স্টাফ রিপার্টার- বিএনপির আন্দোলনে অর্ধেক পরাজয় হয়ে গেছে বলে মন্তব্য করেছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি বলেন, যারা বলেছিল- ‘নয়াপল্টনে সমাবেশ করবোই।’ আজ তারা গোলাপবাগে। তাহলে পরাজয় কার হলো? আমাদের না বিএনপির? আন্দোলনে অর্ধেক পরাজয় এখানেই হয়ে গেছে।
শুক্রবার বিকেলে রাজধানীর নাট্যমঞ্চে ঢাকা মহানগর দক্ষিণ আওয়ামী লীগ আয়োজিত সমাবেশে এ কথা বলেন তিনি। ঢাকায় বিএনপি তাদের সমাবেশে লাঠি বা আগুন নিয়ে আসলে ‘খেলা হবে’ বলে সতর্ক করেন ওবায়দুল কাদের।
তিনি বলেন, সবাইকে প্রস্তুত থাকতে হবে। সতর্ক পাহারায় থাকতে হবে। কাতারের পাশাপাশি বাংলাদেশেও অপশক্তির বিরুদ্ধে খেলা হবে। লাঠি বা আগুন নিয়ে আসলে খেলা হবে। অনেক ছাড় দিয়েছি, আর ছেড়ে দেবো না। তবে ঢাকাবাসীকে আশ্বস্ত করে ক্ষমতাসীন দলের এই নেতা বলেন, তারা (বিএনপি) থাকবে গোলাপবাগে। আমরা চলে যাচ্ছি সাভারে। জনগণের আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই। তাদের ঢাকা দিয়ে গেলাম। আমরা ক্ষমতায়। আমরা কেন, অশান্তি চাইবো? আমরা কেন বিশৃঙ্খলা চাইবো?
এসময় তিনি বলেন, বিএনপি ক্ষমতায় আসলে গোটা বাংলাদেশ গিলে খাবে। তাদের সেই সুযোগ দেওয়া যাবে না। বিএনপির ক্ষমতায় আসার রঙিন খোয়াব কর্পূরের মতো উবে যাবে।
আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আরও বলেন, বিএনপি আজ বলে সরকার না কি ভয় পেয়ে গেছে। সরকার ভয় পেয়েছে? এখানে নাট্যমঞ্চ প্রাঙ্গণের সভা, এদিকে নবাবপুর, সেদিকে গুলিস্তানে বায়তুল মোকাররম। বিশাল সমাবেশ মাত্র ঢাকা দক্ষিণ করেছে।
এসময় সাংবাদিকদের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সাংবাদিক বন্ধুরা সত্যটা তুলে ধরুন। কিছু কিছু মিডিয়া বিএনপিকে ক্ষমতায় আনার জন্য নেমেছে। তারা কারা, সময় মতো জবাব পাবে। কোনো কোনো মিডিয়া, রাতে ও সকালে দেখলে মনে হয় না এখানে আর কোনো দল আছে। বলেন, আওয়ামী লীগ ছাড়া আর কোনো দল আছে?
এসময় কূটনৈতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, বিভিন্ন দেশের প্রতিনিধি যারা আমাদের দেশে আছেন। বন্ধু দেশের প্রতিনিধিরা কারো পক্ষ নেবেন না। আমাদের ঘরের ভেতরে হস্তক্ষেপ করবেন না। আমরা জানি, কীভাবে গণতন্ত্র রক্ষা করতে হয়। আমি বলিনি, মেঘ চলে যাবে। সমাধান হবে, হয়েছে। বাঙলা কলেজ হয়ে অবশেষে গোলাপবাগ। শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে তাদের (বিএনপির)।
এদিকে বাংলাদেশের নির্বাচন ও আদালতপাড়া নিয়ে অযাচিত মন্তব্য করে বাংলাদেশের সঙ্গে বন্ধুত্ব নষ্ট না করতে আমেরিকার রাষ্ট্রদূতের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের। তিনি আরও বলেছেন, আমেরিকার সঙ্গে বন্ধুত্ব রাখতে চায় বাংলাদেশ। ধানমন্ডিতে দলের সভাপতির রাজনৈতিক কার্যালয়ে ২২তম জাতীয় কাউন্সিলের প্রথম প্রস্তুতি সভায় তিনি এই কথা বলেন। মার্কিন নির্বাচনেও মানুষ মারা গেছে বলে এসময় স্মরণ করিয়ে দেন ওবায়দুল কাদের।
আমেরিকা, ব্রিটেনের চিত্র তুলে ধরে কাদের বলেন, আপনাদের চেয়ে আমরা ভালো আছি। আপনাদের বিষয়ে আমরা হস্তক্ষেপ করি না। আপনারাও অহেতুক হস্তক্ষেপ করতে আসবেন না। কারও ফরমায়েশ, হস্তক্ষেপ শেখ হাসিনা শুনবেন না। তিনি আল্লাহ ছাড়া কাউকে ভয় পান না।
তিনি বলেন, আমাদের অতীতের অনেক বেদনা আছে— ১৯৭১, ‘৭৫-এ ৷ তার পরও আমরা বন্ধুত্ব চাই। কিন্তু এভাবে করলে বন্ধুত্বে ফাটল ধরবে, এতে কারও লাভ হবে না। সবারই লেনদেন আমাদের আছে। অহেতুক কেন এসব কথা বলছেন?
