Search
Close this search box.

রাজধানীতে ছিনতাই চক্রের ৪৪ জন গ্রেফতার; মলম, স্প্রে, দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

রাজধানীতে ছিনতাই চক্রের ৪৪ জন গ্রেফতার

স্টাফ রিপোর্টার \  রাজধানীর পল্টন, মতিঝিল, শাহবাগ ও খিলগাঁও এলাকা থেকে সংঘবদ্ধ মলমপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের মূলহোতাসহ মোট ৪৪ জনকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এ সময় গ্রেফতারকৃতদের কাছ থেকে অজ্ঞান ও ছিনতাইয়ের কাজে ব্যবহৃত বিষাক্ত মলম ও দেশীয় অস্ত্রসস্ত্র উদ্ধার করে র‌্যাব সদস্যরা।

র‌্যাব-৩ এর কমান্ডিং অফিসার লে: কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ বলেন, আমাদের মোট ছয়টি আভিযানিক দল একযোগে এসব এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে  এ চক্রের সদস্যদের গ্রেফতার করে।

রাজধানীতে ছিনতাই চক্রের ৪৪ জন গ্রেফতার
লে: কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন আহমেদ

তিনি বলেন রাজধানীর বিভিন্ন এলাকায় প্রতিদিন অসংখ্য যাত্রী ও পথচারী অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী কবলে পড়ে সর্বস্ব হারিয়ে জখমপ্রাপ্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়ে থাকেন। এসব ভুক্তভোগীদের বেশির ভাগই কোন আইন শৃংখলা বাহিনীর সরনাপন্ন হন না। ফলে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের তৎপরতা দিন দিন বেপরোয়াভাবে বৃদ্ধি পাচ্ছে। অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যদের প্রায় সকলেই মাদকাসক্ত। গোয়েন্দা তথ্যমতে শুধুমাত্র রাজধানী ঢাকাতেই প্রায় ৫০টির অধিক ছিনতাই চক্র সক্রিয় রয়েছে। এদের প্রায় আনুমানিক ২০০ জন সদস্য চিহ্নিত দুইশ স্পটে ছিনতাই সংঘটিত করে। প্রতিমাসে গড়ে প্রায় ৩৫টি ছিনতাইয়ের ঘটনা ঘটে এসব এলাকায়। গত জানুয়ারী থেকে এপ্রিল মাস পর্যন্ত রাজধানীর বিভিন্ন থানায়  ৪১টি ছিনতাইয়ের মামলা হয়েছে। গত তিন মাসে প্রায় শতাধিক মানুষ ছিনতাইকারীর ছুরিকাঘাতে আহত হয়েছেন।

তিনি জানান, ছিনতাই চক্রের সদস্যরা বিভিন্ন ক্যাটাগরিতে বিভক্ত প্রথমটি হচ্ছে সালাম পার্টি। এই চক্রের সদস্যরা কৌশলে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সালাম দিয়ে তাদের সাথে কুশলাদি বিনিমিয়ের চেষ্টা করে সুযোগ বুঝে তাদের চোখে মলম বা নাকের কাছে চেতনা নাশক দ্রবন লাগিয়ে সর্বস্ব লুটে নেয়। দ্বিতীটি হচ্ছে হ্যান্ডশেক পার্টি, এরা কৌশলে টার্গেট করা ব্যক্তিদের সাথে হ্যান্ডশেক করে তারপর সুযোগ বুঝে ছুড়ি/চাকুর ভয় দেখিয়ে তাদের কাছে থাকা মূল্যবান সামগ্রী লুটে নেয়।

গ্রেফতারকৃত আসামীরা  প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে র‌্যাবকে জানায়, তারা চক্রের দলনেতার পরিকল্পনায় রাজধানীর লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় ঘোরাফেরা করতে থাকে। তারপর সহজ সরল যাত্রীদের টার্গেট করে কখনও তাদেরকে ডাব, কোমল পানীয় কিংবা পানির সাথে বিষাক্ত চেতনানাশক ঔষধ মিশিয়ে খাওয়ানোর চেষ্টা করে। আবার কখনও যাত্রীবেশে লঞ্চ, বাস ও ট্রেনে চড়ে যাত্রীদের পাশে বসে তাদের নাকের কাছে চেতনানাশক ঔষধে ভেজানো রুমাল দিয়ে যাত্রীদের অজ্ঞান করে থাকে। বিষাক্ত পানীয় সেবন করার বা বিষাক্ত স্প্রের ঘ্রাণ নেওয়ার পর উক্ত যাত্রী অজ্ঞান হয়ে পড়লে তার সর্বস্ব কেড়ে নিয়ে তারা ভিড়ের মধ্যে মিশে যায়। এছাড়াও কখনও ভিড়ের মধ্যে যাত্রীদের চোখে-মূখে বিষাক্ত মলম বা মরিচের গুড়া বা বিষাক্ত স্প্রে করে যাত্রীদের যন্ত্রণায় কাতর করে সর্বস্ব কেড়ে নেয়।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকরা বলছেন, এসব চেতনানাশকের পরিমান বেশী হলে কিছু কিছু ভিকটিমের জ্ঞান ফিরতে ৭২ ঘন্টা পর্যন্ত সময় লেগে যায়। অজ্ঞানপার্টি বা মলমপার্টির শিকার হওয়া ব্যক্তি শারিরীকভাবে দুর্বল ও বয়স্ক হলে তার মৃত্যু পর্যন্ত ঘটে থাকে। অন্যদিকে ভূক্তভোগীর চোখে-মূখে বিষাক্ত মলম লাগানোর ফলে তার দৃষ্টিশক্তি চিরতরে হারানোর সম্ভাবনা থেকে যায়।

