জাকির হোসেন
শুরু হলো শোকের মাস। পঁচাত্তরের এই মাসে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে সপরিবারের নির্মমভাবে হত্যার করা হয়। একটু খতিয়ে দেখলেই বোঝা যায়, এই হত্যাকাণ্ডের ‘ব্লুপ্রিন্ট’ এবং ‘অ্যাকশান প্ল্যান’ ছিল অত্যন্ত সুপরিকল্পিত। অতিশয় কূটকৌশল ও ঘটনার আগে-পরে সবকিছু নিখুঁতভাবে পর্যালোচনা ও বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে তৈরি করা হয় এই ব্লুপ্রিন্ট। এটা যে শুধু খন্দকার মোশতাক, মেজর ফারুক, রশিদ, ডালিমদের মতো কতিপয়ের মস্তিষ্কপ্রসূত চিন্তার ফল নয়, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। আর এটাও বোঝা যায় যে, এর পেছনে ছিল অনুরূপ রাজনৈতিক হত্যার অভিজ্ঞ পেশাদার আন্তর্জাতিক চক্রান্তকারী গোষ্ঠী, যারা কি না ইতঃপূর্বে বিশে^র বিভিন্ন দেশে এ ধরনের বহু পৈশাচিক হত্যাকাণ্ডের নীলনকশা তৈরি করে হাত পাকিয়েছে এবং ইতঃপূর্বে এরা স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিস্থিতি বিচার-বিশ্লেষণের মাধ্যমে এ ধরনের অনেক ‘নীলনকশা’ সফলভাবে বাস্তবায়িত করেছে। বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের ক্ষেত্রেও তারা বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনীতির কৌশলগত দিকসমূহ বিশেষভাবে মাথায় রেখে দিনক্ষণ নির্দিষ্ট করে ব্লুপ্রিন্ট তৈরি ও প্ল্যানিং সেল গঠন করে।
এখন এ বিষয়টি অনেকেই জানেন যে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের তৎকালীন পররাষ্ট্রমন্ত্রী হেনরি কিসিঞ্জারের বিদেশি শত্রুর তালিকায় ছিল তিনটি নাম। তাদের অন্যতম হলেন বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অন্য দুজন হলেন চিলির প্রেসিডেন্ট সালভাদর আলেন্দে ও ভিয়েতনামের প্রেসিডেন্ট উয়েন ভান থিউ। যেকোনো উপায়ে এই তিনজনকে উৎখাত করাই ছিল কিসিঞ্জারের লক্ষ্য। এই তিনজন বরাবরই কিসিঞ্জারের পরিকল্পনা বানচাল করে দিচ্ছিলেন। তাদের মধ্যে বঙ্গবন্ধুর ওপর কিসিঞ্জারের রাগটা ছিল একটু বেশি। এই রাগের অনেকগুলো কারণের একটি হলো, বঙ্গবন্ধু মুক্তি-সংগ্রামের মাধ্যমে চীন-মার্কিন সুসম্পর্কের সম্ভাবনাকে প্রায় অনিশ্চিত করে তুলেছিলেন। ওই সময় চীনের সঙ্গে মার্কিনদের সম্পর্কের দূতিয়ালির ভূমিকায় ছিল পাকিস্তান। সেই পাকিস্তানে যুদ্ধ শুরু হওয়ায় এই দূতিয়ালির কাজে ভাটা পড়ে। এতে প্রতিশোধপরায়ণ কিসিঞ্জার বঙ্গবন্ধুকে উৎখাতের সিদ্ধান্ত নেয়। ওই সময় বঙ্গবন্ধুকে বাঁচিয়ে রেখে তাঁর সরকারকে উৎখাত করা সম্ভব নয়, এ বিষয়ে হেনরি কিসিঞ্জার তথা সংশ্লিষ্ট ষড়যন্ত্রকারীদের মনে কোনো রকম সন্দেহ ছিল না। তাই তারা বঙ্গবন্ধুকে হত্যার মাধ্যমে উৎখাতের বিষয়টি মাথায় রেখে ‘অ্যাকশন প্ল্যান’ তৈরি করে।
