মুহম্মদ শফিকুর রহমান :
আজো চোখের সামনে ভেসে ওঠে সেই ১৪-১৫ আগস্টের মধ্যরাতের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসের কর্ম তৎপরতা। পরদিন জাতির পিতা আসবেন ক্যাম্পাসে। তাঁকে ধীরোচিত সম্বর্ধনা দেয়া হবে। মুজাহিদুল ইসলাম সেলিমসহ ডাকসু নেতৃবৃন্দের পাশাপাশি শেখ কামাল ছাত্রলীগ কর্মীদের নিয়ে ক্যাম্পাস সাজানোর কাজে অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন। আমার দায়িত্ব ছিল প্রস্তুতির শেষ পর্যায়ের খবরটি ইত্তেফাক-এ পাঠিয়ে বাসায় চলে যাবার। বলা বাহুল্য তখন ইত্তেফাকে-এ কাজ করছি। এক পর্যায়ে শেখ কামালকে দেখলাম তাঁর সেকেন্ড হ্যান্ড খোলা জীপটি চালিয়ে চলে গেলেন। কোথায় গেলেন জানতে পারলাম না। তবে অল্প সময়ের মধ্যেই ফিরে এলেন।পাশে তাঁর নবপরিমীতা স্ত্রী আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ক্রিড়াবীদ সুলতানা কামাল। তারপর আমি ইত্তেফাক-এ সর্বশেষ ডেভেলপমেন্টের ওপর কয়েকটি লাইন লিখে আমার নারিন্দার বাসায় চলে গেলাম। তখন রাত ১ টার মত।ভোরে আমার মরহুম ছোটচাচা আব্দুর রশীদ (ব্যাংকার) এর ডাকে ঘুম ভেঙ্গে গেল। একই বাসায় থাকতাম। চাচা সুবহে-সাদেকের আগেই ঘুম থেকে ওঠে তাহাজ্জুদের নামাজ, ভেতর এবং ফজর পড়ে রেডিও শুনতেন। সেদিন রেডিও নব ঘোরাতেই শোনা গেল বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করা হয়েছে। ঘুম থেকে ওঠালেন জানালেন সম্ভবত ও বাড়ির কেউ বেঁচে নেই। আমিও রেডিওর কাছে গেলাম, শোনলাম খুনী মেজর ডালিম বলছে- “শেখ মুজিবকে হত্যা করা হয়েছে, সারা বিশ্বে কারফিউ জারী করা হল”। সে বলতে চেয়েছিল “সারাদেশে” উত্তেজনায় বলে ফেলে “সারা বিশ্বে”কী করব বুঝতে পারছিলাম না।
তখনো কালিভোর। আকাশও পরিষ্কার নয়। চাচা বললেন এ সময় বাড়ি থেকে বেরিয়োনা। তবু আমি কাপড় পরে তৈরী হলাম। ধীরে ধীরে প্রকৃতি আলো ছড়াতে লাগল। আমি আমার এক্রিডিটেশন কার্ড এবং স্ত্রীর কাছ থেকে কিছু পয়সা নিয়ে বেরিয়ে পড়লাম। ইত্তেফাক-এ গিয়ে দেখলাম পুলিশ-মিলিটারী। জাতীয় প্রেস ক্লাবের দিকে চলে গেলাম। সেখানেও দেখলাম ফাকা। তবু বসে থাকলাম অনেকক্ষণ। ঘন্টাখানেক পর আবার রিক্সায় উঠলাম কিন্তু ক্যাম্পাসের ভেতর দিয়ে যেতে সাহস পেলাম না। শহীদ মিনার হয়ে সলিমুল্লাহ হলের পাশ দিয়ে নিউ মার্কেট হয়ে মীরপুর সড়ক দিয়ে এগোতে থাকলাম। সায়েন্স ল্যাবরেটরীর মোড়ে আর্মি কর্তৃক বাধাপ্রাপ্ত হলাম। বললাম দৈনিক ইত্তেফাক পত্রিকার রিপোর্টার, এই আমার এক্রিডিটেশন কার্ড। তারা কিছু বললনা। হাত দিয়ে আমাকে ফেরত যেতে বলল। আমি একই পথ দিয়ে ফিরে এলাম ইত্তেফাক-এ। দেখলাম দিনের কাগজ বের হয়নি। অফিসেও গেলাম না, কেবল রিক্সায় বসে সড়কে সড়কে ঘুরতে থাকলাম। মানুষ গলি-গুপছি থেকে উকি মেরে সড়কের দিকে তাকাচ্ছে। কেউবা অতি সন্তর্পনে হেটে যাচ্ছে সড়ক ধরে।
