স্টাফ রিপোর্টার – প্রকৃতি রক্ষা করে প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশ দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। এছাড়া প্রকল্প বাস্তবায়নে বারবার মেয়াদ বৃদ্ধি না করারও তাগিদ দিয়েছেন সরকার প্রধান। মঙ্গলবার রাজধানীর শেরেবাংলা নগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে অনুষ্ঠিত একনেক বৈঠকে এসব নির্দেশ দেন তিনি।
সভা শেষে সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফিংয়ের সময় প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা তুলে ধরেন পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান। এ সময় পরিকল্পনা প্রতিমন্ত্রীসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন। এম এ মান্নান বলেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে প্রকৃতিকে ডিস্টার্ব করতে নিষেধ করেছেন প্রধানমন্ত্রী। প্রকৃতির গুরুত্ব উনি উপলব্ধি করেছেন।
পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, উপকূলের একটি প্রকল্প অনুমোদন পেয়েছে। প্রধানমন্ত্রী এই প্রকল্প নিয়ে আলোচনার সময় বলেছেন, উপকূল সেনসিটিভ এলাকা। সেজন্য উপকূলে সাবধানে কাজ করার নির্দেশনা দেন তিনি। এছাড়াও প্রকল্পের মেয়াদ যেন বারবার না বৃদ্ধি পায় সে ব্যাপারেও তাগিদ দিয়েছেন।
ফসল নিয়ে প্রধানমন্ত্রীর আরেকটি নির্দেশনা বিষয়ে এম এ মান্নান বলেন, প্রধানমন্ত্রী ফসলের উৎপাদনের পাশাপাশি এর গুণগত মান, পুষ্টির দিকে জোর দিতে বলেছেন। এছাড়াও গুদামজাতের বিষয়ে উন্নত প্রযুক্তির কথা বলেছেন। ফসলের পুষ্টিমান ঠিক রেখে সংরক্ষণে কৃষিমন্ত্রীকে নির্দেশনা দিয়েছেন বলেও জানান প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার কথা জানান মন্ত্রী মান্নান। এর আগে একনেকের বৈঠকে আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৮২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা টাকা।
ফসলের সুগন্ধের দিকে নজর না দিয়ে এর গুণগতমান ও পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে সংশ্লিষ্টদের নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। কৃষি উন্নয়নের মাধ্যমে পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্পের আওতায় হাওর ও চর এলাকায় নজর দিচ্ছে সরকার। পুষ্টি ও খাদ্য নিরাপত্তা বৃদ্ধির জন্য প্রস্তাবিত প্রকল্পের আওতায় ১৫৪ কোটি টাকা ব্যয় করা হবে। বাংলাদেশ ফলিত পুষ্টি গবেষণা ও প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউট (বারটান) প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে।
জানুয়ারি ২০২২ থেকে সেপ্টেম্বর ২০২৭ মেয়াদে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পের উদ্দেশ্য হলো, পুষ্টিমান ও খাদ্য নিরাপত্তা বিবেচনায় সুনির্দিষ্ট ফসলের উৎপাদনশীলতা ৮ থেকে ১০ শতাংশ বৃদ্ধি করা। নিরাপদ ও পুষ্টিসমৃদ্ধ ফসল গ্রাম সৃজনের মাধ্যমে খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনে অবদান রাখা। ৪৯ জেলার ১৫৫টি উপজেলায় প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্প এলাকার গড় শস্যের নিবিড়তা বৃদ্ধি করা হবে। প্রকল্প এলাকায় খাদ্য ও পুষ্টি নিরাপত্তা অর্জনের লক্ষ্যে বায়ো-ফর্টিফাইড ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, উচ্চমূল্যের ফসল আবাদ সম্প্রসারণ, উন্নত কৃষি প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, গবেষণা প্রতিষ্ঠান থেকে উদ্ভাবিত জাত/প্রযুক্তি সম্প্রসারণ, নিরাপদ ফসল উৎপাদন বাড়বে। প্রকল্পটি অনুমোদনের সময় প্রধানমন্ত্রী অনুশাসন দিয়েছেন।
প্রধানমন্ত্রীর এই অনুশাসন প্রসঙ্গে পরিকল্পনামন্ত্রী এম এ মান্নান বলেন, বেশি পরিমাণে ফসল ফলাতে বলেছেন। ফসলের গুণগতমান ও পুষ্টিগুণ নিশ্চিত করতে বলেছেন, সুগন্ধ নয়। ফসল সংরক্ষণে অন্য দেশের প্রযুক্তি ব্যবহার করতে বলেছেন তিনি। ফসল সংরক্ষণে প্রয়োজনে উল্লেখ করেছেন ডাচদের কথা।
একনেক সভায় প্রধানমন্ত্রী বলেন, হাওর, পানি, খাল-বিল, ছোট মাছ, ঘাস, লতাপাতা ও প্রকৃতির ডিস্টার্ব করে প্রকল্প নেওয়া যাবে না। এগুলো যেন ডিস্টার্ব না করা হয়। বারবার প্রকল্পের মেয়াদ বাড়ানো যাবে না।
তিনি আরও জানান, মূল্যস্ফীতি আর রেমিট্যান্স প্রবাহে ইতিবাচক পরিস্থিতি দেখছে সরকার। সভায় ২ হাজার ৫৮০ কোটি টাকা ব্যয়ে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে উপকূলীয় শহরগুলো রক্ষায় আনা প্রকল্পটিসহ প্রায় ৫ হাজার কোটি টাকার
মোট আটটি প্রকল্পের অনুমোদন দিয়েছে একনেক। এর মধ্যে ময়মনসিংহ ও চট্টগ্রামে কারাগারের নিরাপত্তার আধুনিকায়নের জন্য ১৭ কোটি ৯৮ লাখ টাকার একটি প্রকল্প অনুমোদন করা হয়।
মন্ত্রী জানান, প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, প্রকল্প বাস্তবায়ন করতে গিয়ে যেন খালগুলো ভরাট না হয়ে যায়। যেকোনো প্রকল্প বাস্তবায়নেই ঢাকার খালগুলো ঠিক রাখতে হবে। এ ছাড়া প্রকল্পে অহেতুক ভূমি অধিগ্রহণ না করতেও নির্দেশনা দিয়েছেন। এর বাইরে প্রকল্পের বারবার মেয়াদ বৃদ্ধির বিষয়টিতে নজর রাখতে হবে।
আদালত থেকে জঙ্গি পালিয়ে যাওয়ার বিষয়ে পরিকল্পনামন্ত্রী নিজের মতামত তুলে ধরে বলেন, যেটা হয়েছে, সেটা গ্রহণযোগ্য নয়। এই ঘটনার ফলে মানুষজন চিন্তায় আছে। এ জন্য কারাগারে প্রকল্পগুলো নিয়ে আমাদের আরো কাজ করতে হবে। তিনি বলেন, একনেক সভায় আটটি প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয়েছে। অনুমোদিত প্রকল্পগুলো বাস্তবায়নে চার হাজার ৮২৬ কোটি ২১ লাখ টাকা ব্যয় হবে। এর মধ্যে সরকারি তহবিল থেকে দুই হাজার ৩৪১ কোটি টাকা, বৈদেশিক ঋণ থেকে পাওয়া যাবে দুই হাজার ২০৭ কোটি টাকা এবং সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে পাওয়া যাবে ২৭৮ কোটি টাকা।