Search
Close this search box.

বেগম ফজিলাতুন নেসা : শেখ মুজিবের জীবনে অর্ধেকেরও বেশি

১৫ আগস্ট: নেপথ্যের কুশীলব কারা

মনজুরুল আহসান বুলবুল

গতকালের পর…
৫.
দলের তালিকাভুক্ত কর্মী বা সদস্য না হয়েও বেগম ফজিলাতুন নেসা ছিলেন শেখ মুজিবের রাজনৈতক জীবনের সবচাইতে একনিষ্ঠ কর্মী, তাঁর রাজনৈতিক কর্মকান্ডের অতন্দ্র প্রহরী। স্ত্রী হিসেবে শুধু স্বামীর রাজনৈতিক জীবনের পর্যবেক্ষকমাত্র ছিলেন না, ছিলেন কঠিন সময়ে কঠিন সিদ্ধান্ত গ্রহনের ক্ষেত্রে এক নির্মোহ পরামর্শদাতা। এক অজ পাড়াগাঁয়ে বেড়ে ওঠা, প্রায় একাডেমিক শিক্ষাহীন এই মহিলা কঠিন বাস্তবতার মধ্যেও ধীর স্থির ভাবে সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে যে তীক্ষè মেধার পরিচয় দিয়েছেন সত্যিই তা’ এক অপার বিস্ময়। অনেক নেতা এমনকি রাষ্ট্রনায়কের মধ্যেও এ ধরনের সময়েচিত, দ্রুত ও সঠিক সিদ্ধান্ত নেয়ার নজির হয়তো মিলবে না ।

ওই যে বললাম, ফজিলাতুন নেসা ছিলেন শেখ মুজিবের রাজনৈতিক জীবনের অতন্দ্র প্রহরী, কিভাবে? জবাব মিলবে শেখ রেহানার বর্ণনায়। শেখ রেহানা বলছেন: ’.. বাবার কোন মিটিং থাকলে তাঁকে রওনা করিয়ে দিয়ে তিনিও [ফজিলাতুন নেসা] একবার চারপাশটা চক্কর দিয়ে আসতেন। নিজে দেখে তিনি যেন বলতে পারেন কেমন লোক সমাগম হয়েছে, কেমন তাদের আচার আচরণ। যাতে কেউ ভুল তথ্য দিতে না পারে। রিকশা, গাড়ি যা’ পেতেন তাই চেপে চলে যেতেন। দেশ স্বাধীন হওয়ার পরও অভ্যাসটা বজায় রাখেন তিনি। বাজারেও চলে যেতেন জিনিসপত্রের দাম দেখতে। বাবাকে নিজেই সব তথ্য দিতেন, অন্যে যাতে বিভ্রান্ত করতে না পারে। কেবল একটিবার সে নিয়মের ব্যত্যয় ঘটেছে, সেবার তিনি যাননি মিছিলের চারপাশে চক্কর দিতে। সে সটা ৭ মার্চের কথা।’

মনে হয়না আর ব্যাখ্যা করার দরকার আছে, শেখ মুজিবের শেখ মুজিব হয়ে ওঠার সাথে ফজিলাতুন নেসা জড়িয়ে আছেন কতটা জুড়ে।
বেগম ফজিলাতুননেসা রাজনীতির এই চর্চ্চাটি করতেন তাঁর নিজের জায়গাতে বসে, নিজের মত করেই। শেখ হাসিনা ইডেন কলেজ ছাত্র সংসদে ভিপি পদে নির্বাচন করবেন। শেখ মুজিব তখন জেলে, কি হয়, না হয় ভেবে মা ফজিলাতুন নেসার কিছুটা আপত্তি। শশুরের পরামর্শ নিলেন। পরে রাজিতো হলেনই , নিজেও ঝাঁপিয়ে পড়লেন মেয়ের নির্বাচনে। ছাত্রলীগের সবাইকে ডেকে বললেন: হাসুকে জেতাতে হলেতো সবাইকে কাজ করতে হবে। তাঁর নির্দেশনাতেই সবাই ঝাঁপিয়ে পড়ে নির্বাচনে। রাতে যখন শেখ হাসিনার বিজয়ের খবর আসে সেটি ছিল বেগম ফজিলাতুন নেসার বড় আনন্দের একটি সময়। পরদিন পত্রিকায় শিরোনাম হয় ’ ভিপি পদে মুজিব তনয়া’। মা’ বেগম ফজিলাতুননেসা কি সেদিনই তাঁর কন্যা শেখ হাসিনার মধ্যে ভবিষ্যতে নেতা হয়ে ওঠার বীজটি বপন করেছিলেন ?

