Search
Close this search box.

শেখ হাসিনাই কেন পারবেন

এক রাজা ও রাজকন্যার গল্প

মীর রফিকুল ইসলাম

‘তোমারে বধিবে যে বাড়িছে সে গোকুলে’ শ্রীকৃষ্ণের জন্ম সংক্রান্ত উদ্বৃত সত্য প্রবচনটি সম্পর্কে সবাই কমবেশী ওয়াকিবহাল। তাই এর শাস্ত্রীয় ব্যাখ্যায় না গিয়ে এই প্রবচনের যে মূল শিক্ষা সে দিকে মনযোগ দেয়া যাক। শিক্ষাটি হচ্ছে, অত্যাচারীর পতন অনিবার্য এ সত্য অত্যাচারী বা অন্যায়কারী ভুলে যায় যদিও তার পতন সূত্র তার সন্নিকটেই প্রচ্ছন্ন থাকে যা তার আশপাশের অনেকের কাছেই পরিস্কার দৃশ্যমান কিন্তু অত্যাচারীর চোখে জিঘাংসার আগুন থাকায় সে তা দেখতে পায়না।

১৯৭৫ সালের পনের আগষ্ট জাতীর জনককে স্বপরিবারে হত্যার মধ্য দিয়ে অর্জিত স্বাধীনতাকে বিপন্ন করে বাংলাদেশের ইতিবাচক রাজনৈতিক ধারাকে বিপথে পরিচালিত করে জাতীয় জীবনে যে কালো অধ্যায়ের প্রবর্তন করা হয়েছিল তার যারা কুশীলব ছিল জিঘাংসার আগুনে তারা আচ্ছন্ন ছিল তাই দেখতে পায়নি বা দেখেও অনুধাবন করতে ব্যর্থ হয়েছে যে, তাদের পতন নিশ্চিত করতে সবার উপরে সর্বশক্তিমান যেমন রয়েছে তেমন মর্তে রয়েছে বঙ্গবন্ধুরই রক্তের উত্তরসুরী।

এই ইতিহাস সবাই জানে। যা সহজে সচরাচর জানা সম্ভব হয়না, তা হচ্ছে ইতিহাসের অন্তর্গত ইতিহাস। ইতিহাসের অন্তর্গত ইতিহাসই হচ্ছে প্রকৃত ইতিহাস, যে ইতিহাস কাউকে ক্ষমা করেনা। সে ইতিহাসের শিক্ষার নিকট সবাইকে সমর্পিত হতেই হয়।

এই জানা ইতিহাসের অন্তর্গত ইতিহাসটি কি ? তা হচ্ছে ‘আল্লাহর মাইর দুনিয়ার বাইর’ অর্থাৎ মানুষের সাধারণ বোধ বুদ্ধি সঞ্জাত উদ্দেশ্য ও স্বার্থ তাড়িত আচ্ছন্ন চেতনার বাইরের অনিবার্য সত্য।

বিষয়টি পরিস্কারভাবে বুঝার জন্য একটুখানি অন্তর্দৃষ্টিযোগে তা অবলোকনের দাবী রাখে। বিষয় হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুকে যখন স্বপরিবারে হত্যা করা হয় তখন তাঁর যে দু’টি এতিম সন্তান (শেখ হাসিনা ও শেখ রেহানা) ঘটনাক্রমে পৃথিবীর একপ্রান্তে বেঁচে থাকল, সেই বেঁচে থাকাটি নিশ্চিত হল কীভাবে ? সেটিতো নিশ্চিত হওয়ার কথা ছিলনা, কারণ বঙ্গবন্ধুকে তাঁর পরিবারসহ নি:শেষ করার পরিকল্পনাটি ছিল জাতীয় ও আন্তর্জাতিক নিখুত পরিকল্পনা।

