স্টাফ রিপোর্টার- ঈদের দ্বিতীয় দিনেও ট্রেনে ঘরমুখো মানুষের উপচেপড়া ভিড়। রবিবার (২৩ এপ্রিল) সকাল থেকেই কমলাপুর স্টেশন মুখর হয়ে ওঠে মানুষের কোলাহলে। ঈদের প্রথমদিন পেরিয়ে গেলেও ঘরমুখো মানুষের ভিড় কমেনি। ছুটি উদযাপনে কেউ একা, কেউ বা সপরিবারে গ্রামের বাড়ির উদ্দেশে রওনা হচ্ছেন।
তবে ঘরেফেরা মানুষকে বেগ পোহাতে হচ্ছে নিজ নিজ গন্তব্যের ট্রেনে উঠতে। এতদিন ডিজিটাল স্কিনে ট্রেনের প্ল্যাটফর্ম ও শিডিউল দেওয়া হলেও আজ তা সকাল সোয়া ৭টা পর্যন্ত বন্ধ ছিল। এসময়ের বেশ কয়েকটা ট্রেন স্টেশন ছেড়েছে। যদিও মাইকের মাধ্যমে ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে আছে তা বলে দেওয়া হচ্ছে।
দেওয়ানগঞ্জ অভিমুখী তিস্তা এক্সপ্রেসের যাত্রী সারজিনা ঈদের আগে টিকিট না পাওয়ায় পরিবার নিয়ে বাড়ি যেতে পারেননি। ঈদের পর দিন অর্থাৎ রবিবার সকাল সাড়ে ৭টায় তিস্তা এক্সপ্রেসযোগে বাড়ি ফিরছেন। সারজিনা বলেন, আসলে আমার ছোট বাচ্চাকে নিয়ে ঈদের আগে যাওয়া হয়নি। ঈদের আগে বাসে সড়কে যানজট থাকে। এছাড়া ট্রেনের টিকিট কাটতে পারেনি। আজ অনেকটা রিলাক্সে যেতে পারবো মনে করেছিলাম। কিন্তু এসে দেখি আজও বেশ ভিড়। ঈদের আগে বাড়ি যাওয়ার মজা হয়তো পাবো না তবুও পরিবারের সঙ্গে দেখা হবে, আড্ডা হবে এ জন্যই যাওয়া।
হাসান প্রভাতী ট্রেনে যাবেন কিশোরগঞ্জে। তিনি বলেন, আমি প্রতিবার রোজার ঈদের আগে-পরে রিকশা চালাই। এবার ঈদের আগে যানজটের কারণে আয় বেশি ভালো হয়নি। এখন যাত্রী কম থাকায় আয় আরও কমে গেছে। তাই বাড়ি যাচ্ছি।
অন্যদিকে, ভোর থেকে সকাল ৭টা ২০ মিনিট পর্যন্ত ডিজিটাল ডিসপ্লে বন্ধ ছিল। যেখানে কোন এলাকার ট্রেন কোন প্ল্যাটফর্মে অবস্থান করছে তা প্রদর্শন করা হয়ে থাকে। এটি বন্ধ থাকায় ভোগান্তিতে পড়েন কয়েকটি আন্তঃনগর ট্রেনের যাত্রী। তারা নিজ নিজ ট্রেনের খোঁজে বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে আসা-যাওয়া করেন। তবে, তাদের সহায়তা করেন আরএনবি ও আনসার সদস্যরা। যদিও মাইকে ট্রেনের বিষয়ে একটু পর পর জানানো হয়, তবে অতিরিক্ত শব্দের কারণে তা ঠিকভাবে শোনা যাচ্ছে না।
এ নিয়ে ক্ষোভপ্রকাশ করেন মহানগর প্রভাতীর যাত্রী কাজী ইফতেখার। ইফতেখার বলেন, আমি কয়েকটি প্ল্যাটফর্মে দৌড়াদৌড়ির পর জানতে পারি পাঁচ নম্বরে রয়েছে মহানগর প্রভাতী। এর আগে স্কিনে প্রদর্শন করা হলেও আজ তা বন্ধ ছিল।
যদিও পরে স্কিনগুলো চালু করা হয়। কমলাপুর স্টেশনের এক কর্মকর্তা বলেন, ডিজিটাল স্কিনের বিষয়টা অন্যরা দেখেন। হয়তো তারা ঘুমানোর কারণে সাময়িক বন্ধ ছিল। পরে চালু হয়েছে।
তবে আজ সবগুলো ট্রেনই এখন পর্যন্ত সঠিক সময়ে স্টেশন ছেড়েছে। যাত্রীরাও তাদের নিজ আসনে সহজে বসতে পেড়েছেন। ঈদের আগের তুলনায় ভিড় কম থাকায় স্বস্তি প্রকাশ করেন যাত্রীরা।
এবার ঈদযাত্রায় আন্তঃনগর ট্রেনের অগ্রিম টিকিট বিক্রি শুরু হয় অনলাইন মাধ্যমে গত ৭ এপ্রিল থেকে। ওইদিন বিক্রি হয় ১৭ এপ্রিলের টিকিট। এরপর ৮ এপ্রিল ১৮ এপ্রিলের, ৯ এপ্রিল ১৯ এপ্রিলের, ১০ এপ্রিল ২০ এপ্রিলের এবং ১১ এপ্রিল ২১ এপ্রিলের টিকিট বিক্রি হয়।
একইভাবে ঈদের ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরু হয়েছে গত ১৫ এপ্রিল থেকে। ফিরতি যাত্রার টিকিট বিক্রি শুরুর প্রথম দিন অর্থাৎ ১৫ এপ্রিল বিক্রি হয়েছে ২৫ এপ্রিলের টিকিট। গত ১৬ এপ্রিল বিক্রি হয় ২৬ এপ্রিলের, ১৭ এপ্রিল ২৭ এপ্রিলের, ১৮ এপ্রিল ২৮ এপ্রিলের, ১৯ এপ্রিল ২৯ এপ্রিলের এবং ২০ এপ্রিল বিক্রি করা হয় ৩০ এপ্রিলের টিকিট। প্রতিদিন আন্তঃনগর ট্রেনে টিকিট ও স্ট্যান্ডিং টিকিট মিলে প্রায় ৬০ হাজারের অধিক যাত্রী ঢাকা ছাড়ছেন।