ ইউনিট থেকে ডাঃ শিরিন ওয়াধানিয়া এবং সেন্টার ফর ইনজুরি প্রিভেনশন অ্যান্ড রিসার্চ, বাংলাদেশ থেকে ডাঃ সেলিম মাহমুদ চৌধুরী গবেষণার ফলাফল উপস্থাপন করেন। প্রতিবেদনে দেখা যায় যে, গবেষণার সময়কালে মোট ৩৫৬,৮৭২ টি পর্যবেক্ষণ করা হয়। সামগ্রিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার (৯২ শতাংশ) ছিল সন্তোষজনক। তবে যাত্রীদের মধ্যে সঠিকভাবে হেলমেট ব্যবহারের হার ছিল মাত্র ৪৭ শতাংশ, যেখানে মহিলা এবং শিশুদের মধ্যে হেলমেট ব্যবহারের প্রবণতা ছিল খুবই কম। চালকদের মধ্যে সিট বেল্ট ব্যবহারের হার ছিল প্রায় ৬০ শতাংশ। তবে গাড়িতে যাতায়াতকারী শিশুদের কাউকেই নিরাপদ শিশু সুরক্ষিত আসন ব্যবহার করতে দেখা যায়নি। ২০২২ সালের নভেম্বর মাসে ১০ শতাংশ যানবাহনের গতি পর্যবেক্ষণ করা হয় এবং স্থানীয় রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহনের প্রায় অর্ধেক যানবাহনকে প্রস্তাবিত গতির (৩০ কিলোমিটার/ঘণ্টা) বেশি গতিতে চলতে দেখা যায়।

সড়ক দুর্ঘটনা বিশ্বব্যাপী মানুষের মৃত্যু ও দীর্ঘমেয়াদী পঙ্গুত্বের অন্যতম প্রধান কারণ। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা কর্তৃক প্রকাশিত ‘গ্লোবাল স্ট্যাটাস রিপোর্ট অন রোড সেইফটি ২০১৮’- এর তথ্যমতে, বিশ্বে প্রতিবছর সড়ক দুর্ঘটনায় (রোড ক্রাশ) প্রায় ১৩ লক্ষ ৫০ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়। এছাড়াও ২০-৫০ লক্ষ মানুষ বিভিন্ন মাত্রায় আহত হয় বা পঙ্গুত্বের শিকার হয়। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্যমতে ২০১৬ সালে বাংলাদশেে ২৪,৯৫৪ জন সড়ক র্দুঘটনায় নহিত হয়ছে। তবে  বাংলাদেশ পুলিশের তথ্যমতে ২০২২ সালে দেশে ৫২০০টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৪৬৩৮ জন নিহত হয়েছে।

প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা তার বক্তব্যে উল্লেখ করেন যে, সড়ক দুর্ঘটনার ফলে বাংলাদেশ বিশেষ করে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন অর্থনৈতিকভাবে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে। এছাড়াও তিনি তার এলাকায় সড়ক এলাকায় সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গৃহীত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের কথা বলেন।  প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা আরও বলেন যে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন ইঞ্জিনিয়ারিং সার্কেল, মেকানিক্যাল সার্কেল ও সিভিল সার্কেল নামে তিনটি সার্কেল গঠন করে সড়ক নিরাপত্তা কার্যক্রম বাস্তবায়ন করছে। তিনি প্রতিষ্ঠানের ভবিষ্যৎ কার্যক্রম পরিকল্পনা করার সময় রোডসাইড অবজারভেশনাল স্টাডি-এর ফলাফল ব্যবহার করার জন্য কর্মশালার সকল অংশগ্রহণকারীদের অনুরোধ করেন।

অনুষ্ঠানের বিশেষ অতিথি অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলী জনাব মোঃ শরিফ উদ্দিন বলেন, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে নানাবিধ কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে যাচ্ছে তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: অত্যাধুনিক সুযোগ-সুবিধা সহ (লিফট, এক্সেলেটর ইত্যাদি) ৩৬ টি নতুন ফুট ওভারব্রিজ নির্মাণ, পথচারীদের অনিরাপদ রাস্তা পারাপার বন্ধ করতে সড়ক দ্বীপে বেড়া স্থাপন, বিমানবন্দর সংযোগ সড়কের কতিপয় গুরুত্বপূর্ণ মোড়ে সড়ক উন্নয়ন কাজ, সড়ক বাতি স্থাপন, ফুটপাত তৈরী, ড্রেন তৈরী, আরসিসি পাইপলাইন নির্মাণ এবং রোড সাইন ও মার্কিং পুরাতন ফুট ওভারব্রিজ মেরামত ও রক্ষণাবক্ষেণ ইত্যাদি।

সড়ক নিরাপত্তা নিশ্চিতকল্পে ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের গৃহিত উদ্যোগ ও চলমান কার্যক্রমের সাফল্য কামনা করে সংশ্লিষ্ট সকলকে দক্ষতা ও সততার সাথে কাজ করার মাধ্যমে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪১ সালের মধ্যে উন্নত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে সকলকে ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করার পরামর্শ দিয়ে অনুষ্ঠানের সমাপ্তি ঘোষনা করেন ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোঃ জোবায়দুর রহমান, প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা, ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