স্টাফ রিপোটার- বারবার অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বেশ কিছু প্রশ্ন রেখেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ঈদের আগেই কেন একাধিক মার্কেটে আগুন লাগছে, আগুন নেভানোর সময় ফায়ার সার্ভিসকে কেন বাধা দেওয়া হচ্ছে ও অগ্নিনির্বাপণ কর্মীদের ওপর কেন হামলা হচ্ছে, যে ঘটনাগুলো ঘটেছে এগুলো বিএনপি-জামায়াতের অগ্নিসন্ত্রাস কিনা এসব প্রশ্ন রেখেছেন সরকারপ্রধান।
শনিবার (১৫ এপ্রিল) আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় তিনি এসব প্রশ্ন তোলেন। প্রধানমন্ত্রী ও দলের সভাপতি শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে সকাল ১১টার দিকে গণভবনে এই সভা অনুষ্ঠিত হয়।
শেখ হাসিনা বলেন, এখান থেকে সাধারণ মানুষ কেনাকাটা করে। ব্যবসায়ীরা ব্যবসা করবে বলে সারা বছর বসে থাকে। সেই রকম জায়গায় এভাবে আগুন লাগা। প্রথম যখন আগুন লাগলো মনে করলাম অ্যাক্সিডেন্ট। এরপর পর পর তিন চারটি আগুন লাগলো, আর সময়টা ঠিক একই সময়। যখন ফায়ার সার্ভিস আসে তাদের বাধা দেওয়া হয়। তারা কাজ করবে, পানি দেবে, সেখানে বাধা দেওয়া হয়। বঙ্গবাজারে যখন আগুন লাগলো.. এমনকি তারা (ফায়ার সার্ভিস) হানিফ ফ্লাইওভার থেকে চেষ্টা করেছে। যেখান থেকে চেষ্টা করছে, সেখানে কিছু লোক বাধা দিচ্ছে। এই বাধাটা কেন দেবে?
তিনি বলেন, এরপর যখন আগুন নিয়ন্ত্রণে নিয়ে এলো ঠিক ১২টা বাজে, কিছু লোক লাঠিসোঁটা নিয়ে ফায়ার সার্ভিসে আক্রমণ, অনেকগুলো মানুষকে আক্রমণ করলো। দোকান কর্মচারীদের আহত করলো, ফায়ার সার্ভিসের লোকগুলোকে আহত করলো। তারা তো জীবনের ঝুঁকি নিয়ে আগুন নেভাতে যায়। এরা কারা? আর ঠিক ৬টার পরে আগুন লাগছে। এটার ওপর নজরদারিটা বাড়াতে হবে। অন্য মার্কেটগুলোকে সতর্ক থাকতে হবে। সেখানে নজরদারি বাড়াতে হবে। এটা বারবার কেন হচ্ছে।
ফায়ার সার্ভিসের পক্ষ থেকে প্রত্যেকটি মার্কেটকে সতর্ক করা হচ্ছে উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তাদের মার্কেটের যে দুরবস্থা! পরপর চারটি ঘটনা আমরা দেখি। এটা কি আদতে দুর্ঘটনা? নাকি এর পেছনে কোনও কারসাজি আছে? কারণ আমরা তো জানি আমাদের কিছু রাজনৈতিক দল ঈদের পরে আন্দোলন করবে। অর্থনীতি পঙ্গু করে দেবে। অর্থনীতি পঙ্গু করে দিয়ে সরকারকে উৎখাত করবে। সরকারকে উৎখাত করবে, কিন্তু সাধারণ মানুষগুলো কী অপরাধ করলো? সাধারণ ব্যবসায়ীদের কী অপরাধ? সাধারণ ক্রেতারা কী অপরাধ করলো যে সেখান থেকে তারা কেনাকাটা করে, সেই জায়গাগুলি পুড়িয়ে দেওয়া। মানুষগুলোকে ক্ষতিগ্রস্ত করা। মানুষগুলো তো ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। সারা বছর তারা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বসে থাকে এই সময় একটু ব্যবসা করবে। এগুলো মনে হয় সহজে ছেড়ে দেওয়া উচিত নয়। এটার ওপরে আমাদের সবার একটু নজরদারি বাড়াতে হবে। এটা আমি সবাইকে বলবো। দেশবাসীকেও বলবো এ ব্যাপারে সতর্ক থাকার জন্য। সবাইকে নজরদারি বাড়াতে হবে যে এভাবে আগুন দেওয়া, এভাবে ধ্বংস করা।