র‌্যাবের একাধিক দায়িত্বশীল কর্মকর্তারা বলছেন, সংঘবদ্ধ ছিনতাইকারী চক্রের সদস্যরা  রাজধানীর বিভিন্ন অলি গলিতে উৎ পেতে থাকে। সুযোগ পাওয়া মাত্রই তারা পথচারী, রিকশা আরোহী, যানজটে থাকা সিএনজি, অটোরিকশার যাত্রীদের ধারালো অস্ত্র প্রদর্শন করে সর্বস্ব লুটে নেয়। সন্ধ্যা থেকে ভোর পর্যন্ত তুলনামূলক জনশূন্য রাস্তা, লঞ্চঘাট, বাসস্ট্যান্ড, রেল স্টেশন এলাকায় বেপরোয়া হয়ে ওঠে। তাদের ছিনতাইকাজে বাধা দিলে তারা নিরীহ পথচারীদের প্রাণঘাতী আঘাত করতেও দ্বিধা বোধ করেনা। খিলগাঁও মালিবাগ রেইল গেইট, দৈনিক বাংলা মোড়, পীরজঙ্গি মাজার ক্রসিং, কমলাপুর বটতলা, মতিঝিল কালবার্ট রোড, নাসিরের টেক হাতিরঝিল, শাহবাগ, গুলবাগ, রাজউক ক্রসিং, ইউবিএল ক্রসিং পল্টন মোড়, গোলাপ শাহর মাজার ক্রসিং, হাইকোর্ট ক্রসিং, আব্দুল গণি রোড, মানিকনগর স্টেডিয়ামের সামনে, নন্দীপাড়া ব্রিজ, বাসাবো ক্রসিং এলাকায় সন্ধ্যা হতে ভোর রাত পর্যন্ত ছিনতাইকারীদের তৎপরতা বেশি পরিলক্ষিত হয়।

র‌্যাব-৩ এর পরিচালক জানান, গত রমজান থেকে এ পর্যন্ত আমরা বিপুল সংখ্যক ছিনতাইকারীকে গ্রেফতার করে আ্ইনের আওতায় আনতে সক্ষম হয়েছি। এ সকল অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারীদের আইনের আওতায় আনার ফলে পথচারীদের মাঝে ধিরে ধিরে স্বস্তি ফিরে এসেছে বলে আমি মনে করি ।

লে:কর্নেল আরিফ মহিউদ্দিন বলেন, আসন্ন ঈদুল আজহাকে ঘিরে বাড়তি সতর্কতা অবলম্বন করা হচ্ছে।  রাজধানীবাসী এবং দেশের বিভিন্ন প্রান্ত হতে রাজধানীতে আগত যাত্রী ও গরু ব্যবসায়ীরা যাতে নিরাপদে দৈনন্দিন কাজকর্ম সম্পন্ন করে নির্বিঘ্নে স্বস্তির সাথে বাড়ী ফিরে যেতে পারেন এ লক্ষ্য নিয়ে সংঘবদ্ধ অজ্ঞানপার্টি ও ছিনতাইকারী চক্রের বিরুদ্ধে র‌্যাবের সাড়াঁশি অভিযান অব্যাহত থাকবে।

গ্রেফতারকৃত আসামীদের বিরুদ্ধে রাজধানীর খিলগাঁও থানায় ০১ টি,  মতিঝিল থানায় ০২ টি, পল্টন থানায় ০৪ টি, শাহবাগ থানায় ০২ টি, এবং  শাহজাহানপুর থানায় ০২ টি মামলা দায়ের করা হয়েছে ।

 

সংবাদটি শেয়ার করুন

সর্বশেষঃ