শেখ মুজিব ততদিনে বঙ্গবন্ধু হয়ে গেছেন। ঘোষনা করেছেন বাঙ্গালী জাতির মুক্তি সনদ ছয় দফা। কিন্তু চক্রান্ত হয়েছে এই ছয় দফা নিয়েও। ছয় দফাকে আট দফা বানানোর চক্রান্ত শুরু হয় বঙ্গবন্ধুকে জেল খানায় রেখেই। ৩২ নম্বর বাড়িতেই দলের নেতাদের মধ্যে এই নিয়ে তুমুল তর্ক। কিন্তু পাহাড়ের মত সামনে এসে দাঁড়ান বেগম ফজিলাতুন নেসা । রাজনীতিক না হয়েও রাজনৈতিক দৃঢ়তা নিয়েই বলেন : ’.. আমার বাড়িতে বসে কোন চক্রান্ত চলবে না। আপনাদের নেতা ছয় দফার জন্য বছরের পর বছর জেলে, তাঁর অবর্তমানে তাঁর কোন কর্মসূচী আপনারা বদলাতে পারেন না। আপনাদের নেতার নির্দেশ ছয় দফা যারা মানবেন না, তারা দল ছেড়ে চলে যেতে পারেন..’।

ছয় দফার সমর্থনে ৭ ই জুনের হরতার সফল করার বিষয়ে মা’র রাজনৈতিক সম্পৃক্ততার কথা প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন : ’আমরা মাকে দেখেছি আমাদেরকে নিয়ে ছোট ফুপুর বাসায় যেতেন। ওখানে গিয়ে পায়ের স্যান্ডেল বদলাতেন, কাপড় বদলাতেন, বোরখা পরতেন। স্কুটারে করে আমার মামাকে নিয়ে গিয়ে ছাত্র নেতাদের সাথে বৈঠক করতেন। আন্দোলন কীভাবে চলবে সে বিষয়ে তার পরামর্শ দিতেন।’

এই ৬ দফা নিয়েই আরেকটি ঘটনা। ফজলুল কাদের চৌধুরীকে আইয়ুব খান পাঠিয়েছেন শেখ মুজিবুর রহমানের কাছে। লক্ষ্য শেখ মুজিব যেন ৬ দফা থেকে ফিরে আসেন সে বিষয়ে তাঁকে রাজি করাতে। ধানমন্ডির বাড়িতে গেছেন ফজলুল কাদের চৌধুরী। আলোচনা চলছে। বেগম মুজিব আপ্যায়নের কোন ত্রুটি করেননি। কিন্ত ু কিন্তু কান খাড়া রেখেছিলেন আলোচনার দিকে। এক সময় বঙ্গবন্ধু ও ফজলুর কাদের চৌধুরীকে একা পেয়ে আসল চেহারা দেখালেন বেগম মুজিব। সরসরি ফজলুল কাদের চৌধুরীকে বললেন : ’ ভাই, আপনাকে একটা অনুরোধ জানাব। শেখ মুজিবকে আইয়ুব খান আবার জেলে ভরতে চান, আমার আপত্তি নেই। আমার এই বাড়িঘর দখল করতে চান, তাতেও দু:খ পাবো না। আপনাদের কাছে আমাদের দু’জনেরই অনুরোধ, আমাদের মাথা কিনতে চাইবেন না। শেখ মুজিবকে মোনায়েম খান বানানোর চেষ্টা করবেন না।’

আগরতলা যড়যন্ত্র মামলা থেকে যখন প্যারলে মুক্তির প্রসঙ্গ আসে, দলের অনেক নেতা এর সমর্থন করলেও এর বিরূদ্ধে অবস্থান নেন বেগম ফজিলাতুন নেসা। কন্যা শেখ হাসিনাকে চিরকূট দিয়ে বাবার কাছে পাঠান তারঁ মত জানাতে। শেখ হাসিনাও অল্প সুযোগে বাবাকে বলেন : মা’র সাথে দেখা না করে কোন সিদ্ধান্ত নেবেন না। এ সময় দলের অনেক নেতা বেগম ফজিলাতুন নেসাকে বলেন : আপনি জানেন না, ওনাকে ফাঁসি দিয়ে মেরে ফেলবে। ধীরস্থির কণ্ঠে বেগম ফজিলাতুননিসার জবাব :’ .. বিধবা হলেতো আমিই হবো, আর পিতা হারালে আমার সন্তানরা হারাবে, আপনার ব্যস্ত হচ্ছেন কেন? সারা বাংলাদেশের আশা আকাঙ্খাকে পদদলিত করে তিনি প্যারলে যেতে পারেন না।’ এ সময় আক্রান্ত কন্যা শেখ হাসিনাকে সাšত্বনা দিয়ে কেগম ফজিলাতুননিসা মুজিব বলেছিলেন : ’ কিছুই হবে না, তোর বাবা মাথা উচুঁ করে ফিরে আসবেন’। হয়েছিলোও তাই। এটি এক অপার বিস্ময়! রাজনীতি সম্পর্কে প্রথামাফিক জ্ঞানের বাইরে একজন গৃহবধূ যে দুরদৃষ্টি নিয়ে বিষয়টি দেখতে পেলেন, আমাদের দুঁদে রাজনীতিকরা তা’ ধারনাও করতে পারলেন না!

