স্টাফ রিপোর্টার- বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশের জন্য রাজধানীর গোলাপবাগ মাঠের অনুমতি দিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)।
শুক্রবার বিকেলে ৩টায় এই তথ্য নিশ্চিত করেন বিএনপির প্রেস উইংয়ের সদস্য শায়রুল কবির খান।
শুক্রবার ঢাকা মহানগর পুলিশ কমিশনারের কার্যালয়ে নতুন ভেন্যুর বিষয়ে গোলাপবাগ মাঠের আবেদন নিয়ে যান বিএনপি প্রতিনিধি দল। এ সময় প্রতিনিধি দলে ছিলেন দলটির ভাইস চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. এ জেড এম জাহিদ হোসেন এবং আইন বিষয়ক সম্পাদক ব্যারিস্টার কায়সার কামাল।
উল্লেখ্য, ১০ ডিসেম্বর বিএনপির ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ নিয়ে উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে তাদের সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে সমাবেশের অনুমতি দেওয়া হলেও দলটির পক্ষ থেকে বলা হয়, তারা নয়াপল্টনে দলীয় কার্যালয়ের সামনে সমাবেশ করবে। এ নিয়ে বিএনপির শীর্ষ নেতা ও পুলিশ কর্মকর্তাদের সঙ্গে দফায় দফায় বৈঠক হয়। সবশেষ বৃহস্পতিবার (৮ ডিসেম্বর) সন্ধ্যার পর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুকের সঙ্গে বিএনপির নেতারা বৈঠক করেন। সেখানে কমলাপুর স্টেডিয়াম মাঠ এবং মিরপুর বাঙলা কলেজের মাঠ সমাবেশ করা নিয়ে আলোচনা হয়।
এরই অংশ হিসেবে বৃহস্পতিবার রাতেই বিএনপি নেতাদের এ দুটি স্থান দেখার কথা ছিল। তবে এর আগে বুধবার পল্টন কার্যালয়ের সামনে বিএনপি ও পুলিশের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এ ঘটনায় একজন নিহতসহ অর্ধশতাধিক আহত হন। বিএনপির নেতাকর্মীসহ প্রায় দুই হাজার জনকে আসামি করে মামলা করে পুলিশ। এসব মামলায় রুহুল কবির রিজভী, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানিসহ প্রায় সাড়ে ৪০০ জনকে গ্রেপ্তার করে। পরে তাদের আদালতের মাধ্যমে কারাগারে পাঠানো হয়।
এদিকে সামাবেশ উপলক্ষে রাজধানীর প্রবেশপথগুলোয় নেওয়া হয়েছে কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা। র্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) ও পুলিশের একাধিক টিম রাজধানীর প্রবেশ পথগুলোয় চেকপোস্ট স্থাপন করে তল্লাশি চালাচ্ছে। আব্দুল্লাহপুর, গাবতলি, যাত্রাবাড়ী, ডেমরা, গুলিস্তান ও বাবুবাজারসহ বিভিন্ন স্থানেও পুলিশের চেকপোস্ট বসিয়েছে। মোটরসাইকেল, প্রাইভেটকার, বাস থামিয়ে ভেতরে তল্লাশি করা হচ্ছে এসব স্থানে। কোনো যাত্রীর সঙ্গে ব্যাগ থাকলে সেটিও যাচাই করা হচ্ছে।
ঢাকার অলি-গলি, মোড়ে টহল দিচ্ছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদ্যরা। সন্দেহভাজনদের গতিরোধ করে তল্লাশি করা হচ্ছে। ঢাকার বাইরে থেকে আসা যানবাহনেও তল্লাশি চলছে। মোটরসাইকেল চালকদের পরিচয় জেনে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে ঢাকায়।
রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সরকারি-বেসরকারি স্থাপনা ও অফিস ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের সামনেও রয়েছে র্যাব-পুলিশের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
টঙ্গী থেকে উত্তরা পর্যন্ত বাস র্যাপিড ট্রানজিট (বিআরটি) প্রকল্পের টঙ্গী সেতু দিয়ে যারা ঢাকায় আসছেন তাদেরসহ পরিবহনগুলোয় ব্যাপক তল্লাশি চালানো হচ্ছে। উত্তরা বিএনএস সেন্টারের সামনে সেতুর মুখে রয়েছে চেকপোস্টে।
নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয় ও এর আশপাশের এলাকায় রাখা হয়েছে পুলিশের বিশেষ নিরাপত্তা ব্যবস্থা। নয়াপল্টনের নাইটিংগেল মোড় থেকে ফকিরাপুল মোড় পর্যন্ত সড়কের সবকটি গলিতে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর নজরদারি। পর্যাপ্ত সিসিটিভি ক্যামেরার মাধ্যমে সার্বক্ষণিক নজরদারি চলছে।
এসব তথ্য নিশ্চিত করে পুলিশ জানিয়েছে, পুরো রাজধানীকে একটি নিরাপত্তা সার্কিটের আওতায় নিয়ে আসা হয়েছে। পোশাকে-সাদা পোশাকে ব্যাপক নজরদারি চলছে-চলবে। ১০ ডিসেম্বর বিএনপির সমাবেশকে ঘিরে রাজধানীতে যাতে অন্য কোনো গোষ্ঠী সুযোগ নিতে না পারে সেজন্য পুলিশের প্রতিটি থানা পুলিশের পাশাপাশি গোয়েন্দা পুলিশ ও সাইবার ইউনিট সার্বক্ষণিক নজরদারি করছে। বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি যাতে সৃষ্টি না হয়, সেটিও নজরে রাখা হয়েছে। গোয়েন্দা পুলিশের বোম্ব ডিসপোজাল ইউনিট, ডগ স্কোয়াড, সোয়াট টিম প্রস্তুত আছে।
এ বিষয়ে ডিএমপির মিডিয়া অ্যান্ড পাবলিক রিলেশন্স বিভাগের উপ-কমিশনার (ডিসি) মো. ফারুক হোসেন বলেন, রাজধানীতে যাতে কোনো বিশৃঙ্খল পরিস্থিতির সৃষ্টি কেউ করতে না পারে সেজন্য পুলিশের সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে।
র্যাব জানিয়েছে, শনিবার দিনটিকে ঘিরে বিভিন্ন দুষ্কৃতিকারী ও সুযোগ সন্ধানীদের বিশৃঙ্খলা-নাশকতার মাধ্যমে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতির তৎপরতা রোধে তাদের গোয়েন্দা নজরদারি ও নিয়মিত টহল কার্যক্রম চলমান। যেকোনো পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে বাহিনীর স্পেশাল ফোর্স টিম, ডগ স্কোয়াড, বোম্ব ডিস্পোজাল ইউনিট ও হেলিকপ্টার সার্বক্ষণিক প্রস্তুত রয়েছে।
এদিকে সাইবার জগতে যাতে কেউ কোনো গুজব বা অপপ্রচার ছড়াতে না পারে সে জন্য র্যাবের সাইবার ইউনিটের সদস্যরা প্রস্তুত, তাদের কাজও চলমান।
র্যাবের লিগ্যাল অ্যান্ড মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক কমান্ডার খন্দকার আল মঈন বলেন, নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করতে সর্বোচ্চ সতর্ক অবস্থানে রয়েছে র্যাব ফোর্সেস। যেকোনো ধরণের বিশৃঙ্খলা, নাশকতা রোধ ও আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে সর্বোচ্চ প্রস্তুতি রয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা ও জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নিয়মিত টহল কার্যক্রম জোরদার রয়েছে।
যেকোনো ধরণের হামলা ও নাশকতা রোধে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থাপনা, স্থান ও প্রবেশ পথসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে র্যাবের চেকপোস্টে নিয়মিত তল্লাশি কার্যক্রম চলমান রয়েছে বলেও জানান তিনি।
গত ১ ডিসেম্বর থেকে আগামী ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত রাজধানীতে বিশেষ অভিযান পরিচালনা চালু রেখেছে ডিএমপি। রাজধানীর ৫০টি থানা ও গোয়েন্দা পুলিশ সার্বক্ষণিক নজরদারি ও অভিযান চালু রেখেছে।
বিশেষ এ অভিযান ও চেকপোস্ট সম্পর্কে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার খন্দকার গোলাম ফারুক বলেন, ডিসেম্বর মাসে শহীদ বুদ্ধিজীবী দিবস, বিজয় দিবস ও বড়দিনসহ একাধিক জাতীয় কর্মসূচি রয়েছে। এ কারণে গত ১ ডিসেম্বর থেকে ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত সারাদেশে বিশেষ অভিযান ও চেকপোস্ট পরিচালিত হচ্ছে।