Search
Close this search box.

ভীতিকর অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করেছি – প্রধানমন্ত্রী

ভীতিকর অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করেছি - প্রধানমন্ত্রী

স্টাফ রিপোর্টার – বিএনপি-জামায়াত জোট আমলে বাংলাদেশে ইসলামের নামে মানুষ হত্যা, খুন, বোমাবাজি নিত্যনৈমিত্তিক বিষয় ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, সেই ভীতিকর অবস্থা থেকে দেশকে মুক্ত করেছি। শান্তির ধর্ম ইসলামে সন্ত্রাসবাদ ও জঙ্গিবাদের কোনো স্থান নেই বলেও জানান তিনি। শুক্রবার রাজধানীর আশকোনার হজ ক্যাম্পে হজ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে এসব কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী।

শেখ হাসিনা বলেন, বিএনপি-জামায়াত আমলের সব অব্যবস্থাপনা কাটিয়ে আমরা হজ ব্যবস্থাপনায় আমূল পরিবর্তন এনেছি। এর ফলে প্রতিবছর হজযাত্রীর সংখ্যা বেড়ে চলেছে। ২০০৬ ও ২০০৭ সালে হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল যথাক্রমে ৪৭ হাজার ৯৮৩ ও ৪৫ হাজার ৭৬৩। আর এ বছর হজযাত্রীর সংখ্যা ১ লাখ ২২ হাজার ২২১। হজযাত্রীর সংখ্যা বৃদ্ধির আরও কারণ হলো, আমরা বাংলাদেশকে সুদৃঢ় অর্থনৈতিক ভিত্তির ওপর দাঁড় করাতে পেরেছি, মানুষের আয় ও জীবনমান বৃদ্ধি পেয়েছে।
উপস্থিত হজযাত্রীদের উদ্দেশে প্রধানমন্ত্রী বলেন, সদ্য স্বাধীন বাংলাদেশে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান এই হজ ব্যবস্থাপনার উন্নয়নে বিভিন্নমুখী পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। কম খরচে হজ পালনের জন্য তিনি হিজবুল বাহার জাহাজ ক্রয় করেন এবং বাংলাদেশ থেকে সমুদ্রপথে হজযাত্রী পাঠান। দুঃখের বিষয়, জিয়াউর রহমান ক্ষমতায় এসে এই হিজবুল বাহার জাহাজকে প্রমোদতরি বানিয়েছিলেন।

সরকারপ্রধান আরও বলেন, জাতির পিতা ছিলেন খাঁটি মুসলমান। মাত্র সাড়ে তিন বছরের সরকারে তিনি ইসলামের উন্নয়নে ব্যাপক পদক্ষেপ নেন। জাতির পিতা মুসলিম বিশ্বসহ আরব দেশগুলোর সঙ্গে সুসম্পর্ক স্থাপন করেন। ১৯৭৩ সালে আরব-ইসরায়েল যুদ্ধে বঙ্গবন্ধু আরব বিশ্বের পক্ষে সমর্থন ব্যক্ত করেন এবং সাহায্য পাঠান। তাঁর কূটনৈতিক দূরদর্শিতায় বাংলাদেশ ১৯৭৪ সালে ওআইসির সদস্যপদ লাভ করে।

জাতির পিতা ইসলামিক ফাউন্ডেশন ও মাদ্রাসা বোর্ড প্রতিষ্ঠা করেন উল্লেখ করে শেখ হাসিনা বলেন, জাতীয় মসজিদ বায়তুল মোকাররমের উন্নয়ন, সম্প্রসারণ ও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করেন জাতির পিতা। তাবলীগ জামাতের জন্য কাকরাইল মসজিদে জমি দান করেন। টঙ্গীর তুরাগ নদীর তীরে বিশ্ব ইজতেমার জন্য জায়গা বরাদ্দ দেন। বেতার ও টেলিভিশনের অনুষ্ঠান শুরু ও সমাপ্তিতে কোরআন তিলাওয়াতের প্রচলন করেন। তিনিই প্রথম আইন করে মদ নিষিদ্ধ করেন, ঘোড়দৌড় ও জুয়া বন্ধ করেন। যে মদের লাইসেন্স বঙ্গবন্ধু বন্ধ করে দিয়েছিলেন, তা জিয়ার আমলে উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়।

