স্টাফ রিপোর্টার: প্রফেসর ড. সলিমুল্লাহ খান বলেছেন, ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের যে তিনটি লক্ষ্য ছিল- সাম্য, মানবিক মর্যাদা ও সামাজিক সুবিচার বা ইনসাফ প্রতিষ্ঠা করা। সেটা থেকে আমরা সরে গিয়েছিলাম। সাম্যের কী হয়েছে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর? মানবিক মর্যাদা ধূলিসাৎ হয়েছে। টর্চার, গুম, খুন, ক্রসফায়ার ইত্যাদি বেড়েছে। তাহলে আমরা ছাত্রছাত্রীদের কী শেখাবো?
সোমবার (১৮ নভেম্বর) মুন্সীগঞ্জের সরকারি হরগঙ্গা কলেজ মাঠে একাদশ শ্রেণিতে ভর্তি হওয়া শিক্ষার্থীদের নবীনবরণ অনুষ্ঠানে আয়োজিত আলোচনা সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
ড. সলিমুল্লাহ খান বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের লক্ষ্য আমরা সরে যাওয়াতেই আমাদের এই যুগের তরুণ ছাত্রছাত্রীরা প্রাণ দিয়ে এবং দেশের জনগণ তাদের সর্বাত্মথেকেক সমর্থন দিয়ে প্রমাণ করেছে, আমাদের রাষ্ট্র হারিয়ে যেতে পারে না। সেজন্যই এই নতুন রাষ্ট্র গঠনের সংগ্রাম। নতুন স্বাধীনতা বলার চেয়ে আমাদের বলা উচিত আমাদের হারিয়ে যাওয়া স্বাধীনতা আমরা ফিরিয়ে আনার সংগ্রামে আবার প্রাণ দিয়েছি। দরকার হয় আমরা আরও প্রাণ দেব। কিন্তু আমরা স্বাধীনতা হারাতে দেব না।’
তিনি আরও বলেন, ‘বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে কোন বৈষম্য থাকবে না, সাম্যের জন্য আমরা নতুন রাষ্ট্র তৈরি করছি। কারণ পাকিস্তান রাষ্ট্রে আমরা সাম্যের দেখা পাইনি। ৫৩ বছর পর আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আমাদের শিক্ষা দিয়েছেন, সাম্য শব্দের অর্থ হচ্ছে বৈষম্যের বিরোধিতা করা। এজন্যই এই বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন।’
ড. সলিমুল্লাহ বলেন, ‘১৯৭১ সালের মুক্তির সংগ্রামে আমাদের তিনটি ধ্রুব নক্ষত্রের একটি হচ্ছে মানবিক মর্যাদা। মানবিক মর্যাদার মানে হচ্ছে মানুষ মানুষকে পাশবিক অত্যাচার করতে পারবে না। সেটি আয়নাঘরে বা অন্য কোন বন্দিশালায়। মানুষকে বিনা বিচারে বন্দুকযুদ্ধের নামে ক্রসফায়ারে হত্যা করা যাবে না। মানুষের গায়ে মানুষ লাথি মারবে না। সেই প্রতিশ্রুতির কথা বাংলাদেশের নেতারা ও শাসকরা ভুলে গিয়েছিলেন। সেজন্য মানবিক মর্যাদা পুনরুদ্ধারের লক্ষ্যে আমাদের ছাত্রছাত্রীরা আবার জীবন দিলেন।’
তিনি আরও বলেন, ‘অনেকে বলেন, ব্যর্থ রাষ্ট্র। ব্যর্থ রাষ্ট্র নয়। রাষ্ট্র নিজেকে নিজেই বিলুপ্ত করে যখন রাষ্ট্রে কোন ন্যায়বিচার থাকে না।’
সরকারি হরগঙ্গা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর নাজমুন নাহারের সভাপতিত্বে আরও বক্তব্য দেন সরকারি মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুল হামিদ মোল্লা, সরকারি হরগঙ্গা কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. কামরুজ্জামান খান, শিক্ষক পরিষদের সম্পাদক মো. ফারুক মিয়া, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গুলিবিদ্ধ সরকারি হরগঙ্গা কলেজের বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থী মো. মাইনুল ইসলাম মারুফ। একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে বক্তব্য দেন আসমাউল হুসনা ঝিম।
স্বাগত বক্তব্য দেন হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের বিভাগীয় প্রধান ও নবীন বরণ উদযাপন কমিটির আহ্বায়ক প্রফেসর মো. আব্দুল মান্নান। মানপত্র পাঠ করেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের চতুর্থ বর্ষের ছাত্রী জান্নাতুল ইসলাম মীম।
এসময় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে নিহতের পরিবারের সদস্যদের হাতে অনুদানের চেক বিতরণ করা হয়।