তিনি বলেন, করোনার সময় আমাদের অর্থনীতি যাতে সচল থাকে তার জন্য আমরা যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছি। এমনকি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের সময় যখন সারা বিশ্বে অর্থনৈতিক মন্দা, তখন আমাদের গৃহীত নীতিমালার কারণে অর্থনীতি শুধু সচল থাকেনি, আমরা দারিদ্র্য বিমোচন করেছি। এই কয়েকটি বছর প্রতিবছর এক শতাংশ করে দারিদ্র্য বিমোচন করে আমরা এখন দারিদ্র্যের হার ১৮ দশমিক ৭ শতাংশে নামিয়ে আনতে সক্ষম হয়েছি। অতি দারিদ্র্যসীমা আমরা আরও ভালোভাবে কমাতে পেরেছি, মাত্র ৫ দশমিক ৬ শতাংশ। অর্থাৎ করোনা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্বের অর্থনৈতিক মন্দার মধ্যেও আমরা দারিদ্র্য বিমোচনের সক্ষমতা অর্জন করেছি। পাশাপাশি দেশের মানুষ, জাতীয় অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে ভালো করার, সেই ব্যবস্থা নিয়েছি।
আওয়ামী লীগ সভাপতি বলেন, এখনও অগ্নিসন্ত্রাস! একসময় বিএনপি অগ্নিসন্ত্রাস করে প্রায় সাড়ে তিন হাজার গাড়ি, ৮-৯টি লঞ্চ, ৫০০টি স্কুল, ৭০টি সরকারি অফিস, ছয়টি ভূমি অফিস পুড়িয়ে দিয়েছিল। প্রায় তিন হাজার ২০০ মানুষকে পুড়িয়েছে। প্রায় ৫০০ মানুষ মারা গেছে। এখনও সেই পোড়া মানুষগুলো মানবেতর জীবনযাপন করছে। কাজেই সেই অগ্নিসন্ত্রাসীরা এখন ভিন্নপথ ধরলো কিনা সেটা আমাদের দেখতে হবে।
তিনি বলেন, আগে তারা আমাদের সাধারণ মানুষগুলোকে পুড়িয়েছে। এখন আমাদের অর্থনীতি পঙ্গু করার পথে পা দিচ্ছে কিনা এ রহস্য আমাদের বের করতে হবে। নজরদারি বাড়াতে হবে। প্রত্যেকটি মার্কেটের দোকান মালিক সমিতি এবং দোকান মালিকদের বলবো, একটি সময়ে আগুন লাগছে। কাজেই ওই সময়ে আমাদের পাহারা দিতে হবে। প্রত্যেকটি দোকানে তাদের নিজস্ব লোক রাখা দরকার। সতর্ক থাকা দরকার। আগুন নেভানোর জন্য নিজস্ব ব্যবস্থাপনা যেন থাকে সেটা করতে হবে।
একটা ঘটনা ঘটলে দেখার জন্য মানুষের ভিড় এটা কমাতে হবে। এতগুলো লোক চলে আসে, সবার যদি এক বালতি করে পানিও নিয়ে আসে তাহলে তো একটু পানি পাওয়া যায়। আগুনটা নেভে। সবাই দেখতে আসে, সেলফি তোলে, ফটো তোলে, এটা কোন ধরনের কথা? যারা আসবে সবার হাতে পানির বালতি দেখতে চাই। তা না হলে ওখানে কেউ কিছু করতে পারবে না। কেউ আসতে পারবে না। এ ব্যাপারে আমাদের সবাইকে ব্যবস্থা নিতে হবে। আর যারা স্থানীয় লোকজন আছে, দোকান মালিক সমিতি, দোকান যারা চালায়, ভাড়াটিয়া দোকানের কর্মচারী, সবাইকে নিজস্ব উদ্যোগে যার যার দোকান পাহারা দিতে হবে। সরকারের পক্ষ থেকে যা যা করণীয় তা করবো।
ফায়ার সার্ভিস, আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, সেনাবাহিনী, বিজিবি, আনসার, আমরা সবাইকে নামিয়েছি। আমরা ভলান্টিয়ারও নামিয়েছি। আমাদের কথা হচ্ছে এখানে যারা কাজ করবে তাদের বাধা দিতে পারবে না। আর যারা বাধা দেবে তাদের বিরুদ্ধে যথাযথ ব্যবস্থা নিতে হবে। বঙ্গবাজার ইজারা ফায়ার সার্ভিসকে বাধা দিয়েছে, আক্রমণ করা হচ্ছে, ভিডিও ফুটেজ দেখে তাদের শনাক্ত করা হচ্ছে। তাদের শাস্তি দেওয়া হবে। আগামীতে যাতে কেউ এটা না করতে পারে। আর আমি শুধু ঢাকা শহরে নয়, সারা বাংলাদেশের প্রত্যেকটি শহরে প্রত্যেকটি এলাকায় আমি সবাইকে সতর্ক করছি। সবাই যেন একটু সতর্ক থাকেন। বিএনপি-জামায়াত সেই অগ্নিসন্ত্রাস করে যেন পালিয়ে না যায়। সেই অগ্নিসন্ত্রাসের ভিন্নরূপে তারা বিরাজমান কিনা, ভিন্নরূপে তারা এটা করছে কিনা, সবাইকে সতর্ক থাকতে হবে।
খুবই দুঃখজনক ঈদটা সামনে, করোনাকালীন সময় সবাই ঠিকমতো ব্যবসা করতে পারেননি। মানুষ বাজারঘাট করতে পারেনি। এখন মানুষ একটু কেনাকাটা করবে। বেচাকেনা করে সবাই একটু পয়সা কামাই করবে। সেই পথটা বন্ধ করে দেওয়া হচ্ছে এটা অত্যন্ত দুঃখজনক। যা হোক, আমি এটাই বলবো যে দেশবাসী যেন এ ব্যাপারে সতর্ক থাকেন।