বেগম ফজিলাতুন নেসা : শেখ মুজিবের জীবনে অর্ধেকেরও বেশি

বেগম ফজিলাতুননেসা তাঁর সুতীক্ষ্ন মেধা দিয়ে গোটা রাজনৈতিক প্রবাহের প্রতিটি ঘটনার প্রতিই লক্ষ্য রাখছিলেন। এম. এ, ওয়াজেদ মিয়ার বর্ণনায়: ১৯৭১ সনের ৭ মার্চ বঙ্গবন্ধু সাড়ে চারটার দিকে রেসকোর্সে যাওয়ার আগে উপরে দোতলায় যান। সেখানে আধাঘন্টা থেকে পরে নেমে আসনে। এই আধা ঘন্টায় কি হয়েছিল? বেগম মুজিব সবাইকে তাঁদের ঘর থেকে বাইরে যেতে বললেন। ঘরে তখন বঙ্গবন্ধু, বেগম মুজিব আর হাসিনা। সে সময়ের বর্ণনা দিয়েছেন শেখ হাসিনা নিজে : ’.. আমার মায়ের সময়োচিত সিদ্ধাšেতই তো দেশ এগিয়ে গেল। ৭ মার্চের ভাষণের আগে বঙ্গবন্ধুকে নির্ভার করেছিলেন বঙ্গমাতা। ভাষণের আগে কতজনের কত পরামর্শ, আমার আব্বাকে পাগল বানিয়ে ফেলছে। সবাই এসেছে, এটা বলতে হবে, ওটা বলতে হবে। আমার মা আব্বাকে খাবার দিলেন, ঘরে নিয়ে দরজাটা বন্ধ করে দিলেন। মা সোজা আব্বাকে বললেন, তুমি ১৫টা মিনিট শুয়ে বিশ্রাম নিবা। অনেকেই অনেক কথা বলবে। তুমি সারাজীবন আন্দোলন করেছ, তুমি জেল খেটেছ। তুমি জান কী বলতে হবে। তোমার মনে যে কথা আসবে, সেই কথা বলবা। অন্য কারও কোনো কথা বলার দরকার নাই।’

দেশের রাজনীতি নিয়ে কতটা উৎকণ্ঠিত থাকতেন বেগম ফজিলাতুন নেসা সেটি দেখতে পাই আরকেটি ঘটনায়। ১৯৭১ সাল। ২৩ মার্চ। বাংলদেশের ঘরে ঘরে স্বাধীন বাংলার পতাকা। ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে বঙ্গবন্ধুর আলোচনা চলছে। এম এ ওয়াজেদ মিয়া বলছেন: ‘..ওই দিন দুপুরে বঙ্গবন্ধু কারও সঙ্গে কোনো কথা না বলে গম্ভীরভাবে খাচ্ছিলেন। একপর্যায়ে শাশুড়ি বঙ্গবন্ধুকে বললেন, “এতদিন ধরে যে আলাপ-আলোচনা করলে, তার ফলাফল কী হলো কিছু তো বলছ না। তবে বলে রাখি, তুমি যদি ইয়াহিয়া খানের সঙ্গে সমঝোতা করো, তবে একদিকে ইয়াহিয়া খানের সামরিক বাহিনী সুবিধামতো সময়ে তোমাকে হত্যা করবে, অন্যদিকে এ দেশের জনগণও তোমার ওপর ভীষণ ক্ষুব্ধ হবে।” এ কথা শুনে বঙ্গবন্ধু রাগান্বিত হয়ে শাশুড়িকে বলেন, “আলোচনা এখনো চলছে, এই মুহূর্তে সবকিছু খুলে বলা সম্ভব না।” এই পর্যায়ে শাশুড়ি রেগে গিয়ে নিজের খাবারে পানি ঢেলে দ্রুত ওপরতলায় চলে যান। তিনি না খেয়ে সারা দিন শুয়ে থাকলেন, কারও সঙ্গে কথা বললেন না।’

খেলায় কখনও খেলতে হয় আক্রমনাত্মক আবার কখনও রক্ষনাত্মক কৌশল নিয়ে। বেগম মুজিবেকে দেখি তিনি জীবন যুদ্ধের নানাপর্যায়ে যখন যে কৌশল প্রয়োজন তাই প্রয়োগ করেছেন এবং কোন কৌশলটি কখন প্রয়োগ করতে হবে তা’ নিশ্চিত করেছেন নিজেই। এখানেই ফুটে ওঠে তার মেধার তীক্ষ্নতা ও দূরদর্শিতা। তিনটি উদাহরন দেই ।

