স্বদেশ রায়
দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের শেষ প্রান্তিকে এসে সুভাষ বসু পূর্ব এশিয়া থেকে স্লোগান তুলেছিলেন, “দিল্লি চলো”। সেদিন তিনি দিল্লি পৌঁছাতে পারেননি। তবে যে সেনাবাহিনীকে তিনি দিল্লিতে বিজয় নিশান ওড়ানোর জন্যে আহ্বান করেছিলেন, উদ্বুদ্ধ করেছিলেন, তাদের অনেকে বন্দি অবস্থায় দিল্লি পৌঁছেছিলেন। তাদের দিল্লি পৌঁছানোকে কেন্দ্র করে ওই সময়ের ভারতের অসুস্থ রাজনীতিতে ও স্বাধীনতা সংগ্রামে বেশ জোর একটা ধাক্কা লেগেছিল। তবে তাতে পরিবর্তন খুব কিছু হয়নি। কারণ, তারপরে ভারতবাসী ভারতবর্ষজুড়ে খুব জোশে সাম্প্রদায়িক দাঙ্গা করেছিল। ভূখণ্ডকে টেবিলে বসে কেটে ভাগ করে ধর্মের নামে দুটো রাজত্ব তৈরি হয়েছিল। আধুনিক স্বাধীন দেশ যাকে বলে তা হয়নি। কারণ, কোনও আধুনিক স্বাধীন দেশে কোনও মানুষ সংখ্যালঘু হয় না। যখন কোনও দেশে মানুষ সংখ্যালঘু হয়, তখন ওই দেশ কোনও আধুনিক স্বাধীন দেশ নয়। ওটা একটি গোষ্ঠী শাসিত ভূখণ্ড মাত্র। মধ্যযুগে ডাকাতেরা যা করতো– তার থেকে ভিন্ন কিছু নয়। কোনও দেশের স্বাধীনতার ফলে কোটি কোটি মানুষকে নিজ বাস্তুভিটা হারাতে হয় না। যখন মানুষকে বাস্তুভিটা হারাতে হয় তখন বুঝতে হয় নতুন কোনও ডাকাত এসে তাদের এলাকা দখল করেছে। কোনও স্বাধীন দেশে সাদাত হাসান মান্টোকে ধর্মের কারণে দেশত্যাগ করতে হয় না। মারা যেতে হয় না অবহেলায়। পৃথিবী কখনোই দুজন মান্টোর জন্ম দিতে পারে না। পৃথিবীতে একবারই একজনই মান্টো জন্মে। তাই যে স্বাধীনতার তথাকথিত সুফল (!) হিসেবে একজন মান্টোকে দেশত্যাগ করে অবহেলায় মারা যেতে হয়, তাকে আর যাই হোক, নির্বোধ ছাড়া কেউ স্বাধীনতা বলতে পারবে না।
খণ্ডিত ভারতের এই স্বাধীনতার ৭৫ বছর পরে ও সুভাষ বসুর বিমান দুর্ঘটনায় মৃত্যু বা অন্তর্ধানের ৭৭ বছর পরে, যে দিল্লিতে তিনি বিজয়ী বেশে আসতে চেয়েছিলেন, সেখানে তাঁর মূর্তি স্থাপিত হয়েছে। তার ১২৫তম জন্মবার্ষিকীতে। এ ইতিহাসের এক অমোঘ প্রত্যাবর্তন। তবে এও সত্য, সুভাষ বসুর এই মূর্তি স্থাপন করেছে ভারতের বর্তমান ক্ষমতাসীন ধর্মীয় মতাবলম্বী রাজনৈতিক দল বিজেপি। তারা তাদের রাজনীতির শুরুতে কখনও সুভাষ বসুর খোঁজ নেয়নি। এমনকি তাদের রাজনীতির উত্থানের দিনেও নয়। তাদের রাজনীতির উত্থান ঘটেছে তাদের মতো করে সৃষ্টি করা এক রামের জন্মভূমিকে কেন্দ্র করে। আজ তাদের রামের বীরত্বে কুলাচ্ছে না। এমনকি খণ্ডিত ভারতের ওই ভারত নামের অংশটুকুর এখন সত্যি অর্থে রামায়ণের রামের বা মহাভারতের অর্জুনের বীরত্বে কুলাচ্ছে না। কারণ, এ মুহূর্তে তাদের দেশের রাজনীতির অন্যতম বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে দেশটির প্রতিরক্ষা। চীনের মতো একটি উঠতি সামরিক ও অর্থনৈতিক পরাশক্তি যখন তার প্রতিরক্ষাতে হাত দিয়েছে তখন তার শুধু আধুনিক সমরাস্ত্র ও সামরিক বাহিনী দরকার নয়, একজন নেতাও দরকার আদর্শ হিসেবে সামনে আনা- যাকে ঘিরে আছে সামরিক আবহাওয়া ও অনেক মিথ। আধুনিক ভারতের পাঁচশত বছরের ইতিহাসে সুভাষ বসু ছাড়া এই অবস্থানটি আর কারও নেই। তাই বিজেপির বুদ্ধিমান নেতা নরেন্দ্র মোদি ঠিকই সুভাষ বসুকেই বেছে নিয়েছেন। তাঁর মূর্তি দিল্লি গেটে স্থাপন করে তিনি প্রমাণ করলেন, সঠিক সময়ে, সঠিক কাজটি তিনি করেছেন, তাদের হিসাবে। এমনকি তিনি সুভাষ বসুর জন্মদিনকে জাতীয় ‘পরাক্রম’ দিবস হিসেবেও ঘোষণা করেছেন।
