কুড়িগ্রাম-৪ (চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর) আসনের সংসদ সদস্য এবং প্রাথমিক ও গণশিক্ষা প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে দলীয় মনোনয়ন না দিতে লিখিতভাবে অনুরোধ জানিয়েছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতারা।
ওই আসন থেকে দলীয় মনোনয়নপ্রত্যাশী ১৬ জন নেতা দলটির সভাপতি শেখ হাসিনা বরাবর লিখিত আবেদন করেছেন। এতে প্রতিমন্ত্রী মো. জাকির হোসেনকে দুর্নীতিবাজ, ভূমিদস্যু, মাদকাসক্ত এবং বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমনকে নিয়ে কটুক্তি করার অভিযোগ আনা হয়।
গত বৃহস্পতিবার (২৩ নভেম্বর) সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এসব তথ্য ছড়িয়ে পড়লে স্থানীয়দের মাঝে তোলপাড় শুরু হয়।
এর আগে, গত বুধবার (২২ নভেম্বর) আবেদনপত্রটি আওয়ামী লীগ সভাপতির কার্যালয়ে জমা দেয়া হয়েছে বলে একাধিক অভিযোগকারী জানান। অভিযোগপত্রে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগসহ জেলা আওয়ামী লীগের ১৬ নেতার নামসহ স্বাক্ষর রয়েছে।
মন্ত্রীর বিরুদ্ধে করা লিখিত অভিযোগপত্রে ৫টি অভিযোগ দলের সভাপতির দৃষ্টি আকর্ষণের জন্য উপস্থাপন করা হয়েছে।
প্রতিমন্ত্রী জাকির হোসেনকে ‘দুর্নীতিবাজ, গণবিচ্ছিন্ন ও বিতর্কিত’ আখ্যা দিয়ে অভিযোগপত্রে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা বলেছেন, সংসদ সদস্য জাকির হোসেন একজন মাদকাসক্ত ব্যক্তি। তিনি রৌমারী, চিলমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ভূমিদস্যু হিসেবে পরিচিত। তিনি বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের নাম ব্যবহার করে ভূমি দখল করেছেন।
অভিযোগের তালিকায় ৩ নম্বরে উল্লেখ করা হয়েছে, তিনি (জাকির হোসেন) নিজে একজন মাদকসেবী এবং তার পরিবার দিয়ে এলাকায় মাদক ব্যবসা ও চোরাকারবার নিয়ন্ত্রণ করে থাকেন।
‘প্রতিমন্ত্রীর পরিবারের অনেকে বিএনপি-জামায়াতের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত’ দাবি করে অভিযোগের ৫ নম্বর ক্রমিকে উল্লেখ করা হয়, প্রতিমন্ত্রী হওয়ায় জাকির হোসেন প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগের কথা বলে চিলমারী, রৌমারী ও রাজিবপুর উপজেলার অনেক চাকরিপ্রার্থীর কাছে টাকা নিয়েও চাকরি দেননি। এতে হাজার হাজার পরিবার পথে বসেছে। এসব কারণে ওই আসনের প্রায় ৯৫ ভাগ মানুষ জাকির হোসেনের বিপক্ষে অবস্থান নিয়েছে। ফলে দলীয় নেতা-কর্মীরা সাধারণ মানুষের কাছে গিয়ে বিভিন্ন প্রশ্নের সম্মুখীন হয়ে বিব্রত হচ্ছেন।
আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পার্লামেন্টারি বোর্ড ও দলীয় সভাপতির প্রতি স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতারা অনুরোধ জানিয়ে বলেছেন, কুড়িগ্রাম-৪ আসনে নৌকা মার্কায় জাকির হোসেন ব্যতীত আওয়ামী লীগের যে কাউকে মনোনয়ন দিলে দলীয় নেতা-কর্মীরা ঐক্যবদ্ধভাবে কাজ করে আসনটি দলীয় সভাপতিকে উপহার দেবেন।
অভিযোগপত্রে স্বাক্ষরকারীদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলেন- রাজিবপুর উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি আব্দুল হাই সরকার, ওই উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য শফিউল আলম, কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও রৌমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম মিনু, এ উপজেলা আওয়ামী লীগের সহ-সভাপতি শহিদুল ইসলাম শালু, জেলা আওয়ামী লীগের আইন বিষয়ক সম্পাদক ও কুড়িগ্রাম বারের সাবেক সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট আমজাদ হোসেন, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী ও জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য অ্যাডভোকেট মাসুম ইকবাল, চিলমারী উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রেজাউল ইসলাম লিচু এবং বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ত্রাণ ও দুর্যোগ উপ-কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট জাহাঙ্গীর আলম।