বঙ্গবন্ধু হত্যা চক্রান্তের একটি বিশেষ দিক এই যে, এই চক্রান্তের সামনে রাখা হয় আওয়ামী লীগের একটি স্বার্থান্বেষী মহল এবং কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধাকে। এই বীভৎস ষড়যন্ত্রের পেছনে আমেরিকা, পাকিস্তান বা বাংলাদেশের স্বাধীনতাবিরোধী অন্য কোনো বিদেশি রাষ্ট্রের সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি সম্পূর্ণ আড়াল করতেই এই কৌশল অবলম্বন করা হয়। এ জন্য এই হত্যা চক্রান্তের সঙ্গে পাকিস্তান থেকে প্রত্যাগত সৈন্য বা অফিসারকে যুক্ত করা হয়নি। আরও একটি দুরভিসন্ধি থেকে এই চক্রান্তের সঙ্গে কতিপয় আওয়ামী লীগ নেতা ও মুক্তিযোদ্ধাদের যুক্ত করা হয়। এটা হলো, বঙ্গবন্ধুকে খুনের দায় খোদ তাঁরই দল আওয়ামী লীগ এবং মুক্তিযোদ্ধাদের ওপর চাপিয়ে সব মুক্তিযোদ্ধার ভাবমূর্তি নষ্ট করা এবং মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগকে কলঙ্কিত করা। বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে ভুট্টো-কিসিঞ্জার চক্র অভ্যন্তরীণ ও আঞ্চলিক রাজনৈতিক পরিস্থিতি বিশ্লেষণের মাধ্যমে পঁচাত্তরের পহেলা সেপ্টেম্বরের আগে যে বঙ্গবন্ধুকে হত্যার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। কারণ পহেলা সেপ্টেম্বর থেকে কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) প্রশাসন চালু হওয়ার কথা ছিল। বাকশাল চালু হলে সেনাবাহিনীকে ব্যারাক থেকে বের করে ৬৪ জেলায় ছড়িয়ে দেওয়া হবে। ওই ৬৪ জেলায় সেনা ইউনিটের ওপর থাকবেন ৬৪ জন গভর্নর। তখন বঙ্গবন্ধুর বিরুদ্ধে কোনো ধরনের মিলিটারি অ্যাকশন নেওয়া সম্ভব হবে না। ফলে তারা যেকোনো প্রকারেই হোক পহেলা সেপ্টেম্বরের আগেই বঙ্গবন্ধু হত্যা পরিকল্পনা বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। এক্ষেত্রে একাধিক কারণে আগস্ট মাস এবং তারিখ নির্ধারণ করা হয় ১৫ আগস্ট। এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে সিআইএ এবং খন্দকার মোশতাক চক্রের একটি বড় মাথাব্যথা ছিল রক্ষীবাহিনী। এই বাহিনী ছিল বঙ্গবন্ধুর অত্যন্ত বিশ^স্ত। তাই বঙ্গবন্ধু হত্যার ব্লুপ্রিন্ট তৈরিতে তারা রক্ষীবাহিনীর ওপর বিশেষভাবে নজর দেয়। সেই সঙ্গে ১৫ আগস্টের আগে রক্ষীবাহিনীকে নেতৃত্বশূন্য করার সিদ্ধান্ত নেয়, যাতে পরিকল্পনা বাস্তবায়নের চূড়ান্ত পর্বে এই বাহিনী কোনো প্রকার পদক্ষেপ নিতে না পারে। এই লক্ষ্যে ১৫ আগস্টের আগে রক্ষীবাহিনীর প্রধান ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামানকে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে প্রতিরক্ষা সংক্রান্ত একটি কোর্সের প্রশিক্ষণের জন্য আমন্ত্রণ জানানো হয়। ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামান সেই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেন এবং ১২ আগস্ট যুক্তরাষ্ট্রের উদ্দেশে রওনা হন। তৎক্ষণাৎ গুজব রটানো হয় রক্ষীবাহিনীর জন্য ট্যাংক জোগাড় করতে ব্রিগেডিয়ার নূরুজ্জামান বিদেশ যাচ্ছেন। এ সময় রক্ষীবাহিনীর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক ছিলেন আবুল হাসান খান। তবে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নূরুজ্জামানের অনুপস্থিতিতে রক্ষীবাহিনীর অবস্থা তখন অনেকটা কান্ডারিহীন নৌকার মতো। এ অবস্থায় ওই বাহিনী যে ঘাতকদের ট্যাংকবাহিনীর সামনে বুক চিতিয়ে দাঁড়াতে পারবে না, এ বিষয়ে চক্রান্তকারীরা ছিল নিশ্চিত। না থাকুক সেই ট্যাংকে কোনো গোলা, সেটা তো অত্যন্ত গোপনীয় ব্যাপার, রক্ষীদের সেটা জানার কথা নয়। তাই চক্রান্তকারীরা ধরেই নিয়েছিল, রক্ষীবাহিনীর শিবিরে ট্যাংকের উপস্থিতিতে রক্ষীদের হাতের রাইফেল খসে পড়বে। ব্রিগেডিয়ার নুরুজ্জামান যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার পথে লন্ডনে জানলেন বঙ্গবন্ধু নিহত। তখন তার কিছুই করার ছিল না।
বঙ্গবন্ধু হত্যার দিনটি ছিল শুক্রবার। এই শুক্রবার নিয়ে মেজর ফারুক বেশ একটা গল্প ফেঁদেছিল। এক সাক্ষাৎকারে সে বলেছিল, ‘শুক্রবার ভোরের আজানের সময় তার জন্ম। আবার এই শুক্রবার তার সাদির দিন। এমনই একটি শুক্রবারেই সে পাকিস্তানি সৈন্যবাহিনী ছেড়ে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধে যোগ দেয়। অন্যদিকে এই শুক্রবার মুসলমানদের কাছে পরম পবিত্র দিন। তাই এই হত্যার কাজটি করার জন্য তারা শুক্রবারকেই বেছে নেয়!’ কিন্তু আসল ব্যাপার কি তাই? নিশ্চয়ই তা নয়। এর অন্য কারণ আছে। পঁচাত্তরে ১৫ আগস্ট পড়েছিল শুক্রবার। আর এই ১৫ আগস্ট হলো ভারতের স্বাধীনতা দিবস। চক্রান্তকারীদের আশঙ্কা ছিল, বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হলে, পঁচিশ বছরের ভারত-বাংলাদেশ শান্তি, মৈত্রী ও সহযোগিতা চুক্তি অনুযায়ী ভারত এ ব্যাপারে সামরিক অভিযান চালাতে পারে। ভারত সামরিক অভিযান চালালে তা সামাল দেওয়া তাদের পক্ষে কোনোভাবেই সম্ভব হবে না। কিন্তু ১৫ আগস্ট স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে ভারতের সরকার, ভারতের রাজনৈতিক নেতৃত্ব ও সামরিক বাহিনী ব্যস্ত থাকবে। এমন একটি দিনে তারা প্রতিবেশী একটি দেশে সামরিক অভিযান চালাবে না। তাই এই দিনটিকেই চক্রান্তকারীরা বঙ্গবন্ধু হত্যার দিন হিসেবে বেছে নেয়।
এ ছাড়া আরও দুটি কারণে চক্রান্তকারীরা ১৫ আগস্টকে বেছে নিয়েছিল। এর একটি হলোÑ পঁচাত্তরের আগস্ট মাসে নবগঠিত বাংলাদেশ কৃষক শ্রমিক আওয়ামী লীগের (বাকশাল) জেলাওয়ারি কর্মকর্তা নিয়োগের প্রাক্কালে ঢাকায় ৬৪ জেলার ৬৪ জন নবনিযুক্ত গভর্নরের ট্রেনিং চলছিল। এই ট্রেনিং উপলক্ষে সারা দেশের প্রতিটি জেলার শীর্ষস্থানীয় নেতারা ঢাকায় অবস্থান করছিলেন। তাই চক্রান্তকারীরা ধরেই নিয়েছিল বঙ্গবন্ধু হত্যার পর ঢাকায় কারফিউ জারি করে তাদের আটক করতে পারলে সারা বাংলায় কোথাও কোনো কার্যকর প্রতিরোধ গড়ে উঠবে না। কেননা, নেতৃবৃন্দের অনুপস্থিতিতে বিভিন্ন জেলার বাকশাল তখন ছিল কান্ডারিহীন নৌকোর মতো।