বর্তমান বিশ্ব রাজনীতি যে পথে এগুচ্ছে তাতে এটা সত্য, ভারতকে এখন একটি যুদ্ধ জোটের অন্যতম দেশ হিসেবে, সামরিক শক্তি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করতে হবে। পরাক্রমশালী দেশ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। যে ইউরোপ-আমেরিকার মানবাধিকারের দিকে তাকিয়ে শান্তির ললিতবাণী ভারত একসময়ে পৃথিবীতে ছড়াতে চেয়েছিল- তা এখন অতটা যুগোপযোগী নেই। চীনের বিস্ময়কর সামরিক ও অর্থনৈতিক উত্থানের ফলে এখন আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া এমনকি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের আমেরিকা-ইউরোপের বিরুদ্ধশক্তি জাপান মিলেই গড়ে উঠছে চীনবিরোধী সামরিক ও অর্থনৈতিক জোট। এই জোটের বাইরে ভারতের নিজেকে রাখার কোনও সুযোগ নেই। আর দীর্ঘদিন শান্তির ললিতবাণী শোনানো ভারতকে এখন আগ্রাসী কোনও শক্তির হাত থেকে ভূখণ্ড বাঁচানোর নীতিতে নিয়ে যেতে হলে তার একটা রাজনৈতিক প্রস্তুতিরও দরকার। সে হিসেবে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি হয়তো মনে করছেন, বিবেকানন্দ যেমন তমসাচ্ছন্ন হিন্দু সম্প্রদায়কে রাজগুণ বা রাজসিক আচরণে নিয়ে যেতে চেয়েছিলেন, তিনিও সুভাষ বসুকে ঘিরে ভারতের জনগোষ্ঠীতে সে কাজটি করতে পারবেন। সুভাষ বসুর এই প্রত্যাবর্তন তরুণ মনে বীরত্ব জাগাবে। তাছাড়া তার দলের রাজনীতিও অনেক বেশি বাস্তব ইতিহাসে পা রাখতে পারবে।
অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে, যেখানে তাঁর সুভাষ বসুকে দরকার সেখানে তাকে প্রতিষ্ঠিত করে মি. মোদি যে সফল হয়েছেন তা কিন্তু তার বিরোধীদের আচরণ দেখে বোঝা যাচ্ছে। তার বিরোধীদের মধ্যে সব থেকে দায়িত্বশীল দল রাহুল বা সোনিয়া নেতৃত্বাধীন কংগ্রেস। তারা সুভাস বসুর এই প্রত্যাবর্তনে নিশ্চুপ। এমনকি এই প্রত্যাবর্তনে যে কংগ্রেস বাধা ছিল বলে অভিযোগ করছেন মোদি সেখানেও তারা নিশ্চুপ। অন্য ছোটখাটো রাজনীতিক বা রাজনৈতিক দলের মধ্যে দেখা যাচ্ছে, পশ্চিমবঙ্গের মমতা ব্যানার্জি, নানাভাবে মোদির এই সুভাষ বসুকে গ্রহণ করার বিপরীতে- তিনিই এটার অধিকারিণী সেই প্রমাণ করতে চাচ্ছেন। এমনকি পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরাও বলছেন, মোদি রাজনৈতিক কারণে সুভাষ বসুকে নিয়ে এমনটি করছেন। নরেন্দ্র মোদি অবশ্যই রাজনৈতিক লাভের হিসাবে সুভাষ বসুকে সামনে আনছেন বেশি করে। তবে মমতা ও পশ্চিমবঙ্গের বামপন্থীরা তো রাজনীতিতে নতুন নয়। এখন থেকে বিশ বাইশ বছর আগে বামপন্থীরা পশ্চিমবঙ্গের প্রাদেশিক ক্ষমতায় ছিলেন। মমতা তখন অন্যতম বিরোধী দল। সে সময়ের সম্ভবত ২০১০ সালের একটি ঘটনার কথা উল্লেখ করি। ২০১০ সালের ২১ জানুয়ারি মিজোরামে ছিলাম। হঠাৎ রাস্তার পাশের অনেক দেয়ালে তাকাতে দেখি, সেখানে সুভাষ বসুর ছবিসহ পোস্টার। সে বছরের আসন্ন ২৩ জানুয়ারি উপলক্ষে এই পোস্টার লাগানো হয়েছে। তারপরে মিজোরামের কয়েকজন শিক্ষকের কাছে জানতে পারি সুভাষ বসুর জন্মদিনে বেশ কিছু অনুষ্ঠান হয় এখানে। ২২ জানুযারি অসমের গুয়াহাটিতে আসি। গুয়াহাটির পুরনো বাজারের রাস্তায়ও দেখি সুভাষ বসুর জন্ম দিবস উপলক্ষে তার ছবিসহ পোস্টার। সাংবাদিক বন্ধু নভ ঠাকুরিয়া সঙ্গে ছিলেন, তার কাছে জানতে পাই সেখানে ২৩ তারিখে অনেক সংগঠন সুভাষ বসুকে স্মরণ করে। ২৩ জানুয়ারি সকাল ৮টার দিকে কলকাতায় পৌঁছে এয়ারপোর্ট থেকে গড়িয়াহাট অবধি কোথাও সুভাষ বসুর স্মরণে কোনও পোস্টার দেখি না। তখন মনে হলো, আচ্ছা, এলগিন রোডে সুভাষ বসুর বাসায় গিয়ে দেখি না সেখানে কোনও অনুষ্ঠান হচ্ছে কিনা? সকাল দশটার দিকে তার বাড়ির সামনে গিয়ে দেখি সুনসান বাড়ি। পাশের এক ভদ্রলোকের কাছে গিয়ে জানতে পাই, না, এখানে কোনও অনুষ্ঠান নেই। তাছাড়া সকাল থেকে তার স্মরণেও কেউ আসেনি। নিস্তব্ধ বাড়িটা বা জাদুঘর ঘুরে বের হতে দেখি কয়েকটি ছেলেমেয়ে। মনে করি, তারা মনে হয় সুভাষ বসুর স্মরণে এখানে এসেছে। কথা বলে বুঝতে পারি, এ বাড়ি যে সুভাষ বসুর সেটাও তারা জানে না। মমতা বা বামপন্থীদের সুভাষ বসুর জন্মদিন নিয়ে কোনও কর্মসূচিও ছিল না।
সুভাষ বসুর জন্মস্থান কলকাতা নয়, কটকে। রাজনীতি ছিল তাঁর সারা ভারতবর্ষ কেন, বার্মা অবধি জুড়ে। এমনকি গোটা পৃথিবীজুড়ে বললেও ভুল হবে না। তারপরেও বাঙালি হিসেবে শুধু নয়, তৎকালীন রাজনীতির অন্যতম কেন্দ্র হিসেবে কলকাতা ছিল তাঁর অন্যতম রাজনীতির স্থান। এই কলকাতায় সকল বাঙালিকে এক করে সুভাষ বসু তার জীবদ্দশায় কখনও রাজনীতি করতে পারেননি। আর তারপরে ২০১০-এ তাকে স্মরণ করা হবে না তাতে খুব বেশি আশ্চর্য লাগেনি। বাস্তবে এলগিন রোডে গিয়েছিলাম যতটা না সুভাষ বসুকে বাঙালি স্মরণ করে কিনা সেটা দেখতে, তার থেকে বেশি উদ্দেশ্য ছিল বাঙালি চরিত্র বোঝা। বাস্তবে জীবনের এ প্রান্তে এসে নয়, সেই তরুণবেলা থেকেই বারবার মনে হয়েছে, বাঙালি চরিত্রে কোথায় যেন কী একটা সমস্যা আছে। কখনও কখনও সে চরিত্রটাকে বাঙালির নিজস্ব কুকুর অর্থাৎ দেশি কুকুরের চরিত্রের মতো মনে হয়। নেড়ি কুত্তার সব থেকে বড় ত্রুটি হলো তাকে হাজার ভালো খাবার দিলেও সে রাস্তার পাশের মলমূত্র খেতে পছন্দ করে। সেখান থেকে তার মুখ ফেরানো কষ্ট। বাঙালিরও তেমনি একটা ত্রুটি আছে, নিজস্ব ভালোকে সে খুব সহজে ফেলে দিয়ে রাস্তার পাশের দ্রব্য খোঁজে। বাঙালির ভেতর জন্ম নেওয়া পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ মানুষটি অর্থাৎ রবীন্দ্রনাথ, তিনিও কিন্তু সকল বাঙালিকে