আমার সেদিনের অভিজ্ঞতা হল এক শ্রেণির মানুষ ২/৫ জন জড়ো হয়ে আলাপ-আলোচনা করছেন। আরেক শ্রেণির মানুষের চোখে-মুখে আতংক। মনে হয়েছে তারা ভয় পাচ্ছে এই বুঝি প্রতিরোধ শুরু হবে, রাজপথ জনতায় ভরে যাবে। মূলত সেদিনের অবস্থা ছিল কেউ একজন রাজপথে নেমে প্রতিরোধের ডাক দিন তারপর আমরা নামব। কিন্তু আমরা সবাই এ ক্ষেত্রে চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছি। বাসায় ফিরে যেয়ে রেডিও-তে জানতে পারলাম বঙ্গবন্ধুর ৩২ নম্বরের বাস ভবনে কেউ জীবিত নেই। পরে এও জেনেছি আর্মি ৩২ নম্বরের বাড়িতে প্রবেশ করলে প্রথমে শেখ কামাল বেরিয়ে আসেন প্রতিরোধ করতে কিন্তু ঘাতকরা ঐ মুহুর্তেই শেখ কামালের বুক ঝাঝরা করে দেয় ব্রাশ ফায়ারে। বঙ্গবন্ধু সিড়ি বেয়ে নিচে নামতে গেলে তাঁকে গুলী করলে সিড়িতে লুটিয়ে পড়ে বাংলাদেশের জীবন্ত স্ট্যাচু অব লিবার্টি।
পরে আরো জেনেছিলাম খুনীরা বঙ্গবন্ধুর আগে তার ভাগ্নে যুবনেতা শেখ ফজলুল হক মনিকে অন্তসত্তা স্ত্রী আরজু মনিকেও খুন করে। আর সবতো জেলে। কে ডাক দেবে। সত্যি কথা কী আমার মত তথাকথিত বঙ্গবন্ধুর সৈনিকরা রাজপথে নেমে ডাক দিলেও শতশত মানুষ নেমে আসতো। তারই ধারাবাহিকতায় আমরা একটা প্রতিরোধ রচনা করতে পারতাম। আমাদের সেই সাহস হলনা। পরে জানলাম বেঁচে আছেন শুধু বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যা শেখ হাসিনা (আজকের প্রধানমন্ত্রী) ও শেখ রেহানা। তারা দুজন অল্প কয়েকদিন আগে জার্মানীতে বেড়াতে যান। জার্মানীতে পোষ্ট ডক্টরাল রিসার্চরত শেখ হাসিনার স্বামী প্রখ্যাত অনুবিজ্ঞানী ড. এম. ওয়াজেদ আলী মিয়ার কাছে। আরো জেনেছি বঙ্গমাতা বেগম ফজিলাতুন্নিসা সর্বকনিষ্ঠ সন্তান শেখ রাসেলকে (৯) বুকের ভেতর লুকিয়ে রেখে কাকুতি মিনতি করেছেন। দেশদ্রোহী ঘাতক কর্নেল রশীদ, কর্নেল ফারুক, মেজর হুদা, মোসলেম উদ্দিনের মত হিংস্র পশুর দল তাদের দুজনকে ওয়াশ রুমে নিয়ে এক সঙ্গে ব্রাশ ফায়ার করে হত্যা করে।
আজ ৫ আগস্ট বঙ্গবন্ধুর জ্যেষ্ঠপুত্র (পাঁচ সন্তানের মধ্যে দ্বিতীয় এবং তিন ভাইয়ের মধ্যে প্রথম) বীর মুক্তিযোদ্ধা টগবগে মেধাবী তরুন এবং অনেক গুনে গুণান্বিত শহীদ শেখ কামালের ৭৪ তম জন্মদিন- আমাদের মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর দুই বছরের ছোট। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান মাত্র ৫৫ বছর বেঁচেছিলেন এবং তারুন্যেই জাতীয় নেতা এবং ৪০ বছর বয়সেই হাজার বছরের শ্রেষ্ঠ বাঙালি এবং বিশ্বের অন্যতম বিপ্লবী নেতা হিসেবে অবির্ভূত হন। শেখ কামালও ২৫ বছর বয়সেই বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের পর পাশাপাশি শিক্ষা-সংস্কৃতি-রাজনীতিতে চির তারুণ্যের প্রতীক হিসেবে বাংলার কোটি কোটি তরুন যুবার আইকন হেসেবে অবির্ভূত হন।