সবাইকে নিজের চেহারাটা আগে আয়নায় দেখতে পরামর্শ দিয়ে ওবায়দুল কাদের বলেন, প্রতিদিনই মাস শুটিং (গুলি) হচ্ছে, সপ্তাহে অন্তত দুটা। একেকটাতে পাঁচ-দশজন (নিহত)। ১৯টি শিশু মাস শুটিংয়ে মারা গেছে। পুলিশ সেখানে সিকিউরিটি দেয়নি, দিলে এ ঘটনা ঘটত না। আমাদের আদালতপাড়া নিয়ে কথা বলেন, আপনাদের ওখানে কী হলো?
নির্বাচনে জালিয়াতি শুধু বাংলাদেশের ক্ষেত্রে বলা হয় না, এ শব্দটি আমেরিকার জন্য ব্যবহার হচ্ছে উল্লেখ করে ওবায়দুল কাদের বলেন, পাঁচজন লোক মারা গেছে, কংগ্রেস আক্রান্ত, ন্যানসি পেলোসি কীভাবে লুকিয়ে ছিলেন। এই দৃশ্য আমরা দেখেছি।
জার্মানির উদ্দেশে আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক বলেন, সেখানে অভ্যুত্থানের ক্যু করা চক্রান্ত করছে। কারই ভেতরের খবর সুখকর নয়।
যুক্তরাজ্যের উদ্দেশে ওবায়দুল কাদের বলেন, সেখানে তিনবার প্রধানমন্ত্রী পরিবর্তন হলো। আমরা তো সে তুলনায় ভালো আছি। আপনাদের এত কিছু হচ্ছে আমরা তো ইন্টারফেয়ার করি না। ব্রিটেনে দুজন এমপি আততায়ীর হাতে নিহত হয়েছেন। আমাদের এত বছর আছে, এ রকম ঘটনা ঘটেনি। সবাই নিজের চেহারা আয়নাতে দেখে অন্যকে নিয়ে কথা বলেন।
এসময় উপস্থিত ছিলেন আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য শেখ ফজলুল করিম সেলিম, আন্তর্জাতিক সম্পাদক ড. শাম্মী আহমেদসহ অভ্যর্থনা উপ-কমিটির সদস্যরা।
এর আগে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত পিটার হাস রাজধানী ঢাকায় ভয়ভীতি প্রর্দশন ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বেগ প্রকাশ করে আইনের শাসনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হওয়ার আহ্বান জানান।
বৃহস্পতিবার পিটার হাস দূতাবাসের ভেরিফায়েড ফেসবুক পেজের মাধ্যমে এক বার্তায় বলেন, আমরা ঢাকায় ভয়ভীতি ও রাজনৈতিক সহিংসতার খবরে উদ্বিগ্ন এবং আইনের শাসনকে সম্মান করার জন্য সহিংসতা, হয়রানি এবং ভীতি প্রদর্শন থেকে বিরত থাকার জন্য সবাইকে আহ্বান জানাচ্ছি।
তিনি বলেন, তারা সরকারি কর্তৃপক্ষকে সহিংসতার এই প্রতিবেদনগুলো তদন্ত করতে এবং মত প্রকাশের মৌলিক স্বাধীনতা, সংগঠন এবং শান্তিপূর্ণ সমাবেশকে রক্ষা করতে উৎসাহিত করেন।
রাষ্ট্রদূত নয়াপল্টনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপির নেতাকর্মীদের সংঘর্ষে হতাহত ব্যক্তিদের পরিবারের প্রতিও সমবেদনা জানান। এরপর আজ আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদকের এ মন্তব্য এলো।