যথাযথ মানুষের মর্যাদা দেননি। তিনি স্পষ্ট করে বলেছেন, বাঙালির মধ্যে ভুল করে দু-একজন মানুষ জন্মে যান। আসলে বাঙালির ভেতর ঈশ্বর চন্দ্র বিদ্যাসাগর, রবীন্দ্রনাথ, চিত্তরঞ্জন দাশ, সুভাষ বসু ও শেখ মুজিবুর রহমান কীভাবে জন্মান এটা একটা বড় বিস্ময়। তাই সেদিন কলকাতায় সুভাষ বসুর বাড়ি তার জন্মদিনে এমন সুনসান দেখে খুব যে বিস্মিত হয়েছিলাম তা নয়। তাছাড়া যে কলকাতায় বড় সরণিটি লেনিনের নামে সুভাষ বসুর নামে নয়, সে কলকাতায় সুভাস বসুকে নিয়ে কী-ই বা আশা করা যায়? এই কলকাতার মানুষেরা সুভাষ বসুর মতো দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামী শুধু নন, আধুনিক শিক্ষিত মানুষের রহস্যজনক মৃত্যু বা অন্তর্ধানের পরে তাকে ধর্মের মোড়কে পুরে শোলমারীর সাধু বা গুণনামী বাবা বানাতেও কম যায়নি।
আর এখানে শুধু কলকাতাকেই বা দোষ দিয়ে লাভ কী, সুভাষ বসুকে তো তার অনেক আগেই দিল্লিতেও দূরে রাখা হয়েছে। তাছাড়া রাজনীতিতে যিনি বিজয়ী নন, যিনি জীবদ্দশায় বড় সংগঠন করে রেখে যেতে পারেন না, তার মৃত্যু বা অনুপস্থিতিতে তিনি খুব বেশি টিকে থাকেন না। তাছাড়া সুভাষ বসুকে দেখা হয় বড় খণ্ডিতভাবে। অর্থাৎ পূর্ব এশিয়ার তার দুই বছরের সামরিক আন্দোলনকেই বড় করে দেখা হয়। যখন তিনি নেতাজি নামে চিহ্নিত হলেন। কিন্তু এর আগেও সুভাষ বসুর একটা দীর্ঘ জীবন ছিল। প্রায় বিশ বছরের রাজনৈতিক জীবন। প্রতিবাদী একটি ছাত্রজীবন। লেখক সুভাষ বসু। আর সেসব মিলেই সুভাষ চন্দ্র বসু। তবে প্রতিবাদী ছাত্র জীবন, লেখক জীবন, রাজনৈতিক জীবন ও পূর্ব এশিয়ায় গড়ে তোলা সামরিক বাহিনী ও তার যুদ্ধ, সব মিলে সুভাষ চন্দ্র বসুকে যতটা না বড় কৌশলী রাজনীতিক ধরা যায় তার থেকে অনেক বড় তিনি দেশপ্রেমিক ও স্বাধীনতা সংগ্রামী।
পরাধীন দেশের দেশপ্রেমিক স্বাধীনতা সংগ্রামীদের সঙ্গে সবসময়ই পার্থক্য থাকে রাষ্ট্র ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে বা দলের ক্ষমতায় যাওয়ার লক্ষ্যে করা রাজনীতিকদের মধ্যে। একজন শতভাগ বীর, আরেকজন যতটা না বীর তার থেকে কূটকৌশলী বেশি। এখন প্রশ্ন উঠতে পারে, যিনি বীর তিনি কি কৌশলী নন? তিনিও কৌশলী তবে তার কৌশলের মধ্যেও একটা প্রেম থাকে। সেখানে হিংস্রতা ও নিচুতা থাকে না। ভারতের স্বাধীনতা সংগ্রামের ভেতর দিয়ে যে ক’জন নেতা চূড়ায় উঠেছেন তাদের ভেতর সুভাষ বসুই একমাত্র যার ভেতর নিচুতা ও হিংস্রতা ছিল না। কেউ অবশ্য বলতে পারেন, এটা কেমন কথা হলো? সুভাষই তো হিংসাকে অনুমোদন করেছেন। তিনি তো বিপ্লবীদের ইংরেজ মারার পক্ষে ছিলেন। বরং এর শতভাগ বিপক্ষে ছিলেন গান্ধীজি, তিনিই বরং হিংসার বাইরে। দৃশ্যত তেমনই মনে হয়। কিন্তু বাস্তবতা হলো, যদি কেউ বা কোনও গোষ্ঠী একটি ভৌগোলিকভাবে আলাদা শুধু নয়, তার নিজ জনগোষ্ঠীকেও শোষণ করে, তাকে অস্ত্রের মাধ্যমে শাসন করে– তার বিরুদ্ধে কখনও কখনও হিংসার পন্থা অবলম্বন করা প্রয়োজন হয়। এটা যতটা না হিংসার তালিকায় গিয়ে পড়ে; তার থেকে বেশি হিংসার তালিকায় গিয়ে পড়ে যখন ধর্মের নামে, বর্ণের নামে, গোষ্ঠীর নামে রাজনৈতিক স্বার্থে একে অপরকে হত্যা করা বা নারীর শ্লীলতা কেড়ে নেওয়া হয়।
