Search
Close this search box.

ধর্ষণরোধে আমাদের ভূমিকা

ধর্ষণরোধে আমাদের ভূমিকা
কবীর চৌধুরী তন্ময়

সাম্প্রতিক পরপর কয়েকটি ধর্ষণ ও যৌন নির্যাতনের ঘটনা নিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় অনেকের মতামত দেখেছি। কেউ বলেছেন ক্রসফায়ার দিতে হবে, কেউ বলেছেন পুরুষের ধর্ষণকাজে ব্যবহৃত বিশেষ অঙ্গ কেটে ফেলতে হবে, কেউ বলেছেন ফাঁসির দণ্ড নিশ্চিত করতে হবে। আবার অনেককে শরিয়া আইন চালু করার পক্ষেও তাদের মতামত দিতে দেখেছি।

অন্যদিকে ঘোলা পানিতে মাছ শিকার করা, রাজনৈতিক ইস্যু খুঁজে পাওয়া দেশের একশ্রেণির (অপ) রাজনীতিবিদকে মূলত অপরাধীর সাহস, ঔদ্ধত্যের উৎস চিহ্নিত করে অপরাধ, ধর্ষণ, হত্যার মতো জঘন্য কর্মকাণ্ড থেকে কীভাবে দেশের যুবসমাজকে বের করে নিয়ে আসবে, নারীর অধিকার ও নিরাপত্তা কীভাবে নিশ্চিত করবে—এগুলোর বিপরীতে তিলকে তাল বানিয়ে উল্টো জনমনে আতঙ্ক সৃষ্টি করার ষড়যন্ত্র করতে দেখা যায়। কোনোরকমের পরিসংখ্যান, মানবসভ্যতার গোড়াপত্তন থেকে আধুনিক এ সভ্যতায় হত্যা ও ধর্ষণরোধে সুনির্দিষ্ট কোনও পরিকল্পনা তুলে ধরার বিপরীতে ‘সম্ভব’ হলে গৃহযুদ্ধের দিকে ঠেলে দেয়!

আচ্ছা ধরুন, ক্রসফায়ার দিয়ে ধর্ষককে হত্যা করা হলো। তাহলে কি ধর্ষণ বন্ধ হয়ে যাবে? আবার ধরুন পুরুষের বিশেষ অঙ্গ কেটে ফেলে তাকেও শাস্তি দেওয়া হলো, তাতেও কি ধর্ষণ বন্ধ হবে? অন্যদিকে বিচারের মাধ্যমে ফাঁসিও নিশ্চিত করা হলে বাংলাদেশে ধর্ষণ হবে না—এমন নিশ্চয়তা কেউ দিতে পারবেন? অপরাধবিজ্ঞান আর ধর্ষণ প্রবণতা নিয়ে স্টাডি করতে গিয়ে দেখি, শাস্তিই একমাত্র অপরাধ-ধর্ষণরোধ কিংবা ধর্ষণ বন্ধ হওয়ার পক্ষে তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যায় না। যেমন, ধর্ষণের অপরাধে প্রকাশ্যে শিরচ্ছেদ, গুলি করে হত্যা, ঢিল মেরে মেরে হত্যা, ফাঁসি দিয়ে হত্যার দণ্ড নিশ্চিত করা দেশগুলোতে আজও ধর্ষণ বন্ধ করা যায়নি বা কাঙ্ক্ষিত ফলাফল অর্জন সম্ভব হয়নি। তাই বলে বিচারের নামে দীর্ঘ সময় পার করা, রাজনৈতিক নোংরা হস্তক্ষেপ, বিচারহীনতার অপসংস্কৃতি গ্রহণযোগ্য নয়। সময়ের প্রয়োজনে আইনের ধারাও পরিবর্তন, পরিবর্ধন করা গুরুত্বপূর্ণ হয়ে পড়েছে। আর চলমান আইনের ১৮০ কার্যদিনের মধ্যে বিচার কাজ সম্পন্ন ও দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করার বার্তা মিডিয়া ও আলোচনা-সমালোচনার মাধ্যমে সর্বস্তরে ছড়িয়ে দিতে হবে।

