স্টাফ রিপোর্টার: ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক ড. আসিফ নজরুল বলেছেন, কোটা সংস্কার দাবিতে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তাদের আন্দোলনটাই হচ্ছে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত চেতনা। এ সময় কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের রাজাকার ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি বন্ধের আহ্বান জানান তিনি।
বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুর দেড়টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অপরাজেয় বাংলা চত্বরে ‘নিপীড়ন বিরোধী শিক্ষক নেটওয়ার্ক’ আয়োজিত এক সমাবেশে তিনি এ আহ্বান জানান।
আসিফ নজরুল বলেন, ১৯৭২ সালের সংবিধান অনুযায়ী আমাদের মুক্তিযুদ্ধের বড় চেতনা হচ্ছে অসাম্য, বৈষম্যহীনতা ও সমান অধিকার। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ে যে শিক্ষার্থীরা আন্দোলন করছেন, তাদের রাজাকার ট্যাগ দেওয়া হচ্ছে। আমরা এটা প্রত্যাখ্যান করছি। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কোনো পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রাজাকার না। ১৯৭১ সালে মাত্র এক শতাংশ রাজাকার ছিল, ৯৯ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা। আজকে যারা আন্দোলন করছেন তারাও মুক্তিযোদ্ধা। তারা জনযুদ্ধের মুক্তিযোদ্ধার সন্তান। সুতরাং তাদের রাজাকার ট্যাগ দেওয়া বন্ধ করেন। রাজাকার ট্যাগ দেওয়ার রাজনীতি বন্ধ করেন। এটা করতে করতে আপনারা মুক্তিযোদ্ধাকে হেও করছেন।
ঢাবির এ অধ্যাপক বলেন, যারা আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের ওপর হামলা করেছেন, নির্যাতন করেছেন, এটা ফৌজদারি অপরাধ। এটা হচ্ছে মার্ডার, মৃত্যুদণ্ডযোগ্য অপরাধ। অবশ্যই এই অপরাধের বিচার করতে হবে। সরকারের যে মন্ত্রী, আওয়ামী লীগের যেসব নেতা প্রকাশ্যে ছাত্রলীগকে আন্দোলন দমনে নির্দেশ দিয়েছেন, তারাও এই অপরাধের সমান অংশীদার। এই অপরাধের সহায়তাকারী হিসেবে তাদেরকে বিচার করতে হবে। দেশে যদি কোনো অপরাধ হয় সেটা দেখার দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর, বিচার বিভাগের, ছাত্রলীগের না।
বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের ঘোষণা দেওয়া হলো কার স্বার্থে? এমন প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধের সিদ্ধান্ত কি আমাদের সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে দেওয়া হলো? তাদের স্বার্থকে বিবেচনা করা হয়েছে? নাকি তাদের কণ্ঠ বিবেচনা করা হয়েছে? আজকে আমরা শুনেছি সন্ধ্যার মধ্যে হল খালি করার সিদ্ধান্ত এসেছে। আমরা স্পষ্ট ভাষায় বলতে চাই, হল ত্যাগ করার সিদ্ধান্তে সাধারণ ছাত্ররা হল ত্যাগ করুক আর না করুক সেটা তাদের সিদ্ধান্ত। কিন্তু হলে বা অন্য কোথাও তাদের ওপর হামলা নির্যাতন আমরা আর সহ্য করব না।
এসময় উপস্থিত ছিলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, কুষ্টিয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শতাধিক শিক্ষক।