ভারতবর্ষে ধর্মের নামে যে রাজনৈতিক নরহত্যা ও মানুষ উচ্ছেদ হয়েছে, এই হিংস্রতার কালিমা একমাত্র সুভাষ বসুকে স্পর্শ করেনি। কেউ হয়তো প্রশ্ন করতে পারেন, সুভাষ চন্দ্র বসু ফিরে এলে কি এই কালিমার ঊর্ধ্বে থাকতে পারতেন? পৃথিবীতে যে ঘটনা ঘটেনি তা ঘটলে কী হতো এমনটি অনুমান করা বা এ নিয়ে জটিল জ্যামিতি তৈরি করা সবসময়ই অর্থহীন। তবে এটুকুই শুধু বলা যায়, ১৯৪৫ অবধি সুভাষ বসুর যে রাজনীতি ও সামরিক আন্দোলন তা বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ধর্মীয় উন্মাদনার রাজনীতির ধারে-কাছে তিনি নেই। এমনকি হিন্দু ঘরে জন্ম হলেও তিনি সবসময়ই রাজনীতি ও সামরিক আন্দোলন করেছেন ভৌগোলিক পরিচয়ে, কনসেপচুয়াল জাতীয়তাবাদের আদর্শে, ধর্মের পরিচয়ে নয়। এখানেও অবশ্য একটা বড় প্রশ্ন অনেকেই তোলেন, সুভাষ বসুর ওভাবে কোনও রাজনৈতিক আদর্শ ছিল না। তিনি বামপন্থী ছিলেন না, ডানপন্থীও ছিলেন না, ফ্যাসিস্টদের সঙ্গেও গেছেন আবার ফ্যাসিস্টও নন। এর উত্তর খুঁজতে গেলে বলতে হয়, বাস্তবে এভাবে তকমা এঁটে দিয়ে কোনও সেরা নেতার রাজনৈতিক আদর্শ খোঁজা যায় না। তাছাড়া স্বাধীনতা সংগ্রামীর তো নয়ই। ভারতবর্ষে এই জটিলতা তৈরি করেছেন বামপন্থীরা। তারা নিজ জাতি বা মানুষ দিয়ে শাসিত কোনও দেশের মধ্য বামপন্থী বিপ্লব আর পরাধীন দেশের বামপন্থী বিপ্লবের মধ্যে পার্থক্য রেখা টানতে পারেননি। যে কারণে তারাই সুভাষ বসুর রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে কথা বলেছেন বেশি। অথচ নিজেরা নিজের দেশের স্বাধীনতা বাদ দিয়ে সোভিয়েতের জন্যে ইংরেজদের সমর্থন করেছেন। এ কাজ কোন যুক্তিতে করেছেন তা আজও বলতে পারেন না। শুধু ওই একটি ক্ষেত্রে নয়, তাদের গোটা আন্দোলন বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, তারা আগুন নেভানো বাদ দিয়ে, পাশের নদী থেকে যে জল আনা হবে, তাকে কত লোক জল বলবে, আর কত লোক পানি বলবে এই নিয়ে সময় কাটিয়েছেন। তারা সময় কাটিয়েছেন, ঘড়ায় করে জল আনা হবে না কলসিতে করে জল আনা হবে- এমনি সমস্যাগুলো নিয়ে। সুভাষ বসু এখানে বিপ্লবী। তিনি ওসব চিন্তায় যাননি, তিনি বলেছেন, আগুন লেগেছে, চল আগুন নেভাই। যে যেমনি পারো আমার সঙ্গে এসো। তাই কেউ তার জল নিয়ে গেছে, কেউ তার পানি নিয়ে গেছে, এমনকি কেউ কম্বল নিয়ে গিয়ে আগুনে বাতাসের বাধা সৃষ্টি করেছে। সুভাষ বসু সেসবের গাণিতিক বিশ্লেষণে না গিয়ে শুধু দেখছেন, আগুন কতটা নিভলো। ভগৎ সিং বামপন্থী ছিলেন, অরবিন্দর অনুসারীরা কেউ রিভলবার ছোড়ার আগে মা কালীর নাম নিতো, কেউ বা আল্লাহর নাম নিতো। এসব নিয়ে সুভাষের কোনও প্রশ্ন ছিল না। তিনি দেখতেন, ইংরেজের ওপর আঘাতটা কতটা পড়ছে। তাই স্বাধীনতা সংগ্রামী হিসেবে সুভাষ বসুর আদর্শের কোনও ঘাটতি ছিল না; বরং অন্যের থেকে একটু প্রসারিত ছিলেন তিনি।