প্রধানমন্ত্রী আরও জানান, ‘প্রযুক্তির সঙ্গে কাবার পথে’ প্রতিপাদ্য ধারণ করে ডিজিটাল হজ ব্যবস্থাপনার উদ্যোগ গ্রহণের ফলে সেবা প্রদানকারী ও গ্রহণকারীর সঙ্গে সরাসরি ডিজিটাল সম্পর্ক স্থাপিত হয়েছে। মধ্যস্বত্বভোগী-প্রতারক চক্রের দৌরাত্ম্য হ্রাস পেয়েছে। আমরা জনগণকে সময়োচিত, দায়িত্বশীল, স্বচ্ছ ও জবাবদিহিমূলক হজ ব্যবস্থাপনা উপহার দিতে পেরেছি।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, অতীতে হজ পালনে দুর্ভোগ, হজের অব্যবস্থাপনা, মধ্যস্বত্বভোগীদের দৌরাত্ম্য, হজযাত্রীদের হয়রানি, ভিসা জটিলতা, ফ্লাইট বিপর্যয় ইত্যাদি সমস্যা ছিল নিত্য-নৈমিত্তিক। আমরা এ সমস্যা দূর করতে ‘ই-হজ ব্যবস্থাপনা’ প্রবর্তন করেছি।

তিনি বলেন, আমরা ‘হজ ও ওমরাহ ব্যবস্থাপনা আইন-২০২১’ প্রণয়ন করেছি; এর ফলে হজ কার্যক্রমে অব্যবস্থাপনা, অনিয়ম ও অসদাচরণের অভিযোগের প্রতিকার সহজ হচ্ছে। হজযাত্রীদের সাথে প্রতারণা ও হয়রানি করেছে এমন এজেন্সিগুলোর লাইসেন্স বাতিল, জামানত বাজেয়াপ্ত ও আর্থিক জরিমানাসহ বিভিন্ন ফৌজদারী শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

দেশের মানুষের ভাগ্য নিয়ে কেউ যাতে ‘ছিনিমিনি’ খেলতে না পারে সেজন্য হজযাত্রীদের কাছে দোয়া চেয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শেখ হাসিনা বলেন, আমার কাছে সব থেকে বড় চাওয়া হল জনগণের ভাগ্য নিয়ে যেন ছিনিমিনি না খেলে, এজন্য দোয়া চাই আপনাদের কাছে।

‘সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদের’ বিরুদ্ধে সবাইকে ‘সজাগ’ থাকার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, জঙ্গি-সন্ত্রাসীদের কোনো ধর্ম নাই। কেউ যদি মনে করেন নিরীহ মানুষকে হত্যা করে বেহেশতে যাবেন সেটি ধর্মে নেই।

অনুষ্ঠানের শুরুতে হজ ব্যবস্থাপনার ওপর একটি ভিডিও চিত্র দেখানো হয়। ধর্ম প্রতিমন্ত্রী মো. ফরিদুল হক খান এমপির সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য রাখেন মন্ত্রণালয়ের সচিব কাজী এনামুল হাসান। অন্যদের মধ্যে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন প্রতিমন্ত্রী এম মাহবুব আলী, হাবিব হাসান এমপি, বাংলাদেশে সৌদি রাষ্ট্রদূত এসা ইউসেফ এসা আল দুলাইহান এবং হজ এজেন্সিস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (হাব) সভাপতি শাহাদাত হোসেন তসলিম অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।

চাঁদ দেখা সাপেক্ষে এবার ২৭ জুন হজ হতে পারে। আর হজ ফ্লাইট শুরু হবে শনিবার। দুপুর ২টা ৪৫ মিনিটে ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সৌদি আরবের উদ্দেশে হজের প্রথম ফ্লাইটটি ছেড়ে যাওয়ার কথা রয়েছে। সৌদি আরবের সঙ্গে চুক্তি অনুযায়ী এবার বাংলাদেশ থেকে এক লাখ ২২ হাজার ২২১ জন হজে যাচ্ছেন।