১৯৭১ সন। ২৫শে মার্চ বঙ্গবন্ধুকে গ্রেফতার করে নিয়ে যাওয়া হয়েছে অজ্ঞাত স্থানে। নানা নাটকীয়তা শেষে বঙ্গবন্ধুর পরিবারকে ধানমন্ডির ১৮ নম্বর রোডের বাড়িতে আটকে রাখা হলো বেগম ফজিলাতুননেসা সহ পরিবারের সদস্যদের। এই বাড়ি থেকেই পাকিস্তানী বাহিনীর পাহাড়াদের ফাঁকি দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে চলে গেলে শেখ জামাল। এই নিশ্চিত খবরটি জানতেন কেবল শেখ রেহানা। শেষে বেগম মুজিবও যখন নিশ্চিত হলেন শেখ জামাল সীমান্তের ওপারে যেতে পেরেছে, তখনই আক্রমনাত্মক চালটি চাললেন বেগম ফজিলাতুন নেসা। তিনি ডাকলেন ডিউটি অফিসারকে, সরাসরি আঙ্গুল তুললেন তাদের দিকে, বললেন ’ তোমরা আমার ছেলেকে নিয়ে গেছো, ওকে ফেরৎ দাও’। পাকিস্তানী বাহিনীর রথী মহারথীরা এসে হাজির। তারা কিংকর্তব্যবিমূঢ় ! কিন্তু তাদের শাসিয়েই চলেছেন বেগম মুজিব। তাঁর এক কথা ’ আমি ইয়াহিয়ার সাথে কথা বলবো, তোমাদের কাষ্টডি থেকে আমার ছেলে হারায় কি করে? তিনি সত্যি সত্যিই খোদ ইয়াহিয়া খানকে নোট পাঠালেন ’ আমার স্বামীর খোঁজ নেই, আমাকে বন্দী করে রেখেছ, তোমাদের কাস্টডি থেকে আমার ছেলে নিখোঁজ হয়েছে’। বলাই বাহুল্য, বেগম মুজিবের এই কৌশলে প্রচন্ড চাপে পড়েছিল স্বয়ং ইয়াহিয়া ।

এই ঘটনার আগে, যেদিন পরিচয় গোপন করে এক বাসায় আশ্রয় নেয়া [ ১ নং আউটার সার্কুলার রোড ] বেগম মুজিবকে পরিবারের সদস্যদেরসহ পাকিস্তানীরা আটক করে নিয়ে যায়, সেদিনও দেখতে পাই বেগম মুজিবের তীক্ষ্ন মেধার স্বাক্ষর। পাকিস্তানী সেনা অফিসার এসেই জানান দিল, সবাইকে তাদের সাথে যেতে হবে। প্রাথমিক বাক বিতন্ডার পর পরিবারের সবাইকে এক সাথে নিতে রাজি হল তারা। কিন্তু বেগম মুজিব বুঝলেন এতো অনিশ্চিত গন্তব্যে অনিশ্চিত যাত্রা। কে নিয়ে যাচ্ছে, কোথায় নিয়ে যাচ্ছে, মেরে ফেলবে না গুম করে দেবে কেউ তো কিছ্ ুজানবে না। দ্রুতই তিনি কৌশল ঠিক করে ফেললেন। চারদিকে পাকিস্তানী বাহিনীর ভয়ে দরোজা জানালা বন্ধ করে সবাই স্বেচ্ছাবন্দী। নীচে নামলেন তিনি, প্রতিবেশীদের বন্ধ দরোজা জানালায় আঘাত করে সবাইকে জানান দিলেন, বললেন ’ ভাই আপনারা শোনেন, আমি বেগম মুজিব, পাকিস্তানী আর্মি আমাদের ধরে নিয়ে যাচ্ছে। আমাদের যদি মেরে ফেলে, আপনার সাক্ষী থাকবেন, আপনারা সাক্ষী থাকবেন”।

তাঁর তীক্ষ মেধার আরেকটি প্রমান। মুক্তিযুদ্ধ তখন পুরোদমে চলছে। পকিস্তানী সেনা কর্মকর্তারা বেগম মুজিবের কাছে জানতে চাইলো, তিনি তাদের কাছ থেকে কোন সহায়তা চান কি না। বেগম মুজিব বললেন, তিনি আর্থিক টানাপোড়েনের মধ্য দিয়ে চলছেন, এজন্য সহায়তা পেলে ভালো হয় । পাকিস্তানী সেনা কর্মকর্তা উৎসাহ ভরে জানতে চাইলেন ; কত টাকার প্রয়োজন। বেগম মুজিবের চালের কাছে ওরা ছিল শিশু। বেগম মুজিব বললেন : ’আপনাদের টাকা লাগবে না, ব্যাংকে কিছু টাকা আছে’। ব্যাগ থেকে চেক বই বের করে বললেন ” যদি কয়েকটি চেকে শেখ মুজিবের সই এনে দেয়া যায় তাহলেই সমস্যার সমাধান হতে পারে।’ আসলে বেগম মুজিব বুঝতে চাইছিলেন শেখ মুজিব জীবিত আছে কিনা এবং তিনি সে সময়কার পূর্ব পাকিস্তানে আছেন কিনা। মাঝারী অই সেনা কর্মকর্তার পক্ষে বেগম মুজিবের এই সমস্যার সমাধান করা ছিল অসম্ভব।

