Search
Close this search box.

মহান বিজয় দিবস আজ

মহান বিজয় দিবস আজ

মিথুন আশরাফ – বাংলাদেশের স্বাধীনতাসংগ্রামের সবচেয়ে গৌরবের দিন, আজ মহান বিজয় দিবস। ১৯৭১ সালের এই দিনে জাতি চূড়ান্ত বিজয় অর্জন করে। বাংলাদেশ স্বাধীন সার্বভৌম রাষ্ট্র হিসেবে বিশ্বের মানচিত্রে জায়গা করে নিয়েছে। দখলদার পাকিস্তান সেনাবাহিনী নিঃশর্ত আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের পর পাকিস্তানি বাহিনী এই দিনে যৌথবাহিনীর কাছে আত্মসমর্পণ করতে বাধ্য হয়েছিল। সেদিন ঢাকার কেন্দ্রস্থলে রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন। এই আত্মসমর্পণ অনুষ্ঠানে বাংলাদেশের মুক্তিবাহিনীর উপ-সর্বাধিনায়ক ও ডেপুটি চীফ অব স্টাফ গ্রুপ ক্যাপ্টেন আবদুল করিম খোন্দকার উপস্থিত ছিলেন। তবে মুক্তিযুদ্ধের সর্বাধিনায়ক জেনারেল ওসমানী উপস্থিত ছিলেন না।

নয় মাস সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর বিজয়ের মধ্য দিয়ে বিশ্ব মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে বাংলাদেশের পথচলা শুরু হয়। গভীর শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার সঙ্গে এদিনটিতে স্মরণ করতে হয় শহীদের আত্মদানকে। স্মরণ করতে হয় বাংলার অবিসংবাদিত নেতা, ইতিহাসের মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে, যাঁর ডাকে সর্বস্তরের মানুষ যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়ে দেশকে স্বাধীন করেছেন। আজ বিজয়ের ৫১তম বার্ষিকী উদযাপন করতে যাচ্ছে দেশ।

 

মহান বিজয় দিবস আজ
রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তানের পক্ষে আত্মসমর্পণের দলিলে স্বাক্ষর করেন জেনারেল আমির আবদুল্লাহ খান নিয়াজি। তিনি যৌথবাহিনীর প্রধান জেনারেল জগজিৎ সিং অরোরার কাছে আত্মসমর্পণ করেন

 

বিজয় দিবসের প্রত্যুষে ঢাকা এবং দেশের সব জেলা-উপজেলায় ৩১ বার তোপধ্বনি হবে। রাষ্ট্রপতি মো: আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ভোরে জাতীয় স্মৃতিসৌধে পুষ্পস্তবক অর্পণ করবেন। এছাড়া সকাল সাড়ে ১০টায় তেজগাঁও পুরাতন বিমানবন্দরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে সম্মিলিত বাহিনীর বর্ণাঢ্য কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হবে। রাষ্ট্রপতি প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত থেকে কুচকাওয়াজ পরিদর্শন ও সালাম গ্রহণ করবেন। প্রধানমন্ত্রীও এ কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠানে উপস্থিত থাকবেন।
১৯৭১ সালের আগে কিংবা পরে বাঙালির জীবনে এমন মুহূর্ত আর কখনো আসেনি। পুরো জাতি অভিন্ন লক্ষ্যে দৃঢ়ভাবে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। শত্রুর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে ঝাপিয়ে পড়েছিল। চূড়ান্ত বিজয় যে মিলেছে, তার প্রধান কারণই ছিল সমগ্র জাতির ইস্পাতকঠিন ঐক্য। সেদিন মানুষ দখলদার পাকিস্তানি বাহিনীকে বিতাড়িত করার জন্য যুদ্ধ করেন। শুধু তাই নয়, একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র ও ন্যায়ভিত্তিক সমাজ প্রতিষ্ঠা করাও ছিল লক্ষ্য। পাকিস্তানি শাসনামলের সব অন্যায়-অবিচারের অবসান ঘটানোই ছিল লক্ষ্য। রাষ্ট্র পরিচালিত হবে নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সত্যিকার গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে, যেখানে জাতি-ধর্ম-বর্ণনির্বিশেষে সব নাগরিক সমান রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক, সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় অধিকার ভোগ করবেন, তা ছিল লক্ষ্য।

বিজয় দিবস বাংলাদেশে বিশেষ দিন হিসেবে রাষ্ট্রীয়ভাবে দেশের সর্বত্র পালন করা হয়। প্রতি বছর ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে দিনটি বিশেষভাবে পালিত হয়। ১৯৭২ সালের ২২ জানুয়ারি প্রকাশিত এক প্রজ্ঞাপনে এই দিনটিকে বাংলাদেশে জাতীয় দিবস হিসেবে উদযাপন করা হয় এবং সরকারীভাবে এ দিনটিতে ছুটি ঘোষণা করা হয়।

নয় মাস যুদ্ধের পর ১৯৭১ সালের ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানি বাহিনীর প্রায় ৯১,৬৩৪ সদস্য আনুষ্ঠানিকভাবে আত্মসমর্পণ করে। এর ফলে পৃথিবীর বুকে বাংলাদেশ নামে একটি নতুন স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রের অভ্যুদয় ঘটে। এ উপলক্ষে প্রতি বছর বাংলাদেশে দিবসটি যথাযথ ভাবগাম্ভীর্য এবং বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার সাথে পালিত হয়।

১৯৭২ সাল থেকে বাংলাদেশে বিজয় দিবস রাষ্ট্রীয়ভাবে পালন করা হয় । বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধ জাতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ ঘটনা, চলচ্চিত্র, কবিতা, নিবন্ধ, গণমাধ্যম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে এই বিষয়টি ফুটিয়ে তোলা হয়। এই দিন উপলক্ষে বাংলাদেশের সামরিক বাহিনী জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজের আয়োজন করে থাকে, এছাড়া দেশের প্রতিটি উপজেলায় বিজয় দিবসের কুচকাওয়াজ, বিশেষ আলোচনা অনুষ্ঠান, মতবিনিময় সভা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানেরও আয়োজন করা হয়। দেশের প্রধান সড়কগুলো জাতীয় পতাকা দিয়ে সাজানো হয়। এই দিনে ঢাকার সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে বিশেষ সম্মান প্রদর্শন করা হয়।

বিজয়ের পর ১৯৭১ সালেই স্টেট ব্যাংক অব পাকিস্তানের নামকরণ করা হয় বাংলাদেশ ব্যাংক। ১৯৭২ সালে গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের প্রথম সংবিধান প্রকাশিত হয়। ১৯৭২ সালের ১৫ ডিসেম্বর বাংলাদেশ গ্যাজেটের মাধ্যমে স্বাধীনতা যুদ্ধে বিশেষ অবদানের জন্য রাষ্ট্রীয় খেতাব ঘোষণা করা হয়। ১৯৯৬ সালে বিজয়ের ২৫ বছর পূর্তি উৎসব করা হয়। ২০১৩ সালে জাতীয় প্যারেড গ্রাউন্ডে ২৭,১১৭ জন স্বেচ্ছাসেবী বাংলাদেশের জাতীয় পতাকার লাল এবং সবুজ ব্লক নিয়ে একত্রে জড়ো হয়ে বিশ্বের বৃহত্তম মানব পতাকার নতুন বিশ্ব রেকর্ড করে। ২০২১ সালে ৫০ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হয়। আজ ৫১ বছর পূর্তি উৎসব পালন করা হবে।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