শেখ কামাল অর্থ সম্পদ গড়ার দিকে কখনো নজর দেননি। কোন লোভ ছিলনা বরং একটি সুশীল চৌকস অগ্রগামী জাতি নির্মাণে অতি অল্প বয়স থেকেই কাজ শুরু করেন। নিজে ক্রিকেট, ফুটবল খেলতেন গিটার বাজাতেন। বড় বোন প্রধানমন্ত্রীসহ ছায়ানটের ছাত্র ছিলেন।
স্বাধীনতার পর নতুন জাতি নতুন দেশ। তার চাহিদাও অনেক। শেখ কামাল বেছে নেন তরুণ প্রজন্ম গঠনে:
১) খেলাধুলার লক্ষ্যে তিনি আবাহনির মতো আধুনিক ফুটবলের প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
২) নিজে গিটার বাজাতেন ছায়ানটের ছাত্র ছিলেন ঐ সময় আমাদের ঢাকায় আধুনিক যন্ত্রসঙ্গীত ও পপ গানের আধিক্য ছিল। শেখ কামাল সব নামকরা শিল্পীদের নিয়ে স্পন্দন শিল্পীগোষ্ঠী নামে একটি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন।
৩) সেলিম অলদ্বীন, নাসিরুদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, ম. হামিদ, আসাদ প্রমুখ নাট্যজনের সাথে নিজে অভিনয় করেছেন। যতদূর মনে পড়ে টিএসসিতে আল মনসুরের একটি নাটক মঞ্চস্থ হচ্ছিল সলিমুল্লাহ হলের পক্ষ থেকে। এই নাটকে ৭৪ এর দুর্ভিক্ষের উপর একটি ভূখ মিছিল ছিল এবং শেখ কামাল ছালার বট পরে সানকী হাতে সেই ভূখ মিছিলে নেতৃত্ব দেন টিএসসির মঞ্চে। (স্মরণ রাখা দরকার তখন বঙ্গবন্ধু রাষ্ট্র ক্ষমতায়)। এইভাবে নাটকের উন্নয়নেও তিনি ঢাকা থিয়েটার নামে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন (ভুল হলে ক্ষমা করবেন এবং সংশোধন করে দিলে কৃতজ্ঞ থাকব)।
৪) এইভাবে শেখ কামাল চেয়েছিলেন খেলাধুলা এবং সাংস্কৃতিক চর্চার মাধ্যমে রাজনৈতিক অঙ্গনে দেশপ্রেমিক কর্মী বাহিনীর সৃষ্টি করা। টগবগে মেধাবী তরুণ চৌকস স্পোর্টসম্যান ও স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠীর সংগঠক নাট্যজন এবং নাট্য সংগঠক সংগীতপ্রেমী ও সংস্কৃতি সংগঠক উদ্যমী রাজনৈতিক কর্মী এবং এইসব গুণের সাথে পারিবারিক ঐতিহ্য ও আভিজাত্য এক পরিপূর্ণ যুবা। জাতির প্রয়োজনে বীর মুক্তিযোদ্ধা। এত কিছুর পরও অত্যন্ত সাদামাটা জীবন। কোন হাইফাই ছিল না। প্যান্ট শার্ট এবং সেন্ডেল পরে ক্যাম্পাসে আসতেন। কখনো শার্ট ইন করতেন না। তিনি ছাত্রলীগ করেছেন কিন্তু বঙ্গবন্ধুর সন্তান হিসেবে বড় পদে বসতে পারতেন, বসেননি, শেষের দিকে কেন্দ্রীয় কমিটির একজন সদস্য হয়েছিলেন।