ধর্ষণের নানান দিক রয়েছে। মূলত, মন-মগজ দ্বারা পরিচালিত ধর্ষণ প্রবণতা ব্যক্তিবিশেষের ওপর নির্ভর করে ধর্ষণের প্রকারভেদ। কখনও কখনও প্রতিশোধপরায়ণ, কখনও সুযোগ পেয়ে আবার কখনও নিজেই কৌশল নির্ণয় করে ধর্ষণের মতো বর্বরতা করে থাকে। এখানে বলা যেতে পারে, কোটা সংস্কার আন্দোলনে নেতৃত্ব দেওয়া বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের অভিযুক্ত দুই নেতা হাসান আল মামুন ও নাজমুল হাসান সোহাগ নিজেরাই ‘কৌশল নির্ণয়’ করে (১) ‘প্রেমের ফাঁদ’ (২) ‘সহযোগিতার আশ্বাস’ দিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এক ছাত্রীর ওপর ধর্ষণের মতো বর্বর কর্মকাণ্ড ঘটিয়েছেন। অন্যদিকে সিলেট এমসি কলেজ ছাত্রলীগ কর্তৃক ধর্ষণকাণ্ডও ঘটেছে ‘সুযোগ পেয়ে’।

আবার একটু পেছনে গেলে, ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় বর্বর পাকিস্তানিদের সঙ্গে এক হয়ে স্বাধীনতাবিরোধী জামায়াতে ইসলামীর রাজাকার, আলশামস, আলবদর বাহিনী প্রতিশোধ নিতেই ধর্ষণের মতো বর্বরতাকে বেছে নিয়েছিল। এদিকে নোয়াখালীর বেগমগঞ্জে জঘন্য বর্বরতা ঘটেছে, সমাজ ও ইসলামকে রক্ষার নামে ‘তথাকথিত শাস্তি’, যা ক্ষমতার সাহস থেকে উৎপত্তি! সাংসারিক মনোমালিন্য থেকে দীর্ঘ ৩ বছর পর ওই নারীর স্বামী দেখা করতে এলে তথাকথিত ‘জেনা’র অভিযোগ তুলে তা থেকে সমাজকে রক্ষা আর ইসলামের মূল্যবোধ নিশ্চিত করতেই মধ্যযুগীয় কায়দায় নির্যাতন চালিয়েছে দেলোয়ার, কামাল, সুমন, রহিমসহ অনেকে। একটু বিচার-বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধর্ষকদের ক্ষেত্রে ধর্ষণ করার পেছনে যে মানসিকতা, তার ওপর ভিত্তি করে এই ‘ধর্ষণ কৌশল’ নির্ণয় হয়ে থাকে। নোয়াখালীর বেগমগঞ্জের দেলোয়ার বাহিনীর দ্বারা পরিচালিত বর্বর কর্মকাণ্ড ‘বিবস্ত্র করে ভিডিও’ ধারণ এবং এক মাস পর কুপ্রস্তাব-ধর্ষণ কাজে ওই নারী রাজি না হওয়ায় ফেসবুকে ভাইরাল করেছে মূলত ধর্ষণ প্রবণতার প্রতিশোধ থেকে।

আমি মনে করি, ধর্ষণ নিয়ে বিস্তর গবেষণার প্রয়োজন আছে। এটি একক কোনও ‘বিন্দু’র ওপর নির্ভরশীল নয়। আবার কোনও একক ব্যক্তি, গোষ্ঠী বা শ্রেণির মধ্যেও ধর্ষণ মনোভাব সীমাবদ্ধ নয়। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাদ্রাসার কতিপয় শিক্ষকও আজ ধর্ষণের অভিযোগে অভিযুক্ত। আবার মসজিদের কিছু ইমাম, মন্দিরের পুরোহিত বা ধর্মগুরুরাও এই ধর্ষণ কাজের অপরাধ থেকে নিজেদের আজও মুক্ত রাখতে পারেনি। কতিপয় করপোরেট হাউজ থেকে মিডিয়া হাউজগুলোও একই অভিযোগে অভিযুক্ত। আর সরকারি, বেসরকারি সব প্রতিষ্ঠান,শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী সেল গঠন করতে দেশের সর্বোচ্চ আদালত নির্দেশ দিয়েছেন সেই ২০০৯ সালে। নতুন করে (১০ জুলাই, ২০১৯) শিশু নির্যাতন রোধে দেশের প্রতিটি স্কুলে অভিযোগ বক্স রাখার নির্দেশ হাইকোর্ট দিলেও আমরা কি সে নির্দেশ বাস্তবায়ন করতে পেরেছি? এখানেই আমাদের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয়েছে। আমরা ধর্ষণ ঘটনার পর সোশ্যাল মিডিয়ায় চিৎকার, চেঁচামেচি আর রাজনৈতিক হুঙ্কার দিয়ে মাঠে-ময়দানে মিছিল-মিটিং করতে নেমে পড়ি। টেলিভিশন টকশো আর পত্রিকার পাতাজুড়ে সমালোচনা করি, কিন্তু বাস্তবসম্মত উদ্যোগ গ্রহণ করি না। কী করলে অপরাধ-ধর্ষণ প্রবণতারোধ হবে, সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত তুলে ধরি না। আবার মাঠে ময়দানে আন্দোলন-প্রতিবাদের জায়গাও যে নিরাপদ নয়-বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) কেন্দ্রীয় কমিটির সম্পাদক জলি তালুকদার (২০ সেপ্টেম্বর, ২০২০) দলীয় নেতার যৌন নিপীড়নের বিরুদ্ধে শাস্তির দাবিতে পল্টনে মুক্তি ভবনে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পঞ্চম তলায় অনশনের মাধ্যমে এটিও স্পষ্ট করে তুলে ধরেছেন।