এখন আবার প্রশ্ন আসবে, দেশ স্বাধীন হলে তিনি কোন আদর্শে দেশ চালাতেন? এখানে একই উত্তর এসে দাঁড়ায়; যে ঘটনা ঘটেনি, অতীত হয়ে গেছে। ঘটার কোনও সম্ভাবনা নেই। তা নিয়ে জ্যামিতি তৈরি করা কি যায় সমাজবিজ্ঞানে? তাছাড়া এ এক চলমান গণিত। কারণ, উদার স্বাধীনতা সংগ্রামীকে দেখা যায় স্বাধীন দেশ পরিচালনায় এসে একপর্যায়ে তিনি স্বৈরতন্ত্রী হয়ে যাচ্ছেন। যেমন, স্পেনের হাত থেকে দক্ষিণ আমেরিকাকে মুক্ত করে বলিভার স্বৈরতন্ত্রী হয়ে গিয়েছিলেন। অন্যদিকে বর্ণবাদ নিয়ে অবস্থান ভিন্ন থাকলেও আমেরিকার ফাউন্ডিং ফাদাররা ব্যক্তির থেকে সিস্টেমকে বেশি মূল্য দিয়েছিলেন। তাই সুভাষ চন্দ্র বসুর রাজনৈতিক আদর্শ কী হতো তা হিসাব করার সত্যি অর্থে কোনও পথ নেই। প্রবাসে যে যুদ্ধকালীন সরকার তিনি গঠন করেছিলেন, তার চরিত্র দিয়ে কোনও মতেই একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের বিজয়ী নেতার রাজনৈতিক আদর্শকে খুঁজে বের করা যায় না। তবে ওই সরকারের লক্ষ যোজনেও কেউ ধর্মীয় বা বর্ণীয় সাম্প্রদায়িকতা পায়নি, কেউ নারীকে ক্ষুদ্রতার দিকে ঠেলে দেবার কোনও লক্ষণ দেখেনি।
সুভাষ চন্দ্র বসুর বিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনেও কোথাও কখনও কোনও সাম্প্রদায়িকতা, নারীকে তুচ্ছ জ্ঞান না হোক সমান নয় এমন জ্ঞান করার কোনও লক্ষণ কেউ দেখাতে পারে না। তবে একটা বিষয় বলতেই হয়, বিশ বছরের রাজনৈতিক জীবনে সুভাষ বসু খুব বেশি সফল নন। সাধারণ মানুষের আস্থায়, বিশ্বাসে, ভালোবাসায় তিনি স্থান নিয়েছেন। কিন্তু ভারতবর্ষে গান্ধীর হাত ধরে যে গ্রাম্য রাজনীতি বা ভিলেজ পলিটিক্স শুরু হয়, যেখানে রাষ্ট্রনীতির থেকে, মনুষ্যনীতির থেকে সংগঠনের ক্ষমতা সবসময়ই একজনের কাছে ধরে রাখা, মানুষকে জাত, পাত, ধর্মে নানানভাবে বিভক্ত করে রাজনীতির আসরে নিয়ে আসা- এখানে সুভাষ চন্দ্র বসু মোটেই স্বছন্দ পা ফেলতে পারেনি। তারই মতো উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত হয়েও জওয়াহেরলাল নেহরু যেখানে ওই কাদাপথে স্বচ্ছন্দ পা ফেলে গেছেন, সুভাষ বসু সেটা পারেননি। বরং ব্যর্থ হয়ে তিনি অনেকটা নিঃসঙ্গ হয়েছেন। আর এই ব্যর্থতাই ছিল তার আজাদ হিন্দ ফৌজ নিয়ে ব্যর্থ হবার একটি আতুরঘর। কারণ, দেশের স্বাধীনতার জন্যে যখন তিনি সশস্ত্র পথ ধরতে, বিশ্বযুদ্ধের সুবিধা নেবার জন্যে দেশ ছেড়ে- নিজের দেহকে বিস্ফোরিত করে সাগর পেরুলেন, তখন তিনি একা পবন নন্দন। তার সঙ্গে ঘুমিয়ে পড়া বানরজাতি ছিল না আইনত। কারণ, তিনি তখন ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেসের সভাপতি তো নয়, এমনকি সত্যি অর্থে ভারতীয় কংগ্রেসের কেউ নন, তেমনি সর্বভারতীয় কোনও সংগঠনেরও কেউ নন। তিনি শুধু আপন ক্ষমতায়, ব্যক্তিতে, গুণে নিজেকে বৃদ্ধি করতে পারেন এমন এক নেতা। সুভাষ চন্দ্র বসু বিদেশের সহযোগিতায় সামরিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন করার পথে না গেলেও তিনি রাজনৈতিক আন্দোলনের মাধ্যমে দেশ স্বাধীন হলেও রাষ্ট্র ক্ষমতার একজন বড় প্রতিদ্বন্দ্বী ছিলেন। তার প্রতিদ্বন্দ্বীরা তাই তাকে সংগঠনের রাজনীতিতেই পরাজিত করে ফেলেন ১৯৩৯ সালেই। যেদিন নির্বাচনের মাধ্যমে কংগ্রেসের প্রেসিডেন্ট পদে জিতেও গান্ধী, নেহরু, প্যাটেল ও সীতারামাইয়াদের মতো নেতাদের কূটকৌশলের কারণে সুভাষকে পদত্যাগ করতে হয়। ছাড়তে হয় ভারতীয় জাতীয় কংগ্রেস।
ওই দিনই মূলত সাংগঠনিক রাজনীতিতে হেরে যান সুভাষ চন্দ্র বসু। এবং সে খেলায় দেখা যায়, সুভাষ চন্দ্র অতি সরল সোজা একজন খাঁটি দেশপ্রেমিক মাত্র। তিনি তথাকথিত রাজনৈতিক সংগঠনের ক্ষমতা ধরে রাখা ভিলেজ পলিটিক্সের মতো নিম্নমাপের কুটিলতা সম্পর্কে একেবারেই অপরিচিত। এমনকি এই ভিলেজ পলিটিক্সের নোংরামিতে যে নিজ সংগঠনের মধ্যে এককে অপরের বিরুদ্ধে লাগিয়ে দিয়ে, নিজের জন্যে কিছু গুণ্ডা পালতে হয়, গুণ্ডা সৃষ্টি করতে হয়- এ বর্ণ পরিচয়ও তাঁর ছিল না। তৃতীয় বিশ্বের রাজনীতির এই মহৌষধ তাকে কেউ শেখায়নি। বা তিনি শিখতে পারেননি। হয়তো বা চিনতেও পারেননি অতটা নিচুতে তাকাতে না পেরে। এমনকি কংগ্রেসের সভাপতি থাকাকালীন তিনি যে আধুনিক রাজনীতি সংগঠনের মধ্যে চালু করার চেষ্টা করেছিলেন, সেখানেও তিনি ব্যর্থ হন- তাও তিনি বুঝতে পারেননি। কেউ হয়তো বলতে পারেন, ভারতীয় তৎকালীন নেতাদের নিচুতার কাছে, ক্ষুদ্রতার কাছে সুভাষ চন্দ্র বসুর শিক্ষা ও আধুনিকতা হেরে গেছে। এভাবে সুভাষ চন্দ্র বসুকে রক্ষা করা যায়। তার পক্ষে আরও কথা বলা যায়। কিন্তু সুভাষ চন্দ্র বসুকে তো ভাবতে হতো, তিনি তমসাচ্ছন্ন এক ভারতবর্ষের মুক্তিসংগ্রামী। তার সঙ্গীরা সকলে দেশমাতৃকার মুক্তিসংগ্রামী নয়। খ্যাতির লোভে, রাজনৈতিক উচ্চ পদের লোভে এখানে অনেকেই আছেন। রাজনীতি অনেকের জীবিকাও। আর রাজনীতিতে তাদেরই সংখ্যা বেশি। বিপ্লবীদের দেখে দেশমাতৃকার প্রতি আকৃষ্ট হয়ে যে তরুণরা বের হয়ে আসছে, যারা নিজের মায়ের আসনে মাটির দেশকে বসাচ্ছে- তারা সংখ্যাগুরু নয়। সংখ্যাগুরু জাত পাতের নিগঢ়ে বাঁধা, অন্ধ কুসংস্কারে ও অশিক্ষায় আক্রান্ত, গ্রাম্য টাউট ও রাজনৈতিক টাউট দ্বারা পরিচালিত গোষ্ঠী। সুভাষ বসু এদের জানতেন না। সুভাষ বসু যখন বলছেন, আমরা যখন দেশের জন্যে যুদ্ধ করবো তখন নজরুলের দুর্গম গিরি কান্তার মরু গাইতে গাইতে যুদ্ধ করবো। ততক্ষণে গান্ধীর ধর্মাশ্রয়ী রামধুনই হয়ে উঠেছে অসাম্প্রদায়িক (!) কংগ্রেসের থিম সং। এ সত্য’র খোঁজ সুভাষ বসু কেন জানতেন না সেটাও একটা বড় প্রশ্ন। তাই ভারতের রাজনীতিতে তিনি যদি ফিরে আসার সুযোগ পেতেন তিনি কী করতেন এ হিসাব করার সুযোগ নেই ঠিকই কিন্তু এই চক্রব্যুহর মধ্যে পড়ে কুরুক্ষেত্রের অভিমুন্য হয়ে গেলেও খুব দোষ দেওয়া যেতো না তাকে।