আরেকটি হলো ট্যাংক বহরের নিয়মিত মহড়ার তারিখ। প্রসঙ্গক্রমে বাংলাদেশের ট্যাংকবাহিনী সম্পর্কে কিছু কথা প্রয়োজন। কেননা এখনও অনেকেই এই প্রশ্ন তোলেন যে, সদ্য স্বাধীনতা পাওয়া বাংলাদেশ যখন নানা সমস্যায় ধুঁকছে, তখন বাংলাদেশের সেনাশিবিরে একটি ট্যাংকবাহিনী যোগ করতে বঙ্গবন্ধুর হঠাৎ মাথাব্যথা হলো কেন? বস্তুত ট্যাংকগুলো পাওয়া গিয়েছিল উপঢৌকন হিসেবে। সত্তরের দশকে আরব-ইসরাইল যুদ্ধ চলাকালে আরবদের সঙ্গে বাংলাদেশের একাত্মতার স্মারক হিসেবে বঙ্গবন্ধু সেখানে কিছু একটা পাঠানো উচিত বলে মনে করেছিলেন। কিন্তু কী পাঠাবেন তিনি! অস্ত্র! নাকি অর্থ! এর দু’দিক থেকেই যে বাংলাদেশ দুর্বল। ঠিক হলো, যুদ্ধরত আরবদের জন্য বাংলাদেশ পাঠাবে নিজের বাগানের উন্নত মানের চা। এই সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ১৯৭৩ সালে ২৭ অক্টোবর ঢাকা থেকে এক বিমান চা পাঠানো হয় কায়রোতে। বঙ্গবন্ধুর এই অভাবনীয় উপহার পেয়ে খুশি হন মিসরের প্রেসিডেন্ট আনোয়ার সাদাত। যুদ্ধ শেষে প্রেসিডেন্ট সাদাত ১৯৭৪ সালের প্রথমদিকে বঙ্গবন্ধুকে ৩০টি ট্যাংক উপহার দেওয়ার প্রস্তাব পাঠান। প্রেসিডেন্ট সাদাতের এই প্রস্তাবে কোনো উৎসাহ বোধ করেননি বঙ্গবন্ধু। কিন্তু পররাষ্ট্র দফতর, বিশেষভাবে মন্ত্রিসভার পরামর্শে বঙ্গবন্ধু প্রেসিডেন্ট সাদাতের প্রস্তাবে অসম্মতি জানাননি।
এসব ট্যাংক সেনাবাহিনীর সঙ্গে যুক্ত হওয়ার পর প্রতি মাসে দুদিন করে মহড়া হতো। চক্রান্তকারী শিবিরের দুই ভায়রা ফারুক ও রশিদ প্রতি মাসে দুই রাত যুক্ত মহড়ার ছাড়পত্র পায়। পঁচাত্তরের আগস্ট মাসে মহড়ার দিনটি ছিল ১৪ আগস্ট, বৃহস্পতিবার। ইংরেজি ক্যালেন্ডার অনুযায়ী রাত ১২টার পরই ১৫ আগস্ট, শুক্রবার। বঙ্গবন্ধু হত্যার তারিখ নির্বাচনের ব্যাপারে চক্রান্তকারীরা এই বিষয়টিও মাথায় রেখেছিল। ১৫ আগস্ট ভোরবেলা লাইন করে যাত্রা শুরু করে। ক্যান্টনমেন্ট থেকে বের হওয়ার পরই ফারুক ক্যান্টনমেন্ট মসজিদ থেকে ভেসে আসা আজান শুনতে পায়। বনানী রোড ধরে ক্যান্টনমেন্টের চেক পয়েন্টের দিকে তার সারি ধীরগতিতে এগুতে থাকে। পথে দেখা হয় হাফপ্যান্ট ও গেঞ্জিপরা কয়েকজন লোকের সঙ্গে। চতুর্থ ও প্রথম বেঙ্গল ইনফ্যান্ট্রির এই লোকেরা সকালের পিটির জন্য যাচ্ছিল। তারা ট্যাংকবাহিনীকে হাত নেড়ে শুভেচ্ছা জানায়। ফারুকের বাহিনীও স্বতঃস্ফূর্তভাবে তাদের শুভেচ্ছা জানায়। সবাই ধরে নিয়েছিল এটা হচ্ছে ট্যাংকের নির্ধারিত নৈশ মহড়া। কেউ সন্দেহ করল না নির্ধারিত মহড়া এলাকায় বাইরে সাজোয়া বাহিনী কোথায় যাচ্ছে, কী জন্য যাচ্ছে!
লেখক- সাংবাদিক, কলামিস্ট
তথ্যসূত্র:
অ্যা লিগ্যাসি অব ব্লাড: অ্যান্থনি ম্যাসকারেনহাস
বাংলাদেশ ইন ব্লাড অ্যান্ড টিয়ার্স: জ্যোতি সেনগুপ্ত
বাংলাদেশ : ষড়যন্ত্রের রাজনীতি: পরেশ সাহা
রক্ষীবাহিনীর সত্য-মিথ্যা: আনোয়ার উল আলম
দ্য ট্রায়াল অব হেনরি কিসিঞ্জার: কিস্টোফার হিচেন্স