বিচার বিভাগের জন্য পৃথক সচিবালয় কেন নয়: হাইকোর্ট

স্টাফ রিপোর্টার: দেশের বিচার বিভাগের জন্য একটি পৃথক সচিবালয় কেন করা হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী ৬০ দিনের মধ্যে সুপ্রিম কোর্টের রেজিস্ট্রার জেনারেলকে এবিষয়ে অগ্রগতি হাইকোর্টে দাখিল করতে বলা হয়েছে। এছাড়া সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে বর্ণিত অধস্তন আদালতের ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির উপর ন্যস্ত থাকার বিধানটি কেন অসাংবিধানিক হবে না, রুলে তাও জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট।

সুপ্রিম কোর্টের ১০ জন আইনজীবী করা এসংক্রান্ত রিটের শুনানি শেষে বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি দেবাশীষ রায় চৌধুরীর হাইকোর্ট বেঞ্চ এই রুল জারি করেন। আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী মোহাম্মদ শিশির মনির।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী মোহাম্মদ সাদ্দাম হোসেন, মোঃ আসাদ উদ্দিন, মোঃ মুজাহিদুল ইসলাম, মোঃ জহিরুর ইসলাম, মোস্তাফিজুর রহমান, শাইখ মাহাদী, আবদুল্লাহ সাদিক, মো: মিজানুল হক, আমিনুল ইসলাম শাকিল এবং যায়েদ বিন আমজাদ হাইকোর্টে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদের বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে রিটটি করেন।

এই রিটে বলা হয় যে, অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ ও শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির উপড় ন্যস্ত থাকলে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা খর্ব হয়। একই সাথে এই রিট আবেদনে একটি পৃথক বিচার বিভাগীয় সচিবালয় প্রতিষ্ঠা করতে আদালতের নির্দেশনা চাওয়া হয়।

রিটে বলা হয় যে, ১৯৭২ সালের সংবিধানে অধস্তন আদালতের দায়িত্বপালনরত ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের এই দায়িত্ব সুপ্রিম কোর্টের উপড় নাস্ত ছিল। কিন্তু ১৯৭৪ সালে সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনীর মাধ্যমে ম্যাজিস্ট্রেটদের নিয়ন্ত্রণ (কর্মস্থল নির্ধারণ, পদোন্নতিদান ও ছুটি মঞ্জুরীসহ) শৃঙ্খলাবিধানের দায়িত্ব রাষ্ট্রপতির উপড় ন্যাস্ত করা হয়। পরবর্তীতে সংবিধানের পঞ্চম সংশোধনীর মাধ্যমে “সুপ্রিম কোর্টের সহিত পরামর্শক্রমে রাষ্ট্রপতি কর্তৃক প্রযুক্ত হইবে” শব্দগুলো সন্নিবেশিত করা হয়। পরবর্তীতে সুপ্রিম কোর্টের আপীল বিভাগ পঞ্চম সংশোধনী আইন অসাংবিধানিক মর্মে ঘোষণা করলে পঞ্চদশ সংশোধন আইন, ২০১১ এর মাধ্যমে ১১৬ অনুচ্ছেদের বর্তমান একই বিধানটি প্রতিস্থাপন করা হয়। বর্তমানে সংবিধানের ১১৬ অনুচ্ছেদে এই বিধানটিই বিদ্যমান রয়েছে।

রিটের যুক্তিতে বলা হয় যে

১. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা সংবিধানের মৌলিক কাঠামো। ১১৬ অনুচ্ছেদের মাধ্যমে এই মৌলিক কাঠামো বিনষ্ট করা হয়েছে। একই সাথে বিচারকদের শৃঙ্খলাবিধির বাস্তবায়ন কার্যত আইন মন্ত্রণালয়ের হাতে ন্যস্ত করা হয়েছে।

২. সংবিধানের চতুর্থ সংশোধনী ইতোমধ্যে বিলুপ্ত হয়েছে। পঞ্চম সংশোধনী অসাংবিধানিক ঘোষিত হয়েছে। এবং পঞ্চদশ সংশোধনীতে ১১৬ এর বিধান বহাল রাখা হয়েছে, যা বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ও আইনের শাসনের পরিপন্থি।

৩. পৃথক সচিবালয় না থাকায় বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কার্যত স্থবির হয়ে পড়েছে। অধন্তন আদালতের উপড় আইন মন্ত্রণালয়ের নিয়ন্ত্রণের কারণে বিচার বিভাগের কর্মকর্তাগণ স্বাধীনভাবে বিচারকার্য পরিচালনা করতে পারছেন না।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

সর্বশেষঃ