আজও চোখ বন্ধ করলে তার মুখ,ছবি সামনে ভেসে ওঠে- টল উজ্জ্বল শ্যামলা গায়ের রং, ঘন কালো ব্রাশ করা চুল, মোটা গোপ, মোটা কালো ফ্রেমের চশমা, মেদহীন পাতলা শরীর, হলেও আর দশটি তরুণের চেয়ে আলাদা ব্যক্তিত্বের অধিকারী। প্রাণোচ্ছল মেধাবী, উদ্যামী, পরিশ্রমী, দক্ষ সংগঠক এবং সৃষ্টিশীল। সরাসরি মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী সাহসী মুক্তিযোদ্ধা। স্বাধীনতার পর এত বড় ক্ষমতার ছত্রছায়া অর্থাৎ পিতার রাষ্ট্রক্ষমতা থাকা সত্ত্বেও যে তরুণ কেবল ছাত্র সংগঠন বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সদস্য হয়েছেন। ইচ্ছে করলে বড় কোন পদে যেতে পারতেন। তা নেননি। এটাই ছিল এই পরিবারের স্বাতন্ত্র শিক্ষা, কালচার। মনে পড়ছে, সম্ভবত ১৯৭৪। লাইব্রেরির পেছনে শরীফ মিয়ার ক্যান্টিন। ভদ্রলোক টিপিক্যাল ঢাকাইয়া ভাষায় কথা বলতেন। আমরা তার ওখানে চা-সিঙ্গারা খেতাম। একদিন ঢুকে দেখি ছালার চট পরা কবি সাফদার সিদ্দিকীও চা খাচ্ছে। আমাকে চিনত কবি নির্মলেন্দু গুণ, রফিক আজাদ, মহাদেব সাহা, আবুল হাসান, সেলিম আল-দীন, আখতারুন্নবীদের (কবি ও লেখক) সঙ্গে আমার সখ্যতা ছিল। এক পর্যায়ে সাফদার বঙ্গবন্ধু ও তার পরিবার সম্পর্কে খুব আপত্তিকর কিছু মন্তব্য করল। তাকিয়ে দেখলাম ছাত্রলীগের কিছু কর্মী কথাগুলো শোনার সঙ্গে সঙ্গে বড় বড় চোখ করে তাকাচ্ছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে বললাম, সাফদার কথাটি উইড্র করো। সে করল না, তখন আমি ওর হাত ধরে বেরিয়ে যাচ্ছি এমন সময় আমার চেনা এক ছাত্রলীগ কর্মী দৌড়ে এসে সামনে দাঁড়িয়ে বলল, শফিক ভাই, ওকে আমাদের হাতে ছেড়ে দিন। ভালো করে গাঁজা খাওয়াব। বললাম, দ্যাখো ও কবি, কবিরা গাঁজা খেয়ে কত কিছু বলে, ও ধরতে নেই। আমি ওকে নিয়ে লাইব্রেরির পুর্ব পাশে এসে একটা রিকশা ডাকলাম এবং হাতে ১০টা টাকা দিয়ে বললাম, এই পথে চলে যাও, আজ আর ক্যাম্পাসে এসো না। আমি কলাভবনের দিকে চলে আসি। কিছুক্ষণ পর কবি রফিক আজাদ ও কবি মহাদেব সাহা এসে বললেন, ছাত্রলীগের ছেলেরা সাফদারকে ধরে নিয়ে গেছে। মাথা কামিয়ে ক্যাম্পাসে ঘোরাবে এবং গাঁজা খাওয়াবে। আমি তাদের সঙ্গে যেতে যেতে দেখলাম বন্ধুবেষ্টিত শেখ কামাল, কলা ভবনের গাড়ি বারান্দায়। কামালকে ঘটনাটা বললাম। শোনে সঙ্গে সঙ্গে বলল চলুন, কামাল সরাসরি ওদের ভিড় থেকে সাফদারকে হাত ধরে বের করে নিয়ে এলো এবং ওকে গাড়ির পেছনে এবং আমাকে ড্রাইভিং সিটের পাশে বসিয়ে স্টার্ট করে বলল, কোথায় যাবেন? বললাম প্রেস ক্লাবে নামিয়ে দাও। কামাল তাই করলেন। গাড়ি থেকে নামিয়ে সাফদারের হাতে কিছু টাকা গুঁজে দিয়ে বললেন, দু’তিনদিন আর ক্যাম্পাসে যাবেন না। নোটটা ভালো করে দেখিনি, পঞ্চাশও হতে পারে, একশ’ও হতে পারে। টাকাটা হাতে দিতে দিতে বললেন, এত সুন্দর কবিতা লেখেন, গাঁজা খান ক্যানো?
