Search
Close this search box.

বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না : রিজভী

বিএনপি নেতাদের স্ত্রীরা ভারতীয় শাড়ি তেমন কেনেন না বলে দাবি করেছেন বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী। বৃহস্পতিবার (২৮ মার্চ) দুপুরে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এক অনুষ্ঠানে রিজভী বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আচ্ছা ওরা এত কিছু করছে, শাল পোড়ায়, তো বউয়ের শাড়িটা পোড়াতে পারে না? ভারত থেকে আনা শাড়ি।’ আমি বলতে চাই, আমাদের বিএনপি নেতারা ভারত থেকে শাড়ি তেমন কেনেন না।

নিজের পুরোনো স্মৃতি তুলে রিজভী বলেন, আমার নানার বাড়ি হচ্ছে ইন্ডিয়া। বিয়ের পরে একবার গিয়েছিলাম। আমার ছোট মামা একটা শাড়ি দিয়েছিলেন। আমার স্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করলাম যে, ওই শাড়িটা কই? আমার মিসেস বললেন, ‘কাঁথা সেলাই করতে কবে দিয়েছি সেটাও ছিঁড়ে গেছে’।

অনুষ্ঠানে বিএনপির এই নেতা মন্তব্য করেন, আমরা যারা জাতীয়তাবাদী রাজনীতি করি, আমাদের কখনো বলা হয়নি যে রাষ্ট্রের বিরুদ্ধে যারা থাকে, তাদের বিরুদ্ধে কথা বলা, সমালোচনা করা যাবে না। আমরা ছাত্রজীবন থেকে “সিকিম নয়, ভুটান নয়—এ দেশ আমার বাংলাদেশ” স্লোগান দিয়েছি। রুশ-ভারতের দালালেরা স্লোগান দিয়ে এসেছি। আজকে ভারতের বিরুদ্ধে কথা বলাই মনে হচ্ছে পাপ। আজকে দুই-একটি পত্রিকা, খুব দেখি বিচলিত হয়ে গেছে, ভারতের সঙ্গে সম্পর্ক ক্ষুণ্ন করা ঠিক হচ্ছে কি না। এটা নিয়ে দেখি প্রতিবেদন হচ্ছে, নিউজ করছে।

ভারতীয় পণ্য বর্জনের আন্দোলনের সঙ্গে ‘সকলের সম্পৃক্ত হওয়া উচিত’ মন্তব্য করে বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব বলেন, “এ দেশকে স্বনির্ভর হওয়ার স্বপ্ন দেখিয়েছেন শহীদ রাষ্ট্রপতি জিয়াউর রহমান। আমরা সেই প্রত্যয় সেই আদর্শ নিয়ে কাজ করছি। আমাদের নিজের বোনা যে ফসল, সেটা আরো বেশি করে উৎপাদন করব, আমাদের মিল-কারখানায় যে শাড়ি তৈরি হয়, সেই শাড়ি আমাদের মেয়েরা পড়বে, আমাদের কল-কারখানায় যে লুঙ্গি তৈরি হয়, সেই লুঙ্গি আমাদের দেশের ছেলেরা পড়বে। ‘কিন্তু আমরা অন্যের কাছে নতজানু হব না, অন্যের কাছে দ্বারস্থ হব না। এই জাতীয়তাবাদী চিন্তা থেকে আমাদের কাজ করতে হবে।’

তিনি বলেন, আজকে যদি তারা (ভারত) এটুকু বলতো, না আমরা একটি অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন চাই, আমরা কোনো দলের পক্ষে না। যেটা আমেরিকা বলছে, যেটা ইউরোপীয় ইউনিয়ন বলছে যে, ‘আমরা কোনো দলের পক্ষে না, আমরা অবাধ সুষ্ঠু নির্বাচন দেখতে চাই’- সেটা পর্যন্ত তারা (ভারত) বলে নাই। উল্টো ইন্ডিয়ার হাইকমিশনের কর্মকর্তারা বলে দিলেন যে, ‘আমরা এ সরকারের পক্ষে’। অতএব আমি মনে করি, অবশ্যই যে সামাজিক আন্দোলন হচ্ছে পণ্য বর্জনের তার প্রতি সংহতি জানানো ন্যায়সঙ্গত। আওয়ামী লীগ সরকারের ভারত নীতির সমালোচনা করে রিজভী বলেন, এত কিছু ঘটনা… সীমান্ত হত্যা হয়। আপনি একটা ডামি সরকার, একটা ডাকাত সরকার, একটা অবৈধ সরকারের পক্ষে যদি একটি দেশ থাকে, তাহলে তার বিরুদ্ধে লড়তে হবে না? জনগণ প্রতিবাদ জানাবে না?

