আসন্ন দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে মুক্তিযুদ্ধবিরোধীরা যাতে অংশ নিতে না পারে, সেই উদ্যোগ নিতে নির্বাচন কমিশনের কাছে দাবি জানিয়েছে ‘সম্প্রীতি বাংলাদেশ’ নামে একটি সামাজিক সংগঠন। একইসঙ্গে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের আহ্বানও জানিয়েছে সংগঠনটি।
আজ মঙ্গলবার (১৭ অক্টোবর) রাজধানীর আগারগাঁওয়ে নির্বাচন ভবনে নির্বাচন কমিশনের (ইসি) সঙ্গে এক মতবিনিময় সভায় চারটি দাবি জানান সংগঠনটির নেতারা।
লিখিত দাবিগুলো মধ্যে রয়েছে—ধর্মভিত্তিক প্রচারণা এবং এর ফলে সৃষ্ট পরিকল্পিত সাম্প্রদায়িক প্ররোচণা বন্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ, মুক্তিযুদ্ধবিরোধী এবং একাত্তরের পরাজিত শক্তি যাতে আসন্ন নির্বাচনে অংশগ্রহণ করতে না পারে, সে ব্যাপারে কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ, ধর্মীয় সংখ্যালঘু এবং শান্তিপ্রিয় নির্বাচনমুখী সাধারণ ভোটারদের নিরাপত্তা নিশ্চিত হরা, সংখ্যালঘু নির্যাতনের ঝুকিপূর্ণ অঞ্চল চিহ্নিত করে নির্বাচনপূর্ব, নির্বাচনকালীন এবং নির্বাচনোত্তর সহিংসতা রোধে পর্যাপ্ত ও প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
বৈঠক শেষে সম্প্রীতি বাংলাদেশের সভাপতি পীযুষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘জাতীয় নির্বাচন এলেই সংখ্যালঘু ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় যারা বিশ্বাস করেন, তাদের কপালে ভাঁজ পড়ে। আমরা এটা আর দেখতে চাই না। ইসিকে বলেছি, শক্তভাবে দায়িত্ব পালন করবেন। সম্প্রীতি বাংলাদেশের মতো অরাজনৈতিক সংগঠনগুলো সহায়তা করবে। ইসি সহমত পোষণ করেছে।’
পীযুষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘২০০১ সালের মতো ব্ল্যাক অক্টোবর আর বাংলাদেশে দেখতে চাই না। যে ভয়াবহতা, নৃসংসতা, অত্যাচার প্রায় ৭১ সালকে মনে করিয়ে দেয়, সে জিনিসগুলো আমরা বাংলাদেশ থেকে চিরতরে সরিয়ে দিতে চাই। যারা মুক্তিযুদ্ধের বিরোধীতা করেছে, তাদেরকে সরকারে এবং কোনো আনুষ্ঠানিক প্রক্রিয়ায় দেখতে চাই না।’
সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পীযুষ বন্দোপাধ্যায় বলেন, ‘আমরা ঘরপোড়া গরুর মতো, অতীতের ভয় থেকে এসেছি। সাবধানের কোনো মার নেই।’
ইসিকে সহযোগিতা করার বিষয়ে এই প্রবীণ অভিনেতা বলেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের কোনো কাজ যদি তারা করেন, আমরা আমাদের ভলেন্টিয়ার সহযোগিতা দেবো। ২০০১ সালে আমরা সারা দেশ ঘুরে নির্যাতন, পাশবিকতার চিহ্ন দেখেছি, বর্বরতার চিহ্ন দেখেছি। সেটা যেন আর না হয়।’
পীযুষ বন্দোপাধ্যায় আরও বলেন, ‘আমরা অংশগ্রহণমূলক নির্বাচন চাই। আমরা চাই, এদেশে বৃহত্তর জনগোষ্ঠী নির্বাচনমুখী হোক এবং এবারের ভোটারদের মধ্যে তরুণরা বেশি। তাদের আমরা নির্বাচনমুখী করতে বলেছি। এজন্য কেবল ইসি নয়, দলগুলোরও একটা ভূমিকা আছে। সামাজিক সংগঠন, মিডিয়ার ভূমিকাও ফেলে দেওয়া যায় না। ভোটের উৎসব যদি তরুণদের মধ্যে ফিরিয়ে আনতে পারি, তবে অচিরেই আমরা একটি খোলসমুক্ত নির্বাচন প্রক্রিয়া পাব।’
সম্প্রীতি বাংলাদেশের সভাপতি বলেন, ‘ভয় করছি যারা মুক্তিযুদ্ধবিরোধী তাদের নিয়ে। যদি বিএনপির ভেতরে মুক্তিযুদ্ধবিরোধী থেকে থাকে, আমরা দেখেছি যাদের প্রগতিশীল মনে করেছি, তাদের ওখানেই নির্যাতন বেশি হয়েছে। তাই যদি আশঙ্কা করে থাকি, সেটা সমীচীন।’
পরে ইসি সচিব মো. জাহাংগীর আলম সাংবাদিকদের বলেন, তারা চারটি দাবি জানিয়েছেন। এগুলোর মধ্যে যেগুলোতে কমিশনের পক্ষে কাজ করার সুযোগ রয়েছে সেগুলো নিয়ে তারা কাজ করবেন।
ইসি সচিব বলেন, ‘আমাদের প্রস্তাবগুলোর মধ্যে নতুন ভোটারদের ভোটদানে উৎসাহিত করা, ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখা, নির্বাচনোত্তর ধর্মীয় উন্মাদনা রোধে ব্যবস্থা গ্রহণ–এরকম চারটি বিষয় তারা অবহিত করেছে। তার আলোকে কমিশন তাদের আশ্বস্ত করেছে, আইনানুগভাবে যতটুকু করা সম্ভব ততটুকু কমিশন করবে।’
সহিংসতা নিয়ে এত শঙ্কা কেন? এমন প্রশ্নের জবাবে জাহাংগীর আলম বলেন, ‘আমাদের এখান থেকে এটা স্পষ্ট, এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি শান্তিপূর্ণ আছে। উদ্বিগ্ন হওয়ার মতো এখানে কোনো পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়নি এবং কমিশন তা মনে করছে না। পরবর্তীতে যদি পরিস্থিতি উদ্ভব হয়, কমিশন আইনানুগ সব ব্যবস্থা নেবে।’
ইসির সঙ্গে বৈঠকে সম্প্রীতি বাংলাদেশের ১৩ সদস্যের প্রতিনিধি দল অংশ নেয়। আর নির্বচন কমিশনের পক্ষ থেকে নির্বাচন কমিশনার এবং ইসি সচিবসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা উপস্থিত ছিলেন।