হত্যা পরবর্তী সময়ে খুনীরা নিরাপদে দেশ থেকে পালিয়ে যেতে পারা, বিদেশে আশ্রয় প্রশ্রয় পাওয়া এবং তারও পরে রাষ্ট্র কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে বিদেশে নিজ দেশের প্রতিনিধিত্ব করার সুযোগ ইত্যাদি প্রমাণ করে, পুরো পরিকল্পনায় দেশীয় ও আন্তর্জাতিক পরিকল্পক গোষ্ঠী একাট্টা ছিল। যদি তাই না হতো তাহলে মানবাধিকার রক্ষার বেশধারী আন্তর্জাতিক মহল অন্তত মিন মিন করে হলেও বলত, এমন আত্মস্বীকৃত খুনী গাদ্দার বহির্বিশ্বে একটি রাষ্ট্রের প্রতিনিধিত্বের দায়িত্বে নিয়োজিত হবে আর তার সাথে জেনে শুনে অম্লান অভিব্যক্তি নিয়ে আমাদের কাজ করে যেতে হবে, এমনটিতো হওয়া উচিত নয়। কই, এমনটি তো হতে দেখা গেলো না !

আততায়ীর বুলেট যে তখন প্রবাসেই দু’বোনকে অনুসরণ করে বেড়ায়নি এমনটি বলা যায় না। কিন্তু তাঁরা দু’বোন আজও বেঁচে আছেন এবং বহাল তবিয়তেই আছেন এটাই বাস্তবতা। আর এই বাস্তবতাটুকুই হচ্ছে ইতিহাসের অন্তর্গত ইতিহাস।

শেখ হাসিনার প্রাণ নাশের অবিরাম জঙ্গি তৎপরতা, বিরোধী শিবিরের নিরন্তর পতন কামনা ও প্রচেষ্টা এমনকি রাষ্ট্রীয় প্রনোদনায় প্রাণ নাশের সর্বাত্মক আয়োজন সত্বেও কেন তিনি অলৌকিকভাবে বার বার বেঁচে যেতে পারেন? বেঁচে যাবেন বা বেঁচে থাকবেন সেই অবদি যতক্ষনে না ইতিহাসের অন্তর্গত ইতিহাসটি পরিস্কার হয়। কারণ অবস্থাদৃষ্টে এমনটিই মনে হয় যে, ইতিহাসের এই অমোঘ সত্যটি প্রকৃতি শেখ হাসিনার হাত ধরেই এগিয়ে নিবে বা পরিস্কার করবে। যদি তা-ই না হত, তাহলে এত প্রতিকুলতার মুখেও তিনি কেন টিকে থাকতে পারলেন এবং পারছেন। এবং তারই হাত ধরে বর্বরতম বঙ্গবন্ধু হত্যা, জেলখানায় তিন নেতা হত্যা মামলা এগিয়ে যেতে পারে ? এবং অব্যাহত উন্নয়ন ধারা।

 

শেখ হাসিনাই কেন পারবেন
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

 

যারা ভেবেছিল অন্যায় তাদের যত পাহাড়সম এবং পৈশাচিকই হোক না কেন তাদের ঠিকি স্পর্শ করার সাধ্য কারো নেই ! তারা ধৃত হলো, বিচারে দোষী সাব্যস্ত হল, ফাঁসিতে ঝুলে প্রায়শ্চিত্ত করল । সবচেয়ে লক্ষনীয় ও মজার ব্যপার হল, এই মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামী যারা বয়:বৃদ্ধ এবং যারা ধরা ছোঁয়ার বাইরে বিদেশে অবস্থান করছিল, আর কিছুদিন প্রবাসে কাটালেই প্রাকৃতিকভাবেই একটা দফা রফা হয়ে যেতে পারত, তারা কেউ (মহিউদ্দিন) সেখানে (নিউইয়র্কে) সুপার শপে চুরির অভিযোগে সেখানকার পুলিশ কর্তৃক আটক হয়ে বাংলাদেশে ফিরতে বাধ্য হলো, ব্যস ! জম যে তার জন্য এখানেই অপেক্ষায় ছিল।

সাজাপ্রাপ্ত আর একজন অশিতিপর বৃদ্ধ বরখাস্তকৃত ক্যাপ্টেন মাজেদ অনেকটা বিভ্রান্তের মতই সীমান্ত পার হয়ে বাংলাদেশে ঢুকে পরে এবং তারও অবস্থা তথৈবচ। এইসব অভাবনীয় ঘটনাবলি প্রমান করে, সেই অমোঘ ইতিহাসের সত্যের নিকট সবাইকে সমর্পিত হতেই হয়।

