তাপস হালদার
শেখ রেহানা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের কনিষ্ঠ কন্যা ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রী দেশরত্ন শেখ হাসিনার আদরের ছোট বোন। তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে অংশগ্রহণ না করেও নীরবে নিভৃতে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। তিনি মা বেগম ফজিলাতুন্নেছা মুজিবের যোগ্য উত্তরসূরী। মা যেমন পর্দার আড়ালে থেকে জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুকে সাহস ও অনুপ্রেরণা জুগিয়েছিলেন,যার কারণে শেখ মুজিব থেকে বঙ্গবন্ধু হতে পেরেছিলেন। ঠিক তেমনি পর্দার অন্তরালে থেকে বড় বোন শেখ হাসিনাকে অনুপ্রেরণা জুগিয়ে যাচ্ছেন। যার কারণে শেখ হাসিনা বাংলাদেশের আলোকবর্তিকা হয়ে উঠেছেন।
শেখ রেহানা প্রথম রাজনীতির মঞ্চে আবির্ভূত হন সুইডেনের রাজধানী স্টকহোমে ১০ মে ১৯৭৯ সালে। বঙ্গবন্ধুকে হত্যার প্রতিবাদে সর্ব ইউরোপীয় বাকশালের আহ্বানে শেখ হাসিনাকে প্রধান অতিথি হিসেবে আমন্ত্রন জানানো হয়েছিল, কিন্তু ভারত থেকে সুদূর সুইডেনে যোগদান সম্ভব না হওয়ায় তখন আয়োজকদের অনুরোধে বড় বোন শেখ হাসিনার পরামর্শে শেখ রেহানা সম্মলনে অংশগ্রহণ করেন। এবং শেখ হাসিনার প্রেরিত বানী পাঠ করেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনে বিশ্ববাসীর কাছে তিনিই প্রথম বঙ্গবন্ধু হত্যাকান্ডের বিচারের দাবি তোলেন। সেদিন ইউরোপের বিভিন্ন দেশের রাষ্ট্রপ্রধান, জাতিসংঘের মহাসচিব, জাতিসংঘের হিউম্যান রাইটস কমিশনের চেয়ারম্যান, আমেরিকার কংগ্রেসের হিউম্যান রাইটস কমিটির চেয়ারম্যান, এ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক মানবাধিকার সংগঠনের প্রধানের কাছে বঙ্গবন্ধু ও জাতীয় চার নেতার হত্যার বিচারের প্রশ্নে বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি করার অনুরোধ জানিয়েছিলেন। এছাড়াও শেখ রেহানা লন্ডনে অবস্থানরত বাঙালি কমিউনিটির সাথে বিভিন্ন ভাবে যুক্ত থেকে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচারের দাবিতে জনমত গড়ে তোলেন। ইউরোপের বিভিন্ন দেশে এই দাবি নিয়ে সরকার ও রাজনৈতিক দলগুলোর সাথে বৈঠক করেছেন। শেখ রেহানা আওযামী লীগের কোনো পদধারী নেতা না হলেও দলের যেকোনো সংকটে এগিয়ে এসেছেন। ২০০৭ সালে যখন ১/১১ সরকার শেখ হাসিনা মিথ্যা মামলায় গ্রেফতার করে তারপর দলের মধ্যে অস্থিরতা শুরু হয় সিনিয়র নেতাদের সংস্কার প্রস্তাবে দল ভাঙ্গনের উপক্রম হলে, তখন এগিয়ে আসেন শেখ রেহানা,দলকে ভাঙ্গনের হাত থেকে রক্ষা করেন। এবং শেখ হাসিনার মুক্তিকে তরান্বিত করতে আন্তর্জাতিক মহলে লবিং করে ১/১১ সরকারের বিরুদ্ধে চাপ তৈরি করেন।
বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাই অসহায় মানুষের কল্যানে ছুটে আসেন। মাঝে মাঝে বড় বোন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কন্ঠে ছোট বোন শেখ রেহানার প্রশংসার কথা প্রায়ই শুনতে পাই । যখন রোহিঙ্গারা মায়ানমারে চরম নির্যাতনের শিকার হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয়ের জন্য সীমান্তে অপেক্ষা করছিলো তখন শেখ রেহানার পরামর্শে বাংলাদেশ সীমান্ত খুলে দিয়েছিলেন সরকার প্রধান শেখ হাসিনা। এ প্রসঙ্গে শেখ হাসিনা বলেন,আমি যখন সিদ্ধান্তহীনতায় ছিলাম তখন রেহানা বললো,আপা তুমি যদি ১৬ কোটি মানুষকে খাওয়াতে পারো তাহলে ১১ লক্ষ অহায় মানুষকেও খাওয়াতে পারবে। বৈশ্বিক করোনা মহামারির সময় যখন বিভিন্ন শ্রেনী পেশার মানুষকে সহযোগিতা করছিলো সরকার তখন রিক্সার আলপনাকারীদের কথা স্মরণ করিয়ে দেন শেখ রেহানা। এরকম ছোট বড় আরো অনেক উদাহরণ আছে।
