তানভীর আহমেদ- রাজধানীর নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষের ঘটনায় করা মামলায় বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে কারাগারে পাঠানোর আদেশ দিয়েছেন আদালত।
শুক্রবার তাদের আদালতে হাজির করে পুলিশ। এসময় মামলার তদন্ত শেষ না হওয়া পর্যন্ত তাদের কারাগারে আটক রাখার আবেদন করেন মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা পুলিশ পরিদর্শক তরিকুল ইসলাম। অপরদিকে, তাদের আইনজীবীরা জামিনের আবেদন করেন। উভয়পক্ষের শুনানি শেষে ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জসিম তাদের জামিন আবেদন নামঞ্জুর করে কারাগারে পাঠানোর আদেশ।
এর আগে শুক্রবার বিকেল ৪ টা ১০ মিনিটে ডিবির কার্যালয় থেকে তাদের আদালতে আনা হয়। এসময় কোর্ট প্রাঙ্গণে ক্ষোভ করেন বিএনপিপন্থি আইনজীবীরা। খালেদা জিয়ার মুক্তি পার্টি অফিসে গুলি কেন সহ বিভিন্ন ধরনে স্লোগান দেন তারা।
এরও আগে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখায় ডিবি। এ বিষয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আনা হয়েছিল। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবারের (৭ ডিসেম্বর) ঘটনায় তাদের নির্দেশদাতা হিসেবে গ্রেফতার করা হয়েছে।
৭ ডিসেম্বর বিকেলে নয়াপল্টনে বিএনপির কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে পুলিশের সঙ্গে বিএনপি নেতাকর্মীদের সংঘর্ষ হয়। এতে একজন গুলিবিদ্ধ হয়ে নিহত হন। আহত হন অনেকে। এসময় বিএনপি কার্যালয়ে অভিযান চালিয়ে চাল-ডাল, পানি, নগদ টাকা ও বিস্ফোরকদ্রব্য পাওয়া যায় বলে জানায় পুলিশ।
সংঘর্ষের ঘটনায় ৪৭৩ জনের নামোল্লেখসহ অজ্ঞাত দেড় থেকে দুই হাজার বিএনপির নেতাকর্মীকে আসামি করে পল্টন মডেল থানায় পুলিশ বাদী হয়ে মামলা করেন।
মামলার উল্লেখযোগ্য আসামিদের মধ্যে রয়েছেন- বিএনপি চেয়ারপাসনের বিশেষ সহকারী শিমুল বিশ্বাস, ঢাকা মহানগর উত্তরের আহ্বায়ক আমানউল্লাহ আমান, দক্ষিণের আহ্বায়ক আবদুস সালাম, বিএনপির যুগ্ম-মহাসচিব খায়রুল কবির খোকন, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক সেলিমুজ্জামান সেলিম, কেন্দ্রীয় প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দীন চৌধুরী এ্যানী ও জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য আব্দুল কাদের ভূঁইয়া জুয়েল প্রমুখ।
এর আগে শুক্রবার সকালে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও দলের স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে গ্রেফতার দেখায় ডিবি।
এ বিষয়ে ডিবি প্রধান মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, আমরা মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর ও মির্জা আব্বাসকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নিয়ে এসেছিলাম। জিজ্ঞাসাবাদ শেষে বুধবারের ঘটনায় তাদের নির্দেশদাতা হিসেবে গ্রেফতার করেছি।
শুক্রবার দুপুর সোয়া ২টার দিকে মিন্টো রোডে ডিবি কার্যালয়ের সামনে সাংবাদিকদের তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, পুলিশের উপর একটি বর্বরোচিত হামলা হয়েছে। ককটেল নিক্ষেপ করেছে এবং জানমালের ক্ষতি করেছে। সেই পরিপ্রেক্ষিতে তাদের অপরাধটা হচ্ছে আসলে, এই অপরাধসমূহের উসকানিদাতা, পরিকল্পনাকারী ও নির্দেশদাতা হিসেবে।
বৃহস্পতিবার দিনগত রাতে তাদের তুলে নিয়ে যাওয়া হয় বলে বিএনপির মিডিয়া সেলের সদস্য শায়রুল কবির খান জানিয়েছিলেন।
তিনি বলেন, রাত ৩টার পরে বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুলকে তার উত্তরার বাসা থেকে এবং ৩টা ২০ মিনিটে স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাসকে তার শাহজাহানপুরের বাসা থেকে গোয়েন্দা পুলিশ তুলে নিয়ে যায়।
বিএনপির আর কোনো কেন্দ্রীয় নেতা নজরদারিতে রয়েছে কি না জানতে চাইলে ডিবিপ্রধান বলেন, আমরা সবকিছু খেয়াল রাখছি। কেউ যদি আরও এমন অপরাধ করে তারা আমাদের নজরদারিতে থাকবে এবং তাদের বিষয়েও আমরা ব্যবস্থা নেবো।
বিএনপির গণসমাবেশ আয়োজনের জন্য নতুন কোন মাঠের জন্য আবেদন করেছে কি না জানতে চাইলে হারুন অর রশীদ বলেন, গতকাল আমাদের সঙ্গে বিএনপির একটি প্রতিনিধি দলের সভা হয়েছিল। সেই সভায় দুটি স্থানের কথা বলেছে। কিন্তু তারা আজকে যে আবেদনটি নিয়ে এসেছে, সেটি হলো গোলাপবাগ মাঠের কথা তারা বলেছেন। সেটা আমাদের ডিএমপি কমিশনার মহোদয়ের কাছে উপস্থাপন করবো।
এরও আগে বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা ৭টা ১০ মিনিটে বিএনপির প্রতিনিধি দল ডিএমপি সদর দপ্তরে যায়। সেখানে ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে প্রায় দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন তারা।
বৈঠকে ১০ ডিসেম্বর ঢাকা বিভাগীয় গণসমাবেশ করার জন্য রাজধানীর কমলাপুর স্টেডিয়াম মাঠের জন্য অনুমতি চায় বিএনপি। তবে ডিএমপির পক্ষ থেকে বিএনপিকে মিরপুরে সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠে গণসমাবেশ করার জন্য প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রাত সাড়ে ৯টায় ডিএমপি কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক শেষে সাংবাদিকদের এ কথা জানান বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান বরকতউল্লা বুলু।
এরপর রাতেই গণসমাবেশের সম্ভাব্য স্থান মিরপুর সরকারি বাঙলা কলেজ মাঠ পরিদর্শন করেন ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা। তারপরই আসে ফখরুল ও আব্বাসকে আটকের খবর। তারও আগে বুধবার বিকেলে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ হয় বিএনপি নেতাকর্মীদের।