অসাধারণ এক মানবিক ও কৃতজ্ঞ নারীর ঘটনা তুলে ধরে এই অধ্যায় শেষ করি। ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশের বিজয় এলেও তখনও বেগম মুজিব পরিবারের সদস্যদের নিয়ে গৃহবন্দী। মুক্তি পেতে তাদের অপেক্ষা করতে হয় ১৭ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ভারতীয় বাহিনীর মেজর তারার হস্তক্ষেপে সেই বাড়ির পাহাড়ারত পাকি¯তানী সৈন্যদের আত্মসমর্পন করানো হয়। মুক্ত হন বেগম মুজিব ও পরিবারের সদস্যরা। এম, এ, ওয়জেদ মিয়ার বর্ণনা, এ সময় যে দু’জন পাকিস্তানী সৈন্যের সহায়তায় শেখ জামাল সেই বাড়ি থেকে পালিয়ে যেতে সক্ষম হয়েছিলো তাদের যেন কোন শাস্তি না হয় সে জন্য বেগম মুজিব মেজর তারাকে বিশেষ করে অনুরোধ করেন।

৬.
টুঙ্গিপাড়ার যে শিশুকন্যা রাজনীতির ঝড়ের পাখী শেখ মুজিবুর রহমানের ঝড়ো হাওয়ার সাথী হয়েছিলেন, বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কি তিনি নিভৃত সংসার জীবনে ফিরে গেলেন? জবাব হলো: না। ১৯৭২ সনের ১০ জানুয়ারী বঙ্গবন্ধু যেদিন দেশে ফিরলেন সেদিনের বর্ণনা দিলেন শেখ হাসিনা : ’বঙ্গবন্ধু যখন সব কাজ শেষে বাসায় ফিরলেন সে এক মহালগন। বেগম মুজিব আঁকড়ে ধরলেন তাঁকে, যেন সারাজীবন আর ছাড়বেন না। ছাড়েনও নি’। তাদের সহ মৃত্যু সেই সাক্ষ্যই দেয় ।

দেশ পরিচালনার দায়িত্ব নেয়ার পর বেগম মুজিবের শর্ত: তিনি কোন সরকারী ভবনে ওঠবেন না । দ্বিতীয় কাজটি ছিলো, প্রতিদিন গণভবনে বঙ্গবন্ধুর জন্য রান্না করে খাবার পাঠানো । কিন্তু রাজনীতির সাথে তাঁর যে সম্পর্ক তা’ কখনও ছিন্ন হয়নি।

এম,এ,ওয়াজেদ মিয়া বলছেন: ১৯৭৩ সনে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি সভাপতি হওয়ার জন্য শেখ শহীদকে রাজী করাতে তৎপর ছিলেন শেখ ফজলুল হক মনি। তিনি এজন্য বেগম মুজিবের সাহায্যও চাইলেন। কিন্তু বেগম মুজিব এটা চাচ্ছিলেন না । শেখ শহীদ তখন সরকারী চাকরী করছেন। বেগম মুজিবের অভিমত ছিল : ’ শেখ শহীদ চাকরী করায় আমার বোনের সংসারটি মোটামুটি চলে যাচ্ছে। সে এই চাকরী ছেড়ে ছাত্রলীগের সভাপতি হলে সংসারটা আবার অভাব অনটনের মধ্যে পড়বে।’ পরে অবশ্য শেখ শহীদ ছাত্রলীগের সভাপতি হন ।

বেগম মুজিবকে নীতি নির্ধারনী পর্ষায়ের গুরুত্বপূর্ণ বলেই জানতেন এমনকি বাংলাদেশের শত্রুরাও। ১৯৭৪ সনে এপ্রিলে এমনি এক ঘটনার বর্ণনা দেন এম,এ. ওয়াজেদ মিয়া। তিনি বলছেন :’ ..শ^াশুড়ি দুপুরে আমার অফিসে গাড়ী পাঠালেন আমাকে তাঁর বাসায় নেয়ার জন্য। হাসিনা ছেলে মেয়েদের নিয়ে সেখানেই ছিল। খাবার সময় তিনি আমাকে একটি ইংরেজীতে লেখা চিঠি দিলেন পড়ে দেখার জন্য। শাশুড়িকে পাকিস্তান মেডিকেল কোরের একজন ব্রিগেডিয়ার লিখেছেন চিঠিটি। এটি লন্ডন থেকে পাঠানো হয়েছে।.. ব্রিগেডিয়ার সাহেব বঙ্গবন্ধুর শ^াসনালী থেকে রক্তক্ষরনের সংবাদে উৎকণ্ঠিত হয়ে লিখেছেন উক্ত চিঠি। তিনি উল্লেখ করেছেন যে, লাহোরে ২৩-২৪ ফেব্রুয়ারী তারিখ অনুষ্ঠিত ইসলামী সন্মেলনে বঙ্গবন্ধুর শরীরে গোপনে ঢুকিয়ে দেয়ার জন্য মারাত্মক ক্যনসার জাতীয় ভাইরাস তৈরির নির্দেশ দিয়েছিল পকিস্তানী কর্তৃপক্ষ। তাঁকে বলা হয়েছিল, সেই ভাইরাস এক ক্ষুদ্র সঁূঁচের মধ্যে থাকবে, জুলফিকার আলী ভুট্টোর সাথে করমর্দন করার সময় হাতে বা কোলাকুলি করার সময় ঘাড়ে বা শরীরের যে কোন অংশে ঢুকিয়ে দেয়া হবে। ব্রিগেডিয়ার বলছেন, তিনি এতে অস্বীকৃতি জানিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন, অন্য কেউ এই কাজটি করে থাকতে পারে।