কোভিড মহমারীর বিধিনিষেধের কারণে গত বছর বাংলাদেশ থেকে যাওয়া হজযাত্রীর সংখ্যা ছিল ৫৭ হাজার ৫৮৫। সরকারিভাবে হজ পালনে এবার খরচ নির্ধারণ করা হয়েছে ৬ লাখ ৮৩ হাজার ১৫ টাকা, আর বেসরকারি ব্যবস্থাপনায় হজ পালনে খরচ ধরা হয় ৬ লাখ ৭২ হাজার ৬১৮ টাকা; যা গত বছরের হজ প্যাকেজ থেকে দেড় থেকে দুই লাখ টাকা বেশি। হজ যাত্রীদের চাপ সামলাতে সরকার প্রাক-নিবন্ধন ও নিবন্ধনের ব্যবস্থা চালু করা হয়েছিল এবার। কিন্তু এ বছর হজ প্যাকেজের মূল্য অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাওয়ায় কোটা পূরণ হয়নি।

হজযাত্রীদের উন্নত আবাসনের জন্য আন্তমন্ত্রণালয় কমিটির মাধ্যমে আরবের মক্কা ও মদিনায় ভালো মানের বাড়ি ভাড়া করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। হজযাত্রীদের স্বাস্থ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতে বাংলাদেশ ই-হেলথ প্রোফাইল প্রবর্তন করেছে উল্লেখ করে সরকারপ্রধান বলেন, সৌদি আরবে অসুস্থ হজযাত্রীদের সুশৃঙ্খলভাবে সেবা প্রদানে কিউ ব্যবস্থাপনা সিস্টেম চালু করা হয়েছে। হজযাত্রীগণ কোনো ধরনের ভোগান্তি ছাড়াই সৌদি ই-ভিসা সিস্টেমের মাধ্যমে আবেদন করে ভিসা সংগ্রহ করতে পারছেন। মক্কা রোড সার্ভিসের আওতায় বাংলাদেশি হজযাত্রীগণ এ বছর থেকে শতভাগ ইমিগ্রেশন ঢাকায় হজরত শাহজালাল বিমানবন্দরে সম্পন্ন করতে পারবেন ফলে জেদ্দা হজ টার্মিনালে দীর্ঘ অপেক্ষা দূর হবে।
শেখ হাসিনা বলেন, হজ ফ্লাইট ব্যবস্থাপনা ও মনিটরিংয়ের মাধ্যমে ফ্লাইট বিপর্যয় রোধ করা সম্ভব হচ্ছে। হজযাত্রীদের লাগেজ হারানো এবং এবিষয়ক অব্যবস্থাপনা আমরা দূর করেছি। প্রত্যেক হজযাত্রীকে এসএমএসের মাধ্যমে হজবিষয়ক নোটিফিকেশন প্রদান করা হচ্ছে। এ ছাড়া রয়েছে হজবিষয়ক কলসেন্টার ১৬১৩৬।

হজ কার্যক্রম উদ্বোধনকালে সরকারপ্রধান আরও বলেন, বাংলাদেশের আবেদনকারীর সংখ্যা বেশি হওয়ায় আমাদের প্রাক্নিবন্ধনের প্রক্রিয়া বছরব্যাপী চলতে থাকে। প্রাক্নিবন্ধনের পর আবেদনকারীরা ন্যায্যতার ভিত্তিতে ক্রমানুযায়ী হজে যাওয়ার সুযোগ পেয়ে থাকেন। কেউ প্রাক্নিবন্ধনের পর তা বাতিল করতে চাইলে অনলাইনে আবেদন করে সহজেই ইএফটির মাধ্যমে অর্থ ফেরত পাচ্ছেন। চূড়ান্তভাবে নির্বাচিত হজযাত্রীগণ ডিজিটালভাবে নিবন্ধন সম্পন্ন করে থাকেন।

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