স্টাফ রিপোর্টার – রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্য এবং জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে যোগ দিতে বৃহস্পতিবার সকালে লন্ডন ও নিউইয়র্কের উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এদিনই লন্ডনে পৌছে গেছেন তিনি। বাংলাদেশ বিমানের একটি ভিভিআইপি ফ্লাইটে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীরা সকাল ১০টা ৩০ মিনিটের দিকে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর ত্যাগ করেন। স্থানীয় সময় বিকেল ৫ টায়, বাংলাদেশ সময় রাত ১০ টায় লন্ডন পৌছান প্রধানমন্ত্রী। যুক্তরাজ্যে নিযুক্ত বাংলাদেশের হাইকমিশনার সাদিয়া মুনা তাসনিম লন্ডনে প্রধানমন্ত্রী ও তাঁর সফরসঙ্গীদের অভ্যর্থনা জানান।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা লন্ডনে পৌঁছলে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের যুক্তরাজ্য (ইউকে) শাখা তাঁকে স্বাগত জানিয়েছে। যুক্তরাজ্য আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা প্রধানমন্ত্রীকে লন্ডনে তার বাসভবনে ফুলের তোড়া দিয়ে স্বাগত জানান। যুক্তরাজ্যে লন্ডনে বাংলাদেশ হাইকমিশনের প্রেস মিনিস্টার আশেকুন নবী চৌধুরী এ কথা জানান।
এরপর কমনওয়েলথ মহাসচিব প্যাট্রিসিয়া স্কটল্যান্ড প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে তাঁর অবস্থানকালীন হোটেলে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। পরে যুক্তরাজ্যের দক্ষিণ এশিয়া, উত্তর আফ্রিকা, জাতিসংঘ ও কমনওয়েলথবিষয়ক মন্ত্রী লর্ড আহমদ প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন।
আজ যুক্তরাজ্যের বিরোধীদলীয় এবং লেবার পার্টির নেতা কেইর স্টারমার প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করবেন। পাশাপাশি প্রধানমন্ত্রী আগামী রবিবার বাকিংহাম প্যালেসে রাষ্ট্র ও সরকার প্রধানদের সম্মানে রাজার এক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
১৯ সেপ্টেম্বর সোমবার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ওয়েস্টমিনিস্টার অ্যাবেতে রানি দ্বিতীয় এলিজাবেথের শেষকৃত্যে অংশ নেবেন। একই দিন সন্ধ্যায় বাংলাদেশ বিমানের বিশেষ ফ্লাইটে নিউইয়র্কের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রীর লন্ডন ত্যাগ করার কথা রয়েছে। জন এফ কেনেডি আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে প্রধানমন্ত্রীকে স্বাগত জানাবেন যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মুহাম্মদ ইমরান এবং জাতিসংঘ বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি মুহাম্মদ আব্দুল মুহিত।
২০ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জাতিসংঘ মহাসচিব অ্যান্তোনিও গুতেরেসের সংবর্ধনায় যোগ দেবেন। পাশাপাশি তিনি জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন। তিনি ইউএনএইচসিআরের ফিলিপো গ্রান্ডি এবং স্লোলোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট বরুত পাহোরের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। একই দিন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