ঘটনা সত্য-মিথ্য যাই হোক, বঙ্গবন্ধুর বারবার অসুস্থ হয়ে পড়ায় এই চিঠি পড়ে বেগম মুজিব উৎকন্ঠিত হয়েছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে চিরতরে সরিয়ে দেয়ার পরিকল্পনা নিয়ে যে কোন কোন মহল তখন থেকেই তৎপর ছিল এই চিঠিতে তারই ইঙ্গিত পাওয়া যায় ।

১৯৭৩ থেকে দেশের নানা অস্থিরতা বেগম মুজিবকেও বিচলিত করে। বঙ্গবন্ধু যখন বিদ্ধস্ত দেশ পরিচালনার বিশাল চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করছেন, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক চক্রান্তের সাথে লড়াই করছেন, কখনও অসুস্থ হয়ে পড়ছেন, তখন বেগম মুজিব অতন্দ্র প্রহরীর মতই তাঁর পাশেই থেকেছেন। সার্বিক পরিস্থিতিতে তিনি উৎকন্ঠিত ছিলেন এ বিষয়ে সন্দেহ নেই। যেদিন চতুর্থ সংশোধনী পাশ হয়, বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্রপতি হিসেবে শপথ নেন সেদিন বাসার পরিবেশের বর্ণনা দিয়েছেন এম.এ. ওয়াজেদ মিয়া:’.. শাশুড়ি বলছিলেন … আমি এই বাড়ি ছেড়ে তোমার সরকারী রাষ্ট্রপতি ভবনে যাচ্ছি না। শাশুড়ির এই কথা শোনে বঙ্গবন্ধু মিটমিট করে হাসছিলেন। ’

৭.
শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন যে বাংলাদেশের ইতিহাসের অংশ হয়ে যাচ্ছে, বেগম মুজিব এ বিষয়টি তার কোন দিব্য দৃষ্টি দিয়ে কিভাবে বুঝতে পেরেছিলেন তা’ নিয়ে গবেষনা হতে পারে। তা’ না হলে স্বামীর অনুপস্থিতিতে এক নারীকে যখন পদে পদে লড়াই করতে হচ্ছে তখন তিনি কারাবন্দী স্বামীর হতে তুেল দিচ্ছেন রোলটানা খাতা ও কলম, জীবনী লেখার জন্য । বঙ্গবন্ধু নিজেই বলছেন ” আমার সহধর্মিনী একদিন জেলগেটে বসে বলল, বসেইতো আছো, লেখ তোমার জীবন কাহিনী। … আমার স্ত্রী, যার ডাকনাম রেনু- আমাকে কয়েকটা খাতাও কিনে জেলগেটে জমা দিয়ে গিয়েছিল। জেল কর্তৃপক্ষ যথারীতি পরীক্ষা করে খাতা কয়টা আমাকে দিয়েছেন। রেনু আরও একদিন জেলগেটে বসে আমাকে অনুরোধ করেছিল। তাই আজ লিখতে বসলাম’ [ অসমাপ্ত আত্মজীবনী ] ।

