স্টাফ রিপোর্টার- রাজধানীতে ভোররাতে দুর্ধর্ষ ডাকাতি করা একটি চক্রের চার সদস্যকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হলেন- সোহেল (৩০), আক্তার ওরফে সোহরাব (৩২), আবির হোসেন ওরফে রাসেল (২৫), মো. রনির (২৮)।
রাজধানীর মতিঝিল এলাকায় চাঞ্চল্যকর একটি ডাকাতির মামলা তদন্ত করতে গিয়ে এই চক্রটিকে শনাক্ত করে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের মতিঝিল বিভাগের পল্টন মডেল থানা পুলিশ। পরে সোমবার রাজধানীর মহাখালী এলাকায় অভিযান চালিয়ে তাদের গ্রেফতার করা হয়। চক্রটিকে শনাক্ত করতে প্রায় শতাধিক সিসি ক্যামেরার ফুটেজ পর্যালোচনা করতে হয় পুলিশকে।
গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে ডাকাতি কাজে ব্যবহৃত দেশীয় অস্ত্র, পিকআপ ও ডাকাতির টাকা এবং ৪টি স্মার্টফোন, ৩টি বাটন মোবাইল উদ্ধার করা হয়।
পুলিশ বলছে, চক্রটি ভোররাতে চলাচলকারীদের টার্গেট করতো। ডাকাতির জন্য প্রথমে একটি পিকআপ ভ্যান ছিনতাই করে। এরপর পিকআপ নিয়ে রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে ঘুরে রিক্সায় আরোহনকারী যাত্রীদের স্বর্ণালঙ্কার, মোবাইল, টাকা , ব্যাগ ও গুরুত্বপূর্ন মালামাল ছিনিয়ে নিয়ে পালিয়ে যেতো।
চক্রটির হাত থেকে বাদ যাননি পুলিশ সদস্যরাও। গত ১২ মে ভোরে এ চক্রের খপ্পরে পড়েন পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) একজন নারী কনস্টেবল। একই রাতে ধানমন্ডি এলাকায় একইভাবে আরেকটি ডাকাতি করে তারা। এছাড়া গত ১৩ মে তেজগাঁও ও বনানী থানা এলাকায় একইভাবে আরও দুটি ডাকাতির ঘটনা ঘটায় তারা।
এ বিষয়ে মঙ্গলবার দুপুরে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে ডিএমপি।
ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার (ডিসি) হায়াতুল ইসলাম খান বলেন, বেশ কিছুদিন ধরে এই ডাকাত চক্রটি রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় পিকআপ নিয়ে ঘুরে ঘুরে ডাকাতি করছিল। ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত পিকআপ ভ্যানটিও তারা ছিনতাই করে নেয়। ডাকাতির পর দ্রুত ঘটনাস্থল ত্যাগ করতো তারা এবং এসব ঘটনায় অনেকেই থানায় অভিযোগ না করার কারণে তারা বীরদর্পে ডাকাতি করে আসছিল। তবে ডাকাতদের প্রত্যেকের বিরুদ্ধে ডাকাতি, দস্যুতা, চুরি ও মাদকের মামলা রয়েছে। জামিনে বেরিয়ে এসে তারা ফের ডাকাতি কাজে লিপ্ত হতেন।
পুলিশ সদস্য ডাকাতি কবলে পড়ার ঘটনা বর্ণনা দিয়ে মতিঝিল বিভাগের ডিসি বলেন, গত ১২ মে ভোর ৩টা ৪৫ মিনিটে পুলিশের স্পেশাল ব্রাঞ্চের (এসবি) নারী কনস্টেবল নার্গিস আক্তার (৩৩) রিকশায় করে ভিভিআইপি ডিউটির উদ্দেশ্যে অফিস যাচ্ছিলেন। ভোর ৪টার দিকে রাজারবাগ পুলিশ মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের সামনের মোড়ে পৌঁছামাত্র পেছন থেকে আসা একটি হলুদ ও নীল রংয়ের পিকআপ তার রিকশাকে চাপ দেয়।
সে সময় পিকআপের পেছন থেকে দুজন লোক নেমে আসেন। তাদের একজন তার হাত ধরেন এবং অপরজন গলায় চাকু ধরেন। কনস্টেবলকে ভয়ভীতি দেখিয়ে তার গলায় থাকা ১০ আনার একটি সোনার চেন ও হাতে থাকা ভ্যানিটি ব্যাগ ছিনিয়ে নেন। তারা ব্যাগে নগদ ৫ হাজার টাকা, ৪৫ হাজার টাকার একটি শাওমি নোট-৮ স্মার্টফোন, একটি বাটন ফোন ও এসবির আইডি কার্ড ছিল। ব্যাগ ছিনিয়ে নিয়ে পিকআপটি শাহজাহানপুরের দিকে চলে যায়।
পরে ভুক্তভোগী কনস্টেবল পল্টন মডেল থানা মামলা করেন। এরই প্রেক্ষিতে মতিঝিল জোনের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (এডিসি) মো. রওশানুল হক সৈকতের নেতৃত্বে পল্টন মডেল থানার একটি বিশেষ টিম ঢাকা শহরের বিভিন্ন স্থানে অভিযান চালায়। পরে মহাখালী থেকে ওই ঘটনায় জড়িত ৪ জনকে গ্রেফতার করে।
প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের বরাত দিয়ে ডিসি জানান, তারা পিকআপটি ৫-৬ দিন আগে ছিনতাই করে নিজেদের দখলে নেয়। ছিনতাই করা পিকআপ নিয়ে তারা এসময়ে রাতে চলাচলরত পথচারী/রিকশা আরোহীদের সুবিধাজনক স্থানে গতিরোধ করে অস্ত্রের ভয় দেখিয়ে ডাকাতি করে আসছিল। গত ১২ মে মোহাম্মদপুর থানা এলাকায় একটি এবং গত ১৩ মে তেজগাঁও ও বনানী থানা এলাকায় একইভাবে দুটি ডাকাতির ঘটনা সংঘটিত করেছেন তারা।
গ্রেফতারকৃত সোহেলের বিরুদ্ধে ২টি, আক্তার ওরফে সোহরাবের বিরুদ্ধে ৬টি, আমির হোসেন ওরফে রাসেলের বিরুদ্ধে ৫টি, মো. রনির বিরুদ্ধে ৮টি মামলা রয়েছে। তাদের বিরুদ্ধে বেশিরভাগ ডাকাতি ও দস্যুতার মামলা।