২১ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বাংলাদেশ, বতসোয়ানা, স্লোভাক প্রজাতন্ত্র ও জাতিসংঘ আয়োজিত উচ্চ পর্যায়ের টেকসই আবাসন শীর্ষক অনুষ্ঠানে যোগ দেবেন। ২৩ সেপ্টেম্বর প্রধানমন্ত্রী জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের ৭৭তম অধিবেশনে ভাষণ দেবেন। ২৪ সেপ্টেম্বর তিনি প্রবাসী বাংলাদেশিদের নাগরিক সংবর্ধনায় যোগ দেবেন।
জাতিসংঘের বিভিন্ন উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ২৫ সেপ্টেম্বর থেকে ১ অক্টোবর ওয়াশিংটন সফর করবেন। নিষেধাজ্ঞার প্রভাবের পাশাপাশি বাংলাদেশের অভাবনীয় অর্থনৈতিক উন্নয়ন, স্বাস্থ্য, শিক্ষা এবং প্রযুক্তিখাত বিকাশে সরকারের কার্যক্রম বক্তৃতায় তুলে ধরবেন। করোনাভাইরাসের মতো ভবিষ্যৎ স্বাস্থ্যসংকট মোকাবেলার লক্ষ্যে টিকা এবং প্রতিষেধকের ন্যায্য ও আরও ন্যায়সঙ্গত বণ্টনের আহ্বান বক্তৃতায় পুনর্ব্যক্ত করতে পারেন শেখ হাসিনা। আন্তর্জাতিক আইন অনুসারে রোহিঙ্গা সংকট সমাধানে উপায় খুঁজে বের করার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে আহবান জানাতে পারেন।
আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা নিশ্চিতের ক্ষেত্রে শান্তিরক্ষা কার্যক্রমে বাংলাদেশের বলিষ্ঠ অবস্থান, সন্ত্রাস ও সহিংস উগ্রপন্থার বিষয়ে বাংলাদেশের ‘জিরোটলারেন্স’ নীতি, সামুদ্রিক সম্পদের টেকসই ব্যবস্থাপনা, নিরাপদ অভিবাসন অভিবাসীদের মৌলিক পরিষেবা প্রাপ্তির নিশ্চয়তা, জলবায়ুপরিবর্তন ও এর প্রভাব, জলবায়ু ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠা, এবং ফিলিস্তিন সম্পর্কিত বিষয়সমূহ তার বক্তব্যে উঠে আসবে।
রানির শেষকৃত্যে যোগ দেওয়ার কারণে ১৯ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সদরদপ্তরে শিক্ষাব্যবস্থার বিবর্তন নিয়ে একটি শীর্ষ সম্মেলনে উপস্থিত থাকতে পারবেন না শেখ হাসিনা। ২০ সেপ্টেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদের প্ল্যাটফর্ম অব উইমেন লিডার্স-এর উচ্চ পর্যায়ের বৈঠকে যোগ দেওয়ার কথা রয়েছে প্রধানমন্ত্রীর। সভায় প্রধানমন্ত্রী সংকট মোকাবেলায় তার অভিজ্ঞতা শেয়ার করতে পারেন এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় নারীদের উপযুক্ত প্রতিনিধিত্ব নিশ্চিত করতে তার নেতৃত্বের সরকার কর্তৃক গৃহীত পদক্ষেপের কথা তুলে ধরতে পারেন। চ্যাম্পিয়ন্স অব দ্য গ্লোবাল ক্রাইসিস রেসপন্স গ্রুপের (জিসিআরজি) উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে ২১ সেপ্টেম্বর। এ গ্রুপে ছয়জন চ্যাম্পিয়নের মধ্যে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অন্যতম।
চলতি বছরের মার্চে জাতিসংঘ মহাসচিব খাদ্য, জ্বালানি ও আর্থিক বিষয়ে চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় শেখ হাসিনাসহ মোট ছয়টি দেশের রাষ্ট্র বা সরকার প্রধানগণের সমন্বয়ে এ গ্রুপটি গঠন করেন। উচ্চ পর্যায়ের এ সভায় বর্তমান প্রেক্ষাপটে বৈশ্বিক চ্যালেঞ্জ মোকাবেলায় প্রধানমন্ত্রী তার সুচিন্তিত মতামত ব্যক্ত করবেন। উক্ত বৈঠকে জি-৭, জি-২০ প্রভৃতি প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিরাও উপস্থিত থাকবেন।