তারপরেও সুভাষ বসু অখণ্ড ভারতের পাঁচ শত বছরের ইতিহাসের সামরিক আন্দোলনের নাম। তার অন্তর্ধানের বা মৃত্যুর সাতাত্তর বছর পরেও তিনি এখন কম বেশি একটা মিথ অনেক ভারতবাসীর কাছে। আর ইতিহাসের কষ্টিপাথরে ঘষলে তিনিই একমাত্র ভারতীয় ও বাঙালি রাজনীতিক যিনি কখনই কোনও সাম্প্রদায়িক রাজনীতি করেননি। তার রাজনীতিতে কখনোই কোনও ধর্মগ্রন্থ বা ধর্মীয় নীতিকে স্থান দেননি। অথচ সাতাত্তর বছর পরে ভারতের ৭৫তম জাতীয় দিবসে তাঁর মূর্তি দিল্লি গেটে স্থাপিত হচ্ছে। এ মুহূর্তে ভারতের বাস্তবতা হলো সব দলই ধর্ম, বর্ণ, গোত্র ও জাতপাত নিয়ে রাজনীতি করছে। আধুনিক রাজনীতিতে নেই কেউই। এই আকণ্ঠ নিম্নগামিতায় নিমগ্ন ভারতের দিল্লি গেটে সুভাষ চন্দ্র বসুর মূর্তিটি খুব দ্রুতই নিঃসঙ্গ হয়ে পড়লেও তাকে অস্বাভাবিক বলা যাবে না। তবে তারপরেও এ সত্য যে সুভাষ বসুর মূর্তির স্থান দিল্লি গেটে নয়, অনেক আগেই দিল্লির লালকেল্লার সামনে হওয়া উচিত ছিল। যে দাবি উঠলেও কংগ্রেস নিজস্ব রাজনীতির স্বার্থে তা করেনি। কারণ, সুভাষ চন্দ্র বসুর সকল ব্যর্থতার পরেও এ সত্য মানতে হবে, ইংরেজের মূল শিকড়টি তিনিই কেটেছিলেন। যে ভারতীয় সেনাবাহিনী দিয়ে ইংরেজ সামরিক শাসনের মাধ্যমে শুধু ভারত নয় পৃথিবীর বহু দেশ শাসন করতো- সেই ভারতীয় বাহিনীর মর্মমূলে স্বাধীনতার ও বিদ্রোহের বীজ সুভাষ চন্দ্র বসুই প্রবেশ করিয়েছিলেন। রেগুলার সেনাবাহিনীর জন্যে এ বড় ভয়ংকর খেলা, তবে তারপরেও কখনও কখনও এ খেলা তো খেলতে হয়, স্বাধীনতার জন্যে, মানুষের মুক্তির জন্যে যেকোনও পরাধীন জনগোষ্ঠীকে। তবে সুভাষ চন্দ্র বসুর সাফল্য হলো তিনি শুধু সামরিক বাহিনীর সদস্যদের মধ্যে নয়, সিভিলিয়ানদের মধ্যেও সে যুদ্ধের আহ্বান পৌঁছেছিলেন। আর সকল সফলতা ও ব্যর্থতার হিসেবের ডালিগুলো সাজানোর পরেও এ সত্য, সুভাষ চন্দ্র বসু একজন আধুনিক মানুষ, আধুনিক নেতা। এ মুহূর্তের দিল্লিতে তার মূর্তি স্থাপিত হওয়া তাই হয়তো সীমাবদ্ধ থাকবে না শুধুমাত্র রাজনীতির লাভালাভের মধ্যে। বরং তাঁর জীবন, কাজ ও লেখা সামনে এসে আধুনিক মানবসম্পদের উৎসও হতে পারে এই একবিংশ শতাব্দীতে? বাঙালি হিসেবে তার বীরত্বের ভাগ এখনও অনেকে প্রভাব ফেলে বাংলাদেশে, ফেলেছে আমাদের ৬০-এর দশকের আন্দোলনে ও ৭১-এর যুদ্ধে। তার আধুনিকতা তার সর্বস্ব ত্যাগের আদর্শ এখনও হারিয়ে যাবার মতো নয়।
বর্তমানের লোভের রাজনীতিতে তার ত্যাগ দিল্লি থেকে আসমুদ্র হিমাচল কিছুটা হলেও কিরণ ফেলুক। কারণ, নজরুলের মতো তিনিও ভাগ হননি ১৯৪৭-এ। তিনি এখনও অখণ্ড একটি মানচিত্রের। এমনকি ছড়িয়ে আছেন আফগানিস্তান থেকে মান্দালয় অবধি। যার সবখানেই আজ ধর্মের জয়ধ্বজা। এমনি দুর্দিনে তাই তার মূর্তি ফিরে এলো। তাই তার মূর্তির সঙ্গে তার সঠিক ইতিহাস ফিরে আসা অনেক বেশি দরকার। মূর্তির সঙ্গে ইতিহাস না ফিরলে মূর্তি শুধু পাথরেই সীমাবদ্ধ থেকে যাবে। আগে যেমন ফাইলচাপা ছিলেন তিনি এখন যেন পাথরচাপা না থাকেন!
লেখক: রাষ্ট্রীয় পদকপ্রাপ্ত সাংবাদিক