ভারতের আগ্রাসনের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান রেখে তিনি বলেন, কেন আমরা অন্য দেশের সমালোচনা করি। ৭৪ সালে মুজিব-ইন্দিরা চুক্তি হয়েছে, বেরুবাড়ি ভারত নিয়ে যাবে। কথা ছিল বেরুবাড়ি নিয়ে যাবে, আমাদের দোহগ্রাম-আঙ্গরপোতা যাওয়ার জন্য করিডোর দেওয়া হবে সেটা ৪০ বছরেও দেওয়া হয়নি। এখনও কিন্তু দেওয়া হয়নি। বেরুবাড়ি কিন্তু তারা নিয়ে গেছে। করিডোর দিয়ে ২৪ ঘণ্টা যাতায়াত করতে পারবে কিন্তু আইনগতভাবে যেটা দেওয়ার কথা সেটা দেওয়া হয়নি। ভারতের পার্লামেন্টে এটা বন্ধ করে রেখেছে। আমাদের যে প্রাপ্য যেটা আমাদের দেওয়া হয়নি। এটার জন্য প্রতিবাদ করতে পারব না। দেশের স্বার্থের পক্ষে আমরা কথা বলতে পারব না। এই যে গুম-খুনের পরিবার আজকে এম ইলিয়াস আলী কেন গুম হয়েছে? মানুষ বলে ভারতের টিপাইমুখ বাঁধের বিরুদ্ধে তার যে শক্ত অবস্থান সেজন্য তাকে গুম করা হয়েছে, আজকে স্থায়ী কমিটির সদস্য সালাউদ্দিন আহমেদ তিনি বিসিএস ক্যাডার সার্ভিসের ম্যাজিস্ট্রেট ছিলেন, এমপি ছিলেন পাঁচ বার, মন্ত্রী ছিলেন, তাকে গুম করা হলো, পাওয়া গেল আরেকটি দেশে। এটি কি বড় ধরনের কেলেঙ্কারি নয়? এটা কি আমাদের স্বাধীনতা-সার্বভৌমত্বের বিরুদ্ধে যায় না? এভাবে ওরা আগ্রাসন করছে।

গত কিছুদিন ধরে ভারতীয় পণ্য বর্জনের আহ্বানে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি প্রচার চলছে, যাতে সমর্থন দিচ্ছেন বিএনপির কোনো কোনো নেতা। গত সপ্তাহে নয়া পল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে দলের জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ভারতীয় পণ্য বর্জনের ডাকে দলের সমর্থন জানিয়ে তার গায়ে থাকা কাশ্মিরি শাল আগুন ছুড়ে ফেলেন।

গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে ‘আমরা বিএনপি পরিবার সেল’এর উদ্যোগে বিরোধী আন্দোলনে গুম-খুন-পঙ্গুত্বের শিকার পরিবারের সদস্যদের দলের ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানের ঈদ উপহার প্রদান উপলক্ষে এই অনুষ্ঠান হয়। সেলের আহ্বায়ক আতিকুর রহমান রুমনের সভাপতিত্বে ও সদস্য নাজমুল হাসানের সঞ্চালনায় এই আলোচনা সভায় দলের কেন্দ্রীয় নেতা শামসুর রহমান শিমুল বিশ্বাস, রশিদুজ্জামান মিল্লাত, শহিদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানি, মীর হেলাল, যুব দলের আবদুল মোনায়েম মুন্না, স্বেচ্ছাসেবক দলের ইয়াসিন আলী, ছাত্রদলের রাকিবুল ইসলাম রাকিব, নাছির উদ্দীন নাছির, চৌধুরী আলমের ভাই খুরশীদ আলম মিন্টু, সাজেদুল ইসলাম সুমনের বোন সানজীদা ইসলাম তুলি, নুরে আলমের স্ত্রী রিনা আলম, মাহবুবুর রহমান বাপ্পীর বোন ঝুমুর আক্তার, পারভেজ রেজার ছোট মেয়ে হৃদি বক্তব্য দেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