বড় বোনের সহপাঠি হিসেবে তাকে দেখেছি দারুণ স্মার্ট আদব-কায়দা সম্পন্ন তরুণ। স্বাধীনতার পর প্রতিক্রিয়াশীল প্রতি বিপ্লবীরা যেভাবে বঙ্গবন্ধু সরকারের কুৎসা রটাচ্ছিল ঠিক একইভাবে শেখ কামাল সম্পর্কেও যা তা বানোয়াট কাহিনী প্রচার করছিল। তৎকালীন জাসদের মুখপাত্র ‘গণকন্ঠ’ পত্রিকা বা ভাসানী ন্যাপের ‘হক কথা’ এ ক্ষেত্রে জঘন্য ভূমিকা পালন করে। আমি কাজ করতাম ‘ইত্তেফাক’-এ তাতে নিউজ সেকশনের সতর্কতায়, বিশেষ করে মরহুম আসাফ-উদ-দৌলা রেজা ভাইয়ের নেতৃত্বের কারণে হার্ড নিউজ-এ গণ্ডগোল করার সুযোগ না থাকলেও সম্পাদকীয় পাতায় খন্দকার আবদুল হামিদ, আবুল মনসুর আহমদরা মুনাফিকের ভূমিকা পালন করেছে। শেখ কামালের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ ব্যাংক ডাকাতির অভিযোগ আনা হয়েছিল, এ যে কত বড় মিথ্যা তার প্রমাণ হল বাংলাদেশ ব্যাংকের বোল্ট কোন বাইরের কারো পক্ষে ভাঙ্গা সম্ভব নয়। তাছাড়া শেখ কামাল যে কেবল রাষ্ট্রের প্রধান নির্বাহী বা প্রধানমন্ত্রী বা সরকার প্রধানের ছেলে তা তো নয়, সে বাঙালি জাতি ও বাংলাদেশ রাষ্ট্রটির জন্মদাতা পিতার সন্তান, তার অর্থের প্রয়োজন পড়লে কি ব্যাংক ডাকাতি করতে হয়? অথচ এক শ্রেণির মতলববাজ মুখে মুখে কুৎসা রটিয়েছে। বিশাল হৃদয়ের বঙ্গবন্ধু এর বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেননি। সর্বশেষ দেখলাম এক ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবসে দুর্নীতির মামলায় লন্ডন পলাতক জিয়া-খালেদার ছেলে তারেক শেখ কামালের কুৎসা রটালো। শেখ কামালের পায়ের নখের সমান শিক্ষা, যোগ্যতা যার নেই, বরং দুর্নীতিবাজ চরিত্রহীন হিসেবে চিহ্নিত, সে যখন কামালকে কটাক্ষ করে তখন ওদের আসল চেহারাই ফুটে ওঠে। শেখ কামালের মধ্যে যেমন দেখেছি, তেমনি দেখছি বর্তমান প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার মধ্যেও। শেখ হাসিনা যেমন সাদামাটা জীবন-যাপন করেন তেমনি দেশের এক নম্বর পরিবারের সন্তান হয়েও শেখ কামাল ব্যবসায় নামেননি, হাওয়া ভবন-খোয়ার ভবন-ডান্ডি ডায়িং-কোকো ওয়ান টু গড়ে তোলেননি, বরং লেখাপড়া করেছেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রী অর্জনের পাশাপাশি ছাত্র রাজনীতি যেমন করেছেন (ছাত্রলীগ) তেমনি আবাহনী ক্রিড়াচক্র, স্পন্দন শিল্পী গোষ্ঠী, ঢাকা থিয়েটার ইত্যাদি প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলেন, যেগুলো আজ এত বছর পরও আধুনিক স্পোর্টস, সঙ্গীত এবং নাটাঙ্গনে নেতৃত্ব দিয়ে চলছে। বস্তুত ‘ঝরসঢ়ষব ষরারহম যরময ঃযরহশরহম’ বঙ্গবন্ধু পরিবারে চর্চা হতো বলেই তাদের মধ্যে নিজের সুখ-স্বাচ্ছন্দের পরিবর্তে দেশ ও জাতির স্বার্থ প্রাধান্য পেয়েছে।
পাঠক শেখ কামাল-এর মত আর কে আছে? এখন পর্যন্ত জন্মই নেয়নি। কোথায় শেখ কামাল আর কোথায় তারেক। চক্রান্তকারীরা কি হাওয়া ভবন আর খোয়াব ভবনের ব্যভিচার এত সহজে ভুলিয়ে দিতে পারবে? বস্তত যারা বঙ্গবন্ধুর মত শেখ হাসিনাকেও সরিয়ে দিতে চায় তারা যেমন বঙ্গবন্ধুর সাদা পাঞ্জাবিতে কোন কালো দাগ লাগাতে পারেনি তেমনি শেখ হাসিনার পোশাকেও কোন দাগ লাগাতে পারেনি। তাই কামাল-এর বিরুদ্ধে নানান কুকথা ছড়ানোর চেষ্টা করছে। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীও দুদিন আগে বলেছেন বঙ্গবন্ধুর মত তাকে এবং তার সরকারকে সরিয়ে দিতে খুনি চক্র আজও তৎপর। আর সে কারণেই বঙ্গবন্ধুর হত্যার পেছনের কুশীলবদের মুখোশ উন্মোচনে উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন তদন্ত কমিশনের দাবি উঠেছে।
লেখক- সংসদ সদস্য ও এডভাইজার এডিটর, দৈনিক পথে প্রান্তরে