বৃহস্পতিবার, ২৪শে এপ্রিল, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ
নববর্ষ উদ্‌যাপনে

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানাতে উৎসবের রঙে রাঙালো দেশ

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানাতে উৎসবের রঙে রাঙালো দেশ

বাংলা নববর্ষ ১৪৩২-কে স্বাগত জানাতে সারাদেশে উৎসবের আমেজে মাতেন দেশের মানুষ। শহর থেকে গ্রাম, পাহাড় থেকে সমতল—সর্বত্রই ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে মানুষ স্বতঃস্ফূর্তভাবে পয়লা বৈশাখ উদ্‌যাপন করেন।

ঢাকায় রমনার বটমূল, শাহবাগ, চারুকলা অনুষদ এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় এলাকা হয়ে ওঠে উৎসবের কেন্দ্রবিন্দু। লোকজ সংস্কৃতি, নাচ-গান, আবৃত্তি আর মেলার মধ্য দিয়ে বাঙালির প্রাণের এই উৎসব উদ্‌যাপিত হয়। হারিয়ে যাওয়া লাঠিখেলা ও হাডুডুর মতো ঐতিহ্যবাহী খেলাধুলাও ছিল নজরকাড়া। বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শুরু করে বিভিন্ন আবাসিক ভবনেও ছিল নানারকম সাংস্কৃতিক আয়োজন।

এবারের নববর্ষ উদ্‌যাপনে নতুনত্ব আসে রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটের কারণে। ফ্যাসিবাদী সরকারের পতনের পর এই প্রথম পয়লা বৈশাখে উদ্‌যাপিত হয় ‘বর্ষবরণ আনন্দ শোভাযাত্রা’। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা অনুষদের আয়োজনে এই শোভাযাত্রার প্রতিপাদ্য ছিল—‘নববর্ষের ঐকতান, ফ্যাসিবাদের অবসান’। মঙ্গল শোভাযাত্রার পরিবর্তে এবার ছিল আনন্দ শোভাযাত্রা, যেখানে অংশ নেন শিক্ষক-শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষ। ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে প্রতীকী প্রতিবাদ ছিল মুখোশ আর মুখাকৃতিতে। শোভাযাত্রায় সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি ও ফিলিস্তিনে যুদ্ধ বন্ধের বার্তাও তুলে ধরা হয়।

শোভাযাত্রায় অংশ নিয়ে সংস্কৃতি উপদেষ্টা মোস্তফা সরয়ার ফারুকী বলেন, এটি রাজনৈতিক শোভাযাত্রা নয়; বরং ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে সাংস্কৃতিক প্রতিবাদ। তাঁর মতে, ফ্যাসিবাদ কোনো নির্দিষ্ট রাজনৈতিক দল নয়, এটি একটি অশুভ শক্তি।

অন্যদিকে, রমনার বটমূলে ছায়ানট আয়োজন করে বর্ষবরণের অন্যতম ঐতিহ্যবাহী অনুষ্ঠান। এবারের প্রতিপাদ্য ছিল—‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয়’। গান, পাঠ ও বাণীর মাধ্যমে তারা নববর্ষকে বরণ করে।

ধানমন্ডির রবীন্দ্র সরোবরে চ্যানেল আই ও সুরের ধারা আয়োজন করে বর্ষবরণ অনুষ্ঠান। সূর্যোদয়ের সঙ্গে সঙ্গে শুরু হয় আয়োজন, যেখানে ছিল রবীন্দ্রসংগীত, লোকগীতি, দেশাত্মবোধক গানসহ নানা পরিবেশনা।

গুলশানের বিচারপতি সাহাবুদ্দীন পার্কে গুলশান সোসাইটি ও অলিগলি বন্ধু আয়োজন করে নববর্ষের অনুষ্ঠান। এতে অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ উদ্বেগ প্রকাশ করে বলেন, উৎসববিরোধী কিছু গোষ্ঠী সক্রিয় হয়ে উঠছে, যারা নারীর অংশগ্রহণ ও সামাজিক আনন্দ সহ্য করতে পারে না। তিনি জানান, চট্টগ্রামসহ কিছু এলাকায় বৈশাখী উৎসব ভাঙচুরের শিকার হয়েছে।

অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন ডেইলি স্টার সম্পাদক মাহ্ফুজ আনাম, গুলশান সোসাইটির সভাপতি ওমর সাদাত ও অলিগলি বন্ধুর পক্ষে নাভিন মুরশিদ।

জাতীয় সংসদ ভবনের সামনে মানিক মিয়া অ্যাভিনিউয়ে ছিল কনসার্ট ও ড্রোন শো, যার আয়োজন করে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়। শহীদ মিনারে গণসংগীত সমন্বয় পরিষদের আয়োজনেও ছিল সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান।

সরকারি-বেসরকারি এবং ব্যক্তিগত পর্যায়েও দেশের বিভিন্ন স্থানে পয়লা বৈশাখ উপলক্ষে আয়োজন করা হয় বিভিন্ন অনুষ্ঠান। সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করে বিশেষ ক্রোড়পত্র এবং টেলিভিশন চ্যানেলগুলো সম্প্রচার করে বৈশাখী অনুষ্ঠান। দিনটি ছিল সরকারি ছুটি।

সংবাদটি শেয়ার করুন

Leave a Reply

এই বিভাগের আরও সংবাদ >

সর্বশেষঃ