তাহলে আমাদের করণীয় কী হতে পারে এটি চিন্তা-ভাবনার বিষয়। আইন হাতে তুলে নেওয়ার আগেই রাষ্ট্রকে তার সাংবিধানিক দায়িত্ব পালনে আন্তরিক ও প্রতিজ্ঞাবদ্ধ হতে হবে। অপরাধ সেটা যত ছোটই হোক, সঙ্গে সঙ্গে শাস্তির আওতায় আনতে হবে। যেসব রাজনীতিবিদের আশ্রয়-প্রশ্রয়ে অপরাধ করার সাহস-ঔদ্ধত্যের উৎস পাওয়া যাবে, তাদেরও আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। আবার রাষ্ট্রযন্ত্র পুলিশ প্রশাসনের কোনও কর্মকর্তার দায়িত্বের অবহেলার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেলে, তাকেও শাস্তির আওতায় আনতে হবে। প্রকৃত সত্য হচ্ছে, হোয়াইট কালার ভদ্রলোকগুলোর মুখোশ উন্মোচন হওয়ার আগ পর্যন্ত তাদের ফেসবুকজুড়ে দেখবেন দেশ নষ্টদের দখলে চলে গেছে, এ দেশ আমার নয়, বাংলাদেশ আজ ধর্ষকদের দখলে, শেখ হাসিনার সোনার ছেলেরা যেখানে ধর্ষণ সেখানে, এই জন্য দেশ স্বাধীন করেছি, বিচারহীনতার সংস্কৃতির কারণে ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছে না ইত্যাদি ইত্যাদি।

যেমন, আপন জুয়েলার্সের ছেলের ধর্ষণ ঘটনার আগে সে নিজেও ফেসবুকে ধর্ষণবিরোধী স্ট্যাটাস দিয়েছিল। জন্মদিনের পার্টির কথা বলে বনানীর একটি বিলাসবহুল হোটেলে নিয়ে দুই বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রীর ‘ধর্ষণের’ ঘটনা প্রকাশ না হলে, আমাদের জানার কোনও উপায় ছিল না যে তারা ধর্ষক! অন্যদিকে মি’টুর আন্দোলন না হলে কতিপয় ‘হোয়াইট কালা’র ভদ্রলোক গণমাধ্যম ব্যক্তিত্বের মুখ ও মুখোশও উন্মোচন হতো না! আবার রাজধানীর কুর্মিটোলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী ধর্ষণের ঘটনা, ফুটপাত ধরে হাঁটা শিক্ষার্থী কোনও কিছু বুঝে ওঠার আগেই তাকে টেনে হিঁচড়ে ঝোপের আড়ালে নিয়ে যায় ধর্ষক মজনু। চিৎকার চেঁচামেচি এবং ধস্তাধস্তি করেও ওই শিক্ষার্থী নিজেকে শেষ পর্যন্ত রক্ষা করতে পারেনি। অথচ এই ধর্ষক মজনু কিছুদিন আগেও এক বোবা মেয়েকে অন্য ধর্ষকের হাত থেকে রক্ষা করেছে এমন ভিডিও ভাইরালও হয়েছে।