শেখ রেহানা একজন রত্নগর্ভা ‘মা’। বড় মেয়েকে বৃটেনের রাজনীতি প্রতিষ্ঠিত করছেন। টানা দু-বার লেবার পার্টি থেকে এমপি নির্বাচিত হয়েছেন।ছেলে রেজওয়ান সিদ্দিক ববি আওয়ামী লীগের গবেষণা কাউন্সিল সিআরআই এর সাথে যুক্ত। সিআরআইকে একটি আন্তর্জাতিক মানের গবেষণা প্রতিষ্ঠান তৈরিতে তিনি মুন্সিয়ানার পরিচয় দিয়ে যাচ্ছেন। ছোট মেয়ে আজমিকা সিদ্দিক রুপন্তি লন্ডনে গে¬াবাল রিস্ক অ্যানালাইসিস হিসেবে কাজ করছেন। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় ও সায়মা ওয়াজেদ পুতুলকেও মানুষ করতে তিনি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন। কারণ তিনি বড় বোনকে বলতেন,‘তুমি রাজনীতিটা করো,দেশের জন্য কাজ করো,আমি ছেলেমেয়েদের দেখা শুনা করি।’ আজ শেখ হাসিনার সন্তানরা শুধুমাত্র বাংলাদেশ নয়,আন্তর্জাতিক বিশ্বেও সুপ্রতিষ্ঠিত। সজীব ওয়াজেদ জয়ের কারণে বাংলাদেশ আজ ডিজিটাল হয়েছে। অন্যদিকে সায়মা ওয়াজেদ পুতুল অটিজম ধারণাকে সুপ্রতিষ্ঠিত করেছেন। এ কাজের জন্য জাতিসংঘ সহ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থা থেকে পেয়েছেন সম্মাননা। এসব কৃতিত্বের পেছনে রয়েছে শেখ রেহানার অবদান। মানুষের জন্য কাজ করা বঙ্গবন্ধু পরিবারের স্বভাবজাত ধর্ম। নিজেরদের পৈত্রিক ভিটা ঐতিহাসিক ধানমন্ডির ৩২ নম্বর বাড়িটি জনগনের কল্যানে দান করে দেন। শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা’র যৌথ প্রচেষ্টায় একটি ট্রাস্টি বোর্ড গঠন করা হয়। ১৯৯৪ সালের ১৪ আগস্ট এই ট্রাস্টি বোর্ড ধানমন্ডির ৩২ নম্বরের বাড়িটিকে ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান স্মৃতি জাদুঘর’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয়। এই ট্রাস্টি থেকে দেশের হাজার হাজার গরিব মেধাবী ছাত্ররা বৃত্তি নিয়ে পড়ালেখা করে সমাজকে আলোকিত করে যাচ্ছে।
ব্যক্তিগত জীবনেও মহানুভবতার অনেক উদাহরণ রেখেছেন শেখ রেহানা। ২০০১ সালে জাতির পিতার কন্যা হিসেবে শেখ রেহানার নামে ধানমন্ডির ছয় নম্বর রোড়ের একুশ নম্বর বাড়িটি সরকার বরাদ্দ দেয়। তিনি বাড়িটি সরকারের ধার্যকৃত টাকা পরিশোধ করলেও পরবর্তীতে খালেদা জিয়া প্রতিহিংসা পরায়ন হয়ে বাড়িটি ধানমন্ডি থানাকে বরাদ্দ দেয়। এবং খালেদা জিয়া নিজে গিয়ে সেটি উদ্বোধন করেন।পরবর্তীতে শেখ রেহানা আইনি লড়াইয়ে বাড়িটি ফেরত পেলেও সেই বাড়িতে তিনি আর উঠেন নি। তিনি এ প্রসঙ্গে বলেন,যেহেতু বাড়িটি থানা হিসেবে জনকল্যাণে ব্যবহৃত হচ্ছে সেজন্য থানা হিসেবেই থাকবে।
শেখ রেহানা দেশের কল্যানে সব সময় কাজ করে যান। এজন্য কোন ক্ষমতার লোভ তাঁকে স্পর্শ করেনি।এ প্রসঙ্গে শেখ রেহানা এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কোন ক্ষমতাই বঙ্গবন্ধুর সন্তানদের বদলাতে পারে না। আমরা মধ্যবিত্ত পরিবারের সন্তান। জনগনের মধ্য থেকে তৃণমূল থেকে রাজনীতি করে আমার বাবা হয়েছিলেন বঙ্গবন্ধু,বাংলাদেশ নামক রাষ্ট্রের জনক। আমরা সেই বঙ্গবন্ধুর সন্তান,জনগনের মধ্যে এখনও আমরা খুঁজে ফিরি আমাদের মা-বাবা ও পরিবারের সদস্যদের, সেই জনগনের ভালোবাসা নিয়ে জীবনের বাকি সময়টুকুও পাড়ি দিতে চাই। আমাদের জীবনের সবচেয়ে বড় পাওয়া আমরা বঙ্গবন্ধুর কন্যা। এই লন্ডনেও যখন রাস্তায় বের হই,তখন দেখি বিভিন্ন বর্ণের অনেকেই বঙ্গবন্ধুর কন্যা হিসেবে সম্মান করছে। সঙ্গে নিয়ে একটি ছবি তুলতে চাইছে।এর চেয়ে বড় পাওয়া আমাদের আর কি হতে পারে।’
প্রচারবিমুখ শেখ রেহানা কখনো সামনে আসেন না,কিন্তু অন্তরালে থেকে নিরলস ভাবে দেশের জন্য কাজ করে যাচ্ছেন। বড় বোন শেখ হাসিনাাকে শক্তি সাহস জুগিয়ে যাচ্ছেন। ১৩ সেপ্টেম্বর বাঙালির এই মহিয়সী নারীর জন্মদিন। শুভ জন্মদিনে জানাই বিনম্র শ্রদ্ধা। এবং প্রার্থনা করি তিনি দীর্ঘজীবী হোন।
লেখক: সাবেক ছাত্রনেতা ও সদস্য,সম্প্রীতি বাংলাদেশ