২২ সেপ্টেম্বর অ্যান্টিমাইক্রোবিয়াল রেজিট্যান্স (এএমআর) বিষয়্ক একটি উচ্চপর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। ওই সভায় কো-চেয়ার হিসেবে অংশ নেবেন প্রধানমন্ত্রী। এবারের অধিবেশনে দ্য ফিউচার অব ডিজিটাল কোঅপারেশন: বিল্ডিং রেজিলিয়েন্স থ্রু সেইফ, ট্রাস্টেড অ্যান্ড ইনক্লুসিভ ডিজিটাল ইনফ্রাস্ট্রাকচার এবং ‘বহুপাক্ষিকতাবাদ ও খাদ্য নিরাপত্তা’ বিষয়ক আলাদা দুটি উচ্চ পর্যায়ের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ দুটি উচ্চ পর্যায়ের সভায় বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করবেন শেখ হাসিনা। প্রথম সভায় প্রধানমন্ত্রীর তথ্য প্রযুক্তি বিষয়ক উপদেষ্টা সজীব ওয়াজেদ জয় অংশ নিতে পারেন।
কোভিড-১৯ মহামারীর কারণে এবার কোনো পার্শ্ব অনুষ্ঠান জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ভেতরে হবে না। তবে, রোহিঙ্গা সমস্যা ও টেকসই আবাসন নিয়ে আলাদা দুটি অনুষ্ঠান আয়োজন করবে বাংলাদেশ। পাশাপাশি জাতিসংঘ সদর দপ্তরের ভেতরে পদ্মা বহুমুখী সেতু বিষয়ক একটি আলোকচিত্র প্রদর্শনী আয়োজন করা হয়েছে।
রোহিঙ্গা বিষয়ক উচ্চ পর্যায়ের পার্শ্ব অনুষ্ঠান ২২ সেপ্টেম্বর অনুষ্ঠিত হবে, যাতে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা অংশ নেবেন। যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপীয় ইউনিয়ন, ওআইসি সেক্রেটারিয়েট, কানাডা, সৌদি আরব, তুরস্ক, গাম্বিয়া, মালদ্বীপ, মালয়েশিয়া, ইন্দোনেশিয়া এবং মালয়েশিয়া রোহিঙ্গা বিষয়ক পার্শ্ব অনুষ্ঠানটি কো-স্পন্সর করবে।
জাতিসংঘ শরনার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার, জাতিসংঘ মহাসচিবের মিয়ানমার বিষয়ক বিশেষ দূত এবং আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার মহাপরিচালক অনুষ্ঠানে রোহিঙ্গা ইস্যুতে ব্রিফ করবেন। ২১ সেপ্টেম্বর টেকসই আবাসন বিষয়ক পার্শ্ব অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন শেখ হাসিনা। বাংলাদেশ এবং জাতিসংঘ আবাসন সংস্থা যৌথভাবে এর আয়োজন করছে।
কসভোর প্রেসিডেন্ট, ইকুয়েডরের প্রেসিডেন্ট, স্লোভেনিয়ার প্রেসিডেন্ট, ক্যাম্বডিয়ার প্রধানমন্ত্রী, জাতিসংঘ মহাসচিব, জাতিসংঘ শরণার্থী বিষয়ক হাই কমিশনার, আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থার আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের প্রসিকিউটর, ওয়ার্ল্ড ইকোনমিক ফোরামের নির্বাহী পরিচালকের সঙ্গে দ্বিপাক্ষিক বৈঠক করবেন শেখ হাসিনা।
প্রতিবারের ন্যায় এবারও যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ীদের আয়োজনে একটি গোলটেবিল বৈঠকে অংশগ্রহণ করবেন প্রধানমন্ত্রী। বৈঠকে দেশের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ও সুযোগ-সুবিধাগুলো উপস্থাপন করবেন এবং যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবসায়ী ও বিনিয়োগকারীরা তাদের বিনিয়োগ প্রস্তাব বাংলাদেশের কাছে তুলে ধরবেন। প্রতি বছরের মত এবারও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুক্তরাষ্ট্র প্রবাসী বাংলাদেশিদের আয়োজনে অভ্যর্থনা অনুষ্ঠানে অংশ নেবেন।