শুধু কি লেখার তাগিদে দেয়াই? এই লেখা যে বাঙালী জাতির অমূল্য সম্পদ সেটিও তিনি বুঝেছিলেন। ’ কারাগারের রোজনামচা’র ভূমিকায় বেগম ফজিলাতুন নেসার জ্যেষ্ঠা কন্যা শেখ হাসিনা বলছেন : [ ১৯৭১সনের পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাতে বন্দী জীবনে ] ’এই সময় এক মেজর সাহেব এসে বললো বাচ্চা লোগ ’সুকুল’মে যাও । .. যা হোক স্কুলে যাবে বাচ্চারা, জামাল, রেহানা আর রাসেল। আমি বললাম বই খাতা কিছুইতো নাই, কী নিয়ে যাবে, আর যাবেই বা কিভাবে ? জিজ্ঞেস করলো বই কোথায় ? বললাম, আমাদের বাসায়, আর সে বাসাতো আপনাদের দখলে। ধানমন্ডি ৩২ নম্বর সড়কে বাসা । … ওরা ঠিক করলো জামাল, রেহানা, আর রাসেলকে নিয়ে যাবে যার যার বই আনতে। আমি বললাম, আমি সাথে যাবো । কারন একা ওদের সাথে আমি আমার ভাইবোনেদর ছাড়তে পারি না। তারা রাজি হলো। আমার মা আমাকে বললেন ’ একবার যেতে পারলে আর কিছু না হোক তোর আব্বার লেখা খাতা গুলো যেভাবে পারিস নিয়ে আসিস। খাতাগুলো মার ঘরে কোথায় রাখা আছে তাও বলে দিলেন। … আমি মায়ের কথা মতো জায়গায় গেলাম। ড্রেসিং রুমের আলমারির উপর ডানদিকে আব্বার খাতাগুলি রাখা ছিল। খাতা পেলাম কিন্তু সাথে মিলিটারীর লোক, কী করি ? যদি দেখার নাম করে নিয়ে যায় সেই ভয় হলো। যা হোক, অন্য বই খাতা কিছু হাতে নিয়ে ঘুরে ঘুরে এক খানা গায়ে দেবার কাঁথা পড়ে থাকতে দেখলাম, সেই কাঁথাখানা হাতে নিলাম, তার পর এক ফাঁকে খাতাগুলি এ কাঁথায় মুড়িয়ে নিলাম । … যখন ফিরলাম মায়ের হাতে খাতাগুলো তুলে দিলাম। পাকিস্তানী সেনারা সমস্ত বাড়ি লুটপাট করেছে, তবে রুলটানা এই খাতাগুলিকে গুরুত্ব দেয় নাই বলেই খাতা গুলি পড়েছিল । .. আব্বার লেখা এ খাতার উদ্ধার আমার মায়ের প্রেরণা ও অনুরোধের ফসল। আমার আব্বা যতবার জেলে যেতেন মা খাতা, কলম দিতেন, লেখার জন্য বারবার তাগাদা দিতেন। আমার আব্বা যখন জেল থেকে মুক্তি পেতেন, মা সোজা জেল গেটে যেতেন আব্বাকে আনতে আর আব্বার লেখাগুলি যেন আসে তা নিশ্চিত করতেন। সেগুলি অতি যত্নে সংরক্ষন করতেন ।’

কল্পনা করা যায়! স্বামী কোথায় তিনি জানেন না, দুই পুত্র যুদ্ধ ক্ষেত্রে, কোন্দিন ফিরবে বা আদৌ ফিরবে কিনা তা’ অনিশ্চিত, বাকিদের নিয়ে তিনি গৃহবন্দী, কখন কি হয় বলা যায় না। এর মধ্যেও বেগম মুজিব বুক আগলে রক্ষা করলেন বঙ্গবন্ধুর লেখা। এই লেখাগুলো শুধু রাজবন্দী শেখ মুজিবের আত্মজীবনী বা রোজ নামচা মাত্র নয়, এদেশের রাজনীতি, সংগ্রাম আর মুক্তির ইতিহাস। এই একটি মাত্র কারনেইতো এই জাতির কৃতজ্ঞ থাকা উচিৎ বেগম মুজিবের প্রতি ।

৮.
সেই যে টুঙ্গিপাড়ার বালিকা বধূ তাঁর জমানো টাকা থেকে কিছু দিতেন স্বামীর খরচ হিসেবে সেই থেকে একসাথে মৃত্যুকে বরণ করে নেয়ার পুরো পথটিই ছিল বেগম ফজিলাতুন নেসা আর শেখ মুজিবুর রহমানের পরস্পর নির্ভরতার ।

এই নির্ভরতার স্বরূপটি জানতে আমাদের ফিরতে হবে আবার তাদের দুজনের কাছেই।

১৯৬৭ সনে ২৮-৩০ এপ্রিল শেখ মুজিব ডায়েরীতে লিখেছেন ” আজ ১৪ দিন হয়ে গেছে, রেনু তাঁর ছেলে মেয়ে নিয়ে আসবে দেখা করতে বিকেল সাড়ে চারটায়। চারটার সময় আমি প্রস্তুত হয়ে রইলাম। .. বহুদিন পর ছেলেমেয়েদের ও রেনুর সঙ্গে প্রাণ খুলে কথা বললাম। প্রায় দেড়ঘন্টা। ঘর সংসার, বাড়ির কথা আরও অনেক কিছু। আমার শাস্তি হয়েছে বলে একটুও ভীত হয় নাই, মনে হয় পূর্বেই এরা বুঝতে পেরেছিল। রেনু বললো পূর্বেই সে জানতো যে আমাকে সাজা দিবে। .. ছেলেমেয়েরা একটু দু:খ পেয়েছে বলে মনে হলো, তবে হাবেভাবে প্রকাশ করতে চাইছে না। বললাম, তোমরা মন দিয়ে লেখাপড়া শিখ, আমার কতদিন থাকতে হয় জানি না। তবে অনেকদিন আরও থাকতে হবে বলে মনে হয়। আর্থিক অসুবিধা খুব বেশি হবে না, তোমার মা চালাইয়া নিবে। কিছু ব্যবসাও আছে আর বাড়ির সম্পত্তিও আছে। আমিতো সারাজীবনই বাইরে বাইরে অথবা জেলে জেলে কাটাইয়াছি, তোমার মা’ই সংসার চালাইয়াছে। তোমরা মানুষ হও।”