ধর্ষণ মূলত ব্যক্তির মন-মগজের বহিঃপ্রকাশ। পুরুষতান্ত্রিক সমাজ-সংসারে সন্তানের সামনেই বাবা মা’কে প্রহার করছে। অশ্লীল ভাষায় গালাগালিসহ শারীরিক নির্যাতনও প্রায় রুটিন কর্মকাণ্ড। পান থেকে চুন খসলেই নারীর ওপর পুরুষের নির্যাতন—এই শিক্ষাটা পরিবার থেকেই প্রথমে পেয়ে আসছে। অন্যদিকে নারীকে কন্ট্রোলে রাখতে হবে, তাদের বুদ্ধিসুদ্ধি কম, নারী পুরুষের সেবাদাসী, স্বামীর পায়ের নিচে স্ত্রীর বেহেস্ত, স্ত্রী থাকার পরেও অন্য নারীর সঙ্গে মেলামেশা, আকার-ইঙ্গিত প্রদর্শন করে নিজেদের উদ্দেশ্য সাধন করার জন্য কথা বলাবলি, একটা নারী গেলে দশটা আসবে, পুরুষের জন্যেই নারী, পুরুষ ইচ্ছে করলেই দশটা বিয়ে করতে পারে—এই ধরনের পারিবারিক কথোপকথন বা কলহের মাঝেই ধীরে ধীরে যে ছেলেটি শিশু-কিশোরের বয়স পেরিয়ে যুবক হয়, তখন তার মাঝে নারীর প্রতি সম্মান-শ্রদ্ধাবোধ ঠিক তেমনটা প্রতিফলিত হয় না। আবার তথাকথিত ওয়াজ মাহফিলের নামে নারীর প্রতি বিষোদগার, পর্দাহীনতার অভিযোগ তুলে নারীর প্রতি কিশোর-যুবকদের মন-মগজ আর দৃষ্টিভঙ্গিতে হিংস্রতা সৃষ্টি করাও প্রতিশোধ-ধর্ষণ প্রবণতার কারণ। একটি মেয়ে বাইক চালিয়ে গায়ে হলুদে যাওয়ার ঘটনা নিয়ে ‘ইসলাম গেলো ইসলাম গেলো’ বলে কতিপয় কিছু মানুষের বিষোদগার, কুরুচিপূর্ণ মন্তব্য, হত্যা করার হুমকি-প্রতিশোধও ধর্ষণ প্রবণতার বহিঃপ্রকাশ।

পরিবার ও সমাজ-রাষ্ট্রের রন্ধ্রে-রন্ধ্রে কতোটা অবক্ষয় সৃষ্টি হলে, মন-মগজ কতোটা কুসংস্কার-অন্ধকারে নিমজ্জিত হলে এই কিশোর বয়সেই ধর্ষক হয়ে ওঠে (?) এটি আমাদের নতুন করে ভাবতে হবে, গবেষণার দাবি রাখে। প্রতিটি পরিবারের কর্তাব্যক্তিসহ সরকারকে দায়িত্ব নিয়ে ধর্ষণরোধ করতে এগিয়ে আসতে হবে। ধর্ষণরোধে অপরাধবিজ্ঞানীদের নিয়ে গবেষণামূলক সিদ্ধান্ত আর প্রতিটি অপরাধের দৃষ্টান্ত শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
অবস্থা বিবেচনা করে রাষ্ট্র, রাষ্ট্রযন্ত্র ও মিডিয়ার সমন্বয়ে জনসচেতনতামূলক কর্মকাণ্ডের উদ্যোগ নিতে হবে। স্থানীয় সরকারকে কাজে লাগিয়ে পাড়ায়, মহল্লায় যৌন নিপীড়ন ‘সেল’ বা ‘কমিটি’ গঠন করা, মসজিদগুলোতে প্রতি শুক্রবার খুতবার আগে শিশু-নারী নির্যাতন, ধর্ষণ-হত্যা নিয়ে ইমাম কর্তৃক আলোচনা নিশ্চিত করা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি, শিক্ষক, ধর্মপণ্ডিত দ্বারা উঠান বৈঠকের আয়োজনের মাধ্যমে স্থানীয়ভাবে শিশু ও নারী নির্যাতনের বিপরীতে প্রচলিত আইনে কী শাস্তির বিধান আছে এসব বিষয়ে স্থানীয়ভাবে জনগণকে সচেতন করার মাধ্যমে ব্যক্তির ‘বিবেক জাগ্রত’ করার উদ্যোগ গ্রহণ করতে হবে। অপরাধ ও অপরাধের কঠোর শাস্তি কী মানুষের মন-মগজে প্রতিস্থাপন করতে পারলে অপরাধ প্রবণতা নিয়ন্ত্রণ-রোধ করা সম্ভব।

লেখক : সভাপতি, বাংলাদেশ অনলাইন অ্যাক্টিভিস্ট ফোরাম (বোয়াফ)

সংবাদটি শেয়ার করুন

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