স্টাফ রিপোর্টার – পঞ্চগড়ের বোদা উপজেলায় করতোয়া নদীতে নৌকাডুবির ঘটনায় মঙ্গলবার সকাল থেকে আরও ১৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়েছে। এ নিয়ে মোট ৬৮ জনের লাশ উদ্ধার করা হলো।
পঞ্চগড় ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের সহকারী উপপরিচালক শেখ মো. মাহাবুবুল ইসলাম জানান, মঙ্গলবার সকালে তৃতীয় দিনের মতো উদ্ধার অভিযান শুরু করা হয়। নদীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রথমে ছয় জনের লাশ পাওয়া গেছে। পরে আরও ১০ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এ নিয়ে মৃতের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৬০ জনে।
তিনি আরও জানান, ৬৪ জনের মধ্যে নারী ৩০ জন, পুরুষ ১৫ জন ও ১৯ জন শিশু রয়েছে। এ ঘটনায় এখনো ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন। এর আগে নৌকাডুবির ঘটনায় রবিবার ২৪ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। পরদিন সোমবার আরও ২৬ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এখনো কমপক্ষে ১৫ জন নিখোঁজ রয়েছেন।
পঞ্চগড়ের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (রাজস্ব) ও অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট দীপঙ্কর রায় জানান, অতিরিক্ত যাত্রী বহন ও নৌকার মাঝির গাফিলতির কারণে এতো মানুষের প্রাণহানি ঘটেছে। ৪৩ জনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। লাশ সৎকার করার জন্য স্বজনদের জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ২০ হাজার করে প্রদান করা হয়েছে।
এ ছাড়া ধর্ম মন্ত্রণালয়ের উদ্যোগে হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্টের ফান্ড থেকে মৃত ব্যক্তির পরিবারে ২৫ হাজার টাকা করে প্রদান করা হয়েছে। ত্রাণ ও পুনর্বাসন মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকেও নিহত প্রতিটি পরিবারকে ১ লাখ টাকা করে প্রদান করা হবে। রবিবার দুপুর আড়াইটার দিকে মহালয়ার অনুষ্ঠানে যোগ দিতে শ্যালো ইঞ্জিনচালিত নৌকায় করে বড়শশী ইউনিয়নের বদেশ্বরী মন্দিরে যাচ্ছিলেন সনাতন ধর্মাবলম্বীরা। অতিরিক্ত যাত্রীর কারণে করতোয়া নদীতে ডুবে যায় নৌকাটি।
রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আগেই শোক প্রকাশ করেছেন। তাদের বিদেহী আত্মার শান্তি ও মাগফিরাত কামনা করেন এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান। মারা যাওয়া ব্যক্তিদের মধ্যে শিশু আর নারীই বেশি।
হিন্দু ধর্মাবলম্বীদের সবচেয়ে বড় ধর্মীয় উৎসব শারদীয় দুর্গোৎসবের পুণ্যলগ্ন শুভ মহালয়া উপলক্ষে একটি অনুষ্ঠান শেষে নৌকায় করে মাড়েয়ার আউলিয়া ঘাট এলাকায় ফেরার পথে এ দুর্ঘটনা ঘটে। নিখোঁজদের উদ্ধারে এখনও কাজ করছে ফায়ার সার্ভিসের কয়েকটি ইউনিট। প্রায় ১৫০ জন যাত্রী উপজেলার বড়শশী ইউনিয়নের বজ্রেশ্বরী মন্দির পরিদর্শন শেষে ফিরছিল। কিন্তু অতিরিক্ত যাত্রী বোঝাইয়ের কারণে করতোয়া নদীর ওই স্থানে এলে নৌকাটি ডুবে যায়।
মহালয়া উপলক্ষে বোদা, পাঁচপীর, মাড়েয়া, ব্যাঙহারি এলাকার সনাতন ধর্মাবলম্বীরা নৌকায় ছিলেন। নৌকায় অতিরিক্ত যাত্রী ছিল। এ কারণে মাঝ নদীতে পৌঁছার পর যাত্রীর চাপে নৌকাটি একপাশে উল্টে যায়। দুর্ঘটনার পর কিছু মানুষ সাঁতরে তীরে উঠতে পারলেও বেশিরভাগ যাত্রী এখনও নিখোঁজ রয়েছেন।