ডায়েরীর আরেক অংশে বঙ্গবন্ধুর ভাষ্য: [ রেনুকে বলছেন] ’.. সংসারের ধার আমি খুব কমই ধারি। আমি যখন জেল খানার বাইরে থাকতাম তখনও সত্যিকার অর্থে সংসার নিয়ে কোনদিন চিন্তা করতাম না। তোমার সংসার তুমিই চালাও।’

নির্ভরতার অপর অংশের চিত্রটি দেখি। বিহারে দাঙ্গা উপদ্রুত এলাকায় যাওয়ার আগে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর পরামর্শে রেনুকে চিঠি লিখেন শেখ মুজিব। জবাবে রেনু লিখেন:’ .. আপনি শুধু আমার স্বামী হওয়ার জন্য জন্ম নেননি, দেশের কাজ করার জন্যও জন্ম নিয়েছেন। দেশের কাজই আপনার সবচাইত বড় কাজ। আপনি নিশ্চন্ত মনে সেই কাজে যান। আমার জন্য চিন্তা করবেন না। আল্লাহর উপর আমার ভার ছেড়ে দেন।’
বেগম ফজিলাতুন নেসা সম্পর্কে হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দী খোদ শেখ মুজিবকে বলেছিলেন: Mujib, She is a very precious gift to you from Allah, don’t neglect her Please. এর চাইতে সত্যি কথা বুঝি আর হয় না ।

এই সত্যকে অনুসরণ করেই বলি, বেগম ফজিলাতুন নেসাকে নিয়ে আরও গবেষনা গওয়া উচিত। সেই গবেষেনায় দেখা যাবে, শুধু বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী হিসেবেই নয়, তার মৌলিক চিন্তা ও কাজ আমাদের একটি বিশেষ সময়ের রাজনীতি, ইতিহাসকেই সমৃদ্ধ করেছে। তার এই কাজ বঙ্গবন্ধুকেই পূর্ণতা দিয়েছে। তাঁর দুই কন্যা শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানা হতে পারেন সেই গবেষনার আঁকড় সূত্র। এই দু’জনের স্মৃতিচারণ অনুসরণ করে একটি পূর্ণাঙ্গ অডিও ভিজ্যুয়াল প্রামাণ্য হতে পারে জতির এক বড় সম্পদ।

৯.
শুরুতে যে কথাটি বলেছিলাম, সেখানেই ফিরে যাই। বিশ্বে মহান আর চির কল্যানকর সৃষ্টির জন্য কবি সরল সমীকরণ করেছেন যে, অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর। কিন্তু বেগম ফজিলাতুন নেসা আর শেখ মুজিবুর রহমানের জীবণ প্রবাহ প্রমাণ করে দিচ্ছে, এই সহজ সমীকরনেরও ব্যতিক্রম আছে। শেখ মুজিবেই পূর্ণ বাংলাদেশ, এই সত্যির প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়েই বলি, এই পূর্ণতায় বেগম ফজিলাতুন নেসা ছিলেন শেখ মুজিবের জীবন জুড়ে অর্ধেকের চাইতেও বেশি। তাঁদের জীবন প্রবাহ এই সত্যকেই প্রতিষ্ঠিত করে।

লেখক: সিনিয়র সাংবাদিক ও সাবেক সভাপতি বিএফইউজে। সমাপ্ত।

তথ্য সূত্র:
১. অসমাপ্ত আত্মজীবনী: শেখ মুজিবুর রহমান
২. কারাগারের রোজনামচা: শেখ মুজিবুর রহমান
৩. শেখ মুজিব আমার পিতা: শেখ হাসিনা
৪. বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবকে নিয়ে কিছু ঘটনা ও বাংলাদেশ: এম.এ. ওয়াজেদ মিয়া
৫. অন্তরঙ্গ আলোয় বঙ্গবন্ধুুর পরিবার: সঞ্চিতা
৬. রেনু থেকে বঙ্গমাতা: নাছিমা বেগম
৭. শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানার স্মৃতিচারণমূলক রচনা ও বক্তব্য
৮. বেগম সুফিয়া কামাল, এ বিএম মুসা, আবদুল গাফফার চৌধুরী, নীলিমা ইব্রাহিমের স্মৃতিচারণ।
৯. প্রথম আলো, কালের কন্ঠ, জনকন্ঠ সহ বিভিন্ন প্রকাশনায় প্রকাশিত বহুজনের লেখা ।
১০. বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ওয়েব সাইট

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