স্টাফ রিপোর্টার – বেসরকারি মেডিক্যাল কলেজ ও হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু সংক্রমণের পরীক্ষার ফি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা বেঁধে দিয়েছে স্বাস্থ্য অধিদপ্তর। এছাড়া সরকারি হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু পরীক্ষার ফি ১০০ টাকা নির্ধারণ করা হয়েছে। রবিবার সকালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের অতিরিক্ত মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. আহমেদুল কবির।
তিনি বলেন, ডেঙ্গু পরীক্ষাসহ ডেঙ্গু চিকিৎসায় আমরা সুনির্দিষ্ট গাইডলাইন করে দিয়েছি। এর গাইডলাইন অনুযায়ীই সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে। প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।’
এসময় স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার পরিচালক নাজমুল ইসলাম বলেন, ‘ঢাকা মহানগরীর পর দেশে সবচেয়ে বেশি রোগী চট্টগ্রাম বিভাগের কক্সবাজারে। জেলার রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মাঝে বেড়েই চলেছে ডেঙ্গুতে আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। চলতি বছরও সহস্রাধিক ডেঙ্গু রোগী শনাক্ত হয়েছে সেখানে। তবে সেখানে ভাইরাসটি প্রতিরোধে ব্যবস্থাপনা কঠিন। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষের মাঝে সচেতনতার যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে। তাদের কালচার আলাদা হওয়ায় এ ব্যাপারে কাজও সেভাবে করা যায় না।’
ডা. আহমেদুল কবির বলেন, সব সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের ব্যবস্থা করা হয়েছে। ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে করণীয় কী হবে, প্রতিটি হাসপাতালকে নির্দেশনা দেওয়া আছে।
তিনি বলেন, রোগী বাড়লে অতিরিক্ত আবাসিক চিকিৎসক এবং মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে, যেন ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা ব্যহত না হয়। হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করতে সংশ্লিষ্ট পরিচালকদের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
কোন সিটিতে রোগী বেশি – সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নে অধিদপ্তরের এই কর্মকর্তা বলেন, বেশিরভাগ হাসপাতাল দক্ষিণে, উত্তর থেকে কোনও রোগী দক্ষিণের হাসপাতালে গিয়ে চিকিৎসা নেয়, তাহলে সঠিক উপাত্ত নিয়ে আসা কঠিন। তবে আমরা বিষয়টি নিয়ে আরও কাজ করবো। কোনও তথ্য-উপাত্ত পাওয়া গেলে আপনাদের জানানো হবে।
ডেঙ্গু রোগের প্রাদুর্ভাব প্রতিরোধে স্বাস্থ্য অধিদফরের হাসপাতাল ও ক্লিনিক শাখা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য ১১ দফা সুপারিশ করা হয়েছে। এই গাইডলাইন অনুযায়ীই সবাইকে চিকিৎসা দিতে হবে। প্লাটিলেট ব্যবহার নিয়েও গাইডলাইনে নির্দেশনা রয়েছে।
১. সকল সরকারি হাসপাতালে ডেঙ্গু রোগ স্ক্রিনিংয়ের পর্যাপ্ত কিটের ব্যবস্থা করতে হবে। সরকারি ব্যবস্থাপনায় ডেঙ্গু স্ক্রিনিংয়ের চার্জ ১০০ টাকার বেশি হওয়া যাবে না।
২. ডেঙ্গুর প্রাদুর্ভাব অনেক বেশি বেড়ে গেলে আবাসিক চিকিৎসক ও আরএমও এর কক্ষে অতিরিক্ত মেডিসিন বিশেষজ্ঞকে দায়িত্ব দিতে হবে। যাতে আগত ডেঙ্গু রোগীদের চিকিৎসা ব্যাহত না হয়।
৩. হাসপাতালগুলোতে ডেঙ্গু রোগীদের জন্য পর্যাপ্ত মশারির ব্যবস্থা করার জন্য সংশ্লিষ্ট পরিচালককে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
৪. কোনো ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসার জন্য প্লাটলেট প্রয়োজন হলে জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী চিকিৎসা দিতে হবে। ২৪/৭ ল্যাব খোলা রাখতে হবে। সরকারিভাবে ২১টি সেন্টারে প্লাটিলেট সরবরাহের ব্যবস্থা আছে, কোনো রোগীর প্লাটিলেট প্রয়োজন হলে উল্লেখিত ২১টি সেন্টার থেকে সংগ্রহ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
এসব সেন্টারের মধ্যে রয়েছে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কার্ডিওভাস্কুলার ডিজিজ, বাংলাদেশ (এনআইসিভিডি), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব কিডনি ডিজিজ অ্যান্ড ইউরোলজি (নিকডো), ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব নিউরোসায়েন্স অ্যান্ড হাসপাতাল (নিনস), বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, রাজশাহী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট অব ক্যানসার রিসার্চ অ্যান্ড হাসপাতাল (এনআইসিআরএইচ), রংপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, এম আব্দুর রহিম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ জিয়াউর রহামান মেডিকেল কলেজ, কুমিল্লা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ হাসপাতল, সিলেট এম এ জি ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, জাতীয় বক্ষব্যাধী ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, স্যার সলিমুল্লাহ মেডিকেল কলেজ ও মিডফোর্ট হাসপাতল, ময়মনসিংহ মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, ফরিদপুর, শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, সিরাজগঞ্জ।
৫. ডেঙ্গু প্রতিরোধে পরিস্কার পরিচ্ছন্নতা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য সিটি করপোরেশন বা পৌরসভার সহযোগিতায় হাসপাতালের চারপাশ নিয়মিত পরিস্কার রাখতে হবে। হাসপাতাল কম্পাউন্ডে ডাব বিক্রি বন্ধ করতে হবে। হাসপাতালের অভ্যন্তরে নিয়মিত পরিষ্কার করতে হবে।
৬. ডেঙ্গু একটি ভেক্টর বাহিত রোগ বিধায় জিও লোকেশন ট্রেসিং খুবই গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য ডেঙ্গু আক্রান্ত রোগীর মোবাইল নং এবং পূর্ণাঙ্গ ঠিকানা অবশ্যই সঠিকভাবে লিপিবদ্ধ করে সংরক্ষণ করতে হবে।
৭. আইইডিসিআর এবং স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখার যৌথ উদ্যোগে কন্ট্রোল রুম খুলতে হবে।
৮. আগ্রহী চিকিৎসকদের প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণের জন্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের রোগ নিয়ন্ত্রণ শাখায় যোগাযোগ করার জন্য অনুরোধ করা হলো।
৯. এডিস মশার লার্ভা নিধনে যথাযথ কর্তৃপক্ষকে অতিদ্রুত প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।
১০. বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানসমূহে ডেঙ্গু শনাক্তকরণের এনএস১ অ্যান্টিজেন (সর্বোচ্চ ৫০০টাকা), আইজিজি এবং আইজিএম (সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা), সিবিসি (সর্বোচ্চ ৪০০ টাকা) পরীক্ষা সরকারের পূর্ব নির্ধারিত মূল্যে করতে হবে।
১১. বেসরকারি স্বাস্থ্য সেবা প্রতিষ্ঠানগুলোতে ডেঙ্গু রোগীর চিকিৎসা জাতীয় গাইড লাইন অনুযায়ী করতে হবে এবং প্রতিদিন ডেঙ্গু রোগীর তথ্য স্বাস্থ্য অধিদফতরের এমআইএস শাখাকে অবহিত করতে হবে।