আর ইতিহাসের এই অন্ত:স্থিত অধ্যায়টি পরিস্ফুট, বিকশিত ও প্রতিয়মানতায় আসে প্রকৃতিরই আনুকুল্য বিভূষিত কারোকে আশ্রয় করে। আজো পর্যন্ত প্রকৃতির এই আনুকুল্য শেখ হাসিনার প্রতি অব্যাহত রয়েছে। আর রয়েছে বলেই এত প্রতিকুলতার বিপরীতে দাঁড়িয়ে তিনি তার মিশন নিয়ে এগিয়ে যেতে পারছেন। তাই বলাই যায়, শেখ হাসিনাই পারবেন।

তার পারার আর একটি নজির হচ্ছে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের ঘোষণা। আমি বলব, পদ্মা সেতু নির্মানের চেয়েও নির্মাণের ঘোষণাটি ছিল বেশী দু:সাহসিক ও কঠিন। কারণ বিশ্ব অর্থনৈতিক দানবরা সবাই তখন ঐক্যবদ্ধ একাট্টা উদিয়মান বাংলাদেশকে স্বপ্ন ধারনের একটা উচিত শিক্ষা দেয়ার জন্য। এই পুঁজি দানবদের নারকীয় আস্ফালনের সামনে বুক চেতিয়ে তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে কারো সাহায্য ছাড়া নিজস্ব অর্থায়নে এতো বড় একটি প্রকল্প কার্যকর করার ঘোষণাটিই হচ্ছে এই কাজ সম্পাদনের অর্ধেক। যা ঐ বিশ্ব ফিন্যান্সিয়াল জায়ান্টদের বুকে কাঁপন ধরিয়ে টাইগার হার্ট শেখ হাসিনা করলেন। বাকী অর্ধেক সম্পন্ন হয়ে গেলো কত অবলীলায় ! তার স্বাক্ষী আজ শুভাকাঙ্খী-দুরাকাঙ্খী, দেশবাসী-বিশ্ববাসী সবাই।

এসব দু:সাধ্য, দুর্বোধ্য বিষয়গুলি সহজেই কল্যাণকর বাস্তবতায় প্রতিফলিত করতে পারছেন এই রাষ্ট্রপ্রধান শেখ হাসিনা। কেন পারছেন ? কারণ প্রকৃতি তার সহায়। প্রকৃতি তার দায় শোধের প্রয়োজনেই এই সহায়ক ভুমিকায় অবতীর্ণ।

এরূপ বাস্তবতায় আমরা যারা সব সময়ই সুবিধাভোগী- সুবিধা আকাঙ্খী তারা আমরা কী করতে পারি? আমরা যদি সচেতন সুবিধাভোগী হই, আত্ম স্বার্থের ব্যপারে অন্তত দিনেকানা না হই তাহলে আমরা প্রকৃতির এই সহায়তার সুযোগটি নিতে পারি, নেয়া উচিত।

প্রকৃতি যার হাত ধরেছে তার হাত সহসাই মচকাবেনা তাই আমাদের বিচ্ছিন্ন দুর্বল হাতগুলি যদি আমরা তার হাতের সাথে মেলাবার কথা ভাবতে পারি তাহলে আমাদের কাঙ্খীত সুবিধা/ স্বার্থ/ সুফল যা-ই বলিনা কেন তা সহজেই আমাদের অনুকুলে নিয়ে আসতে পারি।

অর্থাৎ দ্ব্যর্থহীন বয়ানে এটাই বলতে চাই যে, অগ্র-পশ্চাৎ সার্বিক বিষয় বিবেচনা করে জনস্বার্থ, দুর প্রসারী জাতীয় স্বার্থের কথা বিবেচনা করে শেখ হাসিনাকেই আরো একবার রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্বে বসানো যায় কি না তা গভীর ভাবে ভেবে দেখা প্রয়োজন।

লেখক : গবেষক

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